নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মূর্খ মানুষ। আপনাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে চাই। আর নামটা খেয়ালের বশে দিয়েছি। শেখার মাঝেই কিছু জানাতে চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।

সব জান্তা

কি বলবো। কিছুই মনে করতে পারছি না।

সব জান্তা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবর্জনা

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:০৩

ইসমাইল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন।
তার হাতে বাজারের ব্যাগ। ব্যাগে লাউ আর চিংড়ি। তাকে বাসা থেকে পইপই করে বলা দেয়া হয়েছে, এইসব বাজার যেন না নেয়া হয়। হাতে ফর্দ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফর্দ অনুযায়ী বাজার নেয়ার কথা। ইসমাইল সাহেব নিয়েছেনও। বাড়তি নিয়েছেন লাউ আর ঘেচো চিংড়ি। কেনার সময়ই তার জিভটা কেমন টলমল করে উঠল। আহা, কত দিন প্রিয় খাবারগুলো খাওয়া হয় না। ছেলে, ছেলের বউ, নাতি, কারোরই মুখে রোচে না এসব। কিন্তু ইসমাইল সাহেবের খুব ইচ্ছ হয়! বোম্বাই মরিচে ডাল ভর্তা, লাউয়ের সাথে ঘেচো চিংড়ি, কুমড়ো ফুলের মচমচে বড়া! তিনি ভাবেন আর জিভের আগায় জল জমে যায়।
সেদিন দু'খানা বড় কচু নিয়ে এসেছিলেন। পানি কচু। গ্রামের বাড়ির সামনের ডোবাটায় হত। কচুর মূলের অংশগুলো গোল চাকতি চাকতি করে কেটে তেলে ভেজে মরিচের ঝোল দিলে, আহ! সাক্ষাৎ অমৃত!!
অনেক সাহস করে সেদিন তেমন দুখানা কচু নিয়ে এসেছিলেন ইসমাইল সাহেব। জেসমিন কিছু বলে নি। কাজের মেয়ে আকলিমাকে বলেছিল কেটে ফ্রিজে রেখে দিতে। তারপর হয়ত ভুলে গেছে! সেই কচু আর রান্না হয় নি। ইসমাইল সাহেব নিজ থেকে কিছু বলেনও না। বুড়ো লোভী জিভখানা কেবল মাঝে মাঝে জলজলে হয়ে পরে!
নিজেকে সামলে নিয়ে ইসমাইল সাহেব আবার বাসার দিকে পা বাড়ান! আজকের বাজার দেখেও হয়ত খুব রাগ করবে জেসমিন। এমনিতে পুত্রবধু হিসেবে জেসমিন খারাপ না। কিন্তু রাগটা একটু বেশি, এই যা! কথায় কথায় তেঁতে ওঠে। তা অবশ্য দোষের কিছু না। নিজের মেয়ে থাকলেও হয়ত রাগত। জেসমিন একটু কড়া ধাতের মেয়ে। তা ইসমাইল সাহেব অবশ্য কিছু মনেও করেন না। তাছাড়া স্ত্রী নেই, আর কোন ছেলে মেয়েও নেই। এই একটা মাত্র ছেলে রাজীব, ছেলের বউ, আর নাতি। সুখে দুঃখে এক সাথেইতো থাকতে হবে!! এই বুড়ো বয়সে একা একা গাঁয়ে থাকাও সম্ভব না। শহরে আসাতে রাজীবদের যে খানিক সমস্যা হয় নি, তা না। কিন্তু আর কদিনইবা বাঁচবেন!
ইসমাইল সাহেব বাজার নিয়ে ঘরে ঢোকেন। বাসার পরিস্থিতি কি, কে জানে! রান্না ঘরে আকলিমা কিছু একটা করছে। ইসমাইল সাহেব বাজারের ব্যাগটা আকলিমার হাতে দিলেন। আকলিমা কথা বলল না। বাজারগুলো একে একে ফ্রিজে তুলে দিতে লাগল। ইসমাইল সাহেব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগে দেখছেন। সুযোগ পেলেই লাউ চিংড়ির কথা বলবেন। ব্যাগটা তিনি আলাদা করে রেখেছেন। এই মুহূর্তে আকলিমা ফ্রিজ থেকে একটা পুঁটলি বের করল। তারপর ইসমাইল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, 'খালুজান, এই কচুঘেচু আর আইনেন না বাসায়। ফ্রিজে জায়গা নাই। আইজ আপায় খুব রাগ হইছে! বলছে এইগুলান ফালাই দিতে। যান, এইগুলা নিচে ফালাই দিয়া আসেন'।
ইসমাইল সাহেব বললেন, 'না না, অসুবিধা নাই। এইগুলান খাওয়া আসলে স্বাস্থ্যের জন্যও খারাপ। পচা পানির জিনিস। কি না কি হয়। তারওপর গলাও চুলকায়। দে, আমার কাছে দে, ফালাই দিয়া আসি'।
ইসমাইল সাহেব টুক করে লুকানো লাউ চিংড়ির ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেন পোঁটলাটা। তারপর টুকটুক করে হেঁটে নেমে আসেন সিঁড়ি বেয়ে। ভারি ব্যাগ নিয়ে উঠতে যতটা কষ্ট হয়েছিল, নামতে তারচেয়ে অনেক বেশি আরাম। তিনি টুকটুক করে নামতে থাকেন। ফের যখন উঠবেন, তখন অবশ্য হাতে কোন ব্যাগও থাকবে না। উঠতে কষ্টও হবে কম। ভাবতে ভাবতে ইসমাইল সাহেব খানিক আনন্দ অনুভব করেন।
আনন্দই জীবন।
তিনি ডাস্টবিনের জঞ্জালের ভেতর ব্যাগটা ছুড়ে ফেলবেন, এই মুহূর্তে বাচ্চা দুটোকে দেখলেন। নোংরা বস্তা নিয়ে ডাস্টবিনে কিসব খুঁজছে! তিনি হাত উঁচু করে ঈশারায় ডাকলেন। তারপর হাতের ব্যাগটা তুলে দিলেন। তুলে দেয়ার আগ মুহূর্তে আবার ব্যাগটা খুললেন। উঁকি দিয়ে দেখলেন ভেতরে, চিংড়ি, লাউ আর কচুর গোল গোল চাকতি। ইসমাইল সাহেবের জিভ আবার ভিজে উঠতে চাইছিল। বুড়ো লোভী জিভ। বড় বেহায়া। অদৃশ্য লাউ চিংড়ির তরকারির সুবাসে মুখের ভেতরের ঘন থুথুগুলো আঠালো জলের মতন লালা হয়ে যাচ্ছিল। ভিজে লালায় ভরে উঠতে যাওয়া মুখখানা সামলাতে ইসমাইল সাহেব থুঃ করে একদলা থুথু ফেললেন নোংরা মাটিতে।
অথচ, সামনের শিশু দুটি, হেঁটে যাওয়া পথচারী, আর তার মাথার উপরে ইলেকট্রিকের তারের উপর বসা সারি সারি কাকেরা ভাবল, ইসমাইল সাহেব বুঝি ডাস্টবিনে জমে থাকা আবর্জনার গন্ধে থুঃথুঃ ফেলেছেন!!
-------------------------------------
আবর্জনা/ সাদাত হোসাইন

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫

শূন্য থেকে যাত্রা বলেছেন: অসাধারণ

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬

সব জান্তা বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.