নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মের ও ঈশ্বরের পরিচয়

১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৭

ধর্মের ও ঈশ্বরের পরিচয়

শমীন্দ্র ঘোষ
###[@নিবন্ধটি পত্রিকতে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১২-তে। লেখকের কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।]

ধর্ম = Religion 'হলে দু'ধরনের ধর্ম আছে।
১) ঈশ্বর ও অলৌকিকতা ভিত্তিক ধর্ম। একে উপাসনা ধর্ম নামে আপাতত ডাকছি।
২) মনুষ্য গুণ বিশিষ্ট ধর্ম, বা মানবতা।
এই দুটো ধর্মই পরস্পর বিরোধী। কোনও উপাসনা ধর্মই মানবিক নয়। এটা ধর্মগ্রন্থগুলো পড়লেই জানা যায়। উপাসনা ধর্ম পালন করে মানবতাবাদী হওয়া যায় না। মানবতায় আস্থা রাখলে উপাসনা ধর্ম বিরোধী হতেই হবে। নচেত্‍ সে "চালতা।"

যিশু, হাযরত্‍, মোজেস, জরাথ্রুষ্ট, হিন্দু মুনি-ঋষি ইত্যাদি সমস্ত ধর্ম প্রবর্তক ও ধর্মগুরুদের মৃত্যু হয়েছে। ঈশ্বরের ওইসব স্বঘোষিত একান্ত সেবক, ভক্ত প্রচারকদের মৃত্যুকে ঠেকাতে পারেনি ঈশ্বর স্বয়ং! গত প্রায় ৩০০০ বছরে ঈশ্বরের বহু পীঠস্থান ও ঈশ্বরের মূর্তি ধ্বংস হয়েছে। সেসবও ঈশ্বর রক্ষা করতে পারেনি। যার নিজের ঘর রক্ষার ক্ষমতা নেই, "সে বিশ্বের সবকিছু রক্ষা করে"--এমন ভাবাটাই বালখিল্যতা। আসলে কিছু পাগল অথবা বুজরুক ঈশ্বরের নামে 'যা-খুশি-তাই' করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। আর তাদেরকে ঢাল করে শোষকরা "শোষণ" চালিয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। কয়েকজন ছিলেন ঈশ্বরের-ধর্মের প্রচারক নন ও সমকালীন সমাজে বিশাল প্রভাবকারীও নন। বরং মৃত্যুর পর তাঁদেরকে ধর্ম প্রচারক, ঈশ্বরের সন্তান ইত্যাদি তকমা মেরে ঢাল বানিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছে কু-মানসিকতার অনুগামীরা।

যেমন,

**তাও ধর্ম:
প্রবর্তক "লাওত্‍সে" ৬০০ খ্রি.পূ। মত- সারল্য, বিনয়, সংযম। গ্রন্থ- তাও তেকিং। তাও=রাস্তা। উৎসস্থান চিন অঞ্চল। অন্যতম মূলকথা, " কেউ তোমার ক্ষতি করলে তা নিয়ে উত্তেজিত হয়েও না, দয়ালু ও উদার হও এবং প্রতিদান আশা কোরো না।" মানে, ধনে-প্রাণে মেরে ফেললেও উদার হতে হবে আরকি! অবাক কাণ্ড!

**কনফুশীয়:
প্রবর্তক "কনফুশীয়াস" বা "কংকিউ" ৫৫১ খ্রি.পূ - ৪৭৯ খ্রি.পূ । মতবাদ "গোল্ডেন রুল"। গ্রন্থ- দ্য আনালেক্টস। এটি শিষ্যদের দ্বারা গ্রন্থিত। অন্যতম সেরা কথা, "তোমার ক্ষেত্রে যে আচরণ তুমি চাও না যে ঘটুক, তা অপরের ক্ষেত্রে ঘটিও না।" কনফুশীয়াসের বিশ্বাস, মানুষ আচরণে, কথায়-কাজে ভদ্র-সভ্য হোক। এভাবে সম্মান পাক। এই ভদ্র-সভ্য মানুষই হোক শাসক। সমাজে প্রভাব ছিল ১০০ খ্রি.পূ - ১৯০০ খ্রি পর্যন্ত। নীতি-নৈতিকতার উপর জোর দিলেও ঐশ্বরীক শক্তিতে বিশ্বাসী
এঁরা বর্তমান অর্থে ধর্মপ্রচারক বা বুজরুক নন। সমকালে তাঁদের পরিচিতিও ছিল না। মৃত্যুর পর তাঁদেরকে ধর্মগুরু বানানো হয় ও পরিচিতি পান। অনুগামীরা করেকম্মে খেতে থাকে। উৎসস্থান চিন অঞ্চল।

**পার্সি:
প্রবর্তক "জরাথ্রুষ্ট" বা "জোরআস্টার" ৬৬০ খ্রি.পূ। মতবাদ- জোরো অস্ট্রিয়ানিজম। গ্রন্থ- জেন্দ আভেস্তা।
তাঁর মতে অশুভ শক্তি আংরা মাইনু বা আহরিমান, মিথ্যার দৈত্য। শুভ শক্তি আহুর মাজদা ও সহকারী শক্তি আলো বা মিথ্রস। এই দ্বন্দ্ব থেকে সত্যনিষ্ঠ জীবনযাপন করতে হবে। স্বর্গ-নরকে বিশ্বাসী। ঐশ্বরীক শক্তিতে বিশ্বাসী। উৎসস্থান উত্তর-পূর্ব ইরান সীমান্ত--উত্তর আফগানিস্তান অঞ্চল।

**শিণ-টো ধর্ম:
প্রবর্তক নেই। প্রবর্তক ধরা হয় ঈশ্বর "ইজানাগি-নো-মিকোতো ও ইজানামী-নো-মিকোতো " র সন্তান ৬৬০ খ্রি.পূ-এর জাপানি রাজাকে। রাজাই এর ধারক ছিল। গ্রন্থ নেই। "কাইজি", "নিহন শোকি" থেকে বিবরণ জানা যায়। "কামী" ঐশ্বরীক শক্তিতে বিশ্বাসী। শিণ=ঈশ্বর, টো= পথ।

**ইসলাম:
গ্রন্থ- কোরআন ও হাদিস। এছাড়া আইনগ্রন্থ শারিয়া; যা ফিকহ্‌ (জুরিসপ্রুডেন্স) থেকে সংকলিত। একেশ্বর আল্লাহ্‌। প্রবর্তক হাযরত্‍ মুহাম্মদ (সা) ৫৭০ খ্রি - ৬৩২ খ্রি। ছিলেন "রিলিজিয়াস মিস্টিক" বৈশিষ্ট্যের। বন্ধু আবুবকরের মেয়ে ৯ বছরের 'আয়েশা'কে ধর্ষণ করেন তিনি। পালিত পুত্র জায়েদের বৈধ স্ত্রী 'জয়নব'কে তিনি 'তালাক' করিয়ে আল্লাহ্‍-র নামে বিয়ে করেন। সমাজবিরোধীদের নিয়ে দল বানিয়েছিলেন। কাজ ছিল আল্লাহ্-র নামে লুটপাট, খুন, ধর্ষণ করে জীবননির্বাহ। উৎসস্থান আরবের মক্কা ও মদিনা।
পৃথিবীতে তিনিই ধর্মের নামে ভয়ংকর হিংসা ও ধ্বংস চর্চার প্রবর্তক।

**হিন্দু:
প্রবর্তক নাই। ১৫০০ খ্রি.পূ থেকে "বৈদিক"। ৫১৬ খ্রি.পূ নাগাদ পারসিক "হন্দ্"। ৩২৬ খ্রি.পূ নাগাদ "ইন্দাস"। প্রাক-বৈদিক ও বৈদিক ধর্মের সংশ্লেষে "হিন্দু"।
গ্রন্থ-- বেদ, উপনিষদ, গীতা, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত। এসবে ধর্ষণ, অজাচার, ব্যভিচার, চুরি ইত্যাদির সমর্থন রয়েছে। স্ববিরোধী, ভণ্ডামী, আজগুবি আবর্জনায় ঠাসা গ্রন্থগুলো।

**বৈষ্ণব:
ঋগ্বেদের সমসাময়িক কালে পশ্চিমভারত অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল। পরে প্রচার হ্রাস পায়। বিষ্ণু হল ঈশ্বর। এই ধর্মের যুগান্তকারী প্রচারক "চৈতন্য" ১৪৮৫ খ্রি - ১৫৩৩ খ্রি। ইনি "রহস্যময় মন" বৈশিষ্ট্যের। মতবাদ "অচিন্ত্যভেদাভেদ"। হিন্দু বর্ণ ও জাতপাত, ধর্মবিভেদ মানতেন না।

**শিখ:
প্রবর্তক "নানক" ১৫৩৯ খ্রি। ঈশ্বরে বিশ্বাসী। "হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ঈশ্বর একই"-- এটা মনে করতেন। গ্রন্থ-- গ্রন্থসাহিব। ঊৎসস্থান পাঞ্জাব অঞ্চল।

**খ্রিস্ট:
প্রবর্তক "যিশু" ৪ খ্রি.পূ। তিনি "রিলিজিয়াস মিস্টিক" (Mystic Phenomena) শ্রেণির।
প্রেম ও অহিংসার প্রচার করে "কমিউন"-এর আদলে সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টায় ছিলেন। ঈশ্বর উপাসনাতেও ছিলেন। ওনাকে নিয়ে বহু মিথ্যা গল্প ফেঁদে মিথ বানানো হয়েছে।
গ্রন্থ- নিউ টেস্টামেন্ট বা বাইবেল।

**ইহুদী:
ইহুদী ধর্মের প্রচারক ও সংগঠক "মোজেস" ১২০০ খ্রি.পূ। তিনি ভ্রান্ত দর্শন-শ্রবণানুভূতির শিকার, গল্পকথার মিথ। ঈশ্বর বিশ্বাসী।
গ্রন্থ- তালমুদ ও তোহরা বা ওল্ড টেস্টামেন্ট।
**সাংখ্যকার "মহর্ষি কপিল" (খ্রি.পূ ১০০০) ছিলেন নিরীশ্বরবাদী ও নাস্তিক। কার্যকারণ সম্পর্কে বিশ্বাসী, বস্তুবাদী।
তাঁকে হিন্দু বানানো হলো। মন্দির বানিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যবসা চলছে।

**জৈন:
প্রবর্তক, "পার্শ্বনাথ" ৮১৭ খ্রি.পূ। তিনি নিরীশ্বরবাদী ও নাস্তিক।
তাঁর চতুর্যাম:
১) অহিংসা, ২) অনৃত, ৩) অস্তেয়, ৪) অপরিগ্রহ।
**"মহাবীর" ৫৯৯ বা ৫৬৯ খ্রি.পূ। জৈনধর্মের প্রচারক ও প্রধান সংগঠক এবং নিরীশ্বরবাদী, নাস্তিক ও অলৌকিকে অবিশ্বাসী। তিনি চতুর্যামে 'ব্রহ্মচর্য' নীতিটি যুক্ত করে "পঞ্চব্রত" করেন।
এর দুটি ভাগ,
১) গৃহীদের জন্য "অনুব্রত", উদ্ভিদজাতীয়র ঊর্ধে প্রাণীদের প্রতি অহিংসা ও এক পতি-পত্নী ব্রত।
২) শ্রমণদের "মহাব্রত", সমস্ত ইন্দ্রিয় ভোগ থেকে বিরত থাকা।
মতবাদ "আপেক্ষিক গুণবাদ" বা 'স্যাদবাদ'।

**বৌদ্ধ:
প্রবর্তক, "বুদ্ধ" ৫৬৩ খ্রি.পূ- ৪৮৩ খ্রি.পূ।
তাঁর চারটি সিদ্ধান্ত:
১) ঈশ্বরের অস্তিত্বে অস্বীকার,
২) আত্মাকে "নিত্য" অস্বীকার,
৩) কোনও গ্রন্থকে "স্বতঃপ্রমাণ" অস্বীকার।
৪) জীবন প্রবাহকে স্বীকার।
তাঁর মত:
১) প্রতিটি ঘটনার পিছনে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে, যা প্রতিত্যসমুত্‍পাদবাদ,
২) জীবন প্রবাহকে স্বীকার, যা জীবনপ্রবাহবাদ,
৩) জগত্‍ব্যাপী পরিবর্তনশীলতাকে স্বীকার, যা ক্ষণিকবাদ।
তিনি তাঁর মতবাদের প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন।
তিনটি স্কন্ধে তাঁর অষ্টাঙ্গিক মার্গ:
ক) প্রজ্ঞা -
১) সম্যক দৃষ্টি (সঠিক দৃষ্টি, সঠিক জ্ঞান, যথার্থ দর্শন);
২) সম্যক সংকল্প (ক্রোধ, হিংসা, প্রতিহিংসা, লোভ ত্যাগ)।
খ) শীল-
৩) সম্যক বাক্য (সত্য ও প্রিয় কথা, হেতু যুক্ত কথা, প্রয়োজনীয় কথা);
৪) সম্যক কর্ম (সত্‍ কাজ করা ও হিংসা, ব্যভিচার, চুরি, লুঠ না করা);
৫) সম্যক জীবিকা (সত্‍ জীবিকা গ্রহণ ও অস্ত্রব্যবসা,মদ ব্যবসা, কসাই জীবিকা ত্যাগ)।
গ) সমাধি-
৬) সম্যক ব্যায়াম (যথার্থ ব্যায়াম, দৈহিক পরিশ্রম ও মানসিক কসরত্‍, সুস্থ চিন্তা চর্চা);
৭) সম্যক মনন (অমলিন ও সুন্দর মনের প্রবাহ);
৮) সম্যক ধ্যান (যথার্থ ধ্যান, চিত্তের একাগ্রতা)।
নির্বাণ=দুঃখের বিনাশ।
পৃথিবীর প্রথম যুক্তিবাদী মানুষ গৌতমবুদ্ধ।সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা প্রজ্ঞাময় সাংগঠনিক মানুষ। ভারতবর্ষ "সংগঠন করা" শিখেছে বুদ্ধর কাছেই।
বুদ্ধর মৃত্যুর পর তাঁকে আস্তিক বানাল তাঁরই বুজরুক অনুগামীরা। এরপর হিন্দু বানিয়ে ঈশ্বরের অবতার সাজানো হল।
মহাযানীরা বানাল ঈশ্বর।শেষে ঈশ্বরের ঈশ্বর।
অবাক কাণ্ড!
অবাক পৃথিবী, অবাক!

এছাড়াও আছে বোঙ্গা ধর্ম। ভারত অঞ্চলের অন্যতম উপজাতিদের ধর্ম। পৃথিবীতে এরকম সহস্রাধিক উপজাতিদের ধর্ম আছে। যতদূর জাা যাচ্ছে সমস্ত ধর্মই ঈশ্বরবিশ্বাসী, উপাসনাভিত্তিক ও অলৌকিকতায় বিশ্বাসী। জাদুবিশ্বাসও আছে প্রবলভাবে। এর দ্বারাই সমাজ চলে; যদি-না রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ রাখে। এমনকি যেখানে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ প্রবল, সেখানেও সমান্তরাল সমাজব্যবস্থা আছে; যা স্ব স্ব ধর্মভিত্তিক।

বর্তমানে ধর্মের নামে হানাহানি, মানুষে মানুষে বিভেদ-বিচ্ছেদ, হিংসা, লোভ, হুজুক, ভয়, অপকর্ম, খাদ্যের অপচয়, বাসস্থানের অপচয়, সমগ্র উৎপাদনের অপচয় সহ ধর্মের নামে যা-খুশি-তাই করা, অসামাজিক, প্রগতিবিরোধি কাজকর্ম বন্ধ করুন।
তাৎক্ষণিকভাবে "ধর্ম বিশ্বাস" ছাড়তে না পারলে, তা থাকুক ঘরের কোণে ব্যক্তিগতভাবে একান্তে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়বস্তুগুলো প্রকাশ্যে অনুশীলন, প্রচার, প্রসারের অপচেষ্টা বন্ধ করুন। ধর্মস্থানে যাওয়া ও তা ব্যবহার করা বন্ধ করুন। ধর্মস্থানগুলোকে সামাজিক কাজে যেমন, গ্রন্থাগার, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত খাদ্য মজুতাগার, স্কুল-কলেজ, কারখানা, সামাজিক উৎসব স্থান, উদ্বাস্তু ও অনাথদের নিরাপদ বাসস্থান, শিশুদের জন্য পড়া বা খেলার জায়গা ইত্যাদি ধর্মহীন কাজে ব্যবহার করুন। এই কাজটা মানবিক। পূজা-প্রার্থনা-নামাজ-বলি ইত্যাদি আজগুবি কাজে ব্যবহার না করে এই মানবিক কাজটা করা আবশ্যক।
ধর্মীয় সংস্থাগুলোকে প্রকাশ্যে ধর্মীয় কাজকর্ম করতে নিষেধ করুন দ্রুত। সামাজিক অনুষ্ঠানে ধর্মীয় সংস্থাগুলোকে বয়কট করুন ও ধর্মীয় আচরণ বন্ধ করুন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান আর নয়। বরং, প্রতি মাসেই স্থান কাল সংস্কৃতি অনুযায়ী ধর্মহীন সামাজিক অনুষ্ঠান করুন; করতে সহযোগিতা করুন। ঋতু ভিত্তিক, মেধা-জ্ঞান ভিত্তিক, 'ধর্মহীন স্মরণীয় দিন' পালন দ্বারা অনুষ্ঠান করা যায়। একাজটা ছড়িয়ে দিন। এক থেকে দশ; দশ থেকে একশ, হাজার, কোটিতে। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রকাশ্য বিতর্ক-আলোচনা সভাতে ধর্মবেত্ত্বাদের, ধর্মবিশ্বাসীদের নিমন্ত্রণ করুন। তাঁদের বক্তব্য রাখতে দিন। তাঁদের বয়সজনিত সম্মান বজায় রেখে বিতর্কে পরাজিত করুন।
*যুক্তি দিয়েই প্রমাণ করে দিন--- "ধর্ম হলো মানবসভ্যতার প্রগতিবিরোধী, ধর্ম হলো শোষণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার, ঈশ্বর হলো মানবসৃষ্ট সর্বকালের সেরা গুজব, জন্মান্তরবাদ হলো শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ঠেকাবার জলকামান, জ্যোতিষশাস্ত্র হলো পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার শাস্ত্র, ভাগ্য হলো শোষকশ্রেণির তৈরি হাতিয়ার এবং সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদার-বাবাজি-মাতাজি-গুরুজি-জ্যোতিষী-তান্ত্রিক-ওঝা-হুজুর-গুণিন --গণই ভণ্ড-প্রতারক অথবা পাগল।" অলৌকিকত্বের দাবিদারদের ভাণ্ডাফোড় করুন প্রতিনিয়ত।
চিন্তায় মুক্তি আনুন। মুক্তচিন্তা চর্চা করুন। এই ধরনের কাজের চর্চা, প্রচার ও প্রসার করুন লাগাতার ভাবে। এটাই ছড়িয়ে পড়বে ধীরে ধীরে।
দর্শনহীন, আদর্শহীন এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-কর্মসূচি ছাড়া যেকোনো আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য; সুন্‍দর ও সুস্থ সমাজ গঠন অসম্ভব। তাই সুন্দর মানুষ গঠন করতে হবে। অর্থাত্‍ সুন্দর মনের মানুষ; যে হলো যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদী মুক্তচিন্তার মানুষ।
এজন্য দর্শনটা বুঝে নিতে হবে। "যুক্তিবাদ" দর্শন হলো একমাত্র দর্শন, যা অখণ্ড ভাবে ও সম্পূর্ণ ভাবে জগত্‍ এবং জীবনকে দেখাতে, বোঝাতে, ব্যাখ্যা করতে পারে; পথ বলতে পারে; উদ্দেশ্য-লক্ষ্যকে স্থির করতে পারে। নিজের যুক্তিবোধ দিয়ে বুঝে নিন যে, বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ গড়ার অর্থ যুক্তিবাদী মানুষ গড়া; বিজ্ঞান আন্দোলন এবং যুক্তিবাদী আন্‍দোলন সমার্থক।
আবার এই যুক্তিবাদই হলো আদর্শ। মানবতা হলো নীতি। যা এক হিসেবে সকলের প্রতি, সকলে মিলে সকলের প্রতি মনুষ্যসুলভ আচরণ করা। মনুষ্যসুলভ আচরণই মানুষের শোভা পায়।
এই অনুযায়ী কর্মসূচি, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, পদ্ধতি ঠিক করে দেওয়া হলো পূর্বেই। অহিংস ভাবেই এটা গড়া যায়। এপথেই ধীরে ধীরে এগোনো সম্ভব। এক থেকে একশ; একশ থেকে বিশ্ব।
আমি শুরু করেছি অনেক বছর হলো। এই আন্দোলন চালাচ্ছি। আপনাদেরও শামিল হওয়ার আহ্বান জানালাম।
আপনারা বাকি বাংলাবাসী এবং বাকি বিশ্ববাসীও শুরু করুন একাজ, এই আন্দোলন।
প্রতিটি অঞ্চল, প্রতিটি দেশ তাদের নিজের সমাজ-সংস্কৃতিক অবস্থা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও প্রাকৃতিক অবস্থা অনুযায়ী একাজ করুন; করতে থাকুন। ছড়িয়ে পড়ুক আপনার কাজ সমাজ থেকে সমাজে। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। সহযোগিতায় আছি।
প্রত্যেকের লক্ষ্য একই। এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে তোলা বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ, যুক্তিবাদী মানুষ, মানবতায় ঋদ্ধ মানুষ; সুন্দর মানুষ; সুন্দর সমাজ; সুন্দর বিশ্ব; সাম্যের বিশ্ব।

@শমীন্দ্র ঘোষ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০

শমীন্দ্র ঘোষ বলেছেন: এটি বিস্তারিত বিবরণ সহ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হবে। থাকছে ধর্ম নিয়ে প্রচীন থেকে আধুনিক মত সহ ধর্মের ভবিষ্যত্‍।
ধন্যবাদ।
শমীন্দ্র ঘোষ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.