নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গী বনাম দেশপ্রেমী এবং সন্ত্রাসবাদ বনাম স্বাধীনতাসংগ্রাম

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

#জঙ্গী_দেশদ্রোহী বনাম #দেশপ্রেমী
#সন্ত্রাস বনাম #স্বাধীনতা_সংগ্রাম:

#শমীন্দ্রঘোষ

কে কার চোখে কখন কিভাবে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদী-দস্যু-দেশদ্রোহী বা দেশপ্রেমী-নায়ক হয়ে ওঠে? তুলনামূলক ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা দেখা যাক নির্মোহে।

২০আগস্ট, ১৮৫৫; বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর #হ্যালিডে। তিনি সাঁওতাল পরগণার স্থানীয় ব্রিটিশশাসকের থেকে একটি টেলিগ্রাম পেলেন। বলা হয়, #দুর্ধর্ষ_দস্যু_সর্দারটি ধরা পড়েছে। এই দস্যুটি হলেন #সিধহো। #সাঁওতাল_বিদ্রোহের নেতা। একসঙ্গে ধরা পড়ে তাঁরই ৩ ভাই, #কানহো #চাঁদ ও #ভৈরব। এঁদের বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছিল ব্রিটিশরাজ। দুন্দুভিনাদে ঘুম ছুটেছিল ব্রিটিশের। এটি ভারতের স্বাধীনতার উল্লেখযোগ্য ভয়ংকর বিদ্রোহ। তাই, ব্রিটিশের চোখে এঁরা দস্যু, দলটা দস্যুদল।
অপরদিকে তখন থেকে বর্তমানেও উপমহাদেশীয়র চোখে তাঁরা হলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামী #বীর_নায়ক #দেশপ্রেমী, শ্রদ্ধেয়।
.
১৮এপ্রিল, ১৯৩০; কেঁপে উঠল চট্টগ্রাম। ব্রিটিশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করলেন #মাস্টারদা_সূর্য_সেন-এর বাহিনী। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুট করলেন। ব্রিটিশ পুলিশক্যাম্প সহ নিরাপত্তাবাহিনীকে তছনছ করলেন। এজন্য ব্রিটিশরা তাঁকে ও দলটিকে তকমা দিয়েছিল #লুটেরা #খুনি #ডাকাত ইত্যাদি। এবং শেষে জালালাবাদের যুদ্ধে দলের ১২জনকে মেরে ফেলে ব্রিটিশপুলিশ। মাস্টারদার ফাঁসি হয়। এঁরা ছিলেন অনুশীলন সমিতিতে। ব্রিটিশের চোখে এই অনুশীলন সমিতি ছিল #জঙ্গী_দল এবং #বারীন_ঘোষ #অরবিন্দ_ঘোষ প্রমুখরা #ডাকাত #খুনি #সন্ত্রাসী। ব্রিটিশের চোখে #ক্ষুদিরাম_বসু #খুনি। অথচ, আজ পর্যন্ত উপমহাদেশে এঁরা সকলেই #স্বাধীনতা_যোদ্ধা দেশপ্রেমী বীর নায়ক, স্মরণীয় ও শ্রদ্ধেয়।
.
সেইসময়ের বাংলার সশস্ত্র আন্দোলন ব্রিটিশের চোখে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গী কার্যকলাপ এবং গান্ধিবাদীদের চোখে #হুজ্জোতি #হামলা ইত্যাদি। মানে গুরুত্বহীন।
.
একটু পিছন দিকে তাকাই। ভারতবর্ষ শাসনে ইসলামিরা। #আলাউদ্দিন_খিলজি থেকে #আওরঙজিব স্বধর্মীদের ও অনুগামী প্রজাদের চোখে দেশপ্রেমী নায়ক; হিন্দুদের চোখে অত্যাচারী।
#চিতোরের_রাণাপ্রতাপ হিন্দুদের চোখে দেশপ্রেমী নায়ক এবং ইসলামি শাসকের অনুগামীদের চোখে দেশদ্রোহী। বাংলার শাসক #জালালুদ্দিন স্বধর্মীর চোখে দেশপ্রেমী এবং স্থানীয় অমুসলিম প্রজাদের চোখে অত্যাচারী, বর্বর।
.
মারাঠী বর্গী #রঘুজি_ভোঁসলে #ভাস্কর_পণ্ডিত স্বদেশীর চোখে বীর দেশপ্রেমী; তাঁরা বাঙালির চোখে বর্বর লুটেরা; ভয়ার্ত স্মরণে ঘুমপাড়ানি গান, "ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে..."।
.
প্রায় ৩০০০ বছরেরও আগে ভারতবর্ষে এল আর্যভাষী বৈদিকরা। তারা মৌখিকভাষা-ধর্মোপাসনা-যুদ্ধ-লুঠপাট ছাড়া জানত না কিছুই। তাও নিজেদের মনে করতো উন্নত। তাদের বীরগাঁথায় পূজিত #ইন্দ্র #মিত্র #বরুণ প্রমুখ।
ভারতবর্ষের ভূমিপুত্ররা সব জানত। লেখাপড়া-কৃষি-যুদ্ধ ইত্যাদি। তখন সবচেয়ে শক্তিশালী অঞ্চল ছিল এখনের বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-আসাম-ত্রিপুরা-বাংলাদেশ; অখণ্ড #পূর্বদেশ। থাকত আজকের বাঙালির পূর্বপুরুষ। শক্তিশালী ও উন্নত ছিল এরা। বৈদিকরা প্রায় ১৫০০ বছর অঞ্চলটি জয় করতে পারেনি। এই পূর্বদেশের মানুষরা বৈদিকদের চোখে #দস্যু #ব্রাত্য #হনুমান #তস্কর #রাক্ষস #অসুর ইত্যাদি।
অথচ, ভূমিপুত্ররা নিজেদের বলতো সংগ্রামী বীর। বাংলার এই ভূমিপুত্রদের গরিষ্ঠাংশ ছিল অসুরপূজক আর্যভাষী আলপীয় ও অস্ট্রিকভাষী আদি-অস্ত্রালদের সংকর জাতি। এরা বীর ও উন্নত। এখনও সেই বীরত্বের প্রতীক #মহিষাসুর পূজা করে উপজাতিরা। তথ্য বলছে এরা ছিল সভ্য এবং বৈদিকরা ছিল বর্বর।
.
আরব্যরা সিন্ধু জয় করলো। তখন তাদের চোখে ওই অঞ্চলের #হিন্দুর অর্থ হলো #চোর। অথচ, স্থানীয়দের চোখে ওই শব্দটির অর্থ চোর নয়। বরং এখনও ভারতের চোখে #মুহম্মদ_বিন_কাশেম থেকে #চেঙ্গিস_খাঁ-রা #লুটেরা জঙ্গী।
বিন কাশেম, সিন্ধ সম্রাট আল জুনায়েদ, ঘজনী সুলতান মামুদ প্রমুখরা স্বদেশীর চোখে বীর ও তাঁদের চোখে পশ্চিমভারতের মানুষ বর্বর, জংলী।
.
আমাদের চোখে ব্রিটিশ #দখলদার। অথচ, ব্রিটিশের সঙ্গে ভারতের মুঘল সম্রাটদের এবং বাংলার নবাবদের বিভিন্ন সময়ে শাসনাধিকারের #চুক্তি হয়েছিল; ভারতশাসনের সনদ পেয়েছিল ব্রিটিশ। তখন চুক্তি করতে বা চুক্তি ক'রে ভারত ছেড়ে পালায়নি ব্রিটিশ। কিন্তু এই চুক্তিগুলোকে ভারতবর্ষের মানুষ মানেনি। জনগণকে বাদ দিয়ে রাজার চুক্তির দাম নেই। এজন্য ব্রিটিশবিরোধী সহিংস ও অহিংস পথে স্বাধীনতাসংগ্রাম করেছিল ভারতবর্ষের ভূমিসন্তানরাই। তখন একথা ওঠেনি যে, 'চুক্তি না মানলে রাষ্ট্রপ্রধান হবে কে'। দখলদার ব্রিটিশ তাড়ানোটাই ছিল মূলমন্ত্র। তাই সর্বাত্মক যুদ্ধঘোষণা করেছিল ভারতবর্ষবাসী।
.
ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল ১৯৪২; বার্মায় ব্রিটিশ-ভারত সেনার প্রাক্তন ক্যাপ্টেন #মোহন_সিং গড়লেন #প্রথম_আই_এন_এ। জাপানিরা সাহায্য করলো। প্রায় ১২০০০ ভারতীয় যুদ্ধবন্দি হলো সেনা। পরে বেড়ে হলো ৪০০০০।
২২জুন, ১৯৪২; ব্যাংকক-এ #ইণ্ডিয়ান_ইণ্ডিপেন্ডেন্ট_লীগ গঠন করলেন #রাসবিহারী_বসু। বার্মা-মালয় জাপানিদের কব্জায়।
১সেপ্টেম্বর, ১৯৪২; তিনিই গঠন করলেন দ্বিতীয় আই.এন.এ। তৈরি হলো #আজাদ_পতাকা। #নেতাজি_সুভাষচন্দ্র_বসু হলেন লীগের সভাপতি। আই.এন.এ-কে পুনর্গঠন ক'রে নাম দিলেন #আজাদ_হিন্দ_ফৌজ। সাহায্য করলো জাপানিরা। তাঁকে জাপানসেনার #দ্বিতীয়_সর্বোচ্চ_উপাধি (2nd Order) দিলো জাপান সরকার। এ'সবই হলো ব্যাংকক-বার্মায়। জাপানি সাহায্যে ব্রিটিশ-ভারত আক্রমণ করলো #ফৌজ।
ব্রিটিশদের চোখে নেতাজি-রা ছিলেন জঙ্গী, সন্ত্রাসী। ব্রিটিশ ও কংগ্রেসের চোখে জাপান #শত্রুদেশ। বামেদের চোখে নেতাজি #তোজোর_কুকুর। ভারতের কোটি কোটি মানুষের চোখে #নেতাজি #রাসবিহারী বীর দেশপ্রেমী, শ্রদ্ধেয়।
.
এসব ঘটনায় নিহত ব্রিটিশরা তাঁদের স্বদেশীয়র চোখে ছিল দেশপ্রেমী নায়ক। শোকের জলে ভেসেছিল টেমস থেকে মেঘনার ব্রিটিশ। নিহত ব্রিটিশের স্মৃতিতে নির্মিত হয় সৌধ।

তফাত্‍ শুধু কে কোন চশমা-চোখে কাকে কিভাবে দেখছে এবং অন্যকে দেখাচ্ছে। লক্ষ্যটা সত্য প্রকাশ করার জন্য কিনা।

কাশ্মীর সমস্যা, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এবং মাওবাদী সমস্যাটা কোন চোখে? নির্মোহে?
এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গীটা মানবিক হওয়া জরুরি।
২১/০৯/১৬
#প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.