নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শব্দে জব্দ, শব্দ বিপ্লব

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪১

শব্দে জব্দ শব্দ বিপ্লব:

শমীন্দ্রঘোষ

বাংলাভাষায় বহু শব্দের অর্থকে বিকৃত করেছে হিন্দুনেতাগণ হিন্দুযুগে। শুরু হয় গুপ্তরাজাদের সময়ে। এরপর শশাঙ্কের সময়ে। সেনরাজাদের সময়ে। এরপর ইসলামযুগে আল-উদ্দিন-হুসেনশাহর কিছু পূর্ব থেকে সম্প্রীতির সময়ে।
উল্লেখযোগ্য স্মার্তকাররা হলেন, হরিভদ্র, অভয়াকরগুপ্ত, জীমূতবাহন, রঘুনন্দন, ভট্ট ভবদেব, হলায়ুধ, অভিনন্দ, সন্ধ্যাকরনন্দী, কৃত্তিবাস, ক্রমদীশ্বর, শ্রীধরদাস, প্রমুখদের শব্দাবলী সংস্কৃত আশ্রিত ছিল; বাংলা হরফেই সংস্কৃত লিখতেন। এ'সময়ে সংস্কৃত ভাষা বাংলার বহু শব্দ চুরি করেছে, রূপ বদলিয়েছে, অর্থ পালটেছে। এভাবে বহু হাজার শব্দকে সংস্কৃত বলে চালানো হয়েছে। অথচ, বাংলাভাষা সংস্কৃতজাত নয়। দুধ যেহেতু প্রাগ্বৈদিক বঙ্গীয়রা খেত, তাই বস্তুটি চিহ্নিতকরণের শব্দ সংস্কৃতজাত হতেই পারে না। এভাবে তুর্কী, আরবি, ফার্সিও এসেছে। মাথায় ঘিলু যেহেতু তখনও ছিল, তাই সেই বস্তুকে মগজ বলত না প্রাগিস্লামী বঙ্গীয়রা।
১৩-১৪শতকে হিন্দু-পঞ্জীকার সামাজিকশাসন চালু হয়। ওই সময়েই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ রচনা শেষ হয়। ব্যাস, সংস্কৃতে আক্রান্ত হলো বাংলা। অপরদিকে আরবি, ফার্সি, তুর্কীকে ম্লেচ্ছ শব্দ বলা হলো; গ্রিক বিষয়কে যবন। এই নিয়েই চলল ঠাণ্ডা লড়াই। তলোয়ার ছেড়ে মেধা বুদ্ধির লড়াই। যে যার সম্প্রদায়ের দায়ে পড়ে দখলে রাখতে শব্দ ভাষা নিয়ে যুদ্ধ শুরু করলো। তবু, বাংলাভাষা সবই গোগ্রাসে নিজের করে নিয়েছে। তখন এবিষয়ে প্রতিবাদ ইত্যাদি করতে গেলে ওই তর্কালঙ্কার, বিদ্যাবাগীশ, সিদ্ধান্তবাগীশ প্রমুখদের সঙ্গে কথা বলতে হতো। সেই স্তরে না গেলে আলোচনা করার অধিকারই ছিল না। এখনকার ফেসবুকীয়দের মতো নয়। পিছনে যতই ব্যাঙ্গ করো, সামনে কেঁচো। তাত্ত্বিকজ্ঞান না থাকলে কথার মার খেতে হতো। সেটুকু লজ্জাবোধ বাঙালির ছিল। অগত্যা বিষয়টি না জানলে ওটাই মানতো। বরজোর প্রশ্ন করতো। এভাবে সমাজ চলতো। এখনকার মতো অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী, সবজান্তা ফেসবুক মূর্খতামূলক সিদ্ধান্তবাগীশতা আলোচনা নামক অনর্থক বিতর্কনেশা গ্রাস করেনি সমাজকে। তাই, বহু শব্দ বদলেছে, অর্থও বদলেছে তর্কে হেরে, সূক্ষ্ম কৌশলে এবং গায়ের জোরে। শব্দে জব্দ হলো বাংলা।
এভাবে অর্থ বদল করা হয়েছিল। অসুর শব্দটিকে হীন চোখে বোঝানো হয়। এখনও বাঙালি অসুর বোঝে হীনত্বে। অথচ, এই অসুরজাতির সন্তনই ২০১৭-র ৯৯% বাঙালি। তেমনি রসাতল শব্দার্থ; ভূমির চরিত্রানুযায়ী তার নামকরণ করা হতো। বাংলার ভূমি রসসিক্ত উর্বর ছিল। তাই, রসের তল, রসাতল। বর্তমানে এটি উত্‍সন্নে যাওয়া বোঝায়। এটা বৈদিক তথা হিন্দুদের দ্বারা অপব্যাখ্যার দান। মোঘল আমলেও বঙ্গীয় বদ্বীপের দক্ষিণাংশ "ভাটির দেশ" হিসেবে নথীভূক্ত। এটাই প্রাচীন পাতাল। এখন ভূমির অভ্যন্তরটা পাতাল।
এইভাবে বাংলার প্রাচীন শব্দাবলী রূপ, অর্থ, ব্যবহার পরিবর্তীত হয়েছে। সিংহভাগ হয়েছে ধর্মীয়সংস্কারের দ্বারা, ধর্মীয় আগ্রাসনে। কিছু কর্ম, বৃত্তি সংস্কৃতির প্রয়োজনে।
.
ভাষা, শব্দ, শব্দার্থ বদলায়। এটাই নিয়ম। বিবর্তীত হয়। একটি ভাষা প্রাণবন্ত থাকে সেটির ব্যবহারের ওপর। কর্মে, বৃত্তিতে, বস্তুগত উপাদানে যতদিন জড়িয়ে থাকবে, সহজে উচ্চারিত হবে, স্বকীয়তা স্বাতন্ত্র্য থাকবে, ততদিন ভাষাটি বাঁচবে; নচেত্‍ সংস্কৃতের মতো মরবে। বাংলাভাষা শুধু নয়, বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে স্বাতন্ত্র্য স্বকীয়তা স্বাধীনতা রক্ষা। এজন্যই আর্মাডা হয় হার্মাদ, মজ্হ হয় মজা ইত্যাদি। অতএব, নতুন যে শব্দবিধি গঠন করা হচ্ছে, পরিবর্তন করা চলছে, এটাও সেই নিয়ম ব্যাতিরেক নয় বলেই বোঝা যাচ্ছে। এভাবেই বিবর্তন হয়। বাংলাভাষা এভাবে বিবর্তিত হয়েছে। এই বস্তুবিশ্বে কোনকিছুই স্থির নয়। সবই অস্থির এবং পরিবর্তনশীল। কোনটি ধীর গতির, কোনটি বা দ্রুতগামী। পরিবর্তন অনিবার্য। বিবর্তন অনিবার্য। মৃত্যুটা শেষ।
আজ অবধি বাংলা ভাষা বিবর্তিত হয়ে এসেছে। এ'তো নতুন নয়। এখনও হোক না, ক্ষতি কী? বিপ্লব হোক ভাষায়, শব্দে; তবে, স্বকীয়তায় স্বাতন্ত্র্যে যৌক্তিকভাবে; বিশৃঙ্খলায়, দিশাহীনভেবে হুজুকে হুজুর হলে সাম্প্রদায়িকতায় ভেসে গিয়ে, অন্ধের মতো নয়। শব্দ ও ভাষা থেকে ধর্মকে বর্জন করার বিপ্লব হোক। রামধনু বাদ; রঙধনু হোক। নতুন করে বাংলাভাষা গড়ে উঠুক তন্বী সদাচঞ্চল দৃঢ় ঝকঝকে মধুর সুরেলা সহজ সরল হয়ে; এটাই জীবনের লক্ষণ, প্রাণবন্ত। এমন প্রাণবন্ত বলেই তো পৃথিবীর "মধুরতম ভাষা" বাংলা।
.
#শমীন্দ্রঘোষ
১৪/০১/১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.