নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক, লেখক, স্থির চিত্রগ্রাহক। কবি, গবেষক, গ্রন্থকার, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলন কর্মী। সাধারণ সম্পাদক, ভারতীয় বঙ্গসমাজ। ধর্মহীন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখি ও দেখাই।

শমীন্দ্র ঘোষ

সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী

শমীন্দ্র ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালির ইতিহাস পুনর্নিমাণ জরুরি

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

বাঙালির ইতিহাস পুনর্নিমাণ জরুরি:

শমীন্দ্রঘোষ

বাঙালির সার্বিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস, অর্থাত্‍ #বঙ্গসভ্যতার ইতিহাস খাঁটিভাবে ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গ্রন্থিত করা হয়নি।শুধু কিছু রাজারাজড়ার সিংহাসন আরোহণ, যুদ্ধ, সাম্রাজ্য, রাজার কাহিনীর আবর্তেই ঘুরপাক খেয়েছে বঙ্গসভ্যতার তথাকথিত ইতিহাস। এসবকে বঙ্গসভ্যতার ইতিহাস না বলে, ইতিহাসের খসড়া বলা যেতে পারে। কারণ তা অসম্পূর্ণ, অর্ধসত্য, অসত্য, আজগুবি ধারণায় ভরপুর। সামাজিক ইতিহাস, সমাজজীবন, সাধারণ মানুষের ধ্যানধারণা, উত্‍পাদন, কর্ম ইত্যাদিগুলো যতটুকু রচিত হয়েছে, তার সিংহভাগই অসম্পূর্ণ অর্ধসত্য বিক্ষিপ্তভাবে লিখিত হয়েছে। অথচ, সত্য ইতিহাস নির্মাণ করা খুবই জরুরি। বাঙালির সামাজিক ইতিহাস বিবর্তন, জাতিসত্ত্বাগত আত্মপরিচয় জানা জরুরি।

যে-জাতির ইতিহাসজ্ঞান নেই, অর্থাত্‍ নিজেকে জানে না, নিজের জাতিসত্ত্বার পরিচয় জানে না, উত্‍স বিবর্তন জানে না, সে আত্মবিস্মৃত হবে। এবার পরিচয়গত ভাবে পূর্ণ নিঃস্ব থাকবে না। তাই, কিছু একটাকে জড়িয়ে সে আত্মপরিচয় খুঁজবেই। ফলে, ধর্ম ও কাল্পনিক বিষয়কে আশ্রয় করবে। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ভারতীয়, বাংলাদেশী, ত্রিপুরী, আসামী, ওড়িয়া, অমুক পীর, তমুক সম্প্রদায় ইত্যাদি শতসহস্র খণ্ডে যে যার ইচ্ছে মতো পরিচয় খুঁজে খুঁটি বাঁধবে। ফলে, এতে বিভেদ হবে। দুই গরু দুদিকে টানলে গাড়ি এগোবে কিকরে? সাতঘোড়ার রথে সাতটা ঘোড়া সাত রকমের হলে রথ মুখ থুবড়ে পড়বেই। ফলে, আত্মকোন্দলে রত হবে। ফলে, আত্মমর্যাদাবোধহীন হবে। পরপদলেহী, হুজুকে স্বভাব নিয়ে ব্যক্তি, পরিবার, বংশ, গোষ্ঠীর স্বার্থ নিতে মেতে থাকবে। শেষে আত্মঘাতী হবে। অর্থাত্‍ একটা উদ্ভট সংস্কৃতির জন্ম দেবে। বঙ্গসভ্যতা সেই দিকেই এগোচ্ছে।

বঙ্গসভ্যতার সার্বিক উত্‍কর্ষের জন্য, সাংস্কৃতিক অগ্রগমণের জন্য, মানুষ হিসেবেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে গেলে বিজ্ঞানভিত্তিক জাতিগত আত্মপরিচয় এবং ইতিহাস চেতনা আবশ্যক। এটাই করতে হবে বাঙালিকে।
এই ধারাবাহিক ও সার্বিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস, বিশ্লেষণ, কার্যকারণ ব্যাখ্যা সহ গ্রন্থিত করা আমার একার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এজন্য অন্তত আরও ৩০/৪০ বছর লাগবে। সঙ্গে আছে বিপুল পরিশ্রম এবং অর্থেরও প্রয়োজন। রোজগার এবং অন্যান্য আন্দোলনের কাজ বন্ধ রাখলে, পারব। কিন্তু তা তো হবার নয়। তবু, চেষ্টা করে চলেছি পাহাড় ভাঙার। বিগত চার বছরের সামান্য ঘাঁটাঘাঁটিতে, ধুলো ঝাড়তেই এই অভিজ্ঞতা হলো। দেখছি শত সহস্র মিথ্যাচার, বিকৃতি, অর্ধসত্য, কল্পনার মিশেল দিয়ে বাংলার ইতিহাস রচিত হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে আজগুবি কাহিনী ভরা। এরপরে আছে নিত্য নতুন আবিষ্কার। এসবও বিক্ষিপ্তভাবে রচিত। বহু আবিষ্কার হলেও অনাবিষ্কৃতি রয়েছে বিশাল অংশ। পরিকল্পিতভাবে তথ্য আহরণের আবিষ্কারের সূত্র আছে এবং অবকাশ আছে। কিন্তু তা করা হয়নি। সিংহভাগ ঐতিহাসিকগণ ব্যক্তিগত রোজগার, খেতাবেই মোহিত ছিলেন। বহু অ-ঐতিহাসিকের গ্রহণযোগ্য তথ্য সূত্র সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেওয়া হয়নি। ভুলভাল, অসম্পূর্ণ তথ্যসংগ্রহ ও পরিমাপ করা হয়েছে নৃতত্ত্বে, পুরাতত্ত্বে। বিভিন্ন অংশ ও বিষয়ের সমন্বয়ও নেই। যেন কিছুতেই তাগিদ নেই; গয়ংগচ্ছ মনোভাব। এজন্যই বাঙালির আত্মপরিচয়বোধ গঠিত হয়নি। সবই বিক্ষিপ্ত ও ভেজালে ভরা। দিশাহীন দিকে চলেছে। কাণ্ডারীহীন নৌকা দিশাহীনভাবেই চলে এবং ধ্বংস হয়।
বঙ্গসভ্যতা নামটা আমিই দিয়েছি। কেননা, ভারতীয় সভ্যতা বলতে কিছু নাই। পশ্চিমে #সিন্ধুসভ্যতা পূর্বে #বঙ্গসভ্যতা দক্ষিণে #দ্রাবিড়সভ্যতা উত্তরপূর্বে কিরাত-মোঙ্গলীয় সংস্কৃতি/ সভ্যতা --- এগুলোই বলা যুক্তিযুক্ত। এ'বাদে বাকি ভারতে সভ্যতা ছিলই না। বেফালতু ভারত নামটা সভ্যতায় টেনে আনা ঠিক নয়। এর নেতিবাচক ফল হিন্দুত্ব ও গোবলয়ের রাজনৈতিক আগ্রাসী অবস্থা। গুর্জর, জাঠ ও রাজপুতগণের পূর্বপুরুষ ভারত উপমহাদেশেই ছিল না। বখত্রিয়া অঞ্চল বা আফগান অঞ্চলের একটি সংস্কৃতি থেকে পরিযান করে হিন্দুকুশ পেরিয়েছিল খ্রিস্টীয় ষষ্ঠশতকে। বসতি গেড়েছিল বর্তমান ভারতের পশ্চামাঞ্চল জুড়ে। পঞ্জাবীরা বৈদিক উদ্ভূত। বৈদিকপূর্ব যুগে বাকি অঞ্চল জঙ্গলাকীর্ণ। সেখানে অণু-অস্ত্রালদের বিক্ষিপ্ত সংস্কৃতি ছিল। এর পূর্বদিকে পূর্বদেশ (অসুর) তথা অসুরসভ্যতা তথা বঙ্গসভ্যতা, দক্ষিণে দ্রাবিড়(রাক্ষস) তথা রাক্ষসদেশ তথা দ্রাবিড় বা রাক্ষসসভ্যতা; এরা সভ্য ছিল। বৈদিকরা ছিল বর্বর লুটেরা। সভ্য হলো ভারতের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ওই অণু-অস্ত্রালদের বদান্যতায়। পরে অসুর এবং রাক্ষসদের বদান্যতায়। তাই, ভারতীয় সভ্যতা শব্দবন্ধ মানেই বায়বীয়।
বাঙালির ইতিহাস এবং তার ব্যাখ্যা সংশোধন সংযোজন সমন্বয়ের দ্বারা পুনর্লিখন করতে হবে। বঙ্গসভ্যতার ভূমিক্ষেত্র এবং জাতিসত্ত্বা ছড়িয়ে আছে সাতখণ্ডে; ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বাংলাদেশ। জাতিসত্ত্বাগত পরিচয় হলো #অসুর। এরা এই সম্বৃদ্ধ সভ্যতাটির জনক ধারক বাহক। যার বর্তমান নাম বাঙালি। এটা ভারতীয় সভ্যতা নয়; #বঙ্গসভ্যতা।
.
#শমীন্দ্রঘোষ
০৬/০১/১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.