নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, গ্রন্থকার, ফোটোগ্রাফার, কবি, আবৃত্তিকার, যুক্তিবাদী মানবতাবাদী আন্দোলনকর্মী
বনের বাঘকে তাড়ানো যায়, মনের বাঘকে তাড়ানো দায়:
ফেসবুকের কিছু অভিজ্ঞতা, এ'নিয়ে গত বছর খানেক ধরে বহুজন ফোনে এবং বার্তায় বহু খবর দিয়েছেন, কিছু লিখতেও বলেছেন। অধুনা এই আবদরটা বেড়েছে। যেহেতু সমস্যাগুলো বেড়েছে শতগুণ। তাই, জরুরি মনেকরে লিখছি। একাধিক মনোবিদের পরামর্শ নিয়ে, মনোবিদ্যার একাধিক গ্রন্থের সহায়তায় এবং জনা তিরিশেক সহযোগীর অভিজ্ঞতার আলোকে এই নিবন্ধ লিখলাম। একটু দীর্ঘ হলেও বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিলাম না স্থানাভাবে। দুটো পত্রিকাতে প্রকাশিত হতে পারে এবং পরে গ্রন্থাকারে বেরোবে।
ফেসবুকের দ্বারা মানসিক রোগ হতে পারে, হচ্ছেও। একটি হলো, "ফেসবুক সিনড্রোম"। ফেসবুকে না বসলে, চ্যাট না করলে অস্বস্তি হয়; সঙ্গে নানান শারীরীক মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। ফেসবুক যেন একটা নেশা। এটা সারানো যায়।
এছাড়া অন্যান্য রোগ------
#কেস_স্টাডি: (১)-- (আক্রান্ত):
১) বিচারপতির পদ-পরিচয়টা না জানিয়ে ফেসবুকে আইডি খুলেছিলেন ভদ্রমহিলা। দেখতে দেখতে বহু বন্ধু। চ্যাটিং-এ পরিচয়। নতুন জগত্। ব্যাস আর যায় কোথায়! ৩/৪টে কথার পরেই নোংরামো শুরু পুরুষগুলোর। যেন ভাদ্রমাসের কুকুর। বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভদ্রমহিলা সাক্ষাত্ পরিচিত ছাড়া কথা বলেন না। মাঝে মধ্যে ২/১টি রুচিশীল পোস্ট।
২) গলায় ক্যান্সারে আক্রান্ত ৩৫ বছর বয়সী মহিলাটি কথা বলতে অক্ষম। বিবাহিতা। ফেসবুকে আইডি খুললেন। তাঁর নানান পোস্টিং দেখে পুরুষদের খুব উত্সাহ। এরপরেই তারা শুরু রকমারি উপকার করার চেষ্টা। নানান অছিলায় ভাঁজের নানান টোপ; পরকীয়া, ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার প্রস্তাব ইত্যাদির এবং দেখা করার, ফোন নম্বর আদানপ্রদানের প্রস্তাব। বিরক্ত মহিলাটি ফেসবুকে এখন খুব কম বসেন।
৩) বিরাটী নিবাসী স্নায়ু রোগাক্রান্ত পুরুষটি দুর্বল মনের। বয়স ৪০ বছর। বিবাহিত পুরুষটির দুটি সন্তান ছোট। বেসরকারী চাকুরি করেন। নিত্য মানসিক চাপ, ঘরে, বাইরে, কর্মে, সংসার সামলাতে। গতানুগতিক জীবন একঘেয়ে, হতাশী, উদাসীন। আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে। প্রশমনে ফেসবুকে কবিতা, প্রবন্ধ লেখা শুরু। নতুন জগতে কিছু নারীর সঙ্গেও আলাপ হয়। সম্পর্কটা বন্ধুত্ব। দগ্ধ জৈষ্ঠ্যের শেষে নবধারা বৃষ্টির মতো বান্ধবীদের কথায় সিক্ত হয় মন। ক্ষোভ প্রশমিত হয়। নতুন উদ্দীপনা আসে মনে। অর্থাত্ ফাঁদে পড়ে ঐ নারীদের। ধীরে ধীরে চ্যাটিং-এর নেশা বাড়ে। মনে একটু শান্তি বাড়ে; ঘরে বাড়ে অশান্তি। শেষপর্যন্ত আত্মহত্যা ছাড়া গতি ছিল না। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং সমাধানে ফেসবুক আইডি মুছে দিয়েছে। এখন মানসিকভাবে অনেকটা সুস্থ।
এমন সহস্র উদাহরণ রয়েছে ফেসবুকে।
"কুকুর জন্মায় কুকুর হয়ে, মরেও কুকুর হয়ে, কুকুরকে গড়ে উঠতে হয় না। সব মানুষই জন্মায় মানুষের আকৃতিতে, কিন্তু সবাই "মানুষ" হয়ে মরে না; মানুষকে "মানুষ" হিসেবে গড়ে উঠতে হয়; এটাই মানবতা বা মনুষ্যত্ব। পশুর সঙ্গে মানুষের তফাত, ইচ্ছাতে, চেতনায়।"
এখন ফেসবুক নিয়ে এমন বীতশ্রদ্ধ বিরক্ত বহু নারী ও পুরুষ। লেখা চুরি করা, নিজেকে জাহির করা; হীনমন্যতা, ঈর্ষা, উচ্চমন্যতা ইত্যাদি আছেই। বেশি আছে মানসিক রোগ। এটা বাড়ছে, ছড়াচ্ছে। বিকৃত চিন্তায় আক্রান্ত এক বিশালাংশের নারী ও পুরুষ। বিশেষত বিকৃতকাম চিন্তা ও চর্চা।
.
#যৌনতা বা #কাম: "কামুকতাকে নিয়ে মানুষ পুরো মুক্তি পায়নি বলেই প্রেমিকতাকে বড় করে তুলেছে। তাতে আনন্দের গভীরতা, প্রবলতা ও স্থায়িকতা বেশি, তাই তার মূল্য বেশি।"--- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উন্নত চেতনা, যুক্তিবাদী চেতনা যৌনতা-যৌনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, সুন্দর করে, সঠিক পথে চালনা করে। বাকিরা অবদমন করে; ফল বিকৃতি; এতে ধর্মের, নানান বদ্ধমূল সংস্কারের অবদান সুস্পষ্ট।
মনোবিদদের মতে, মানুষের যৌনজীবন একটি জীবন, জীবনের অর্ধাংশ; এটি প্রবাহের মতো; জীবনের অন্যতম প্রেরণা। এটি সহজাত প্রবৃত্তি, জন্মগত প্রবৃত্তি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা গড়ে ওঠে, পূর্ণতা পায়, বিলীন হয়। এই বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোথাও বাধাপ্রাপ্ত বা অবদমিত হলে বিকৃতি দেখা যায়। ফলে বিকৃত চিন্তা সহ নানান মানসিক রোগ, বিশৃঙ্খলা ও শারীরীক রোগ দেখা দেয়। তাই, সুস্থ যৌনজীবনই শ্রেয় এবং নারী-পুরুষের যৌথজীবনই শ্রেয়।
.
অধুনা ফেসবুক হলো এই বিকৃতযৌনতার ও অবাধ যৌনতার মাধ্যম; মানসিক রোগ বৃদ্ধির মাধ্যম; এটা বাড়ছে, ছড়াচ্ছে। যেসব রোগ বা বিশৃঙ্খলা হতে পারে---
#যৌনতা_সংক্রান্ত_সমস্যা:
১) যৌনাঙ্গ দেখিয়ে উত্তেজনা(Exhibitionism)--- ফেসবুকের ক্ষেত্রে চ্যাটবাক্সে উলঙ্গ ছবি পাঠানো, ভিডিও, নীলছবি দেখানো, নিজের উলঙ্গ বা অর্ধ উলঙ্গ ছবি দেখানো ইত্যাদি।
২) ধর্ষকাম(Sexual sadism)--- বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অধিকার ফলানোর অছিলায় নানান বিধিনিষেধ আরোপ করে, অথচ সম্পর্কটা সুস্থ স্বাভাবিক সাবলীল নয়, বাস্তবে শারীরীক অত্যাচার করে বিকৃত যৌনসুখ পায়।
৩) লুকিয়ে যৌনতা দেখে যৌনানন্দ(Scopophilia)--- ফেসবুকে কম হলেও প্রবণতাটা একই; এখানে জাল আইডি-র মাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের দলে ঢুকে দেখা, জাল আইডি-র মাধ্যমে বিপরীত লিঙ্গের গভীরতর বিষয় জানা।
৪) অজাচার(Insest)--- নিষিদ্ধ সম্পর্কের সঙ্গে যৌনতা। ফেসবুকে এমনকি হোয়াটস্যাপেও আত্মীয়ের সঙ্গে অনেকে পরোক্ষ যৌনতায় মাতে।
৫) অন্তর্বাসকামী(Fetishism)---- নামেই পরিষ্কার। ফেসবুকে এটা ১)-এর মতোই।
৬) লিঙ্গ পরিবর্তনকামীতা(Trans-sexuality)--- শারীরীকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী। ফেসবুকে বিপরীতলিঙ্গের জাল আইডি দিয়ে দিব্বি আসল যৌনতা চালায়। এরা ভণ্ড এবং অপরাধমনস্ক।
৭) সমকাম(Homosexuality)--- নারী-পুরুষের যৌনতাই সুস্থ, স্বাভাবিক, সাবলীল যৌনতা। সমকাম একটি বিকৃতকাম। ফেসবুকে রমরমিয়ে চলছে। অনেকে ৬)-এর মতো করে। প্রগতিশীলতার মোড়কে আক্রান্ত অনেকে।
এই ১ থেকে ৬ পর্যন্ত বিবৃত বিকৃতকামগুলো সাইকোথেরাপির সাহায্যে সুস্থ জীবন দেওয়া সম্ভব; তবে অসুখের গভীরতার ওপর সুস্থতার সম্ভাবনা। ফেসবুক এসব অসুখ সারানোর মাধ্যম নয়। বরং রোগ হওয়ার বা বাড়ানোর মাধ্যম।
যেহেতু ফেসবুকে বিপরীত লিঙ্গকে সহজে পাওয়া যায় এবং অপরিচিত, লোকে জানার ভয় নেই, তাই মানসিকভাবে অনেকে এই পথগুলো বেছে নেয়। কেউবা বন্ধুত্বের বাহানায়, কেউবা অন্যভাবে। অনেকে ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ যন্ত্রণা পোস্ট করে। সেসব দেখে অনেকে আকৃষ্ট হয়; আলাপ; তারপরে...! কেউবা এভাবে ফাঁদ পাতে। যেমন, ধর্ষক তথা সমাজবিরোধী মানসিকতা এবং লম্পটরা। লাম্পট্য(Hyper-sexual disorder), নারীর হলে নিম্ফোম্যানিয়া, পুরুষের স্যাটেরিয়াসিস। বহুগামীতা থেকে এই রোগ হয়। লম্পটদের দেহশুচিতা থাকে না। যৌনতা এদের কাছে আনন্দেরই। বয়স বিচার নেই। সম্পর্কটা শুধুই দেহবাদী। খুব দ্রুত যৌনতায় ঢুকে পড়ে। কথায় প্রগতিশীলতা থাকে একটু নরম গোছের। স্পষ্টবাদী নয়।
বহুগামীরাও অনেকটা এই একই ধরনের। এরা খুব মিথ্যা কথা বলে। সত্য মিথ্যা মিশিয়ে কথা বলতে এরা চৌখস। সম্পর্কে স্বচ্ছতা, সততা রাখে না, নিজস্বতার নামে বহুকিছুই গোপন করে। প্রগলভতা, গায়ে পড়া ভাব থাকে, তরলমতির। কথায়, চালচলনে চটক, ভাঁজ, পোশাকে চটক রেখে বিপরীত লিঙ্গকে পটাতে সক্ষম। এরা সোচ্চার হয় ব্যক্তিস্বাধীনতায়, যা আসলে স্বেচাছাচার। নারী হলে পুরুষতন্ত্রবিরোধী হবে। পুরুষ হলে নারীবাদী হবে। হিসেব কষে মেশে। অভিনয়ে পটু, নাটুকে হয়; কখনও বা সম্পর্কে অনীহা দেখায়, আবার আগ্রহও দেখায় নাটক ক'রে। মাছ বুঝে চার ফেলে। মধ্যবিত্ত মানসিকতার এবং মধ্যমেধার নারী-পুরুষ এদের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
অনেকে চ্যাটিং ক'রেই তা মুছে দেয়; যাতে ধরা পড়লে অভিযুক্ত না হতে হয়। এটা তথ্য প্রমাণ লোপাটের উদাহরণ। অর্থাত্ অপরাধমনস্কতা। এভাবে এরা পোড় খাওয়া অপরাধী হয়ে ওঠে। বিবাহিতরা এটা বেশি করে। কিন্তু জানে না যে, ফেসবুকে একবার পোস্ট করা সব তথ্যই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এমনকি কোন স্থান থেকে কে ফেসবুক আইডি-টি পরিচালনা করছে, তাও জানা যায় বিশেষ প্রযুক্তির কল্যাণে। এবং এভাবেই অপরাধীদের ধরা হয়। অতএব, ফেসবুকে গোপনভাবে কিছু করার মাধ্যম হিসেবে ভাবাটা কাল্পনিক। লম্পট এবং বহুগামীরাও মধ্যবিত্ত ও মধ্যমেধারই বেশি। এদের অনেকেই বিপরীত লিঙ্গকে মানসিক সহায়তার নামে এক খাবলা পরোক্ষ যৌনসুখ তুলে নেয় গোপনে মানসিকভাবে; বাস্তবে ভিড়ের মধ্যে অপরিচিত মেয়েকে/পুরুষকে একটু ছুঁয়ে দিলো, একটু শরীর ঠেকালো কোনো পুরুষ, যেন এক খাবলা সুখ তুলে নিল। ফেসবুকে এটা মানসিক। ওপরে থাকে সততার, বন্ধুত্বের মুখোশ। এরা আত্মমর্যাদা বোধহীন, আত্মপরিচয়হীন, নীতিবোধহীন, আদর্শবোধহীন, দিশাহীন, গোলগাপ্পা আধখেচড়া বদ্ধমূল ধারণার বশবর্তী, খেপাটে, উচ্ছৃঙ্খলায় ফুরিয়ে যাওয়া অস্বচ্ছ ধারণার একদল অবমানব। এরা আদপে নিজেদেরও ভালোবাসে না; সম্ভ্রম-মর্যাদাবোধ (Dignity) নেই; সমাজপ্রেম নেই; হুজুকে; তাই অপরকেও মর্যাদা দিতে জানে না। ফেসবুকে এরা রমরমিয়ে আছে। এদের দ্বারা কলুষিত হচ্ছে সমাজ।
২০০০ সালে রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকার কমিটি (UNHRC) জানায়, "সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি" (ICCPR) লঙ্ঘন করছে বহুগামীতার অনুশীলন। বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একগামীতাকেই স্বীকৃতি দিয়েছে তারা। বহুগামীতার অনুশীলন নারীর মর্যাদা, সম্ভ্রম রক্ষার করে না; বরং তা অমানবিক এবং মানবাধিকার হরণ। এটা অবশ্য পুরুষদের ক্ষেত্রে। কিন্তু নারীরা বহুগামী হলে? নাহ, এর উত্তর সেখানে নেই। অথচ, এটাও নারীর মর্যাদাহরণ, অর্থাত্ আত্মমর্যাদা-বোধহীনতা, অমানবিক এবং অবশ্যই মানসিক বিশৃঙ্খলা বা রোগ। কেউ মানসিকভাবে বহুগামী, কেউ বা শারীরীকভাবে। ভোগবাদী দুনিয়া বহুগামীতাকে প্রগতিশীলতার মোড়কে ছড়াচ্ছে, জাস্টিফাই করছে।
#কেস_স্টাডি: (২)--(শিকারী):
১) সোনারপুর নিবাসী মৃন্ময় চক্রবর্তী; কবি, জুতোর দোকানি। স্বঘোষিত যুক্তিবাদী এই লম্পটটি কখনও বা নিজেকে "মানুষ" বলে পরিচয় দেয়। সদ্য পরিচিতের সঙ্গে মুহূর্তে বন্ধুত্বের নামে প্রেম-যৌনালোচনায় ঢুকে পড়ে। বন্ধুত্বে নাকি নারী পুরুষ হয় না। একসাথে একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেম করাটা উদারতা। নারীদের সঙ্গে খিস্তি দিয়ে কথা বলা, যৌনালোচনা হলো প্রগতিশীলতা। ইত্যাদি লাম্পট্যের সব বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে সুস্পষ্ট। ছেলেটি পোড় খাওয়া লম্পট।
২) অপরজন বাংলাদেশ নিবাসী রাজীব বড়ুয়া। এর ৬টি আইডি বিভিন্ন নামে। ছেলেটি নারীলোলুপ। একটি আইডির নাম শাহনাজ পারবিন রিতু। নারীর আইডিটিতে সব ছবিই আসল। কিন্তু চালায় ও নিজে। এমনকি ভিডিও চ্যাটও করায় নারীটিকে দিয়ে। এরা হলো সংঘঠিত লম্পট ও সমাজবিরোধী। কোনো আইডি তসলিমাবাদী, কোনোটা তসলিমা বিরোধী। কোনোটা নাস্তিক। কোনওটা বা আস্তিক। এই হলো এর কাজ। কয়েকমাস আগে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে ইয়েমেনে পালিয়েছিল। এখন খোঁজ চলছে।
৩) মহান মানুষ আইডির ৩০/৩২ বছর বয়সী ছেলেটি ইস্কুল শিক্ষক। ইস্কুল যায়-কি-যায় না। থাকে বহরমপুরে। জীবনের মূল কাজ ও লক্ষ্য লাম্পট্য। এই বিষয়ে মারধোরও খেয়েছে। কিন্তু সংশোধিত, সুস্থ হয়নি। ফেসবুকের মাধ্যমে একটু বেশি বয়সী বিবাহিতাদের পটায়। মাতৃহীন ছেলেটি কথায়, আচরণে মার্জিত ও রুচির পরিচয় দেখায়। সুচারু চৌখস কথার ভাঁজে গলে যায় আবেগপ্রবণ, ব্যক্তিজীবনে অসফল, হতাশী, অবসাদগ্রস্ত, মানসিক ক্লান্তরা। কথার সাময়িক সুখ শান্তি থেকে সম্পর্ক গভীর হয়। ছেলেটি এভাবে একই সঙ্গে একাধিক নারীসম্ভোগের নেশায় মশগুল। পটানো সব মেয়েকেই "মোটু" বলে ডাকে। এরপরে ফোন দেওয়া নেওয়া, দেখা করা, ঘনিষ্ঠতা; তারপরে...! শেষে নানান অভিযোগে বিচ্ছেদ করা। ছেলেটি শানিত লম্পট এবং অপরাধমনস্ক। মনবিজ্ঞান মতে এই ছেলেটির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য।
এই ৪জনের নাম প্রকাশের কারণ প্রগতিশীলতাকে পুঁজি করে এরা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করছে, বিপথগামী করছে সুন্দর সমাজগঠনে আগ্রহীদের; বিকৃতচিন্তা ও ভোগবাদ ছড়াচ্ছে। এমন নারীও আছে সহস্র।
ধর্ষক এবং লম্পটের কোনো চিকিত্সা মনোবিজ্ঞানে নেই। এই রোগ দুটো সারে না। বহুগামীতা থেকে লাম্পট্য রোগ হয়। এগুলো বেশিরভাগই সামাজিকভাবে তৈরি। কিছুক্ষেত্রে কারণটা শারীরীক। এ'বিষয়ে অ্যামেরিকান সাইকোলোজিকাল অ্যাসোসিয়েশন (APA) কর্তৃক DSM-5 ও হু(WHO)-এর ICD-10 গবেষণার বই দুটিতে স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। বিশ্বস্বীকৃত গ্রন্থদুটি দীর্ঘ ৫-১৫ বছরের গবেষণার ফল। বিশ্বের প্রায় ২লক্ষ মনবিজ্ঞানী এতে যুক্ত থাকে। গ্রন্থ দুটোতে মানসিক রোগ চিহ্নিত করা, রোগের উত্স, কারণ ব্যাখ্যা এবং তার চিকিত্সা পদ্ধতি, পথনির্দেশ দেওয়া থাকে।₹₹
.
#যারা বহুগামীতা সহ বিকৃতকাম চিন্তা ও চর্চায় আক্রান্ত হতে পারে বা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে--- যৌনজীবনে অসফল, দাম্পত্যে অনীহা, দাম্পত্যে অসফল, মানসিক মিশমিশ নেই, প্রেমে অসফল, আবেগপ্রবণ, নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মানসিক চাপে থাকে অর্থাত্ জীবনধারা, যাপনপদ্ধতি স্বাভাবিক নয়, গতিশীল নয়, প্রতিবন্ধকতা পূর্ণ, তেরাবাঁকা--- তারা। এদের অনেকেই ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ যন্ত্রণা একাকীত্ব অবসাদ হতাশা অতৃপ্তি ইত্যাদি পোস্ট করে। ফলে মনগত প্রক্ষোভ, ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়। এটা অনেকে চ্যাটেও ব্যক্ত করে; সঙ্গে আপন ভেবে কিছু গোপন কথাও ব্যক্ত করে। এটাকেই হাতিয়ার করে বহুগামীরা ও লম্পটরা। এদের সঙ্গে কথা বলে মন সাময়িক শান্ত হয় বটে, প্রক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয় বটে। কিন্তু এভাবে ধীরে ধীরে এক থেকে আরেকের সঙ্গে মিশতে মিশতে সুখ পেতে পেতে নেশায় দাঁড়ায়; ধীরে ধীরে অজান্তেই বহুগামীতায় আক্রান্ত হতে পারে; এভাবে নোংরামি করতে শেখে প্রগতিশীলতা, আধুনিকতার মোড়কে। শেষে হয়ে ওঠে লম্পট, অপরাধমনস্ক।
#হিস্টেরিকাল নিউরোসিস(Hysterical neurosis): কার্যকারণহীন মানসিক কারণে শারীরীক রোগ।
১) উত্কণ্ঠা(anxiety disorder)-- সবেতেই উদ্বেগ; এরা ফেসবুকে এটাকে ফাঁদে ফেলতে কাজে লাগায়, ভুলও বোঝায়।
২) বাধ্যতামূলক পীড়নে বা আত্মবিশ্বাসের অভাবে আচ্ছন্নতা (Obsessive Compulsive neurosis)--- বাস্তবে যারা নতমুখে কথা বলে, লজ্জা বেশি, ভীরু, শুচিবায়ুগ্রস্ততা; এরা ফেসবুকে খুব সাহসী হয়।
৩) ভীতি (Phobic neurosis)--- অযৌক্তিক অহেতুক ভয়;
৪) বাতিক (Mania)--- এরা নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, নিজেকে বিশাল ভাবে, নিজেকে অসহায় মনে করে, বহুজনের সঙ্গে যৌনতায় মত্ত হয়, আত্মহত্যার চেষ্টা করে; ফেসবুকে এরা আছে। অনেকে আক্রান্তও হয়। এদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেকে।
৫) হতাশা এবং অবসাদ(Depressive neurosis)--- অকারণে দুঃখ, নানান কারণেও সব সময়েই দুঃখ, লাগাতার আশাহীনতায় ভোগা; এরা ফেসবুকে বিপরীতলিঙ্গের শিকার এবং শিকারীও।
৬) শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তা(Hypochondrial)--- নামেই স্পষ্ট, এখন সেজেগুজে নানান ভঙ্গিতে ফেসবুকে লাগাতার সেলফি পোস্টে এবং এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে এরা আগ্রহী, "কেমন দেখাচ্ছে আমাকে", এটাই রোগ।
এগুলোর গভীরতা অনুযায়ী চিকিত্সায় সারে। ফেসবুকে সারানো যায় না। বরং ফেসবুকে এদের থেকে বহুগামীতায় এবং লাম্পট্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল অন্যদের।
.
#দেহমনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder):
মানসিক কারণে যেসব শারীরীক অসুখ হয়। বুক ধড়ফড়, বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা(মাইগ্রেন ভেবে ভুল করে), স্পণ্ডেলোসিস, স্পণ্ডেলোসিস, পেটের গোলমাল, স্থুলতা বা হঠাত্ ওজন বৃদ্ধি, শীর্ণতা বা হঠাত্ ওজন কমা, আরথ্রাইটিস, পাকস্থলিতে আলসার, গ্যাসট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য, কাশি, ব্রঙ্কাইল অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ শর্করা, রক্তে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড, রক্তে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড, এবং এসবের ফলে অন্য শারীরীক ও মানসিক অসুখ--- ভুলে যাওয়া, অত্যধিক মানসিক চাপ, অল্পতেই ক্লান্তি, স্বল্প শ্রমেই হাঁফানো, নিদ্রাহীনতা, অতিরিক্ত ঘুম, দীর্ঘ সময়ের ঘুম, অবসাদ, কোনো অঙ্গ হঠাত্ই অবশ হওয়া ও আবার আপনা থেকেই ঠিক হওয়া, কিছু স্নায়ু দৌর্বল্য, ক্রোধে কাঁপতে থাকা, হঠাত্ উগ্র ক্রোধ ইত্যাদি রোগ হয়। এসব রোগ প্রতিটিই সারানো যায়। সুস্থ সুন্দর জীবনযাপন করা যায়। তবে, ফেসবুকে এসব সারানো যায় না; বরং ফেসবুকে এসবের সমাধান খুঁজলে বহুগামীতা, লাম্পট্য সহ নানান মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং চক্রাবর্তে অন্যান্য অসুখ হতে পারে। অর্থাত্ "ভিসিয়াস সাইকেল"এ ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
এইসব রোগের বিভিন্ন/এক বা একাধিক কারণ আছে। তবে, মূলত প্রেমে ব্যর্থতা, যৌনজীবনে ব্যর্থতা- প্রতিবন্ধকতা, যৌন অবদমন--- যেমন ধর্মগুরু-মহারাজদের প্রভাব(প্রায় সব ধর্মগুরুই লম্পট, দ্বিচারী, ভণ্ড)- ধর্মীয় ভাবনায়- নানান বদ্ধমূল সংস্কার- সামাজিক ভীতি ইত্যাদি--- এর ফলে অনেক স্নায়ু রোগ ও অস্বভাবী আচরণ তৈরি হয়--- যেমন ক্রোধে কাঁপতে থাকা-হাঁটু কাঁপা-খিটখিটে মেজাজ-বিরক্তি-মাথা যন্ত্রণা-অবসাদ-জীবন সম্পর্কে লাগাতার উদাসীনতা-নিস্পৃহতা-ভীতি, নিজস্বতা বোধ বৃদ্ধি-ব্যক্তিত্বহীনতা-লজ্জাহীনতা-ছেলেমানুষী স্বভাব-বিপরীত লিঙ্গকে চিনতে ভুল করা সহ নানান দেহমনজনিত অসুখ হয়; এগুলোর আরও কারণ থাকে--- দাম্পত্যে অসফলতা- মিলমিশ নেই- প্রায় পরিত্যক্ত, রোজগার সহ কর্মজীবনে অসফলতা, ব্যক্তিত্বহীনতা, অস্বচ্ছচিন্তা, হীনমন্যতা, উচ্চমন্যতা, দুর্বল ব্যক্তিত্ব বা ব্যক্তিত্ব গঠনে অপূর্ণতা, আত্মজ্ঞানের অভাব, অত্যধিক সাংসারিক চাপ ইত্যাদি এক বা একাধিক কারণ থাকে। উক্ত রোগ অন্য কারণেও হতে পারে। এসব থেকে মুক্তি পেতে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
গত এক বছরে আমেরিকা, হল্যান্ড এবং লন্ডনের তিনটি সংস্থা ফেসবুক নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। তিনটি পৃথক সমীক্ষার ফল ঊনিশ-বিশ পার্থক্য। সামগ্রিক বিচারে দেখা গেছে যে, বাংলা অঞ্চলে প্রায় ৬০-৭০% ফেসবুক আইডি নানান অসামাজিক কাজে লিপ্ত, লম্পট, বহুগামী, একাকীত্বে ভোগা, হতাশাগ্রস্ত, অবসাদগ্রস্ত, চটুল, দাম্পত্যে অসফল, বিভিন্ন মানসিক রোগে, বিশৃঙ্খল চিন্তায় এবং মানসিক-শারীরীক রোগে আক্রান্ত; এরাই দৈনিক ৪ঘন্টার বেশি ফেসবুকে সময় কাটায় এবং বহু রাত অবধি থাকে। চ্যাটিং-এ বেশি মত্ত থাকে। এদের বেশিরভাগই পচনধরা সমাজের অংশ, মধ্যবিত্ত, মধ্যমেধার। নারীর সংখ্যা পুরুষের থেকে বেশি। বিবাহিত নারীর সংখ্যা বেশি।
বাকি ৩০-৪০%-এর মধ্যে আছে নিজ আদর্শ-মতবাদ প্রচারকারী, সংবাদকর্মী, বিভিন্ন দলীয়কর্মী, আপত্কালীনকর্মী, অনুসন্ধানকারী, সমীক্ষাকারী, বিভিন্ন সংস্থার নজরদার, প্রকৃত লেখক, কিছু সাধারণ মানুষ যোগাযোগকারী, পড়ুয়া। এদের চ্যাটিং প্রবণতা ক্ষেত্রবিশেষে বেশি বা কম এবং সুনির্দিষ্ট।
দেখা গেছে, ফেসবুকে যারা বিকৃতকামাচারে, লাম্পট্যে ও বহুগামীতায় মত্ত তাদের সিহভাগই মধ্যবিত্ত মানসিকতার এবং মধ্যমেধার। এদের বেশিরভাগই ঈশ্বরে বিশ্বাসী, কমভাগ নাস্তিক এবং তথাকথিত প্রগতিশীল, যারা আদপে ভোগবাদের শিকার; প্রগতিশীলতা-নাস্তিকতা তাদের মুখোশ। অস্বচ্ছ চিন্তার, সর্বজ্ঞের ভাণ করা কতিপয়ও বহু। শামিল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ১৭ থেকে৭০ বছর বয়স্করা। বিবাহিতের সংখ্যা তুলনামূল ভাবে বেশি।
.
#প্রেম: বস্তু নিরপেক্ষ সংজ্ঞা নেই। তাই এটা দুই ধরনের। ১) #দাম্পত্য--- মানসিক মিল, চেতনায় মিল, বন্ধুত্ব, আদর্শগত মিল ইত্যাদির সঙ্গে সুকুমারবৃত্তি এবং যৌনতা থাকতেই হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্মান গুরুত্ব থাকে এবং সততা, স্বচ্ছতা, আত্মমর্যাদা বোধ, নীতিবোধ, আদর্শবোধ থাকে। উভয়েই আত্মপরিচয়ে ঋদ্ধ থাকে। অনুভূতিগুলো ও মাত্রাগুলো অন্যপ্রেমের থেকে কিছু কিছু পৃথক। এটাকে চলতি প্রেম বলা হয়। এটা গড়ে ওঠে; করা যায় না। নারী-পুরুষের দাম্পত্যই স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক, সুস্থ, সুন্দর। দাম্পত্যই সুস্থ ও শ্রেয়।
২) #অদাম্পত্য--- এটাকে চলতি ভাষায় ভালোবাসা বলা হয়। জীবনসঙ্গী(বর, বউ) বাদে আর সকলের প্রতি প্রেম। এটা যৌনতা বর্জিত হতেই হবে। দেশপ্রেম, সমাজপ্রেম, বইপ্রেম, কোনো বস্তু ও স্থানের প্রতি প্রেম এই ভাগে পড়ে। অনুভূতিগুলো ও মাত্রাগুলো দাম্পত্যের থেকে কমভাগই পৃথক।
সব প্রেমই ভালো লাগা থেকে আসে এবং বন্ধুত্ব থাকে। এরপরই অপরকে এবং নিজেকে ভালো রাখার ও করার ইচ্ছা, সুন্দর হওয়ার-হওয়ানোর ইচ্ছা, উপকার, সহযোগ, সহানুভূতি, মমত্ব, সম্মান, শ্রদ্ধা ইত্যাদি সুকুমারবৃত্তিগুলো থাকে। সুন্দর একটা মন ও মানসিকতার প্রকাশ থাকে এবং আচরণে তা ব্যক্ত হয়। সম্পর্কে আন্তরিক স্বচ্ছ সত্ বলিষ্ঠ সুন্দর হয়ে উঠুন। প্রেম সর্বজয়ী, সর্বত্রগামী, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সৃজনশীল, জীবন।
#প্রেমহীনতা একটি রোগ: দাম্পত্য প্রেমে যৌনতা থাকবেই, প্রেমের সব অনুভূতি থাকবেই। না থাকলেই সেটা রোগ। এই রোগটির বৈজ্ঞানিক নাম Hypopituitarism বা হাইপোপিটুইটারিজম। বিরল রোগ। নেদারল্যান্ডের একটি সরকারী চিকিত্সকদলের সমীক্ষামতে প্রতি-১লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪৫জন এই রোগে আক্রান্ত। এটা পিটুউইটারি গ্রন্থি ও হরমোনের ঘাটতি ঘটিত রোগ। প্রাথমিকভাবে রক্তের T4, T3 এবং সিটিস্ক্যানে রোগ নির্ণয় করা হয়। রোগের গভীরতা অনুযায়ী সুচিকিত্সায় রোগমুক্তি ঘটে।
.
#বন্ধুত্ব: বন্ধুত্বে প্রেম থাকে, প্রেমে থাকে বন্ধুত্ব। যৌনতা এলেই তা খারাপ বা দাম্পত্যপ্রেম হয়ে যাবে। বন্ধুত্ব নানান ভাবে গঠিত হয়। মানসিক, কর্মের রোজগারের, দলীয় ইত্যাদি। এখানেও পারস্পরিক সম্মান শ্রদ্ধা থাকে। মুক্তি, আত্মপরিচয় থাকতে হয়। মনের বন্ধনই বন্ধু; কিন্তু যৌনতার অনুভূতি থাকবে না। অনুভূতিতে "দাম্পত্য প্রেমে"র থেকে মাত্রাগত ফারাক আছে। বন্ধুত্ব থেকেই দাম্পত্য প্রেম আসে।
ফেসবুকে ভালো কিছু:
প্রচুর মৌলিক প্রবন্ধ, তথ্য, খবর, কাব্য ইত্যাদি আছে। এসব পড়ে যাচাই ও ঝাড়াই বাছাই করে শেখা যায়, জানা যায়। প্রচুর সুন্দর মনের, বিদগ্ধ, জ্ঞানী, পণ্ডিত মানুষ আছেন। তাঁদের উপদেশ, পরামর্শ জীবনে কাজে লাগে। তাঁদের লেখাও পড়ে ঋদ্ধ হওয়ার সুযোগ আছে। একটা নতুন জগত্ খুলে যায়। নিজেকে ভেঙে ফেলে নতুন ক'রে গড়া যায়। এক্ষেত্রে যুক্তিবাদীরা অগ্রগণ্য। রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন ধ'রে নিজেকে ভেঙেছেন এবং গড়েছেন।
.
এই হলো, বনের বাঘকে তাড়ানো যায়, মনের বাঘকে তাড়ানো দায়।
যাঁরা মনের বাঘকে তাড়াতে ইচ্ছুক, যাঁরা ফেসবুকে বিকৃতচিন্তার দ্বারা আক্রান্ত হতে চান না, এবং যাঁরা নিজেকে সংশোধন করতে আন্তরিক ইচ্ছুক তাঁরা এটা অনুসরণ করতে পারেন---
১) উল্লেখিত মনবিকলন, চিন্তা, রোগ হয়ে থাকলে দ্রুত মনোবিদের পরামর্শ নিন। ফেসবুকটা মনোবিদ নয়।
২) ফেসবুকে একটি আইডি থাকুক। নিজের জাল, নকল, ছদ্ম আইডি মুছে দিন। ছদ্মনামে বাস্তবে লেখা অপরাধ নয়; প্রথমসারির প্রায় সব সাহিত্যিক ছদ্মনামে লিখেছেন, লেখেন। তবে, এতে পাঠকের সঙ্গে কোনওভাবেই বাক্যালাপের সুযোগ থাকে না; ছদ্মনামটির ব্যক্তিকে খুঁজলে আসল ব্যক্তিকেই পাওয়া যায়। কিন্তু ফেসবুকে বাক্যালাপ হয় এবং আলাপে নকল ব্যক্তিত্বটাকেই পাওয়া যায়। ফলে দ্বিমেরু ব্যক্তিত্ব বা বিশৃঙ্খলা(Bi-polar personality/disorder) নামক রোগে আক্রান্ত হবেন। লম্পট, বহুগামী, অপরাধমনস্ক হয়ে পড়তে পারেন। এটা সামাজিক অপরাধও। বরং, বাস্তবে এবং ফেসবুকে ব্যক্তি হিসেবে আচরণে চিন্তায় এক ও অভিন্ন রূপে থাকুন। এক্ষেত্রে অন্য কারও ভিন্নতা দেখলে তাকে বর্জন করুন।
৩) ফেসবুকে ধারাবাহিক বসা বন্ধু করুন। বসলে নির্দিষ্ট সময়ে বসবেন না এবং দৈনিক একটানা আধঘন্টার বেশি থাকবেন না। ফেসবুককে কে কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা নির্ভর করে তার রুচিবোধ, মানসিক গঠন, চেতনার স্তর, ইচ্ছা, উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের ওপরে। অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবের ব্যক্তির আচরণের, স্বভাবের, মানসিকতার প্রতিফলন ফেসবুকে ঘটে, যদি শানিত অপরাধমনস্ক বা মনবিকলনের শিকার না হয়। তবে, এরা এক্ষেত্রে কিছু সূত্র রেখে যাবেই।বাস্তবে কাজ থাকলে, সমাজকে ভালোবেসে নিজেকে ঋদ্ধ করতে চাইলে ফেসবুকে বেশি সময় দেওয়া যায় না। ফেসবুকে বিপ্লব এখন অসম্ভব। বরং সৃজনশীল কাজে মন দিন--- বাগান করা, কাব্যচর্চা, প্রবন্ধ রচনা, হাতের কাজ, সঙ্গীতচর্চা, ভাবনাচর্চা, পড়াশোনা, সামাজিক কাজ, নিপীড়িতের- দরিদ্রের পাশে থাকা, নতুন সমাজ ভাবনা ইত্যাদি আপনাকে ঋদ্ধ করবে। নিজে মনোবিদ না হলে, মনচিকিত্সা না জানলে মনরোগী, হতাশী ইত্যাদি মনবিকলনের আক্রান্তদের মনোবিদের পরামর্শ নিতে বলুন। নিজে ঠিক করতে যাওয়া অপরাধ অথবা ধান্দাবাজি।
৪) বাস্তবের সম্পর্কগুলো নতুনত্বে ভরিয়ে তুলুন, জীবন্ত করুন। বন্ধন দৃঢ় করুন, ভালোবাসুন, সহযোগী হোন। সেই সম্পর্কগুলোর যত্ন নিন। আখেরে এরাই আপনার পাশে থাকবে। বাস্তবে নতুন সম্পর্ক গড়ুন সাক্ষাতে।
৫) সাক্ষাত্ পরিচিত ব্যক্তি বিদগ্ধ ও জনপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ছাড়া চ্যাট করবেন না। এমনকি পোস্টে উত্তর প্রত্যুত্তরে সতর্ক হোন, দায়বদ্ধ হোন। নিজের সম্ভ্রম, মর্যাদা, গুরুত্ব বজায় রাখুন। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আপনার মন মানসিকতা এবং ফেসবুকের কর্মকাণ্ড জানা যাবে না। সবকিছুই জানা যায়; এখানে কিচ্ছুই গোপন থাকে না।
৬) অবাঞ্ছিত চ্যাট, আহ্বান বর্জন করুন। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করুন প্রকাশ্যে, চ্যাটে নয়। অশ্লীলতা এড়িয়ে চলুন। সুস্থ সহনশীল মন গড়ে তুলুন।
৭) ব্যক্তিগত সুখ, দুঃখ, যন্ত্রণা, অসফলতা, হতাশা, হাহাকার পোস্ট/লেখা বন্ধ করুন, চ্যাটিং-এ তো নয়ই। এটা একটি ফাঁদ, শিকার ও শিকারী--- উভয়েরই। নিজের বিভিন্ন মেজাজের ছবি/সেলফি দেওয়া বন্ধ করুন; এটা একটা রোগ। বরং চলমান সামাজিক ঘটনায় আপনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখুন নির্মোহে, নিরপেক্ষতায়, যুক্তি দিয়ে; আলোচনা করুন দ্বর্থহীনতায়, স্পষ্টভাবে, যুক্তি সহকারে; এতে আপনার মগজ ঋদ্ধ হবে। শানিত তীক্ষ্ণ ধারালো হবে চেতনা-বোধ-জ্ঞান।
৮) ভুল মানুষকে বর্জন করুন। এরা বিরক্তি উত্পাদন করবে, আপনার মনবিকলন ঘটাবে। হুজুককে, নিজেকে জাহির করাকে, দেখনদারী, চটক বন্ধ করুন। বরং সহজ সরল সাবলীল প্রাণবন্ত সৃজনশীল হয়ে উঠুন; মানবিক হয়ে উঠুন। নিজেকে গড়ে তুলুন, যোগ্য করে তুলুন। নিজে ভুল হলে স্বীকার করুন--- এটা মহত্ব এবং স্বচ্ছতা, সততার পরিচয়; সহনশীলতা, অহংহীনতার পরিচয়।
৯) দাম্পত্যে অসফল, অসুখীরা যেকোনও একটি পথ বেছে নিতে পারেন---
ক) অসফলতাটাই মেনে নিয়ে দীর্ণ জীর্ণ শীর্ণ অবদমিত পীড়িত হতাশী অবসাদগ্রস্ত হোন, মানসিক রোগী হয়ে উঠুন;
অথবা, খ) বহুগামী, লম্পট, উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠুন, যাতে বেআইনি(ভারতে) কাজের জন্য কারাবাস হয়; এসবে সুস্থ চিন্তার মানবিক মনের মানুষ আপনার সঙ্গ ত্যাগ করবেই।
অথবা, গ) পারিবারিক ভাবে বা নিজে মনোবিদের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ মনের হয়ে উঠুন, সুস্থ জীবনযাপন করুন;
অথবা, ঘ) সম্পর্কের ভারী বোঝা না টেনে বিচ্ছেদ করুন এবং নতুন দাম্পত্য গড়ে তুলুন;
সুস্থ হতে ইচ্ছুক হলে যুক্তিবাদীরা মানবতাবাদীরা, মনোবিদরা, সুস্থ আইনজ্ঞরা আপনার পাশে থাকবে, এটা জানি।
১০) চিহ্নিত, সন্দেহজনক এবং অনুমিত বহুগামী, লম্পটদের সঙ্গ ত্যাগ করুন, বাস্তবেও। কথা, সম্পর্ক বন্ধ করুন। কোনও মনোবিদের দ্বারা এদের সুস্থ করা যাবে না। অঙ্গ সম্পূর্ণ নষ্ট হলে, আরোগ্যের সম্ভাবনা না থাকলে যেমন শল্যচিকিত্সা জরুরি হয়। এই লম্পট ও বহুগামীদের সেভাবেই চিরবিচ্ছিন্ন করুন।
১১) যেকোনো প্রলোভন, হুজুক, ভীতি, বিরক্তি উদ্রেককারী বিষয় ও মানুষকে এড়িয়ে যান। সম্পর্ক ত্যাগ করুন। বরং সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তরিক হোন যাচাই ঝাড়াই বাছাই করার পরে। "আত্মজ্ঞানই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান এবং শ্রেয়।"---সক্রেতিস।
১২) সম্পর্কে, বন্ধনে স্বচ্ছ স্পষ্ট সত্ সুন্দর দৃঢ় সহজ সরল হয়ে উঠুন। মননশীল সৃজনশীল প্রাণবন্ত হয়ে উঠুন। রান্নায় নুন ও মিষ্টি স্বাদের মূল ধারক। বেশি বা কম হলে বিস্বাদ লাগে। সম্পর্কে আবেগটা ঐ রান্নার নুন ও মিষ্টির মতো। আর, কাঁচাখাদ্য ধোয়া-পরিষ্কার করাটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে খোঁজ নেওয়া ও সুকুমারবৃত্তির প্রয়োগ; যা আসলে যত্ন। এসবই সম্পর্ককে সুস্থ সবল দৃঢ় সুন্দর সাবলীল সহজ প্রাণবন্ত করে, ভরসাযোগ্য নির্ভরযোগ্য করে এবং নিজেকেও সৃজনশীল, নির্ভরযোগ্য ভরসাস্থল করা যায়। নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলা যায়। নির্ভিক হয়ে উঠুন। যুক্তিবোধে ঋদ্ধ, মানবতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠুন। চেতনায় লাগুক যুক্তির স্পর্শ। মানবতার আলোর পথে এগিয়ে চলুন। আন্তরিকতায় প্রতিদিন, মনের যত্ন নিন।
-
এবার,
১) আপনি কি যান্ত্রিক মন, দরকচা মন, মনবিকলন নিয়ে থাকবেন, বহুগামী, কদর্য মনের, ভণ্ড, দ্বিচারী, স্ববিরোধী, ধান্দাবাজ, ছদ্মবেশী উচ্ছূখল বিশৃঙ্খল চিন্তার ও চর্চার হবেন এবং এদেরকে কি এসবেই উত্সাহ দিয়ে কলুষিত সমাজগঠন করবেন, এসবই কি পরবর্তী প্রজন্মকে শেখাবেন?
নাকি,
২) আপনি হবেন জিজ্ঞাসু, জ্ঞানপিপাসু, দৃঢ়, নির্ভিক, স্বচ্ছ, স্পষ্ট, সহযোগী, মমত্ববোধী, আন্তরিক, শানিত ধারালো তীক্ষ্ণ বোধের- চেতনার, আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন, নীতিবোধী, আদর্শবাদী, সামাজিক দায়বদ্ধ, সুস্থ সম্পর্কের গড়ার ও রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ, সুন্দর সমাজ গঠনে মনজ্ঞ, জ্ঞানে ঋদ্ধ, জীবনবোধে ঋদ্ধ, আত্মপরিচয়ে ঋদ্ধ উন্নত মেধার মানসিকতার উন্নতশির, যা আদপে মানবিক-মানবতা এবং যুক্তিবাদী হয়ে ওঠা?
জীবন একটাই; মৃত্যুর পরে জীবন নাই; জীবনটা আপনারই; তাই, ভাবনাটা আপনার নিজের, ইচ্ছেটা আপনার নিজের; কোনটা হবেন সিদ্ধান্তটাও আপনার নিজেকেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে বয়সটা প্রতিবন্ধক নয়; ইচ্ছেটা আসল। এই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণটাই স্বাধীনতা (স্ব অধীনতা) তথা স্বাধীন চিন্তা, মুক্তচিন্তা এবং নিজের জীবনে প্রয়োগ করাটা সুস্থ সুন্দর।
এই দ্বিতীয়ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সঙ্গে, পাশে ছিলাম, আছি, থাকব আমৃত্যু এবং প্রতিটি যুক্তিবাদী আপনাদের সঙ্গে, পাশে থাকবে, এটা নিশ্চিতভাবে জানি।
-------
পরন্ত বেলা---
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর ছায়া
শিথিল বন্ধন, উড়িছে কত মায়া
তবু, এবারে যাবার পালা।
ওই দূরে---
যেখানে আকাশ বিলীন বিস্তারে
অনুভব ছোঁয়া জীবন প্রান্তে,
সেই পশ্চিম দিগন্তে
ডিমের কুসুমের মতন সূর্য ঢলে,
ধীর লয়ে সময় অস্তাচলে,
নিস্তেজ চোখ, নির্ভার দেহ, মুখ ম্লান,
শেষের আলোয় প্রকৃতিও সারে শেষ স্নান।
সোনার আভায় ছলছল ছলছল
তরঙ্গায়িত মন্থর ওই নদীজল নদীজল;
ঘরে ফেরে একঝাঁক কালো কালো পাখি
হাওয়ায় ভাসে ডানার ক্লান্তির ডাকাডাকি
পালকে রোদের গন্ধ মুছে যায়,
দিবসের কথকতা এসে জমে ঘাটের কিনারায়।
আকাশ জুড়ে ভেসে ভেসে চলে অবরোধহীন
ব্যক্ত মুক্ত স্বাধীন
ছেঁড়া ছেঁড়া শেষ বৈশাখী-মেঘদল
ফাঁকে ফাঁকে সহস্র রঙ-ঝরণার মেলাতল,
অন্তরের নিঃশেষিত শেষ রশ্মিপাতে
কোনো মতে
শেষ সূর্য অস্তরাগের ছবি আঁকে
পথের শেষতম বাঁকে
আর কিছু না রেখে দুই হাতে;
সুদীর্ঘ যাত্রাপথের প্রাপ্ত অনুভবগুলো
দিবসব্যাপী সমস্ত কথা ও কাহিনিগুলো
ছড়ায়, ছিটায় রঙের বার্তায়
এক আকাশময়,
ওড়ে ধূলি, ওড়ে বার্তা
গুঁড়ো গুঁড়ো হাওয়ায় হাওয়ায়
একরাশ গোধূলির স্বর্ণাভ কণায় কণায়,
অঝোরে ঝ'রে ঝ'রে পড়ে
স্বপ্নের মতো
জীবনের স্পন্দনের মতো
ঘাসে ঘাসে পাতায় পাতায় গাছে গাছে
আনাচে কানাচে
মেঘদলে নদীজলে পথে প্রান্তরে,
এই বিপুল কথকতা থাকবে ছড়িয়ে সংক্ষিপ্তাকারে---
ঐ ধুলিকণায়, রঙের আভায়,
বস্তুর রূপ রস স্বাদ গন্ধমেলায়,
বাতাসের মনের ভিতরে
আগামীর পাঠকের তরে...
.
#শমীন্দ্রঘোষ
৩১ বৈশাখ, ১৪২৪
১৫/০৫/১৭
৩১ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:৩৭
শমীন্দ্র ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:৫০
কানিজ রিনা বলেছেন: প্রথমেই অসংখ্য ধন্যবাদ, বেশ সচেতন মুলক
পোষ্ট। ফেজবুক শহর মফস্যল গ্রাম ঝড়
হাওয়ার গতিতে আমাদের যুব সমাজ বিবাহীত
পরিবার অবনতির চরম শিখরে পৌছেগেছে।
প্রগশীল আধুনিকতার নামে যে পচন ধরেছে
তা উত্তরনে দেশের সরকার প্রতিটি সমাজ
সচেতন মানুষ এগিয়ে না আসলে এর ভয়াবহতা ঠেকান কখনও সম্ভব না। ধন্যবাদ,