নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতি ও ধর্মের "যোগ\'-দিন"

২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

বিজেপি ভারত এবং বহির্ভারতে জনসমর্থনের জল মাপা শুরু করল। রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ "যোগ " শুরু হলো ধর্মের। আগে ছিল যোগসাজশ। "যোগ"কে নতুন মোড়কে বিপনণ চলল।
নতুন করে শুরু হলো হুজুক তুলে জনস্রোতকে এককাট্টা করা। সেটা অবশ্যই ধর্ম দ্বারা। এমন হুজুক ভারতে বহুবার সুপরিকল্পিত ভাবে তোলা হয়েছিল। ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে হিন্দুত্বের জিগির। আদবাণীর রামযাত্রার মহানাটক রূপী হিন্দু হুজুক। ১৯৯৫-তে ইট-পাথরে গণেশ মূর্তিকে দুধ খাওয়ানোর হুজুকে নষ্ট হয়েছিল কোটি কোটি টন দুধ। কোটি শিশু, বৃদ্ধ বৃদ্ধা অসুস্থরা দুধ খেতে পায়নি। ফয়দা লুটেছিল ধর্মীয় ও ব্যবসায়ী ধান্দাবাজগণ। এভাবে হিন্দুত্ব তথা ধর্মীয় হুজুকে ভাসানো হয় ভারতীয়দের।
আধুনিক ভোগ্য দ্রব্যে সজ্জিত, সুবিধাপ্রাপ্ত আজকের ভারতীয়রাও ভাসল "যোগ" নামক আজগুবি ভাবনায়, চর্চায়! প্রমাণ হলো, আধুনিকতাটা হলো ভড়ং; মুখোশ। আসলে, অনিশ্চয়তা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, লোভ লালসা, ভীরু জো-হুজুর মনোভাব, নিরাপত্তাহীনতা, হুজুকে মানসিকতা বেরিয়ে এলো। ধর্মে অজ্ঞতা সম্বৃদ্ধ দুর্বলতা তো ছিলই। সেই কারণেই ধর্মের মাধ্যমেই হুজুক তোলা হয়।
বিজেপির ফয়দা, জনসমর্থন কতটা এটা জানা। আরএসএস, ভিএইচপি সহ হিন্দু মৌলবাদী ধর্মীয় সহযোগীদেরকে সন্তুষ্ট রাখা এবং তাদের প্রসার সাধনে পরোক্ষ সহযোগিতা করা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। হিন্দুভাবাপন্ন কর্পোরেটদের সন্তুষ্ট রাখা। সহযোগী সংস্থাগুলোকে, ধর্মব্যবসায়ীদের টাকা রোজগারের সুযোগ করে দেওয়া।
রাজ্যসভায় সমর্থন কম। ক্রমাগত অর্ডিন্যান্স জারি করে দেশ চালাতে হচ্ছে। যা ঐতিহাসিক।
অন্যদেশগুলোকে সংকেত পাঠানো যে, বিজেপির জনসমর্থনের পরিমান কতটা।
এরপর শিক্ষায় গৈরিকীকরণ শুরু হবে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধনী হবার পথ সুগম হবে। আর, নিশ্চিতভাবেই বিদেশের সঙ্গে কোনও না কোনও অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক বা যুদ্ধ ইত্যাদি চুক্তি হবে, যা আসলে দেশের স্বার্থ বিরোধী।অথবা, বিদ্রোহ দমনে যুদ্ধ শুরু করবে। সুদুর অতীতে দাসবিদ্রোহের আঁচ পেয়েই ছান্দ্যোগ্য উপনিষদের "জন্মান্তরবাদ" দিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করা হয়েছিল। এখন জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অপ্রাপ্তি, দারিদ্র, অব্যবস্থা থেকে এবং তত্‍সংক্রান্ত ক্ষোভের আঁচ পেয়ে।
দেশ খাদ্য সংকটে আছে। দারিদ্র বাড়ছে। অভূক্ত মানুষের মিছিল। জল জমি জঙ্গল বেহাত হয়ে উদ্বাস্তুরস্রোত। শিক্ষায় আর কিছু দেওয়ার নাই। জনসংখ্যা বাড়ছে। বসবাসের স্থান সঙ্কুলান। ঋণে সুদে জর্জরিত। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এমতাবস্থায় "আচ্ছে দিন" মানে কর্পোরেট, হিন্দু মৌলবাদের পক্ষে। কিন্তু জনসাধারণের জন্য কল্পনাবিলাস। অন্তত বর্তমান ব্যবস্থায় সংকটের কোনওই সমাধান নাই; আর, "আচ্ছে দিন" মানে আনার চেষ্টা পাগলামো।
গোদের উপর বিষফোঁড়া হলো, একতৃতীয়াংশ অঞ্চলে স্বয়ম্ভর গ্রামভিত্তিক নতুন দেশ গড়ে উঠছে। এটা ছড়াচ্ছেও। গৃহযুদ্ধও লাগতে পারে। খাদ্য না পেলে কি যোগ ধুয়ে জল খাবে? নাকি হিন্দুত্বের বা ধর্মের চচ্চরি গিলবে জনগণ?
"আচ্ছে দিনের" গুজবও আর কেউ শুনছে না। ও দিয়ে শাকভাজাও হয় না। সকলেই জেনে গেছে যে, মোদী হলেন কর্পোরেট দালাল। তাদের সুবিধা দেখতেই ক্ষমতা দখল করানো হয়েছিল। এজন্য প্রায় ১০০০০ কোটি টাকায় হুজুক তোলা হয়েছিল। খরচের ফসল কর্পোরেটগণ ঘরে তুলেছে। বিজেপি পেয়েছে তখত্‍ সহ পরবর্তী কালের শোষণের আইন নির্মাণের ক্ষমতা।
এখন "যোগ"এর হুজুকে সম্পদের বখড়া ভাগাভাগিতে নেমেছে শোষক ও তার দালালবাহিনী। এতে ভেড়ার পালের মতো ভিড়েছে অনেকে। শিক্ষিত থেকে সামান্য। যদিও সবই অর্ধশিক্ষিত। এবং অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভয়ে বাধ্য হয়ে ভিড়েছে।

কোই দেশে উন্নত প্রযুক্তি চর্চা, বিজ্ঞানমনষ্কতা চর্চা, যুক্তিচর্চা, মানবতাবাদী জীবন চর্চার উত্‍সব বা দিবস বা মাস পালন করা হলো না কেন? দুর্নীতির উচ্ছেদ উত্‍সব দিবস বা মাস পালন করাই যেতে পারে। এ বিষয়ে হুজুকও তো তোলা যেতে পারে।
এটা করলে বিজেপিরই বিপদ। তাছাড়া, ওসব তারা বোঝে না জানেও না। আধুনিকতাটা, প্রযুক্তি বোধটা ভড়ং।

বিজ্ঞানমনষ্কদের থেকে শেখা যায় বিজ্ঞানমনষ্কতা। সমাজতত্ববিদের থেকে সমাজতত্ব। গণিতজ্ঞের থেকে গণিত। ঐতিহাসিকের থেকে ইতিহাস। তেমনই মস্তানের থেকে মস্তানি শেখা যায়। ডাকাতের থেকে ডাকাতি। খুনীর থেকে খুন। প্রতারকের থেকে প্রতারণা। দালালের থেকে দালালি। তাই, বিজেপি এবং তার সহযোগীরা দালালি, হিন্দু জিগির, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার ছাড়া আর কিইবা শেখাবে। ওরা এটাই জানে। এটাতেই ওরা দক্ষ। যেমন রামদেব হলো প্রতারক। মোদী হলেন ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী, দালাল। মোহন ভাগবত হলেন হিন্দুভীরু ও অর্ধশিক্ষিত ধর্মীয় দালাল। মুরলী মনোহর হলেন অর্ধশিক্ষিত ভণ্ড।
তাই বিস্ময়ের কিছু নাই। এদের লক্ষ্য হলো ধর্মের জিগিরটা নতুন মোড়কে, কর্পোরেট শৈলী ছড়ানো। আর এর থেকে নিজ নিজ ফায়দা লোটা। আধুনিকতাকে বিয়োগ করে "যোগ" নিয়ে বখড়া ভাগাভাগি করে নিজ নিজ সম্পদ কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলা।

এজন্যই ভারতে ব্যবহৃত সিংহভাগ ভোগ্যপণ্য, প্রযুক্তির আবিষ্কতারা ভারতগর নয়, আধুনিক বিশ্বের। ভারত ডুবে আছে ধর্মের জঙ্গলে।
জার্মানের একটা কুকুর যে নিরাপত্তা পায়, এদেশের একলাখি মাসিক বেতনের মানুষ তাও পায় না। স্ক্যান্ডেনেভিয় দেশগুলোতে দরিদ্ররা যে সুরক্ষা পায়, এদেশে সুউচ্চ মধ্যবিত্তরাও তা পায় না। সিংহভাগ ধর্মহীন জনগণের দেশে অপরাধ নেই বা এতই কম যে, ভারতে তা স্বপ্নবিলাস মাত্র। জনবহুল চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রযুক্তি যতটা উন্নত, ভারতে ততটাই অবনত। জাপানে যেভাবে মাছ চাষ, সেচ, কৃযিকাজ হয়, এদেশ তা কল্প উপন্যাসে পড়বে। উন্নত বিশ্বের জীবনযাপন, আর্থসমাজ নিয়ে যদি উপন্যাস লেখা হয়, তবে এদেশের মানুষের কাছে কল্পলোকের গল্প ঠেকবে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা দালাল "যোগ" নিয়ে জোকারের মতো লম্ফঝম্প করে। কী মেধা। হাস্যকর!

রাষ্ট্রসংঘের মানোবন্নয়ন সূচকে ভারত বিশ বছর আগে ছিল ১২৭ নম্বর স্থানে। ২০১১-তে ১৩৪ নম্বরে। নমোর নেতৃত্বে হয়ত ১৩৬ বা ১৩৮- পৌঁছবে ভারত। অর্থাত্‍ পিছন দিকে এগিয়ে যাবে। শেষে পিছনের দিক থেকে প্রথম হয়ে বিশ্বসভায় শ্রেষ্ঠ আসল লবে।
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর নেতৃত্বে সেপথেই এগোচ্ছে মনে হচ্ছে।
শমীন্দ্র ঘোষ
২১/০৬/২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.