নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুমিল্লা ভ্রমণ : ইতিহাস কথা কয়

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১৮


লেখাটা শুরু করছি নুরুন্নাহার ম্যামকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে। নইলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। একটা মানুষ নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও যে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে ম্যাম তার একটা উদাহরণ। আমাদের উচ্ছলতা চঞ্চলতাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন সর্বোচ্চ পরিমাণে। ফলে শেষ মেষ আমরা কুমিল্লা টুরে যেতে সক্ষম হই। আমরা রওয়ানা দিই একদম ভোরের দিকে। মোবাইলে তাকিয়ে দেখলাম তারিখের জায়গায় ২০.০১.১৭ আর সময়টা ছিলো ৫.৩০.
কুমিল্লা জায়গাটার নাম শুনলেই আমার চোখ গিয়ে ঠেকে ১৯৪৮ সালের ২৬ শে আগস্ট। যেদিন কুমিল্লার সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের গণ পরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু গণ পরিষদের তীব্র পশ্চিম পাকিস্তানপন্থীদের তীব্র আপত্তির কারণে এই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। এই ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষুদ্ধতার সৃষ্টি করেছিলো। তারা ক্রমশ ভাষার দাবিতে সোচ্চার আন্দোলন শুরু করলো। ধীরেন্দ্রনাথের এই প্রস্তাব উত্থাপন নি:সন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিলো। যেটি বাহান্নোর প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছিলো। ধীরেন্দ্রনাথ ছাড়াও সুফিয়া কামাল, আহমেদ রফিক, বুদ্ধদেব বসুর বাড়িও কুমিল্লায়। কুমিল্লা শব্দটা যখন আসে এই নামগুলো উল্লেখ না করলে কুমিল্লা নামটার স্বার্থকতা ফুটে উঠে না।

কুমিল্লা গিয়ে আমরা উঠলাম বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী- বার্ড এর হোস্টেলে। এখানকার পরিবেশ এতটাই মনোরম যে মুহূর্তেই যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। সুন্দর পরিকল্পিত একাডেমিক বিল্ডিং, পেছনে কোয়ার্টার, খানিকটা পাহাড়ি পরিবেশের ছোঁয়া সবকিছু মিলে অসাধারণ। সৌষ্ঠবে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। বার্ড এর এই সৌষ্ঠবের পেছনে রয়েছে ড. আখতার হামিদ খানের নিরলস প্রচেষ্টা। যার হাত ধরে এই বার্ড জন্ম লাভ করে। আখতার হামিদ খানকে আমি একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখি। যিনি ভারতবর্ষের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক প্রকার বিদ্রোহই করেছিলেন । ১৯৪৩ সালের দুভিক্ষে যখন ভারতবর্ষের লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে, বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তখন বিশ্বে তাদের দখলদারিত্ব নিয়ে মহাব্যস্ত। ভারতবর্ষের কি হলো না হলো এটাতে নজরদারি করার কারো কোনো প্রয়োজন নেই। ব্রিটিশ শাসকদের এই চরম উদাসীনতা দেখে আখতার হামিদ খান ব্রিটিশের অধীনের চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। তার পর শুরু করেন লিও টলস্টয় টাইপের জীবন। শ্রমিক কৃষকদের সাথে থাকা শুরু করলেন। বোঝার চেষ্টা করতে থাকলেন দুর্ভিক্ষের পেছনের কার্য কারণ। এমতাবস্থায় কি করা করা যায় এই কোটি কোটি গ্রামীণ মানুষের জন্য। এভাবে দুইটি বছর তিনি অতিবাহিত করেন। তারপর বিভিন্ন যাচাই বাছাইয়ের পর তিনি বার্ড প্রতিষ্টা করেন। তিনি সমবায়ের উপর গুরুত্বারোপ করে গ্রামীণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের সংগ্রামে লিপ্ত হন। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নেরও কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি ছিলো সমবায় ভিত্তিক। যার ফলাফল পুরো বিশ্বের নিকট জ্বাজল্যমান। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যদিও পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ছিলো তারপরেও আখতার হামিদ খান গ্রামগুলোকে এই সমবায় পদ্ধতি দ্বারা প্রভাবিত করার জোর প্রয়াস চালান। যেটি অনেক হত দরিদ্র পরিবারকে আলোর মুখ দেখিয়েছিলো।

আখতার হামিদ খানের এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরো কিছু জেনে পরদিন সকালে আমরা রওয়ানা দিলাম শালবন বিহারের দিকে। শালবন বিহার এখনো বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের অন্যতম প্রধান নিদর্শন। বিহারটিতে গিয়েই মনে পড়ে গেলো গৌতম বুদ্ধের ইতিহাস। কারণ এসব বিহার মূলত গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত বৌদ্ধ ধর্মমত প্রচারের জন্য নির্মিত হয়। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারকারক বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ এসব বিহারে অবস্থান করে মানুষের মধ্যে এই ধর্ম ছড়িয়ে দিতেন। মূলত গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় দুইশ বছর পর সম্রাট অশোকের আমলেই এসব বিহারের বেশির ভাগ নির্মিত হয়। প্রায় ৮৪ হাজার বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হয় অশোকের আমলে। অশোকের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এই অশোকের সময়েই বৌদ্ধ ধর্ম দেশে তো বটেই বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রা সম্রাট অশোকের আদেশ পেয়ে শ্রীলংকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন। এছাড়া চীন, কাশ্মীর, গান্ধার, মহারাষ্ট্র, আফগানিস্তান, নেপাল, থাইল্যান্ড, জাপান, প্রভৃতি দেশে এখনো আমরা যে সকল বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দেখতে পাই এটা মূলত সম্রাট অশোকেরই অবদান ছিলো। এ জন্য সম্রাট অশোককে বৌদ্ধ ধর্মের কনস্ট্যানটাইন বলা হয়। অশোকের পরে পাল শাসনামলে বাংলায় অনেক বৌদ্ধ বিহার স্থাপিত হয়। পাল বংশের প্রত্যেক রাজাই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। গোপাল থেকে শুরু করে মদন পাল পর্যন্ত প্রত্যেকেই বৌদ্ধ ছিলেন। এজন্য পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রচুর বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া এরকম অসংখ্য ইতিহাসকে আজো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শালবন বিহারের মতো বিহারগুলো।

শালবন বিহারের পাশেই রয়েছে ময়মনামতি জাদুঘর। যেখানে পাল শাসনামলের নানান ধ্বংসাবশেষ অতি যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা আছে। নানান ধরনের মূর্তি, বাসন কোসন, পায়ের ছাপ, পুরাতন লিপি ইত্যাদি। সবশেষে ময়নামতি ওয়ার সেমেট্রিতে একটু ঢুঁ মেরে আমরা আমাদের কুমিল্লা ভ্রমণকে সমাপ্ত করলাম। কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের দুটি বাস পরিতৃপ্তির হাসি হেসে দ্রুত গতিতে যাচ্ছে ময়মনসিংহের দিকে। পেছনে টা টা জানাচ্ছে বার্ড, শালবন বিহার, ময়মনামতি জাদুঘর, ময়নামতি ওয়ার সেমেট্রি।

লেখক
সৌরভ দাস
শিক্ষার্থী,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,
ময়মনসিংহ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: কুমিল্লাতে বেড়িয়ে গেছেন শুেনে খুশি হলাম। আমি কুমিল্লার ছেলে। সুন্দর পোষ্ট।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭

ধ্রুবক আলো বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ....

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০

সৌরভ দাস ১৯৯৫ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬

প্রাবাসী ছেলে সোহেল বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট,অনেক কিছু জানলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.