নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনপোড়া গন্ধ...

Saber chowdhury

সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো...

Saber chowdhury › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনে ইহুদী জাতির বসবাসের ইতিহাস

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩


**ফিলিস্তিনের গোড়া পত্তন ও ইবরাহীম আ. এর আগমন।
সুনির্দিষ্ট করে জানা যায় না সর্বপ্রথম কারা এখানে বাস করতো। তবে প্রত্মতাত্মিক নিদর্শন দ্বারা ইংগিত পাওয়া যায় ‘নিতুফিয়্যূন’ নামে এক জাতি বাস করতো। তারা কারা? কেউ বলতে পারে না। বর্তমান ‘আরিহা’-য় কিছু ঘর-বাড়ি পাওয়া যায় কিন্তু এগুলোতে কারা থাকতো সে ব্যাপারেও কিছু জানা যায় না।

এ অঞ্চলে বসবাসকারী হিসেবে সর্বপ্রথম যাদের কথা জানা যায় তারা হলো ‘কেনানি গোত্র। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ একমত। তারা ৩২০০ থেকে ২০০০ খৃ.পূর্বা্ব্দে আরব উপদ্বীপ থেকে হিজরত করে এসেছিলো। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে কেনানীদের বিভিন্ন শাখা বসবাস করে। ২৫০০ সালের ভিতরে তারা ফিলিস্তিন এলাকায় প্রায় ২০০টির মত শহর গড়ে তোলে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল য়াবুস শহর। এ শহরের গোড়াপত্তন করেছিলো কেনানীদের য়াবুস শাখা। এ শহরই বর্তমান কুদস বা জেরুজালেম। এ শহরের সবগুলোরই আলাদা প্রাচীর, এবং আলাদা বিচার ব্যাবস্থা ছিল। প্রতিটি শহর ছিল আলাদা একেকটা রাজ্যের মত। এ কারনে এ সময়টাকে বলা হয় আসরু দুওয়াইলাতিল মুদুন বা শহর কেন্দ্রিক রাজ্যের কাল।

ফিলিস্তিন নামটি এলো যেভাবে-
ভূমধ্য সাগর এলাকা থেকে অনেক মানুষ এসে শাম ও মিসরের তীরবর্তী অঞ্চলে এসে বাস করতে থাকে। রাজা ‘তৃতীয় রামসিস’ তাদেরকে দক্ষিণ ফিলিস্তিনের ‘বিলিস্ত’ নামক এলাকায় হিজরত করতে বাধ্য করে। এদেরকে বলা হতো ‘বিলিস্তিনিয়্যূন’। তারা ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসী কেনানী ও য়াবুসিদের পাশে বসবাস করতে থাকে। এখান থেকেই এসেছে ফিলিস্তিন শব্দটি।
১৮-১৬ খৃ.পূর্বাব্দ সময়টা ফিলিস্তিন শাসন করে হেক্সাসরা। এ সময়কালেই প্রায় ১৯০০ খৃ.পূ এর দিকে ইরাক থেকে ভাতিজা লূত আ. কে সাথে নিয়ে ফিস্তিনে এসে এসে ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসী কেনানীদের সাথে বসবাস করেন। এবং এখানেই তার ঘরে জন্ম নেন ইসমাঈল ও ইসহাক আ.। ইবরাহীম আ. বেঁচে ছিলেন ১৭০ বছর। তাঁরে ছেলে ইসহাক আ. এর ঘরে জন্ম নেন ইয়া‘কুব ( ইসরাঈল) আ. প্রায় ১৭৫০ খৃ.পূ সালে।


**ইহুদী জাতির উদ্ভব ও মুসা আ. এর হাত ধরে মিশর থেকে ফিলিস্তিনের পথে যাত্রা
ইয়া‘কুব ( ইসরাঈল) আ. এর ছিল ১২ ছেলে। এদের মধ্যে একজন হলেন হযরত ইউসূফ আ.। ঘটনার ধারাবাহিকতায় ইউসূফ আ. যখন মিশরের অধিপতি হন তখন পিতা ইয়া‘কুবসহ পুরো পরিবারকে মিশরে নিয়ে যান। তারা সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। সেখানে এ পরিবারের বংশ বিস্তার হয়ে বিশাল এক গোষ্ঠিতে পরিণত হয়। এ গোষ্ঠিটিই পরবর্তীতে য়া‘কুব আ. এর নামানুসারে বনী ইসরাইল ও তাঁর চতুর্থ ছেলে য়াহুদার নামানুসারে ইহুদী জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মিশরে তাদের ছিল সম্মান ও স্বাধীন জীবন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম ফেরাউনদের কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়।
এরকম পরিস্থিতিতে ১২৫০ খৃ.পূ. মিশরে হযরত মুসা আ.এর আত্মপ্রকাশ। তিনি বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করে মিশর থেকে নিয়ে আসেন। তাদেরকে ধাওয়া করতে গিযে ফেরাউন ও তার দলবল সমূদ্রে ডুবে মারা যায়। মুসা আ. তাদেরকে নিয়ে সিনাই এলাকায় রেখে তুর পাহাড়ে আল্লাহ তাআলার সাথে একান্ত আলাপচারিতার জন্য আসেন। ৪০ দিন পরে গিয়ে দেখেন তারা বাছুর পুজায় লিপ্ত হয়েছে। এ পাপের প্রায়শ্চিত্য হিসেবে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাইল যেন নিজেরকে হত্যা করে এ মর্মে ফরমান জারি করলেন। তারা তা মানতে অস্বীকার করলো। তুর পাহাড় তাদের উপর উঠিয়ে ভয় দেখানো হলে তারা সম্মত হয়। তখন মুসা আ. আল্লাহ তাআলার কাছে তাদের কৃত অপরাধের ক্ষমা চাওওয়ার জন্য ৭০ জন সর্দারগোছের লোক বাছাই করে নিয়ে গেলেন তুর পাহাড়ে। তারা সেখানে আল্লাহ তাআলার নূরের তাজাল্লীতে তুর পাহাড় চূর্ণ হতে দেখেও বিশ্বাস করতে চাইলো না; আল্লাহকে সরাসরি দেখার জন্য গো ধরে বসলো। তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বজ্র দিয়ে মেরে ফেললেন। এরপর মুসা আ. এর দোয়ায় তাদেরকে আবার জীবিত করে দিলেন।
এরপর তিনি বনীইসরাইলকে নিয়ে ফিলিস্তিনের উপকণ্ঠে এসে পৌঁছুলেন। মুসা আ. তাদেরকে বললেন আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো তোমরা বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করো। তারা বললো এর মধ্যে দুর্ধর্ষ লোকেরা আছে। তারা আগে বের হোক তারপর আমরা ঢুকবো। এ অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ সেখানে তীহ নামক ময়দানে তাদরকে ৪০ বছর পর্যন্ত উদ্ভ্রন্তের মত রেখে দেওয়া হলো। এ ৪০ বছর তারা সেখান থেকে বের হওয়ার পথ পায় নি। এ সময়কারে তাদেরকে মান ও সালওয়া নামক বিশেষ খাবার দেওয়া হয়েছিলো। এবং এ সময়েই ঘটেছে হত্যাকারীকে বের করার জন্য গাভী জবাই করা সে বিখ্যাত ঘটনা। এ সময়সীমার শেষ দিকে এসে মুসা আ. এর ইন্তেকাল হয়।


**ইউশা ইবনে নুন আ. এর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনে প্রবেশ
অবরুদ্ধতার ৪০ বছর শেষে বনী ইসরাইল থেকে যখন নতুন একটি প্রজন্ম গড়ে উঠলো তখন মুসা আ. এর একান্ত শাগরেদ নবী ইউশা ইবনে নুন আ. তাদেরকে নিয়ে জর্দান নদী পাড়ি দিয়ে ফিলিস্তিনের আরিহা নগরীতে আসেন ১১৯০খৃ.পূ সালে এবং কেনানীদের একটি অংশ আমালেকা সম্প্রদাযের সাথে জিহাদ করে এ নগর বিজয় করেন। তিনি তাদেরকে বলেন আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো তোমরা এ নগরে সেজদারত অবস্থায় হিত্তা ( আমাদের পাপ ক্ষমা করুন) বলতে বলতে প্রবেশ করবে। তারা উল্টো হয়ে হিন্তা ( গম ) বলতে বলতে ঢুকলো। এর তারা আরিহা নগরীতে বসবাস করতে লাগলো। ইউশা ইবনে নুনের পর ইহুদীদের নেতৃত্বে আসে বিভিন্ন সর্দাররা। তাদের শাসনকাল চলে ১৫০ বছরের মত। এসময় তাদের মধ্যে বহু অনাচার ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসে এ সময়টাকে সবচে কালো অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে একের পর এক অনেক নবী আসলেন। তারা অনেক নবীকে হত্যা করলো। এক পর্যায়ে আবার আমালেকা সম্প্রদায় তাদের উপর বিজয়ী হয়। তাদের উপর নির্যাতন চালায়। ধন সম্পদ লুটে নেয়। ছিনিয়ে নেয় তাদের অনেক ধর্মীয় অনেক পবিত্র জিনিস। এর মধ্যে একটি ছিল তাবুত। তাবুত হলো একটি বিশেষ বাকসো। এর মধ্যে কাষ্ঠখণ্ডে লিখিত তাওরাত, মুসা আ. এর ব্যবহৃত লাঠি এবং মুসা ও হারুন আ. এর পরিধেয় রক্ষিত ছিল। একপর্যায়ে তারা তৎকালীন নবী সাময়ূল আ. এর কাছে গিয়ে আবেদন জানায় আল্লাহ তাআলা যেন তাদের জন্য একজন বাদশা ঠিক করে দেন, যার মাধ্যমে তারা এ খারাপ অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াবে। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কেনানী বংশ থেকে তালুত নামে একজন সৎ ও যোগ্য বাদশাহকে নিযুক্ত করলেন। তারা তাকে মানতে চাইলো না। মানার জন্য নিদর্শন সরূপ তাদের কাছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে হারানো তাবুত ফিরিয়ে দেওয়া হলো। ১০২৫ সালে বাদশা তালূত বনী ইসরাইলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে আমালিকাদের সাথে নদী পাড়ি দিয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন। সে যুদ্ধে ১৬ বছর বয়সী যুবক দাউদ আমালেকাদের বাদশা জালুতকে হত্যা করলে আমালেকা সে যুদ্ধে পরাজিত হয়। দাউদ আ. তালুতের কন্যাকে বিয়ে করেন।

**দাউদ ও সুলাইমান আ. এর যুগ
খৃ.পূর্ব ১০০৪ সালে তালুত মারা গেলে বনী ইসরাইলের নেতৃত্ব দেন হযরত দাউদ আ.। কিন্তু বনী ইসরাইলের একটা অংশ দাউদ আ.কে অস্বীকার করে তালুতের ছেলেকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে। দাউদ আ. এর রাজধানী ছিল আলখলীল নগরী। আর তালুতের ছেলের রাজধানী ছিল জেরুজালেম (কুদস)। খৃ.পূর্ব ১০০০ সালে এক যুদ্ধে দাউদ আ. তালুতের ছেলেকে পরাজিত করেন এবং কুদস তথা জেরুজালেমকে রাজধানী বানান। এভাবে খৃ.পূর্ব ৯৯৫ সালের দিকে ইহুদীদের ছোট একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তার রাজ্যের সাকুল্যে বিস্তৃতি ছিল ২০ হাজার বর্গ কি. মি.। এদিকে কেনানীরা তাদের কর্তৃত্ব নিয়ে ফিলিস্তিনের তীরবর্তী অঞ্চলে বিদ্যমান ছিল। খৃ.পূর্ব ৯৬৩ সনে ৪০ বছরের রাজত্ব শেষে দাউদ আ. ইন্তেকাল করেন। স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর ছেলে হযরত সুলাইমান আ.। তিনি মসজিদে আকসাকে পুনঃনির্মাণ করেন। এখানে এসে ইহুদীরা একটি বড় মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়। তারা বলে তিনি ‘হাইকালে সুলেমানি’ ( বিশেষ ইবাদতখানা) নির্মাণ করেন। সুলাইমান আ. এর রাজ্তবকাল ছিল ৯৬৩খৃ.পূ থেকে ৯২৩খৃ.পূ সাল পরযন্ত মোট ৪০ বছর। ইহুদীদের ইতিহাসে দাউদ ও সুলাইমান আ. এ দুই যুগেই মোট ৮০ বছর স্বাধীনভাবে পূর্ণ প্রতাপের সাথে রাজ্য ক্ষমতা পেয়েছিল। কিন্তু এরপর আর তাদের নিরংকুশ স্বাধীন শক্তিশালী কোন রাজ্য ক্ষমতা লাভ করার সুযোগ হয় নি।

**দুইটি ইহুদী রাজ্য ও অসুরীয়-বাবেলীয়দের আগমন
হযরত সুলাইমান আ. এর ইন্তেকালের পর ইহুদীরা ছোট দুইটি রাজ্যে বিভক্ত হয়ে ৯২৩খৃ.পূ সালে ইহুদীদের দুইটি রাজ্যের গোড়া পত্তন হয়-
১. ইসরাইল রাজ্য।
২. য়াহুদা সাম্রাজ্য।

৭৩০খৃ.পূ সালে ইরাক থেকে অসুরীয়রা এসে ফিলিসি্তন দখল করতে শুরু করে। ৭২১খৃ.পূ সালে ইসরাইল রাজ্য ধ্বংস করে। ৬৪৫খৃ.পূ পরযন্ত অসুরীয়রা ক্ষমতা ধরে রাখে। এরপর তাদেরকে হটিয়ে আসে ইরাকের বাবেলীয়ানরা। এরপর এ এলাকা বাবেলীয়দের নিয়ন্ত্রনে যায়। য়াহুদা রাজ্য ধ্বংস করে খৃ.পূর্ব ৫৯৭ সনে ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। তাদের রাজাসহ ১০হাজার ইহুদীকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এবং ইহুদীদের থেকই একজনকে তাদের শাসনকর্তা হিসেবে রেখে যায়। ৫৮৬খৃ.পূ তে বাবেলীয়ানদের বিরুদ্ধে সে শাসক বিদ্রোহের চেষ্টা করে। তখন বাবেল থেকে রাজা বুখতে নসর এসে ফিলিস্তিনে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সমস্ত বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলে। বাইতুল মুকাদ্দাসকে ধ্বংস করে জ্বালিয়ে দেয়। ৪০ হাজার ইহুদীকে বন্দি করে নিয়ে যায়। বাবেল নগরীতে তারা গোলামীর জীবনে বাধ্য হয়। অবশিষ্ট ইহুদীরা ফিলিস্তিন এলাকা ছেড়ে প্রাণ নিয়ে মিশরের দিকে পালিয়ে যায়। ৫৬২ সনে বুখতে নসর মারা যায়। এ সময়ে এসে তারা নাযিল হওয়ার প্রায় ৭০০ বছর পর বিচ্ছিন্নভাবে তাওরাত লিপিবদ্ধ করতে শুরু করে। বাবেলীয়দের ক্ষমতা চলে ৫৩৯খৃ.পূ পরযন্ত।

**পারসিক-গ্রীক-সালুকিদের আগমন
৫৩৯খৃ.পূ. সনে পারস্য রাজা দ্বিতীয় হুর্স বাবেলীয়দের হটিয়ে তাদের সাম্রাজ্য দখল করেন। এ ধারাবাহিকতায় শাম ফিলিস্তিনও তার কব্জায় আসে।এখান থেকেই বিখ্যাত সুপার পাওয়ার পারস্য সাম্রাজ্যের উত্থান। হুর্স ইহুদীদেরকে বাবেল থেকে ফিলিস্তিন যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু অল্পকিছু ইহুদী যাদের সংখ্যা ৪০বা ৪২ হাজার হবে, ফিলিস্তিনে আসে। বাকিরা উন্নত বাবেল নগরী ছেড়ে আসে নি।
তারা ফিলিস্তিনে এসে তাদের কল্পিত হাইকাল পুঃনির্মাণ করে। পারস্যরা তাদেরকে কুদসের ৩০ কি. মি. জুড়ে ছোট্ট একটি এলাকায় স্বায়ত্তশাসন দেয়। খৃ.পূর্ব ৫১৫ থেকে ২শ বছর এ রাজ্য নিজেরা পরিচালনা করে। অবশিষ্ট পুরো এলাকা পারস্যের অধীনে থাকে।
খৃ.পূর্ব ৩৩২ সনে ইতিহাসখ্যাত গ্রিক রাজা আলেকজান্ডার ফিলিস্তিন দখল করেন। ৩২৩খৃ.পূ. সনে রাজা আলেকজান্ডার মারা গেলে গ্রিক সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে সে সুযোগে আনবাতরা প্রথমে দক্ষিণ ফিলিস্তিনে দখলে নিয়ে ধীরে ধীরে প্রায় সবটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তারা খৃ.পূর্ব ২শ সাল পর্যন্ত প্রায় ১শ বছর ফিলিস্তিন শাসন করে।
১৬৭ খৃ.পূ. সনে গ্রীকদের একটি অংশ সালুকী সম্প্রদায় আবার এ এলাকা দখল করে এবং ইহুদীদের উপর সীমাহীন নির্যাতন চালায় এমনকি তাদেরকে তাদের উপাস্য জায়ুসের পুজায় বাধ্য করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গ্রীকদের ধর্মীয় আচার ছড়িয়ে পড়ে। এখানে এসে ইহুদীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়- গ্রীকপন্থি ইহুদী, মুকাবী (মূলপন্থী) ইহুদী। দ্বিতীয় দলটির নেতৃত্ব দেয় য়াহুদা আল মুকাবী।
এর অল্প কিছুদিন পর সালুকিরা ইহুদীদেরকে কুদস তথা জেরুজালেমে প্রবেশের অনুমতি দেয়। তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে উৎসব করে তাতে প্রবেশ করে। সালুকিরা মূল ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ইহুদীদেরকে সীমীত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে। বিনিময়ে তারা ট্যাক্স প্র্রদান করে। বর্তমানে যে তারা একাধিক মুখ বিশিষ্ট মোমদানীকে বিশেষ সম্মানজনক চিন্হ হিসেবে গন্য করে সেটি এসেছে এখান থেকেই।
১৪৩ খৃ.পূ. সনে তারা সিমন নামে একজন ইহুদী শাসকও নিয়োগ দেয়, এর কিছুদিন পর ট্যাক্স মওকুফ করে এবং জেরুজালেম এলাকায় ইহুদীদের নিজস্ব মুদ্রা চালূ করার অনুমতি দেয়। এক পর্যায়ে সিমনকে ফিলিস্তিনের পুরো অঞ্চল শাসন করার অনুমতি দেয়। শুরু হয় সিমনের সাম্রাজ্য। ৭৬ খৃ.পূ. সাল পর্যন্ত এ রাজ্য ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়ে সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে। তবে রাষ্ট্রিয়ভাবে তখনও তারা সালুকি গ্রীকদের অধীনেই ছিল।

**রোমানদের আগমন
এরপর রোমানরা এসে গ্রীক সাম্রাজ্যের পতন ঘটায় এবং ৬৩সনে জেরুজালেম দখল করে নেয়। তারা বড় একজন ধর্মযাজককে এ ক্ষুদ্র এ ইহুদী বসতির শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। ৪৩খৃ.পূ. সনে নিয়োগ দেয় ‘হেরেডাস’ নামে আরেকজনকে। তার সময়কালে জর্ডান এবং ফিলিস্তিন রোমান ও পারস্যদের রণক্ষেত্র ছিল।
১৫ খৃ.পূ. সনে কুদসে মারইয়াম আ. এর জন্ম।
৪ খৃ.পূ. সনে রাজা হেরেডাস মারা যায় এবং তার সাম্রাজ্য তার তিন ছেলের হাত ধরে তিন টুকরো হয়। হযরত ঈসা আ. এর জন্মের ৩ মাস আগে যাকারিয়া আ. এর ছেলে ইয়াহয়া আ. এর জন্ম হয়।

**ইহুদী জাতি থেকে নতুন আরেকটি বিকৃত মতবাদ খৃষ্টবাদের জন্ম
খৃষ্টবর্ষ।
এ বছর ঈসা আ. এর জন্ম হয়। ইহুদীরা শুরু থেকেই মরিয়াম আ. কে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে আসছিলো। ফলে ঈসা আ. কে তারা ভালোভাবে নেয় নি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। ফলে সেসময় তিনজন নবী একসাথে বিদ্যমান ছিলেন। যাকারিয়া আ. ইয়াহয়া আ. ও ঈসা আ.। তারা তিনজন মিলে ইহুদীদেরকে নিজেদের বিকৃত ধর্ম থেকে সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য কাজ করতে লাগলেন।
৬খৃষ্টাব্দে হেরেডাসের ছেলের হাত থেকে এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসণ রহিত করে পূর্ণ ক্ষমতা আবার রোমানরা সরাসরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সে সময় শুধু ধর্মীয় বিষয় ও বিচারকার্যক্রম ইহুদীদের হাতে বহাল ছিল। ২৬ খৃষ্টাব্দে ফিলিস্তিনের শাসক হিসেবে আসে রোমান বংশদ্ভূত বেতলিমুস। ইহুদীরা ঈসা আ. কে নবী হিসেবে মানতো না। এবং যাকারিয়া ও ইয়াহয়া আ. কেও অনুসরণ করে চলতো না। আপন ভাতিজিকে বিয়ে করতে বাধা দেওয়ার কারণে বেতলেমুস ইয়াহয়া ও যাকারিয়া আ. কে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে ইহুদীরা ছিলো নীরব ও প্রতিবাদহীন। এরপর নবী হিসেবে শুধু ঈসা আ. এলাকায় ঘুরে ঘুরে দাওয়াতের কাজ করতে লাগলেন এবং বিকৃতি পাপাচার ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কাজ করতে লাগলেন। স্থির হয়ে বসার মত তার কোন ঘর ছিলো না। সর্বদা সফরের মধ্যেই থাকতেন। একারণেই তার নাম হয় আলমাসীহ (ভ্রমণকারী)। ইহুদীদের নানান হঠকারীতার কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ব থেকেই তাদের উপর বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অনেকধরণের কঠোরতা আরোপ করে রেখেছিলেন। ঈসা আ. এর মাধ্যমে সেসকল কঠিন বিধান কিছু কিছু রহিত হলো। একসময় গিয়ে তাঁর কিছু অনুসারীও তৈরী হলো। তাঁর একান্ত সহচর ছিলেন কিছু মানূষ। তাদেরকে বলা হয় হাওয়ারী। ইহুদী পাদ্রিরা তার প্রতি অসহিষ্ঞু হয়ে তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলো। এ দলে যোগ দিল শাসক বেতলেমুস। একপর্যায়ে তাকে বন্দি করে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘোষণা জারী করা হলো। আল্লাহ তাআলা তাকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন এবং আরেকজনকে তার মত বানিয়ে দিলেন। ইহুদীরা সেই আরেকজনকে শূলে চড়িযে হত্যা করলো।

**রুমে খৃষ্টবাদের সূচনা
এরপর ইহুদীরা তাঁর অনুসারীদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালালো। তার একান্ত সহচর ও অনুসারীরা যারা মুক্তি পেল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেল। তাদের কেউ কেউ এসে আশ্রয় নিল রুমে। এখানে এসে গোপনে ঈসা আ. এর মতাদর্শ প্রচার করতে লাগল। ঈসা আ.কে উঠিয়ে নেওয়ার তিন বছর পর ৩৬ খৃষ্টাব্দে রাজা বেতলেমুস মারা যায়। রুমানরা হেরেডাসের বংশধরদের আবার স্বায়ত্তশাসন করার অধিকার দেয়। ফলে ইহুদীরা আববার আসতে শুরু করে। ঈসা আ. এর অনুসারীরা গোপনে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু টিকতে পারে নি। ইহুদীরা তাদেরকে মেরে ভাগিয়ে দেয়। হাওয়ারীদের একজন পেটেরেস রুমে অনেক অনেক গোপন মাসীহী সংগঠন গড়ে তোলে এবং ইহুদীদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করতে থাকে। এসময়ে ঈসা আ. এর বিদ্বেষী পৌল এর আত্মপ্রকাশ হয়। সে খৃষ্টান সেজে ঈসা আ. এর নামে নানা মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দেয় এবং তাঁর আদর্শের মধ্যে সীমাহীন বিকৃতি ঘটায়। তার দাওয়াত শুধু ইহুদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না।তার হাত ধরেই এ আদর্শে ত্রিত্ববাদের বিকাশ ঘটে। রুম সম্রাট নিরু তাদের তৎপরতা জানতে পেরে এ দুজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। কিন্তু তাদের অনুসারীরা রয়ে যায়। পৌত্তলিকদের মুর্তি পুজার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা এক পর্যায়ে ঈসা আ. ও মারইয়াম আ. এর মুর্তি নির্মাণ করে। এভাবে এ আদর্শের ভেতরে মুর্তিপুজার অনুপ্রবেশ ঘটে। বলাবাহুল্য এভাবেই ইহুদীদের প্রতি প্রেরিত হযরত ঈসা আ. এর আদর্শকে বিকৃত করে ইহুদীদের মধ্য থেকে খৃষ্টবাদ নামে নতুন একটি ধর্মের গোড়া পত্তন হয়।

**ইহুদীদের বিদ্রোহ ও মুক্তিপ্রচেষ্টা ও রুম সম্রাটের খৃষ্টধর্ম গ্রহণ এবং খ্রিষ্টানদের স্বর্ণ সময়।
৬৬সালের দিকে কুদস তথা জেরুজালেমে ইহুদীরা রুমান শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। রুম সম্রাট তার প্রধান সেনাপতি ছেলে টিটাস কে পাঠায়। দীর্ঘ ৪ বছর অবরোধের পর কুদসের পতন হয়। সেনাপতি পুরো শহরকে ধ্বংস করে এবং ইহুদীদের বন্দি করে রোমে নিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। ইউরোপে এভাবেই ইহুদীদের সূচনা হয়। বাকি ইহুদীরা ফিলিস্তিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে।
১৩৬ সালে বারুখিয়ার নেতৃত্বে আবার সংগঠিত হয়ে রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। রোম সম্রাট হাদেফিয়ান তাদের আশ্রয়দুর্গ অবরোধ করে তিন বছরের চেষ্টায় জয় করে। এরপর কুদস তথা জেরুজালেমের ইহুদীদের সকল দূর্গ ও নিদর্শানাদি মুছে দিয়ে সেখানে নতুন স্থাপনা ও মন্দির বানান। এবং এ শহরের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখেন ‘ইলয়া’ এবং এ শহরের ইহুদীদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ নিষেধাজ্ঞা দুইশত বছর বহাল ছিল। ফিলিস্তিন থেকে ইহুদীরা পূর্ণরূপে নির্বাসিত হয়। ৩২৪ সালে রোম সম্রাট কুসতুনতিন খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমে এ ধর্মে আরো অনেক বিকৃতি প্রবেশ করে। রাজা কুসতুনতিন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য দখল করেন। তিনিও ইহুদীদের কুদসে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর ছিলেন। পরবর্তী রোমান শাসকরা এ নীতি ধরে রাখে। কিন্তু সম্রাট জুলিয়ান ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করলে ইহুদীদের জন্য কিছুটা সুযোগ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলেও তার পরবর্তী শাসকরা আবার খৃষ্টধর্মে ফিরে গেলে তাদের সে আশার গোড়ে বালি পড়ে।
৩৯৫ সালে রোম সাম্রাজ্য পুর্ব পশ্চিমে ভাগ হয়ে যায়। পূর্ব অংশের রাজধানী হয় বাইজান্টাইন। এর সম্রাট হল হিরাক্লিয়াস। ফিলিস্তিন অঞ্চল এ সাম্রাজ্যের অধীনে যায়। আর পশ্চিম অংশ হল ইউরোপ এলাকায়। এর রাজধানী হল রোম নগরী।
পশ্চিমের রোমান সাম্রাজ্য ৪৭৬ সালে জর্মানদের হাতে পতন হয়। কিন্তু পূর্ব রোম টিকে ছিল এবং ফিলিস্তিনেও তাদের কব্জা ধরে রেখেছিল মুসলমানদের রুম বিজয়ের আগ পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কাল পর্যন্ত এ দৃশ্য বহাল থাকে।
১৯৩৬ সালে বিদ্রোহ পরবর্তী নির্বাসনের পর থেকে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের ক্ষমতা কোন ক্ষমতা তো ছিলোই না; উল্লেখযোগ্য কোন উপস্থিতিও ছিল না। খৃষ্টানরাই দাপিয়ে বেড়িযেছে সর্বত্র।
৬০৩ থেকে ৬২৫ এর ভেতরে কয়েক বছরের জন্য ইরানের বাদশা খসরুর আমলে ইরানী পারসিক মুর্তিপুজারীরা ফিলিস্তিন এলাকা দখল করে নিলেও বাদশা হিরাক্লিয়াসের নেতৃত্বে এ এলাকা রোমকরা আবার ফেরত পায়।
অবেশেষে ৬৩৭ হিজরীতে আমর ইবনূল আস এর নেতৃত্বে মুসলমানরা ফিলিস্তিন বিজয় করেন। ১১ শতাব্দি পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুসলমান শাসকদের অধীনে থাকে। ১০৯৯ সালে ইউরোপের খৃষ্টান ক্রুসেডাররা দখল করার পর সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী ১১৮৭ সালে জেরুজালেমসহ পূর্ণ ফিলিস্তিন পুনর্দখল করেন। এরপর ১২২৯ সালে খৃষ্টান রাজা ফ্রেডরিখ মাত্র ৫০০ সৈন্য নিয়ে ভিতু মুসলিম রাজা আলকামেল থেকে সন্ধির ভিত্তিতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের কয়েকটি শহর দখল করে নেয়। দশ বছর তাদের সে দখল বজায় থাকে। দশ বছর পর জর্দানের বাদশা নাসের দাউদ খাওয়ারযামীদের নিয়ে ১২৩৯/৪০ সালে শহরগুলো পুনর্দখল করেন। ১২৪৩ সালে দামেশকের বাদশা সালেহ ইসমাইলের গাদ্দারীর কারণে জেরুজালেম সহ বেশ কিছু শহর আবার খৃষ্টানদের দখলে যায়। অতঃপর নাজমুাদ্দিন আইয়ূব খাওয়ারযামিদের সহায়তাতেই এক বছরের মাথায় শহরগুলো আবার মুসলমানদের কব্জায় ফিরিয়ে আনেন। ১৯১৭ সালে বুটিশরা উসমানী খেলাফতের কাছ থেকে ফিলিস্তিন দখল করার আগ পর্যন্ত এ দেশ মুসলমানদের হাতেই বহাল ছিল।

পিছনে আমরা ইতিহাসের যে বিবরণ দিলাম এতে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়-
• ইহুদীরা ফিলিস্তিনের আদি বাসিন্দা নয়; সূচনা থেকেই তারা এ এলাকার আগন্তুক। আদি বাসিন্দা হল কেনানীগণ। বর্তমান ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা (মুসলিম হোক বা খৃষ্টান হোক) কেনানী বংশেরই লোক। এর বাইরে আছে মুসলিম মুহাজিরদের ক্ষুদ্র একটা অংশ এবং সামান্য পরিমাণ মুহাজির খৃষ্টান।
• দাউদ ও সুলাইমান আ. এর সামান্য সময়ের রাজত্বকাল ছাড়া আর কোন সময় ফিলিস্তিনে ইহুদী পূর্ণ স্বাধীন রাজ্য পায় নি। জেরুজালেম কেন্দ্রিক স্বল্প পরিসরে খণ্ডকালীন কিছু কিছু সময়ের জন্য স্বায়ত্তশাসন পেয়েছে মাত্র।
• পূর্ণ ফিলিস্তিনে কখনোই তাদের বসতি ছিল না। তাদের বসতি ছিল সামান্য এলাকাজুড়ে।
• ইহুদিরা ফিলিস্তিনে বসবাসকালীন সর্বদা অনাচার অপতৎপরতা ও বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এবং বহির্শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে বারবার এখান থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। এক পর্যোয়ে তাদের ফিলিস্তিনে আগমনের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় ২ হাজার বছর যাবৎ তারা ফিলিস্তিন থেকে উচ্ছেদ হয়ে এ এলাকার আশা ত্যাগ করে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িযে পড়ে। ফিলিস্তিন তাদেরকে ভুলে যায়। অল্পসংখ্যক খৃষ্টান ও মুসলিম মুহাজিরদের বাদ দিলে এখানে মূল অধিবাসীরা বসবাস করতে থাকে। এবং তারাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
• অতএব, ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদীদের ঐতিহাসিক দাবি একটি হাস্যকর বক্তব্য মাত্র।

**পরিকল্পিত ইহুদী রাষ্রেভূর গোড়া পত্তন ও ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আগমন
ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দ্বারা সুইস প্রণালী, রেড সী, এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, মিশরসহ তার অধিকৃত আরব রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা আন্দোলনকে নস্যাৎ করা। তার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য পূর্ব-পশ্চিমের যোগাযোগের পথকে নিরাপদ রাখা। ইহুদিদের মাধ্যমে আরবদেরকে শায়েস্তা করা। এবং সবচে বড় কথা হলো ইহুদীদেরকে নিরাপদে অন্য কোথাও বের করে দিয়ে ইউরোপকে ইহুদী মুক্ত করে তাদের অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পাওয়াসহ অনেকগুলো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ইউরোপ ও আমেরিকার সহায়তায় বৃটিশ সাম্রাজ্য স্বাধীন ফিলিস্তিনে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটি ইহুদী কলোনী গড়ে তোলে।
অপরদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ব থেকেই ইহুদীদের লুলোপ দৃষ্টি ছিল। জায়নবাদী আন্দোলন শুরু হবার পর তা আরো গতি পায়।
এসব মিলিয়ে ইহুদীরা বহু আগে থেকেই ইউরোপ ও বৃটেনের ছত্র ছায়ায় দলে দলে ফিলিস্তিনে এসে বসতি গড়তে থাকে।
তবে লক্ষ্যণীয়ভাবে তারা আসতে থাকে ১৮৮২ইং থেকে ১৯০৩ইং এর মধ্যবর্তী সময়ে। এ সময়ে ২৮ হাজার ইহুদী ফিলিস্তিনে আসে। এবং এ বিশ বছর সময়ের ভিতরে তারা ২২টি বসতি গড়তে সক্ষম হয়।
এরপর ১৯০৪ইং থেকে ১৯১৪ইং পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এদের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ৪০ হাজারে। এসময়ে তারা ৫৯টি বসতি গড়ে তোলে।
১৯১৪ইং তে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকারের ইহুদি কর্মকর্তা হারবার্ট সামুয়েল বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে আবেদন জানায় যেন বৃটেন ও আমেরিকার সহায়তায় ফিলিস্তিনে একটি ইহুদী রাষ্ট্র গঠন করা হয়। ১৯১৬ ইং এর শেষ দিকে জিওনিস্ট অর্গানাইজেশন (Zionist Organization)-এর পক্ষ থেকে পত্র ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করার জন্য বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে পত্র পাঠানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আর্থার বেলফোর ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে বৃটেনের সম্মতির কথা জানিয়ে তার বিখ্যাত ঘোষণা দেন।
এরপর থেকে হিজরতকারীদের সংখ্যা দিন দিন প্রচণ্ডহারে বাড়তে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধত্তোর সময়ে ৫৫ হাজার, ১৯২৫ সনে এক লক্ষ ৮হাজার, ১৯৩৫ সনে তিন লক্ষ, ১৯৪৮ সনে সাড়ে ছয় লক্ষতে গিয়ে উপনীত হয়।
এরপর ১৯৪৭ সনের ২৯ নভেম্বর অত্যন্ত নির্মমভাবে তৎকালীন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনের ভূমিকে ইহুদি ও ফিলিস্তিনীদের মাঝে ভাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিতে স্বীকৃতভাবে একটি ইহুদি বিষফোঁড়ার জন্ম দেয়। এতে তারা পূর্ণ ফিলিস্তিন থেকে ইহুদীদের জন্য বরাদ্দ দেয় ৭৮ভাগ ভূমি আর ফিলিস্তিনীদের জন্য গাজা ও পশ্চিম তীর এলাকার সাকুল্যে ২২ভাগ ভূমি।
১৯১৭ সাল থেকে ফিলিস্তিন বৃটিশদের ম্যান্ডেটে ছিল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট ছেড়ে দেয়। ম্যান্ডেট ছেড়ে দেওয়ার আগের দিন ইহুদী নেতারা সার্বভৌম ইহুদি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। সে সময় তাদের জনসংখ্যা ছিল ৮,০৬০০০. এরপর থেকে ইহুদীরা পূর্বের চেয়েও হিংস্র হযে ওঠে। তৎকালীন জাতি সংঘের করে দেওয়া সে ভাগও মানে নি। জোর পূ্র্বক ফিলিস্তিনীদের অংশ থেকেও বিপুল পরিমাণ ভূমি দখল করে নিয়ে বসতি গড়ে তোলে। ফলে দেখা যায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৩ সনের মধ্যে ৩৭০টি নতুন বসতি গড়ে তোলে এবং ৪৮ থেকে ৬৭সনের মধ্যে চারশোটিরও বেশি ফিলিস্তিনি গ্রাম থেকে ফিলিস্তিনীদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে ইহুদী বসতিতে রূপান্তরিত করে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খুঁজে খঁজে ইহুদীদেরকে এনে ইসরাইলে জড়ো করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের এক হিসেব অনুযায়ী গাজা ও পশ্চিম তীরের অধিকৃত এলাকা ছাড়া বরতমান ইসরাইলের মোট জনসংখ্যা হলো- ৮৩,৪৫০০০. এর মধ্যে ইহদীরা ৬২,৫১০০০ (৭৪.৯ পার্সেন্ট) এবং আরবদের সংখ্যা ১৭,৩০০০০ (২০.৭ পার্সেন্ট প্রায়) বাকি হল অন্যান্য।
সূত্র :
১. তারীখু ফিলিস্তিন আলমুসাওয়ার। লেখক : তারিক আস সুওয়াইদান।
২. ফিলিস্তিনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। লেখক : গাস্সান মাহমুদ উশাহ, গাজা ইসলামিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির বিভাগীয় প্রধান।
৩. আলইখওয়ান উইকিপিডিয়া।
৪. কাসাসুল কুরআন। হিফজুর রহমান সিওহারবী রহ. –সহ আরবী নেইট সাইট।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

বাকপ্রবাস বলেছেন: আসসালামুআলাইকুম। আপনার ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩ এর সময়কার লেখাটা আজকের সময়কার জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। গুগলে সার্চ দিতে গিয়ে লেখাটা পেলাম এবং দেখলাম মন্তব্যহীন। তায় সাড়া দিয়ে গেলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.