নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐতিহাসিক মহাগল্প-- পর্ব ১

২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:১৪

সময়টা শীতকাল। যাদুঘরে বিশাল টেবিলে কিছু প্রতিকৃতি। পুরানো বইপত্র, ভাঙা ইট, কাঠ, বাড়িঘরের মিনিয়েচার মডেল। ওগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে মাঝবয়সী গাইড বুঝাচ্ছে ছাত্রদের। সঙ্গে রোমহর্ষক ইতিহাসটাও বলে যাচ্ছে গড়গড় করে। সেই রোমহর্ষক ইতিহাসের নির্যাসটুকু বললেন আভীরদুলাল---

একদা এক মরু দেশে ছিল এক মহাউন্মাদ। সে কচি বয়সেই হলো অনাথ। বড় হয়ে ভেড়া চড়াত। পরে, কাকার সাথে টুকটাক ব্যবসা দেখাশুনা করত। লিখতে পড়তে জানত না। তাই বেশিদূর এগোয়নি। এলাকায় পাত্তাও পেত না। শেষে ভালো একটা কাজ পেল। এরপর ১৫ বছরের বড় মালকিনকেই বিয়ে করে বসল। এতে খেয়ে পরে ভালোই চলছিল।
হঠাত্‍ তার শুরু হলো মাথার ব্যামো। বলে, এক অদৃশ্য কিছু যেন তাকে কী সব শুনিয়ে যায়, নির্দেশ দেয় ইত্যাদি। এই ব্যামোটাই তার কাল হলো। উত্‍সন্নে গেল।
কিছুবছর এভাবেই কাটল।
এদিকে ব্যবসায় খাটুনি আছে। দেহ তো চলে না। মন যে অন্যদিকে আজগুবি চিন্তায় সর্বদা মশগুল। চেপে বসল অলসতা। তায় আবার পাগলামীও চেপেছে ভালোই। ব্যবসা দেখাশুনা উঠল লাটে। কিন্তু খেয়ে পরে তো থাকতে হবে। অথচ সহজ কাজ নাই। লোকজনও বেশি। প্রতিযোগিতাও বেশি। উপায় কী? তাই উপায় একটা বার করল সহজ পথে রোজগারের। লুঠপাট করে খাওয়া। এলাকার লোকজনও কিছুটা নির্বিরোধী, সাদাসিধা; ঝুটঝামেলা এড়িয়ে চলে। তো, যেমন ভাবা তেমন কাজ। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে সে একটা কোম্পানি খুলল। মানে, দল আরকি। কাজ-- লুঠপাট, ছিনতাই, তোলাবাজি, খুন, ধর্ষণ যা-ইচ্ছে-তাই কাণ্ড বাধিয়ে করেকম্মে খাওয়া। লুঠপাটে বাধা পেলে খুন। বাধা না পেলে দাস বা জিম্মি হিসেবে বাঁচিয়ে রাখা। সঙ্গে সাগরেদও জুটল। কুঁড়ে ছেলেপেলে ছিলই। যারা এমনিতেই লুচ্চা লাফাঙ্গা মদখোর চোর চোট্টা ডাকাত। এদেরকে জুটাল দলে। "ধর্ম" নামের তকমা সাঁটাল। ভয় দেখিয়ে কিছু ভালো লোককেও সঙ্গে নিল। এরা নিত্যদিন হুজ্জতি করে বেড়াত আর করেকম্মে খেত। এই হুজ্জতি, খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট, ছিনতাই, তোলাবাজি, ডাকাতির নাম দিল "যুদ্ধ"। লুটের মাল ভাগবাঁটোয়ারা করে নিত। বখরা পেতে বাড়ল লোকের ভিড়।
এরপর আরেক ফন্দি আঁটল। নতুনদের শেখাতে হবে। তাই হাবিজাবি নাম দিয়ে শতশত খোঁয়াড় বানাল। সেখানে এইসব অপকম্ম শেখানো চলল। লুঠপাটও চলল।
বছর ২২ বেঁচে ছিল মহাউন্মাদটা। এর ভিতরেই ৬ থেকে ৩৬ বছর বয়সী ডজনখানেক বউ বানাল। দাসদাসী, বউবাচ্চা অগাধ সম্পত্তি বানাল। মরার আগে সবাইকে বলে গেল তার অপকম্মগুলোকে অনুসরণ করতে। তাহলেই সবার একটা হিল্লে হবে। কষ্‍ট না করে পায়ের-উপর-পা-তুলে মহানন্দে জীবন কাটাতে পারবে। সবাই দেখল সত্যিই তাই! মহাউন্মাদকে সব অনুসরণ করতে লাগল। কেউ পরকালে ভোগবিলাসী জীবন পাওয়ার জন্য। কেউ বা চাইল কম খাটুনিতে এলোমেলো-করে-দিয়ে-লুটেপুটে সহজে বিলাসে বাঁচতে। যা-ই করো না কেন "ধর্মের" তকমা তো আছে, কিছু বলার নাই। আবার ভয়ও পাবে লোকে। এভাবে যে যেখানে যেভাবে পারল নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াল। কোটিকোটি লোক অন্ধের মতো দৌড়ল ইহকাল ও পরকাল নাম দিয়ে ভোগবিলাসের হাতছানিতে। যেন পিপীলিকা আগুনের দিকে ছুটছে। কেউ বা ওদের ভয়ে, ঠেকায় পড়ে জীবন বাঁচাতে এল; রইল চুপচাপ। কিন্তু মনে মনে তারা আগের মতোই থাকল।
প্রায় ১৪০০ বছর ধরে চলল মহাউন্মাদীদের তাণ্ডবনৃত্ত। রাজনীতিও ঢুকল। সুচতুর কিছু মানুষ ওদেরকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে লাগাল। পাড়ার মস্তানরা পাড়ায়। আর বড় মস্তানরা বড় ক্ষেত্রে, দেশে দেশে। আজ এর ১০০তলা বাড়ি ভাঙে, তো, কাল ওর দেশ দখল করে। পরশু অন্য কারো অঞ্চলটা বোম মেরে ধ্বংস। প্রাচীন বহু ঐতিহাসিক স্থানই লেপাপোছা দুরমুশ করে দিল। পারলে বোধহয় সমুদ্রটাই ছিনতাই করে। নেহাত মেরুতে যায়নি। নচেত্‍ বরফগুলোও গলিয়ে দিত বা কিছু একটা বদকাণ্ড ঘটাত। যেখানে গেছে সেখানেই ধ্বংস। সে এক মহাউন্মাদের মহাতাণ্ডবলীলা চলল বহুকাল ধরে। সঙ্গে বানিয়ে চলল গুচ্ছের খোঁয়াড়।
নাহ, পড়াশুনার ধারধারেনি ওরা। ব্যাপারটা যেন মতলবাজ পোলাপানদের মতো। নিজের না পোষালেই, ভাঙ! সবই তো নতুন নতুন ঠেকে, তাই ভাঙচুর করে উল্টেপাল্টে পরখ করতে চায়! সঙ্গে আজগুবি বায়না--- কোন এক অজানা জায়গায় যাবে! সেখানে নাকি তাদের পছন্দসই খেলনাবাড়ি, খাবারদাবার, বাগানটাগান সব রাখা আছে! পৃথিবীর সবই নাকি বাজে! তাই এসব ভেঙেটেঙে ঐ অজানা বাগানবাড়িতে যাবে! বোঝো কাণ্ড!
তবে, বহুকাল পরে সভ্য মানুষের পীড়াপীড়িতে এরা কিছুটা লেখাপড়া শিখেছিল। তাও বেশিদূর দৌড়াতে পারেনি। তবে দৌরাত্ম বেড়েছিল। ওদের ছোটবেলা থেকেই ঘিলু শুকাতে থাকে আজগুবি চিন্তায়। কী আর করা যাবে!
প্রায় ১৪০০ বছর ধরে এইসব অপকম্মের ধাড়িগুলোকে বহুভাবে বুঝান হয়েছিল; পারলে হাতেপায়ে ধরার মতো করা হয়েছিল; কোথাও বা জামাই আদরে রাখা হতো এইজন্য যে, আপদগুলো যাতে শুধরায়। বহুভাবে বুঝান হয়েছিল যাতে সুস্থভাবে ভদ্রসভ্য ভাবে বাঁচে। বহু কোটি মানুষ বুঝাল, বুঝানর চেষ্টা হলো। জীবন বাঁচাতে যারা ভয়ে সিঁটিয়েছিল তারা বুঝল, উন্নত হলো। তারাও পাগলদের বোঝাল। কিন্তু, ওদের ঐ এক পোঁ; কে শোনে কার কথা! পালেরগোদা কী কী বলেছে সেটুকুই শুধু শুনবে তারা। পালেরগোদারাও স্বার্থসিদ্ধি করতে পাখিপড়া করে ছোটবেলা থেকে শেখাত, আসকারা দিত।
নাহ, গোঁয়ারগুলা ভালো কথা শুনলই না। একই ভোগবিলাস আর আজগুবি চিন্তা করতে করতে মাথাগুলো ইটের মতো শক্ত। নতুন কিছুই ঢোকে না। ভাবতেই চায় না। ঘিলু শুকিয়ে কাঠ। কী বা করা যাবে! চেষ্টা অনেক করা হলো ভালো করার সুস্থ করার। বাকিবিশ্বের সুস্থভাবে বাঁচাই দায়।
শেষে একদিন বিশ্বসুদ্ধ লোক গেল খেপে। ব্যাস; হুব্বা জোব্বা পরা ধামড়া উস্কানিদার ধান্দাবাজগুলো, পুচকে থেকে ধাড়ি পালেরগোদাগুলোও শেষ। সাধারণ পাগলাগুলোরে পাগলাগারদে রেখে সুস্থ করা হলো। এখন বিশ্বের লোক বিষয়টাই ভুলে গেছে। আপদ বিদায় হয়েছে। বাঁ-চা গে-ছে।

ওই "ধর্ম" তকমাটার নাম ছিল "ইসলাম"। পাগলগুলোর নাম ছিল "মুসলমান"। আর এই যে যাদুঘরে রাখা ওদের কিছু নিশান-- "কোরান, হাদিস" সঙ্গে কিছু ব্যাখ্যামূলক বইপত্র আজগুবি আবদারে, তথ্যে ঠাসা; এগুলো ছিল ওদের ঢাল। মিনিয়েচার মডেলে "মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা" নামক খোঁয়াড়। এখানে অপকম্ম শেখান, ফন্দি আঁটা হতো। বাকি কিছু আসল খোঁয়ারের ইট কাঠ পাথর ইত্যাদির নিদর্শন।
শমীন্দ্র ঘোষ
১৮/০৬/১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.