নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি লাশের কথা

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৭

বাইরে সুন্দর সকাল। সোনালী সূর্য পুরো আকাশ ছেয়ে রয়েছে। সাখাওয়াত সাহেবের বাড়ির সামনের আমগাছে এলোমেলোভাবে কিছু পাখি ওড়াওড়ি করছে। আজ ঈদুল ফিতর। তার উপর এরকম ঝকঝকে সকাল দেখে সাখাওয়াত সাহেবের চোখে মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঘন্টাখানেক পরে মসজিদে নামায পড়তে যাবেন। গোসল করার পর থেকে একটা তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব দু চোখকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এরকম তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় হুট করে বেজে উঠলো টেলিফোন সেটটা। তন্দ্রা ছুটে গেলো সাখাওয়াত সাহেবের। খুব রাগ হচ্ছে টেলিফোন সেটটার উপর। কী বিরক্তিকর জিনিস একটা!
সাখাওয়াত সাহেব জাঁকিয়ে বসা ঘুমকে দু চোখ থেকে সরিয়ে ফোনটা রিসিভ করলেন, “হ্যাঁলো।”
ওপার থেকে বেশ নরম মহিলা কণ্ঠস্বর, “সাখাওয়াত চৌধুরী বলছেন?”
“হুমম.. বলছি। কে বলছে?”
“একটা ব্যাড নিউজ আছে সাখাওয়াত সাহেব। আপনার ছোট ভাই আলম চৌধুরী আর বেঁচে নেই। একটু আগেই ইন্তেকাল করেছেন।”
“আলম চৌধুরী ” নামটা যেন সাখাওয়াত সাহেবের মস্তিষ্ক মুহূর্তের জন্য অবশ করে দিয়েছিলো। নামটির সাথে অনেক দিন ধরে অপরিচিত তিনি। অনেক দিন বলতে অনেক অনেক দিন। কয়েকটা বছর।
তারপরেও টেলিফোনে মৃত্যু শব্দটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো সাখাওয়াত সাহেবের। জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কোত্থেকে বলছেন?”
“আমরা ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বলছি। যত তাড়াতাড়ি পারেন চলে আসেন।”
টেলিফোনটা হাত থেকে রেখে পাঞ্জাবির পকেটে দেশলাই হাতড়াতে লাগলেন সাখাওয়াত সাহেব। একটি সিগারেট জ্বালিয়ে সেটা দু তিন বার ফুঁকে জলন্ত সিগারেটটি বাইরে ছুরে মারলেন। খুব অস্থির লাগছে নিজেকে। সেদিন হলো নিজের ষাট তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন। বয়স মানুষকে মানসিকভাবেও অনেক দুর্বল করে ফেলে। সাখাওয়াত সাহেব ঘরের এদিক ওদিক পায়চারি করতে লাগলেন। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। কিছুক্ষণ পরে সাখাওয়াত সাহেবের স্ত্রী জাহানারা বেগম ঘরে প্রবেশ করলেন। সাখাওয়াত সাহেবের এরকম হন্তদন্ত অবস্থা দেখে ভদ্র মহিলা সাখাওয়াত সাহেবকে ধরে বিছানায় বসান। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “কী গো, কী হলো তোমার?”
জাহানারা বেগমকে দেখে সাখাওয়াত সাহেবের হন্তদন্ত ভাবটা একটু কমলো। মাথাটা নিচু করে বসে আছেন। একটুক্ষণ পর জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি আলম চৌধুরীকে চেনো জাহানারা?”
“কী সব আবুল তাবুল প্রশ্ন করছো তুমি। তোমার ঐ ছোট ভাইয়ের কথা বলছো না? তাকে চিনবো না কেনো?”
“হি ইজ ডেড নাও।”
জাহানারা বেগমের মুখ মুহূর্তেই আটকে গেলো। ঘরের মধ্যে কয়েক মিনিট এক ধরনের নৈঃশব্দ বিরাজ করলো কেবল। সাখাওয়াত চৌধুরী এবং জাহানারা বেগম দুজনেই নিশ্চুপ। রান্না ঘরে একটু আগে ভাত চড়িয়েছিলেন জাহানারা বেগম। ভাত পুরে পোড়া পোড়া গন্ধে পুরো ঘর ছেঁয়ে গেছে। সেদিকে কারো কোনো নজর নেই। জাহানারা বেগম আলম চৌধুরী মানুষটাকে নিজ চোখে কখনো দেখেন নি। সবার মুখে মুখেই কেবল শুনেছেন আলম চৌধুরী নামক এক রহস্যময় চরিত্রের কথা।
জাহানারা বেগম সাখাওয়াত সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, “কে ফোন দিয়েছিলো?”
সাখাওয়াত সাহেব বিমর্ষ কন্ঠে উত্তর দিলেন, “হসপিটাল থেকে। যেতে বললো।”
“যাবে?”
“না গিয়ে আর পারি কি করে বলো।”
বলে উন্মাদের মতো কাঁদতে লাগলেন সাখাওয়াত সাহেব।

একটু পরেই হসপিটালের মর্গ থেকে আলম ভাইয়ের লাশ বেরুবে। হসপিটালের বাইরে মানুষে গিজগিজ করছে। যত সময় যাচ্ছে হসপিটালের বাইরে মানুষের ¯্রােতও বেড়ে চলছে। অনেকের চোখ মুখে বিষণœতার ভাঁজ, অনেকের চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় ঝড়ছে অশ্রু, অনেকে আবার কান্নার ঝেড়ে ডুকড়ে উঠছে কিছুক্ষণ পর পর। আজ হিন্দুদের মহা সপ্তমী চলছে। অন্যদিকে মুসলমান পাড়ায় চলছে ঈদুল ফিতর। আলম ভাইয়ের মৃত্যুতে এই দুই অনুষ্ঠানের আনন্দ যেনো মিইয়ে গেছে।
ভেতরে ঢোকার অনুমতি কেবল সাখাওয়াত সাহেব আর জাহানারা বেগমের। দুজনেরই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ছে। মৃত্যু মানুষকে কত পরিবর্তন করে দেয়। আলম ভাইয়ের ভাই- ভাবী তার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চায়নি আলম ভাই বেঁচে থাকুক। আলম ভাই যেনো একটি বিশাল অভিশাপ রূপে চৌধুরী বংশে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আলম ভাই যেনো পুরো চৌধুরী বংশকে সমুদ্রের ঘোলা পানিতে পুরো জীবন ভরে চুবিয়েছেন। অথচ আলম ভাইয়ের মৃত্যু কত পরিবর্তন ঘটিয়ে দিলো চৌধুরী বংশের এই দুই কর্ণধারের মধ্যে। আলম ভাইয়ের ভাবী কেমন কুঁকড়ে মুকড়ে আছেন। কান্নার চাপে তার গলাটা কেঁপে উঠছে একটু সময় পর পর। আলম ভাইয়ের বড় ভাই সাখাওয়াত চৌধুরীও কান্না করতে করতে বিহ্বল হয়ে বসে আছেন স্ত্রীর পাশে।
মর্গ থেকে লাশটা এখনো বেরুয় নি। কেন যে দেরি হচ্ছে কে জানে?
আলম ভাই ফ্যামিলির ছোট ছিলেন বলে সবার খুব আদরেরও ছিলেন। চেহারার মধ্যে বনেদি ঘরের সুস্পষ্ট ছাপ ছিলো। মুখের মধ্যে একটা হাসি সব সময় লেপ্টে থাকতো। চলাফেরার মধ্যেও একটা বিনয়ী ভাব সব সময় লক্ষণীয় ছিলো। যে কোনো তপ্ত মেজাজও হোঁচট খেতো আলম ভাইয়ের এই বিনয়ী ভাবের নিকট। পড়াশুনায় ছিলেন একেবারে একশোতে একশো। বেশ ভালোই চলছিলো সবকিছু।
কলেজের পড়াশুনা শেষ করে আলম ভাই ভর্তি হলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশজুড়ে তখন টাল মাটাল অবস্থা। কিছু দিন আগেই দেশটি স্বাধীন হয়েছে। মুক্ত হয়েছে পাকিস্তান নামক এক বিভীষিকার হাত থেকে। তারপরেও যেনো জনগণের মুক্তি নেই। মুক্তির নেশায় জনগণ বুদ্বুধ হয়ে আছে।
এমন সময় নতুন একটি দল গঠিত হয় শোষণ মুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে। পুরো দেশ জুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় দলটি গঠিত হওয়ার সাথে সাথেই। শুরু হয় নতুন রাজনীতি। অনেকের মতে অস্থির সময়ের রাজনীতি। আলম ভাই প্রথম বর্ষেই পড়াশুনা শুরু করেন শ্রেণী, শ্রেণী সংগ্রাম, উদ্বৃত্ত মূল্য, মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ নিয়ে। হাত বাড়ালেই তখন পাওয়া যেত লাল বই। বইয়ের কোনো ঘাটতি হয় নি তাই। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই একের পর এক বই পড়ে পার করেছেন সকাল দুপুর রাত। এক পর্যায়ে সমাজতন্ত্রের নেশায় মাতাল হয়ে নতুন দলটির সাথে যুক্ত হয়ে গেলেন আলম ভাইও। ছুঁড়ে ফেলে দিলেন একাডেমিক সকল বই পত্র। রাস্তা ঘাটে চলতে থাকলো শ্রেণী সংগ্রামের শ্লোগান। আলম ভাই কাজ শুরু করলেন বিভিন্ন কল কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে। চৌধুরী বাড়ির এই আদুরে ছেলেটি ঘুমুতে লাগলো বস্তিতে বস্তিতে, কখনো বা কারখানার আশেপাশের কোনো ব্রেঞ্চিতে। ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকলো আলম ভাইয়ের চৌধুরীত্ব। হয়ে উঠতে লাগলেন সকলের আলম ভাই।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথমে প্রতিটি ছাত্রের রোমে রোমে প্রেমের তীব্র আকাঙ্খা অনুভুত হয়। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই অনেকের হাতের তালু ভিজে যায়, অনেকের আবার গলা পর্যন্ত বুজে যায় সেই অনুভূতির টানে। প্রথম বর্ষে মার্ক্স, লেনিন পড়ার সময় আলম ভাইও এক অনুরাধার ছোঁয়া পেয়েছিলেন। প্রায়শই তারা ঘুরে বেড়াতেন শহরের অলিতে গলিতে। কিন্তু আলম ভাইয়ের রাজনীতিতে যোগদান এই প্রেমেরও মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটিয়ে দেয়। এরপর আর কোনো নারী সঙ্গের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি আলম ভাই। আলম ভাইদের নেতা হারিছ ভাই আলম ভাইকে আলাদা ডেকে নিয়ে বুঝালেন, “শোন আলম, এখন আমাদের সবার কনসেনট্রেশন দেয়া উচিত বিপ্লবের দিকে। আর তোমরা এমন একটা ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আমাদের পার্টির সাথে যুক্ত হলে যখন দেশজুড়ে চরম অস্থিরতা, অন্যদিকে আমাদের সম্ভাবনা। এটা তোমাদের একটা সৌভাগ্যও বটে। কিন্তু আলম, একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবে, প্রেমঘটিত ব্যাপার মানুষের জীবনের পিছুটান অনেক বাড়িয়ে তোলে। ওসব থেকে একটু সতর্ক থেকো।”
হারিছ ভাই কি বলতে চাচ্ছিলেন আলম ভাইয়ের তা বুঝতে কোনো সমস্যা হয়নি। মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করলেন পার্টিকে।
আলম ভাইয়ের এসব কর্মকান্ডের কথা বাড়িতে পৌঁছলে তার বাবা তাকে জরুরি তলব করেন। তার বড় ভাই সাখাওয়াত চৌধুরী ভালোই একটা ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন এলাকায়। বাড়িতে পৌঁছার সাথে সাথেই কারো হিং¯্র দৃষ্টি, কারো ক্রুর দৃষ্টির মুখোমুখি হতে হলো আলম ভাইকে। রাত্রিবেলা উঠোনের ঠিক মাঝেখানে আলম বাইকে নিয়ে মিটিং বসেছিলো। সবাই কথার ছুরি দিয়ে ফালা ফালা করে কেটেছে আলম ভাইয়ের মনটাকে। কিন্তু আলম ভাই দমে যাননি। তার সামনে যখন তার বাবা এবং বড় ভাই পরিবার বনাম রাজনীতি দুটির যেকোনো একটি গ্রহণ করার জন্য বলেন আলম ভাই অকপটে রাজনীতিকে গ্রহণ করে বেরিয়ে আসেন বাড়ি থেকে। এটাই ছিলো আলম ভাইয়ের বাড়িতে শেষ যাওয়া। এরপর আর বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয় নি আলম ভাইয়ের। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন ভাইযের পাঠানো রগরগে মেজাজের একটি চিঠিতে- “আমার আব্বু মারা গেছেন। যদি আসা প্রয়োজন মনে করো, আসতে পারো। না আসলেও সমস্যা নেই।”
এরকম কটকটে চিঠি দেখে আলম ভাই বাড়িতে না যাওয়াটাকেই শ্রেয় মনে করলেন। টিকে রইলেন ঢাকা শহরের বস্তির শ্রমিকগুলোর মধ্যে চৌধুরী বংশের চৌধুরীত্ব বিসর্জন দিয়ে।
আলম ভাইদের সময় পুরো দেশ জুড়েই ছিলো রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়। সমাজতন্ত্র যেনো উঁকি ঝুঁকি মেরে হাতছানি দিয়ে ডাকছিলো তাদের। আলম ভাই এক পর্যায়ে দেখলেন শুধু তিনি না, আরো অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিপ্লবের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে নেমেছে। শুরু হলো আলম ভাইয়ের জীবনের স্বপ্ন পূরণের এক নতুন অধ্যায়। সমাজতন্ত্রের সার্বক্ষণিক সৈনিক হিসেবে তার পথ চলা।
বছর দুই ভালোই চললো। তার পর পরই শুরু হলো হোঁচট খাওয়া। আলম ভাইরা যে স্বপ্নে নেশার মতো কাজ করা শুরু করেছিলেন সমাজতন্ত্রের দিকে সেই স্বপ্ন হয়ে গেলো ধূলিসাৎ। কে দায়ী এর জন্য? দায়ী করতে চাইলে অনেককেই দায়ী করা যায়। কিন্তু আলম ভাই তো আর কাউকে দায়ী করার জন্য সংগঠন করা শুরু করেননি। তিনি নিজ চোখে দেখলেন একদল অজ্ঞ আজ পোশাক পাল্টাচ্ছে। পাল্টাচ্ছে দল, আদর্শ, বাড়িঘর সবকিচু। সেই হারিছ ভাই যিনি আলম ভাইয়ের জীবনের প্রথম এবং শেষ প্রেমের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটিয়েছিলেন তিনি বেশ সুন্দরী একটি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। যদ্দুর জানা যায় মেয়েটির সাথে আলম ভাইয়ের দীর্ঘদিনের ফস্টিনস্টি ছিলো। আলম ভাইদের এই নেতাই প্রেমে নিরুৎসাহিত করে নিজে ঠিকই প্রেমের লালসায় নিজেকে লালায়িত করেছেন।
এসব জেনেও আলম ভাই নির্লিপ্ত ছিলেন। আলম ভাইযের সামনে তখন ছিলো অবারিত সুযোগ। আলম ভাই বেশ সরল মনে এসব থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। থেকেছেন এই মেহনতী মানুষগুরোর জন্য। আলম ভাইয়ের চোখের সামনে ভেঙেছে তার পার্টি, কিন্তু আলম ভাই নিজেকে ভাঙেন নি। ১৯৯২ সালে আলম ভাই নিজের কানে শুনলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের কথা। যে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ তরুণকে উদ্বদ্ধ করেছিলো তার ভাঙনে শুরু হলো দেশে বিদেশে নষ্ট বামদের ছড়াছড়ি। আলম ভাই চাইলেই সেসকল নষ্টদের দলে নিজেতে ভেড়াতে পারতেন। কিন্তু আলম ভাইয়ের উদ্যম তখনো ফুরিয়ে যায় নি।
মর্গ থেকে বেরুলো আলম ভাইয়ের লাশ। মুখখানা হাসোজ্জল। কপালে প্রকট বলিরেখা। সামনে কোনো একটি শ্রমিক আন্দোলন নিয়েই চিন্তা করছিলেন নিশ্চয়ই। মুখটা কেমন যেনো ক্ষয়াটে হয়ে আছে। গত মাস পুরোটাই আলম ভাই চিটাগাং এ কাজ করেছেন। দুইটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে গড়ে তুলেছেন সংগঠনের কাজ।
সাখাওয়াত চৌধুরী আর তার স্ত্রী আলম ভাইয়ের মুখটা ক্ষণিক দর্শন করেই স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এ যেনো সেই আলম। সব সময় হাসি খুশি সেই ছেলেটা। চেহারাটা একটু খারাপ হয়েছে বটে। কিন্তু একেবারে একটা নিষ্পাপ মুখ যেনো সাখাওয়াত সাহেবকে তার দিকে ডাকছে।
সাখাওয়াত সাহেব এগিয়ে গেলেন আলম ভাইয়ের দিকে। আজ যেনো কাঁদতেও খুব লজ্জা হচ্ছে এই দুই দম্পতির। সাখাওয়াত সাহেবের স্ত্রীর চুলগুলো অগোছালো হয়ে রয়েছে। মৃত্যু বিহ্বল করে দিয়েছে ভদ্র মহিলাকে। মৃত্যুর দুঃখটা বড়োই ছোঁয়াচে। সামনে ঘুমিয়ে আছেন একজন আলম ভাই। আলম চৌধুরী নন, সবার ভালোবাসার আলম ভাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.