![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কি বলবো। কিছুই মনে করতে পারছি না।
উমর আলী স্যার ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন বিস্ময়-চোখে। তাঁর চেহারা গম্ভীর। গম্ভীর চেহারা আরও গম্ভীর করে একান্ন সেকেন্ড পর তিনি ব্ল্যাকবোর্ড থেকে চোখ সরিয়ে চেয়ার টেনে বসলেন। তাঁর চোখ এখন ক্লাসরুমের চতুর্দিকে ঘুরছে। চোখ খুঁজছে জহিরকে। জহির বসে আছে শেষ বেঞ্চের কোনে। উমর আলী স্যার তাকে ডাকলেন, ‘জহির, এদিকে আয়।’
জহির নির্বিঘ্নে তাঁর কাছে এসে দাঁড়ালো। উমর আলী স্যার বললেন, ‘ব্ল্যাকবোর্ডে এই কাণ্ডটা কে ঘটিয়েছে?’
ক্লাসের উৎসুক চোখগুলো এবার সব ব্ল্যাকবোর্ডে নিবদ্ধ হলো। ব্ল্যাকবোর্ডে আজকের ক্লাসের পড়ার বিষয় লেখা আছে এভাবে—
১২/০২/২০১৫
বাংলা ক্লাসঃ মর আলী স্যার
পড়ার বিষয়ঃ আমার ছেলেবেলা
লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উমর আলী স্যারের নামের প্রথম অংশ থেকে ‘উ’ যে উধাও হয়ে গেছে এটা এতক্ষণ ক্লাসের কেউই লক্ষ্য করেনি। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে সবাই এবার আঁতকে উঠলো। আসল অপরাধী ধরা না পড়লে সবার পীঠে রামধোলাই নিশ্চিত।
জহির চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। উমর আলী স্যার রেগে বললেন, ‘কিরে কথা বলিস না কেনো? আমি মরলেই তুই খুশি হস তাই না?’
জহির চুপ। উমর আলী স্যার তার হাতে চক ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নামটা ঠিক করে বেঞ্চে গিয়ে বস।’
উমর আলী স্যার জহিরকে শাস্তি না দিয়েই ছেড়ে দিলেন। ক্লাসের সবাই বেশ বিস্মিত হলো। জহির নিজেও মহাবিস্মিত। সে তার আসনে গিয়ে বসলো। শাস্তি না পেয়ে ভেতরটা তার কেমন খচখচ করতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো, ইস! শাস্তি পেলেই হয়তো ভালো হতো।
এক মাস পর উমর আলী স্যার খাতা হাতে ক্লাসে ঢুকে জহিরকে ডাকলেন যথারীতি। তার হাতে খাতা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এটা পড়ে শোনা সবাইকে। প্রশ্ন এবং উত্তর দুটোই পড়।’
জহির পড়তে শুরু করলো। প্রশ্নঃ রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলায় কেমন ছিলেন?
উত্তরঃ ‘সত্যি বলতে রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলায় অনেক ফাঁকিবাজ ছিলেন। তিনি স্কুল ফাঁকি দিয়ে দুপুর বেলা ডাংগুলি খেলতেন। বুড়াকালে তিনি স্কুল ফাঁকির কথা স্মরণ করে কবিতাও লিখেছেন, ‘সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর পাঠশালা পলায়ন/মনে ভাবিলাম আর কি কখনো ফিরে পাবো সে জীবন।’
রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলায় স্কুল পলায়ন করেছেন বলেই এমন কবিতা লিখতে পেরেছেন। স্কুল পলায়ন খারাপ নয়। তাঁর মতো আরও অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ স্কুল থেকে পালিয়েছেন। কাজেই স্কুল-পলায়ন করা মানে জ্ঞানীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা।’
ক্লাসরুম হেসে উঠলো হো হা শব্দে। উমর আলী স্যার বললেন, ‘চক নে। ব্ল্যাকবোর্ডে নাম্বার লিখ। ব্রাকেটে নামও লিখ।’
জহির চক নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে শুরু করলো। সর্বোচ্চ মার্কঃ ৮৩ (রুহি);
সর্বনিম্ন মার্কঃ ১৪ (জহির) ।
পরের দিন থেকে জহির স্কুলে এলো না টানা তিনদিন। চতুর্থদিন উমর আলী স্যার তাদের বাড়িতে হানা দিলেন। জহিরকে ডেকে বললেন, ‘কিরে স্কুলে যাস না ক্যান? রাগ করেছিস? চল বাহিরে হাটি। রাসুর দোকানে চটপটি খাওয়াবো তোকে।’
জহির সুবোধ বালকের মতো উমর আলী স্যারের পিছু পিছু বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। উমর আলী স্যার বললেন, ‘পিছু পিছু হাঁটছিস ক্যান? আমার পাশে আয়।’
জহির এবার উমর আলী স্যারের পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো সংকুচিতভাবে। উমর আলী স্যার বললেন, ‘জহির তোকে আমি এতো বকা দেই কেনো জানিস? কারণ তোকে আমি ভালোবাসি। একটু পড়াশুনা কর। তুই অনেক ভালো রেজাল্ট করবি।’
জহির ঘোরগ্রস্তের মতো উমর আলী স্যারের কথা শুনছে। স্যারকে আজ তার ভিন গ্রহের মানুষ মনে হচ্ছে। এ যেন এক অন্যরকম উমর আলী স্যার। এই স্যার তার অচেনা।
এরপর কেটে গেলো তিনমাস। উমর আলী স্যার আবার একদিন গম্ভীরমুখে খাতা হাতে ক্লাসে ঢুকে জহিরকে ডাকলেন। তার হাতে চক ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ব্ল্যাকবোর্ডে মার্ক লিখ।’
জহির চক হাতে ব্ল্যাকবোর্ডে দাঁড়িয়ে উমর আলী স্যারের দিকে তাকালো। উমর আলী স্যার বললেন, ‘সর্বোচ্চ মার্কঃ ৮৭ । ব্রাকেটে নাম লিখ, জহির।’
২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১৬
সব জান্তা বলেছেন: ধন্যবাদ। তবে লেখার ফুল ক্রেডিট আমার না।
২| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪১
চিন্তিত নিরন্তর বলেছেন: এমন শিক্ষক পাওয়া এখন দুস্কর।
ভাল লাগল আপনার লেখাটি।
২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১৬
সব জান্তা বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: উমর আলী স্যার মানুষ খারাপ হলেও লোক ভাল বুঝা গেল !
উমর আলী স্যারদের মত স্যর বর্তমানের অনেক বেশী প্রয়োজন । সাবলীল লেখা পড়ে ভাল লাগল ।