নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসীর প্রত্যাবর্তন: অল্প স্বল্প- ১

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

(প্রকাশনা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে পড়ায় উপন্যাসটির অল্প স্বল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি)...
......বিশটা মোটর সাইকেলে করে বিশ জোড়া চামচে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে। তাদের চোখদুটি বর্শার ফলার মতো। বিশ জোড়া চামচের হাতে চল্লিশ জোড়া অস্ত্র। কারো হাতে ধারালো লম্বা লম্বা ছুরি, কারো হাতে পিস্তল। দেখলেই বুক দমে যায়। বিশ জোড়া চামচের মুখ দিয়েই বেরুচ্ছে তর্জন-গর্জন। আকাশ বাতাস সব কিছু থমকে আছে। গাছের পাতাগুলো পর্যন্ত নড়ার সাহস পাচ্ছে না। বিশটা মোটর সাইকেল তাতিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাস। সবার দৃষ্টি তাদের দিকে। মানুষগুলো চোখের পাতা ফেলছে না। মুখ দিয়ে কারো বিন্দুমাত্র আওয়াজও বেরুচ্ছে না। সবাই নিস্তব্ধ। এক মহাপ্রলয়ের সময় এরকম নিস্তব্ধতা কেবল অসহায়ত্ব, দাসত্ব ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ করতে পারে না।
বিশটা মোটর সাইকেলের একেবারে সামনে একটা মাইক্রো। কালো রঙের। বেশ চকচকে চেহারা মাইক্রোটির। সেখানে বসে আহত সিংহের মতো ছটফট ছটফট করছে এই অপারেশনের টিম লিডার। অপারেশনটি সাকসেসফুল করতে পারলে পুরো একটা বছর পুরো বিশটা মোটরসাইকেল সহ মাইক্রোর আহত সিংহটি পর্যন্ত শান্ত হয়ে যাবে। তাহলে আগামি এক বছর আর কোনো মার্ডার করতে হবে না, কোনো অফিস কিংবা ব্যাংকে ডাকাতি করতে হবে না, কোনো নিরপরাধ নারীকে ধর্ষণ করে ধর্ষণের মামলা অন্য কোনো নিরপরাধের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে হবে না। বাড়িতে অবাধে আসতে থাকবে বড় বড় শ্যাম্পেনের বোতল, কখনো কখনো যৌন চাহিদা মেটানোর খোরাক।
মাসুদ আজ জয়েন করতে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাস্ট সিন্ডিকেট মিটিং এ তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাসুদ হাঁটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর দিয়ে। মাসুদের হাঁটা চলায় একটা পাশ্চাত্যের ভাব এখনো ফুটে উঠে যেটা সে অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারেনি। যেন তার অস্তিস্তের সঙ্গে বিষয়টা লেপ্টে রয়েছে। কতিপয় মেয়ে তাকে নিয়ে পিছনে পিছনে আপত্তিকর মন্তব্য করছে এটা বুঝতে পারছে মাসুদ। এসব দেখে তার নিজেরই হাসি পেয়ে যায়। মেয়েগুলো যখন জানতে পারবে মাসুদ এই ফ্যাকাল্টির টিচার তখন ওদের চোখদুটোর ছানাবড়া অবস্থা কল্পনা করতেই মাসুদের মুখ দিয়ে হালকা মুচকি হাসি বেরিয়ে আসে।
ফ্যাকাল্টিতে পৌঁছার পরপরই মাসুদও দর্শক হয়ে যায় ঐ বিশটা মোটর সাইকেলের ফ্রি যাত্রা শোতে। একেবারে টাকা পয়সা ছাড়াই এরকম স্পেশাল শো এই পৃথিবীতে বিরল। মাসুদ দেখলো সবার দৃষ্টি স্থির রেখাহীন। এসময় একটা কর্মচারি ফোকলা দাঁতে একটা হাসি ছেড়ে মাসুদের দিকে আসলো।
“আসসালামুআলাইকুম স্যার।”
লোকটির সালাম দেয়ার ভঙ্গি একটু আলাদা কিন্তু চমৎকার। উত্তর না দিয়ে থাকার মতো নয়। মাসুদ সালামের উত্তর দিলো।
কর্মচারিটি বললো, “কী স্যার, অবাক হচ্ছেন?”
“ওরা কারা?” জিজ্ঞেস করলো মাসুদ।
কর্মচারিটি বললো, “ওরা? ওরা ঈশ্বর!”
“ঈশ্বর মানে? বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এরকম ছুরি-পিস্তল নিয়ে শোডাউন করবে, এটা কি মামুর বাড়ির আবদার নাকি? বিশ্ববিদ্যালয়ের কি কোনো মা-বাপ নেই?” খানিকটা উত্তেজিত হয়ে জবাব দিলো মাসুদ।
“স্যার এটা মামুর বাড়ির আবদার নয় ভিসির বাড়ির আবদার কিংবা মিনিস্টারের বাড়ির আবদারও বলতে পারেন। আর স্যার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলেই কোনো মা-বাপ নেই। যেগুলো নিজেকে মা-বাপ বলে দাবি করে তাদের সবকয়টা বেজন্মা।”
“মানে?”
“আপনার লেগেছে স্যার? লাগাটা স্বাভাবিক। কিন্তু আসলেই তাই। এখানে একদল যা কিছু চায় করতে পারে। আর আপনি বেশি না, একটা ছোট্ট অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যান আপনাকে অবাধ্য শেয়ালের মতো সবাই টানা শুরু করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা দলাদলি করবে, মারামারি করবে, খুনোখুনি করবে, লাশ ফেলবে, মাগিবাজি করবে, আপনার সামনে মেয়েদের স্তন টিপবে এটা কোনো সমস্যা নয়। এগুলো চলতে দিতে হবে। এগুলো চলতে দেয়াই এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর প্রতিরোধটা নয়।”
“তার মানে এই কুলাঙ্গারগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক অ্যালাউড?”
“এক রকম সেটাই। এখানকার পলিটিক্স একেবারেই অন্যরকম স্যার। এক জনের বন্ধু নিমিষেই অন্য জনের শত্রুতে পরিণত হয়ে যায়। আবার শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হতে বেশি সময় লাগে না।”
“কিন্তু ঘটনাটা কী? এরকম অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে হিরোগিরি দেখাচ্ছে?”
“ঘটনা আছে স্যার। ঘটনা হচ্ছে নিয়োগ। ক্যাম্পাসে বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পার টিচার ১০-১২ লক্ষ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। টাকাগুলোর ভাগাভাগি নিয়েই মূল সমস্যা। যে পার্সেন্টে আগে ঠিক হয়েছিল সেটা কেউ মানতে চাইছে না। সবাই বেশি পেতে চাইছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসিন ছাত্র সংগঠনের সাথে ভিসির তুমুল বাক বিতন্ডা হয়েছিল। আবার ক্ষমতাসিন সংগঠনের শহর ইউনিটও খুব ক্ষ্যাপাটে হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের উপর। তাই চোরে চোরে মাসতুতো ভাই হয়ে গেলো। মাইনাসে মাইনাসে প্লাস। ভিসি আর শহুরে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন মাসতুতো ভাইয়ে পরিণত হয়ে গেলো। আর নিজের ভাই হয়ে গেলো শত্রু। এটাকে আপনি ভাই ভাই লড়াইও বলতে পারেন।”
“তার মানে এখানে টাকা দিয়ে টিচার হতে হয়?”
মাসুদের প্রশ্নে কর্মচারিটির মুখখানা কেমন যেনো থেবড়ে গেলো। পূর্ণ দৃষ্টিতে সে মাসুদের দিকে তাকালো।
“আপনি এখানকার টিচার না?”
“হ্যাঁ। এই ফ্যাকাল্টি টিচার।”
“এই ফ্যাকাল্টির! মাসুদ স্যার?” কর্মচারিটি একটু অনুমান করেই প্রশ্নটা করলো মাসুদকে।
“হ্যাঁ।”
“ও, তাই বলুন। আজই শুনেছিলাম বিদেশের এক গ্রাজুয়েট টিচার হিসেবে জয়েন করছেন। এই কিছুক্ষণ হলো অফিসে আপনার নামটা দেখে এসেছি। বিদেশের মাটিতে থেকেছেন স্যার দেশের রঙবাজদের রঙবাজি দেখেননি তো তাই সবকিছু আপনার কাছে বেঢপ মনে হচ্ছে।”
মাসুদ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বললো, “কিন্তু আমার কাছ থেকে তো ওরা কোনো টাকা নেয়নি।”
কর্মচারিটি বললো, “কি জন্য চাইবে? আপনার কাছে চাইলে আপনি দিতেন? আপনার যোগ্যতার কাছে ওরা হার মেনেছিল। বিদেশের মাটিতে গ্রাজুয়েট হওয়া করা একজন মানুষ এখানকার টিচার হওয়ার জন্য অ্যাপ্লাই করবে এটা এই ক্যাম্পাসের কোনো দারোয়ানও আজ কল্পনা করে না। সেজন্যই আপনাকে নিয়ে নিয়েছে সহাস্যে। কোনো ঝামেলা করেনি। কিন্তু স্যার একটা বিষয়, আপনি এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন কেনো?”
“দেশের জন্য। আমি এই মাটির ছেলে। দেশের জন্য কিছু করতে না পারার তীব্র অপরাধবোধ আমাকে সবসময় তাড়া করে বেড়াত।”
“স্যার, উদ্যোগটা ভালো, প্রশংসনীয়। তবে বাস্তবসম্মত নয়। এখানে ভালো কাজ করা খুবই কঠিন। ঐ দেখছেন না আমাদের গুণধর পুত্রদের, আমাদের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের। কীরকম ল্যাং মারার রাজনীতি করছে। ভাবতে অবাক লাগে ঐ শামসু ভাইরাও নেতা ছিলো আর আমাদের এই গুণধর পুত্ররাও নেতা। আমি কিন্তু অনেক আগে থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করি। আমি খুব ভালো ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিককার রাজনীতি দেখেছি। একবার ঐ প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মচারিকে কোনো এক ছাত্র নাকি “হ্যাঁলো, একটু শুনুন” জাস্ট এটুকু বলে সম্বোধন করেছিলো। এরকম বেয়াদপের মতো এক কর্মচারিকে সম্ভোধন করার জন্য ঐ ছাত্রটি সহ তার পার্টিকে পর্যন্ত জবাবদিহি করতে হয়। তখন প্রতিটি নেতা-কর্মীই খেয়াল রাখতো একটা মানুষও যাতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তো দূরের কথা, বিন্দুমাত্র ভ্রূঁ কুঁচকানোর সুযোগ যাতে না পায়। আর এখন সবাই একটু শান্তিতে আছে দেখলেই নেতাদের চুলকানি শুরু হয়ে যায়।”
মাসুদ মূল প্রসঙ্গে ফিরে প্রশ্ন করলো কর্মচারিটিকে, “ঐ মোটর সাইকেলগুলো কি করবে এখন?”
“কি আর করবে। ক্যাম্পাসের নেতাদের শাসাবে। গুলি করে ১৫-২০ টা রুমের গ্লাস ভাঙবে।”
“ক্যাম্পাসের ছাত্ররা কিছু বলে না?”
“শুনুন স্যার, আগুনে হাত সেঁকতে সবার ভালো লাগে। কিন্তু আগুন স্পর্শ করে কয়েক মিনিট দুয়েক সহ্য করার ক্ষমতা কয়জনের আছে? এই ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরও এখন সে অবস্থা। এখানে নিয়ন্ত্রণের মাত্রা এতই বেশি যে ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিত্ব বলতে যে একটা জিনিস আছে সেটা ক্রমাগত লোপ পেতে থাকে।”
কর্মচারিটির কথায় মাসুদের সমস্ত শরীর বিষিয়ে উঠলো। চলে আসার সময় মাসুদ কর্মচারিটির মুখে এক সরল মিনতি লক্ষ্য করলো। কর্মচারিটি তাকে বলছে, “স্যার, এখানকার লুম্পেনগুলো আপনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আপনি তার চেয়ে বরং চলে যান। আপনার জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। সেটাকে এরকম হেলায় নষ্ট করছেন কেন?”
মাসুদ কর্মচারিটির কাঁধে হাত রেখে বললো, “ভালো কিছু করার ইচ্ছে নিয়েই তো এসেছি। আপনারা যদি এরকম ভেঙে পড়েন তাহলে হবে? এই সমাজটা পাল্টাতে হবে। আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।”
.........(আরো অল্প স্বল্প আসবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮

জসিম বলেছেন:
এটা কি উপন্যাস থেকে খন্ডিত অংশ নাকি আলাদা গল্প!

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১১

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: এটা উপন্যাস থেকে খন্ডিত অংশ।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৬

জসিম বলেছেন: গল্পের ঘটনা ও চরিত্রগুলো খুবই কাছের মনে হয়. গল্পের মতনই এমন অনেক ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন হরহামেশাই দেখতে হয়েছে. খুবই বাস্তব.

ভালো থাকুন.

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২১

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: পুরো উপন্যাসটাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নোংরা ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিকে কেন্দ্র করে রচিত। অনেক ঘটনা বাস্তব থেকে একেবারে হুবুহু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬

জসিম বলেছেন: উপন্যাসের বাকি অংশগুলো আরো বেশি চমকপ্রদ হবে বলেই মনে হচ্ছে. গল্পের থিম ও ঘটনাপ্রবাহ পছন্দ হয়েছে.

শুভকামনা রইলো

ভালো থাকুন.

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.