নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী
সাফ কথা
শমীন্দ্রঘোষ
সূর্যসেনের ফাঁসি তথা মৃত্যুদিন পালন করা ভুলে গেছে বাঙালি। ১২/০১/১৯৩৩-এ সূর্যসেনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তাঁর মৃতদেহ তাঁর স্বজনকে হস্তান্তর করা হয়নি। মৃতদেহটি একটা জাহাজে চড়িয়ে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের সংযোগে এক জায়গায় লোহা বেঁধে ফেলে দেয় ব্রিটিশ পুলিশ। এরপরে তাঁর মৃত্যুদিন স্মরণও যেন সাগরের জলে ডুবে গেছে।
বাঙালি যতটা না বিপ্লবী দৃঢ়তা অর্জন করতে চায়, তার চেয়ে বেশি ভক্তিতে আবেগে হুজুকে ভাসতে চায়। ভাবাবেগের জন্যও আজ সহস্র টুকরো হয়েছে; গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে রয়েছে। ফলে, ভীরুতা, কাপুরুষতা, পরপদলেহী ভাবনা, চাটুকারিতা, আত্মমর্যাদা-বোধহীনতা গ্রাস করেছে বাঙালিকে। নিজের পরিচয় খুঁজতে পরের দোরে ভিক্ষা করে আজকের বাঙালি।
অতীতেও এমন অনেক নিদর্শন আছে। বাঙালির ইতিহাস জানায় ব্রিটিশরা; ব্যাকরণ লিখে দেয় ব্রিটিশরা; নৃতাত্ত্বিক পরিচয় খুঁজে দেয় ব্রিটিশরা; গাছগাছড়ার চিকিত্সা জানায় ও ওষুধ বানায় ইউরোপ আমেরিকা। এর ধারাবাহিকতা আজও আছে। ইউরোপ আমেরিকায় সম্বর্ধিত হলেই বঙ্গে কল্কে পায় বাঙালিমেধা। "পথের পাঁচালী" বঙ্গে কল্কে পেল বিদেশী পুরস্কারের দৌলতে। রবিঠাকুরকে বেশি করে শ্রদ্ধা করলো নোবেল পাওয়ার জন্য। এখন রবিঠাকুরকে শিবঠাকুরের মতো পুজো করা চলছে হুজুকে ভক্তিরসে সিক্ত বাঙালিদের দ্বারা। এমন উদাহরণ সহস্র। এটাই একটা জাতির মানসিক গঠন, রূপ বুঝিয়ে দেয়। আত্মবিশ্বাসহীনতা, মর্যাদাহীনতা, দম্ভ, অহংকার, লোভ ভয় ভক্তি আবেগ হুজুক আত্মঘাতি ভাবনা কর্ম ইত্যাদি নেতিবাচক, ক্ষতিকারক মানসিকতা গ্রাস করে চলেছে বাঙালিকে। ফল স্বরূপ "অল্পবিদ্যা ভয়ংকর" ভাব, "সবজান্তা মূর্খমী", "ভণ্ডামী", উচ্ছৃঙ্খলতা, বিশৃঙ্খল, পণ্ডিতাভিমন্যতা উত্কট চিন্তা কর্ম বাক্য, বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। জানার যতটা না ইচ্ছে, জ্ঞান দেওয়ার ইচ্ছে বেশি। যতটা না পড়ে, বকে তার চেয়ে বেশি। যতটা না সহনশীল আত্মসমালোচনা করে, তার চেয়ে বেশি পরছিদ্রান্বেষী,পণ্ডিতমন্য। যদিওবা কিছু জানাতে চায় বা জানায়, তাও আধখেচড়া, আবলতাবোল ভুলভাল কাল্পনিক কথা। শিক্ষার সুযোগ পেয়ে পড়েশুনে এমন আপদের কর্মে চিন্তায় এক শ্রেণির বাঙালিই এই বিশ্বে #একমেবদ্বিতীয়ম।
এদের দ্বারা সমাজের কিছু অংশ প্রভাবিত হয়ই। ফল, দরকচা সমাজ। কিছু একটা বলতে গেলেই না জেনে বিদ্যা ফলানোটা পেয়ে বসে; বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করাটা বাকস্বাধীনতা মনে করে। স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা ভোগ করতেও জানে না। কেননা, ওসবের প্রকৃত সংজ্ঞা ও ব্যবহার জানে না; তত্সহ নিজের বোধ বুদ্ধি শিক্ষাদীক্ষা সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি অর্থাত্ নিজেকে জানে না। নচেত্ এক ধান্দাবাজ ভোট ভিখারি কোন সাহসে একটা স্বাধীন দেশকে দখলের হুমকি দিতে পারে? এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে কেন এখনও হিন্দু-মুসলিম নিয়ে বিভেদ বিসংবাদ করে বাঙালি? প্রায় দুই/তিনশো বছর ধরে এই একই বিভেদগান গেয়ে চলেছে বাঙালি! বিশ্বাসঘাতকতা লোভ ভয় সবজান্তা মূর্খামী অহং-দম্ভের ফসলে টুকরো টুকরো হতে হতে গুঁড়ো গুঁড়ো হলো বীর সম্বৃদ্ধ জাতির বাঙালি গত প্রায় দুই-আড়াই হাজার বছরে। এখন ধূলিসম!
একসময়ে এই ধর্মের গান গেয়ে ভাগ হলো। এরপরে উদ্বাস্তু হিন্দু ধরে বামেরা ৩৪/৪৪ বছর খেয়ে গেছে। এখন রামেরা নেমেছে সেই একই পথে। এসব হচ্ছেটা কী? কোন সভ্যতা এটা? জাতিগত আত্মপরিচয়ের অভাব, ইতিহাস না জানাতেই এসব বিশৃঙ্খলায় আবেগে হুজুকে অন্ধ রয়েছে বিশালাংশের বাঙালি। টপাটপ গুজব খায়। এখানে দরকার, "ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা...আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা"--- এই ঘা-টা বা আঘাতটা জরুরি। তাইতে আবেগে, বিশ্বাসে আঘাত লাগবে; লাগুক। এই আঘাতে মরুক কিছু, ভাঙুক পুরাতন সমাজ। না ভাঙলে নতুন গড়া যায় না। ভাঙতে ভাঙতেই গড়তে হবে নতুন #বঙ্গসমাজ।
গড্ডালিকা স্রোতে ভেসে আন্দোলন গণজাগরণ এবং তার ফলশ্রুতিতে সুন্দর সমাজগঠন করা যায় না। এই এখন বিবেকানন্দ নিয়ে পড়েছে একশ্রেণি। অথচ, বিবেকানন্দ সমাজসংস্কারক নন। তিনি ধর্মসংস্কারক। এটা তাঁর নিজেরই কথা। কতজন জানেন? কেন জানেন না? এই নিয়ে বলতে গেলেই বিতর্ক, মনোমালিন্য হয়, হয়েছে। তাই বলি, হয় আমি বিবেকানন্দ সম্পর্কে কিচ্ছু জানি না; নচেত্ তাঁর সম্পর্কে সবকিছু জানি। এরসঙ্গে এটাও জানতে পারছি, যাঁরা বিবেকানন্দের ভজনা করেন, তাঁরা বিবেকানন্দকে সম্যক জানেন না, অথবা জেনে ইচ্ছাকৃত হুজুক তৈরি করছেন; অথবা, তাঁরা হুজুকে মাতেন কিছু ভালো ভালো কথা শুনে এবং কতিপয় রাম শ্যাম যদু মধুর বিবেকভজনা লেখা পড়ে। এই নিয়ে বহু লিখেছি। একসময়ে তথ্য প্রমাণ এবং বিবেকানন্দর বাণী উল্লেখ করে, বইয়ের নাম পাতাসংখ্যা চিহ্নিত করে এই ফেসবুকে লিখেছি। প্রতিদিনই শত শত ফোন পেয়েছি গভীর রাত পর্যন্ত; সেসব প্রশংসা, হুমকি, গালমন্দে ভরা। আমার বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিয়েছিলেন সোদপুর নিবাসী কলকাতা উচ্চ আদালতের এক নামী উকিল বা ব্যারিস্টার। সেই মামলার নোটিশ গত পাঁচ বছরেও পাইনি। এই প্রোফাইলে এবং পেজ-এ বিবেকানন্দ নিয়ে বহুকিছু সত্য লিখিত আছে। ভক্তি, হুজুক বাদ দিয়ে জানার ইচ্ছে থাকলে যেকেউ দেখতে পারেন। খোঁজার সুবিধে ফোটো অ্যালবামের মাধ্যমে। তথ্য নিয়ে বিতর্ক করা যায় না। তাই বিতর্ক এবং তদ্ভূত মনোমালিন্য এড়াতে বিবেক নিয়ে এর বেশি কিছু বলার নাই।
আপনারা যাঁরা বিবেকভজনা করছেন, বুঝব যে, আপনি অন্ধ। অন্ধ থাকলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে!
তাই বিবেকানন্দ বাদ। তার অনুগামী ভক্তগণ বাদ। তাইতে ২/১কোটি বাদ যাবে, যাক। বরং সূর্যসেনকে স্মরণ করুন। বাংলা হলো বিপ্লব বিদ্রোহের জন্মভূমি ধাত্রীভূমি। বিপ্লবী দৃঢ়তায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায়, যুক্তিবাদী পথে গড়ে উঠুক নতুন বাঙালি। আঘাত দিয়েই অন্ধকে জাগাও। না জাগলে তাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করো।
#শমীন্দ্রঘোষ
১২/০১/১৭
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩০
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: মানুষের এত দিবস পালন করার সময় কই!
বলিউডে সূর্য সেনের মুভি দেখলেই সব দায় দায়িত্ব শেষ!