নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী
ভক্ত কারে কয়,
ভক্ত চেনা শক্ত নয়
শমীন্দ্রঘোষ
ভক্তি যারা করে তারাই ভক্ত। ভক্তি হলো যুক্তির বিপরীত। ভক্তগণ কখনই যুক্তির পথে চলে না। ঠেকায় পড়লে যুক্তির অনুগামীদেরও ভক্ত হয়। যেমন, ঈশ্বরে ভক্ত হয়েও ঈশ্বরে ঠিক আস্থা নাই; তাই রোগের চিকিত্সায় ঈশ্বরের ওপর ভরসার বদলে চিকিত্সককে ভরসা করা; আবার ঈশ্বরের পূজাও করে। অর্থাত্ ভক্তি; অর্থাত্ একটা আবেগ। অর্থাত্ অন্ধত্বে পথ চলে।
দেখা যাচ্ছে, #ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিতে ভক্তরা যেমন করে, ঠিক তেমনটাই করছে অধুনা #মোদিজীর নোট বাতিল থেকে যাবতীয় কাজের প্রতি তাঁর ভক্তগণ। ঠিক তেমনি #দেশপ্রেমে ভক্তি, #নাস্তিকতায় ভক্তি, জনৈক #তসলিমা_নাসরিনে ভক্তি, জনৈক #অভিজিত_রায়ে ভক্তি, #বামপন্থায় ভক্তি, #মমতা_ব্যানার্জিতে ভক্তি, #ধর্মে ভক্তি ইত্যাদি। অর্থাত্ এই ভক্তগণ নিজের যুক্তি বুদ্ধিকে কাজে না লাগিয়ে কোনো একটা কিছুকে আঁকড়ে ধরে। এদেরকেই বলা হয় মৌলবাদী। এরা আত্মপরিচয় খুঁজে পেতে চায় ভক্তিতে। চায় মনের নিরাপত্তা। তলিয়ে ভাবতে চায় না। গভীর বিশ্লেষণকে গ্রহণ করতে পারে না; চায়ও না। এরা কখনও বা বিষয়টিতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অন্ধ হয়ে পড়ে। উক্ত ভক্তির বিষয়গুলো দেখুন এবং ভক্তগণের আচরণ কথাবার্তা দেখুন, শুনুন--- সব ভক্তকেই একরকম লাগছে; একটা ধরন লাগছে। এক ধরনের প্রতিক্রিয়াতে চলে এই ভক্তগণ। এরা প্রশ্নাতীত হয়ে পড়ে। ফলে, তাদের সেই আশ্রয়কে প্রশ্ন করলেই, বা আক্রমণ করলেই ভক্তগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে; স্থান কাল পাত্র জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তথ্য প্রমাণ যুক্তির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। বরং হিংসক, হুজুকে, ধ্বংসকামী হয়ে ওঠে। বাকসংযমও হারায়। কেউ প্রকাশ করে, কেউ বা তা করে না; গুমরায়। অনেকে বিকৃত চিন্তার শিকার হয়। বিশৃঙ্খল, উচ্ছৃঙ্খল হয়। এখানে ব্যক্তি পরিবার প্রতিবেশ সংস্কৃতি ইত্যাদি অনুযায়ী এদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো পৃথক হলেও এবং বিষয়ানুযায়ী প্রতিক্রিয়া পৃথক হলেও প্রতিক্রিয়ার ধরনটা একই থাকে। অর্থাত্ হাম্বা ডাকটা একই; কিন্তু সুর, তারটা পৃথক। অর্থাত্ রেলপথ, কিন্তু লাইন চারটে পৃথক।
.
এই লেখাটার প্রতি উক্ত ব্যক্তি ও বিষয়ের ভক্তগণ বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেবেই। কিন্তু কিছুতেই তথ্য প্রমাণ যুক্তিকে মানবে না; প্রশ্নও করবে না। এটাই ভক্ত চেনার উপায়।
.
ভক্তগণ কেন এমন হয়?
প্রধান কারণটা আছে মগজের কাজকর্মে। এরসঙ্গে পরিবার, প্রতিবেশের প্রভাব অনস্বীকার্য। তবু, প্রধানত মগজ।
এই যে আমরা সবকিছু বোধগত করি, বুঝি, তা একমাত্র মগজেরই দ্বারা; অন্য কিছু দিয়ে নয়। আমরা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ দ্বারাই সবকিছু বুঝি। মগজের স্নায়ুকোষই আমাদের পরিচালক। এই লেখাটাও আমরা বুঝব মস্তিষ্ক কোষ দ্বারা।
মস্তিষ্কবিজ্ঞান অনুসারে মস্তিষ্কের তিনটে অংশ ১) অগ্র বা গুরু মস্তিষ্ক, কপালের দিক থেকে তালু অবধি; ২) মধ্য মস্তিষ্ক, তালু অংশ; ৩) লঘু বা পশ্চাত্ মস্তিষ্ক, মাথার পিছনের দিক। আবার এই মস্তিষ্কের দুটো ভাগ। #বাম ও #ডান। তাই, আমাদের দুটো মন। এই দুটো ভাগ পৃথকভাবে কাজ করে। অর্থাত্ দুটো মন পৃথকভাবে কাজ করে। বাকশক্তি, যুক্তিতর্ক, বিশ্লেষণীশক্তি, গণন ক্ষমতা, পড়াশুনায় আগ্রহ পরিচালনা করে মগজের বামদিকের অগ্রমস্তিষ্ক। আর, ডানদিকের অগ্রমস্তিষ্ক পরিচালনা করে দিকনির্ণয় ক্ষমতা, আবেগ, সঙ্গীত প্রভৃতি চারুকলার প্রতি আবেগ, কল্পনা প্রবণতা, অনেক দিন আগে দেখা মানুষকে চিনে নেওয়ার ক্ষমতা, কাম প্রবণতা ইত্যাদি। বাঁদিক শক্তিশালীগণ এই লেখা বুঝতে চাইবে এবং দরকারে প্রশ্ন করবে। নচেত্, সে ঈর্ষায়, ক্রোধে ভুগবে, যা আবেগ।
এর থেকে বোঝা যায়, ভক্তগণের অগ্র মগজের বামদিকটা বিশেষ শক্তিশালী নয়। বরং ডানদিকটাই শক্তিশালী। অর্থাত্ একটা মন অন্ধ; খণ্ডিত মনের।
ধর্ম থেকে নাস্তিকতা, মোদি থেকে মমতা, তসলিমা অভিজিত্ থেকে জ্যোতিষ সমকামিতা, ঈশ্বর থেকে জন্মান্তর, উত্তম-সুচিত্রা-দেব-সানিলিয়ন-হজরত মুহম্মদ, কিংবা রবিঠাকুর বিবেকানন্দ থেকে আইনস্টাইন বিদ্যাসাগর রামমোহন চৈতন্য গৌতমবুদ্ধ ইত্যাদিতে ভক্তগণ আদপে অন্ধ।
প্রশ্নাতীত অনুগামীতাই ভক্তি। এই অন্ধত্বকে কিছু উচ্চমেধা আধুনিকতার তকমা দেয়; প্রগতিশীলতা বলে। সীলমোহর পড়ে ভক্তির বিষয়টিতে। ফলে, প্রগতিশীলতার, আধুনিকতার হাওয়ায় ভাসে ভক্তগণ। অতএব ভক্তিতে বাধাহীন। তখন আর পিছু ফিরে দেখে না।
কোনো বিষয়, ব্যক্তির কাজকর্ম সম্যক না জেনে বা অল্প জেনে তার সামগ্রিক বিচার করা, তার প্রশংসা বা নিন্দা দুটোই ভক্তির বা অভক্তির লক্ষণ। গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীর প্রথম যুক্তিবাদী। কিন্তু তাঁকে পূজা করাটাই ভক্তি। রবিঠাকুর, বিদ্যাসাগর, রামমোহনের কালবদ্ধতা ছিল; এটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁরা কালজয়ী বহু কাজও করেছেন। আর সেজন্য তাঁদের অতিমানবীয় বানানোটাই ভক্তি। বিবেকানন্দ স্ববিরোধী-দ্বিচারী-ভণ্ড সন্ন্যাসী ছিলেন। তাই তাঁর কিছু ভালো কথাকে গুরুত্ব দেওয়াটাও ভক্তি। হজরত মুহম্মদ একজন ধ্বংসকামী-হিংসক-কামুক ও মানসিক রোগি; তাঁকে বিনা প্রশ্নে অনুসরণ ভক্তির শামিল। তসলিমা নাসরিন একজন #যৌনরোগি ও বিশৃঙ্খল মগজের; তাঁর সব কাজকে বিনাপ্রশ্নে পাত্তা দেওয়াটা ভক্তির লক্ষণ; যা ধ্বংসাত্মক। অভিজিত্ রায় বিশৃঙ্খল চিন্তার দিশাহীন যাত্রী। তাঁকে অনুসরণ মানে, আত্মবিনাশের পথ প্রশস্ত করা। প্রধানমন্ত্রী #মোদিজী একজন #মানসিক_রোগি--- #নারসিসিজম ও #মেগালোম্যানিয়াক; এনাকে সমর্থন করাটা ভক্তিই, যা ধ্বংসাত্মক। মমতা ব্যানার্জিও তাই, হিস্টিরিয়া; পদের সঙ্গে মানিয়ে গেছে; চিকিত্সায় সুস্থ হতে পারেন। তাঁর সব কাজকে সমর্থন মানে, ভক্তিই। নাস্তিকদের একটা বড় অংশই বিশৃঙ্খল চিন্তার শিকার। এরাও নাস্তিকতার ভক্ত। যুক্তির প্রতি অনঢ় নয়, অন্ধ।
.
অমি বাঙালিত্বে একাত্ম যুক্তির ভিত্তিতে; ভক্তিতে নই। বৃহত্বঙ্গ, অখণ্ডবঙ্গ যুক্তির ভিত্তিতেই; ভক্তিতে নয়।
.
নাস্তিকতা ও যুক্তিবাদ এক নয়। নাস্তিকতা একটা পর্যায় ও নেতিবাচক।
যুক্তিবাদীরা ভক্তিতে ভাসে না। তারা প্রশ্ন করে, তথ্য প্রমাণ যাচাই করে; যুক্তিতে অনঢ়। #প্রবীরঘোষের অনুগামীরা তাঁর ভক্ত নয়।
.
যুক্তিবাদী হয়ে উঠুন। তথ্য প্রমানের ভিত্তিতেই বোঝা যায় যে, যুক্তিবাদই সাম্য মৈত্রী মুক্তি স্বাধীনতার, সমাজ বদলের একমাত্র পথ।
.
#শমীন্দ্রঘোষ
২৪/১২/১৬
©somewhere in net ltd.