নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী
:ধর্মীয় আলোচনা:
"ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়" - এটি বহুল প্রচারিত। তাই প্রত্যেকেরই স্ব স্ব পছন্দানুযায়ী ধর্ম গ্রহন ও পালনের অধিকার আছে। অথচ, বাস্তবে প্রতিটি ধর্মপালনকারী পরিবারের কোনও সদস্যেরই স্বাধীন ভাবে স্বপছন্দানুযায়ী ধর্ম গ্রহনের অধিকার নাই। ধর্মপালনটাও ব্যক্তিগতভাবে থাকে না। ধর্ম পালনটাকে ব্যক্তিগত ভাবে রাখলে ধর্ম পালনে আপত্তি দেখিনা; যদিও ধর্ম হলো শোষণ করার বৌদ্ধিক হাতিয়ার। ধর্ম হলো অশিক্ষা কুশিক্ষা বৃদ্ধি ও কুসংস্কার ছড়ানোর বৌদ্ধিক মাধ্যম। সমাজ সভ্যতার অগ্রসরে প্রকাণ্ড বাধা স্বরূপ।
অথচ সবধরনের ধর্ম পালনকারী সব মানুষই তাদের স্ব স্ব ধর্মপালনটাকে কখনই ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখে না। বরং সমাজে জানান দেয়, অপরকে আকর্ষিত করে, বাস্তব ঘটনায় বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর না দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসমূলক উত্তর দেয়, ধর্মপ্রচার করে, সহযোগ চায়, একজোট হয় ইত্যাদি নানাভাবে নানা আঙ্গিকে সমাজে যুক্ত করে, মিশিয়ে দেয়। ধর্মকে সামাজিক তকমা দিয়েই চলেছে। একসময় তো ধর্মীয়, ঈশ্বরবিশ্বাস ভিত্তিক আইনকানুন দিয়ে সমাজকে চালাত ধর্মবাদীগণ। তখন তারা তো এ-চিন্তাটা করেনি যে, সমাজে ধর্মহীন মানুষ, ধর্মকে প্রশ্নকারী মানুষ আছে, তাদের অসুবিধা হবে? তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে?
তাই ধর্মহীন মানুষও এসব অকাজ কুকাজের বিরুদ্ধে বলে আসছে আবহমানকাল ধরে। তারা ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাস, ঈশ্বরতত্ব, নিয়তিবাদ, জন্মান্তরবাদের বিরুদ্ধে বলে যুক্তি দিয়েই।
এছাড়াও ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য কিঞ্চিত লঘু গুণ সম্পন্ন ও দোষযুক্ত এবং বেশকিছু কোষ নির্জীব। কিন্তু, ধর্মহীন ব্যক্তির মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য উন্নত। ধর্মহীন ব্যক্তি মানবিক, সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, বিশ্লেষণী, ধারাল বুদ্ধির, সহযোগী, সহমর্মী, সমাজবোধী, সামাজিক, কম হিংসক, কম স্বার্থপর, কম আবেগপ্রবণ, দৃঢ় অথচ নমনীয়, জেদি কিন্তু গোঁয়ার নয়, উদার ইত্যাদি গুণ সম্পন্ন। এদের মস্তিষ্কে কিছু কোষ উত্কৃষ্ট ও সজীব।
এইকারণে, ধর্মহীন ব্যক্তি সহযোগী-সহমর্মী-সামাজিক-মানবিক হিসেবে ধর্মে বিশ্বাসীদের মস্তিষ্ক উত্কৃষ্ট করতে চায়। অন্ধত্বের হাত থেকে, মোহের হাত থেকে রক্ষা করে সঠিক পথ দেখাতে চায়। এটা একটা মানবিক গুণ।
উদাহরণ, একটা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও ধর্ম প্রবর্তক, ঈশ্বর, ধর্ম প্রচারক-গণ করেনি। ধর্মপালনকারীরা যেভাবে ও যেসব ভোগ্যবস্তুর সাহায্যে জীবনযাপন করে, সেসব বস্তুসামগ্রী সহ জীবনযাপন পদ্ধতিগুলোর কিছুই কোনও ধর্মবাদী, ধর্মপ্রবর্তক, ঈশ্বর, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মপ্রচারকরা আবিষ্কার করেনি।
জানি, কিছু বিজ্ঞানী, কিছু আবিষ্কারক ঈশ্বরে-ধর্মে বিশ্বাসী; কিন্তু, আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তাকে একমাত্র বিজ্ঞান-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি-অনুসন্ধিত্সাই সাহায্য করেছে।
বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, কোরান, হাদিস, জেন্দাবেস্তা, বাইবেল, তালমুদ-তোরহা, গ্রন্থসাহিব ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্তমানে প্রচলিত কোনও ভোগ্যদ্রব্য আবিষ্কারের কথা বলা নাই। ঈশ্বর, আল্লাহ্, গড, জিহোবা, ভগবান-গণ এতটাই বিজ্ঞ-সর্বজ্ঞ-সর্বশ্রষ্টা-সর্বনিয়ন্ত্রক যে তারা বৈদ্যুতিক বাতি-পাখা-শীততাপ যন্ত্র-কম্পিউটার-ফোন-ইন্টারনেট-মাইক-চাকা-গাড়ি-উড়োজাহাজ-মহাকাশ যান-চিকিত্সার যন্ত্রপাতি-দূরবীন-অনুবিক্ষণ যন্ত্র-ওয়াশিং মেশিন-কলকারখানার সমস্ত যন্ত্র-খাদ্য তৈরির যন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি বর্তমানে আধুনিক জীবনযাপনে অত্যাবশ্যকীয় থেকে কম দরকারী সমস্ত ভোগ্যপণ্যের কথা জানতই না। এসবের উল্লেখ কোনও ধর্মগ্রন্থেও নাই।
মাইক ছাড়া আযান বা কীর্তন করতে, ধর্ম প্রচার করতে নিষেধ করলেই বিপদ। ধর্মস্থানগুলোয় বিদ্যুত্ বন্ধ করলেই রে রে করবে। ধর্মের অছিরা-নেতার মোবাইলে কথা বলে, আবার ধ্যান করেন নাকি ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলতে। তখন নাকি ফোন লাগে না; সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের ফোন নাই! ধর্মপালনকারীরা, নেতা-মুনি-গুরুবাবা-ইমাম-পীর-ফকির-সুফি-পোপ-কার্ডিনাল-পুরোহিত নামক ধর্মপ্রচারকরা-ধর্মের অছিরা, ধর্মের গুণকীর্তনকারীরা নির্লজ্জের মতো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কৃত বস্তু সামগ্রীর সহায়তা নিয়েই আসছে। যে কালে যা আবিষ্কৃত হয়েছে, সেকালে সেই সেই বস্তুর সুযোগসুবিধা নিয়েছে। বরং সাধারণ মানুষের আগেই নিয়েছে এবং সাধারণ মানুষের থেকে বেশি ও বিশেষ সুযোগসুবিধা পায়। যেমন, পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা-উন্নত চিকিত্সা-উন্নত বাসস্থান- পর্যাপ্ত ও উন্নত বস্ত্র-পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, ভ্রমণ সুযোগ, উচ্চস্তরে বিচরণের সুযোগ, সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকারে নিরাপত্তা এই সমস্ত কিছুই সহজেই পায়, পেয়ে চলেছে ধর্মের অছিবৃন্দ।
অথচ তারাই ধর্মপালনে সাধারণকে আহ্বান করে, দরকারে কঠোর হয়, বিধান-ফতোয়া দেয়, দরকারে ভয় দেখায় জীবনসংশয়ের, সামাজিক অত্যাচার করে, উস্কায়। কিন্তু, সাধারণের অনুন্নত জীবনযাপনের জন্য, অপ্রাপ্তির জন্য ঈশ্বরের কৃপা, ধর্মপালনে গণ্ডগোল ইত্যাদিকে দায়ি করে। ধর্মপালনে কঠোর হতে বলে। ধর্মভিত্তিক সমাজ গঠনে উত্সাহ দেয়। অর্থাত্, ধর্ম দিয়ে মোহিত করে রাখে। অথচ অনুন্নত অবস্থা, বৈষম্যর জন্য শোষণযুক্ত সমাজই যে দায়ি, অর্থাত্ শোষকশ্রেণির মানুষ দায়ি, সে সংবাদটি দেয় না।
এভাবেই ধর্মের অছিগণ শোষকশ্রেণির সহায়ক হয়। শোষক হয়ে ওঠে। এই ধর্মীয় অছিগণ ধর্মের মর্মার্থ, ধর্মগ্রন্থের ফাঁকফোকর ও মর্মার্থ সহ 'কত ধানে কত চাল', সেসবই জানে ও বোঝে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোরও খোঁজখবর রাখে। তাই তাদের কাজ, সাধারণকে ধর্মে মোহিত করে রাখা, ধর্মের নিত্যনতুন ব্যাখ্যার দ্বারা মগজধোলাই চালু রাখা, মাঝেমধ্যে হুঙ্কার-ফতোয়া-বিধান ছোড়া ইত্যাদি। এপথে শোষকের সহায়ক হিসেবে শোষণ কায়েম রাখতে সাহায্য করে এবং নিজেদের আখের গোছায়।
এই ধর্মমোহ, ঈশ্বর মোহ, জন্মান্তরের মোহ, নিয়তির মোহ, নেশা ছাড়িয়ে মস্তিষ্ককে উন্নত করতে চায় যুক্তিবাদী-মানবতাবাদী মুক্তমনের মানুষ। বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ মানে যুক্তিবাদী মানুষ। মানুষ হিসেবে সাধারণ শোষিত বঞ্চিত মানুষের সহমর্মী হয়ে, সহযোগী হয়ে, বন্ধু হয়ে তাদের উত্কৃষ্ট করে।
সুন্দর সমাজ গড়তে সুন্দর মানুষ, মানে, সুন্দর মনের মানুষ দরকার। একমাত্র যুক্তিবাদী চেতনা, মানবতাবাদী চেতনাই পারে সুন্দর সমাজ গড়তে। এটাই কাম্য। এটাই শ্রেয়।
শমীন্দ্র ঘোষ
১৭/০৬/১৫
©somewhere in net ltd.