![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাস্তায় নামলে আমি পুরোপরি পরজীবী হয়ে পড়ি। আমার কোন হিসাব থাকে না; মানে, রাস্তাঘাট মনে থাকে না। লোকজনকে জিজ্ঞেস করি। তারা আগ্রহের সাথে পথ বাতলে দেয়। আমি তারচে'ও বেশি আগ্রহ নিয়ে সে পথ ধরে চলতে থাকি। সবসময় যে শতভাগ ঠিক হয় এমন না। এমনও লোক পেয়েছি যার কথায় আমি সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছি। কিন্তু আমি তার প্রতিও কৃতজ্ঞ। বেচারা তো চেষ্টা করেছে।
আমার দেখামতে বাংলাদেশের লোকজন রাস্তয় খুবই হেল্পফুল। বিশেষ করে রিকশাওয়ালা, সি এন জি ড্রাইভার, আশপাশের দোকানের লোকজন। এমনকি রাস্তার বখাটে ছেলেপিলে পর্যন্ত অত্যন্ত ভদ্রভাবে পথ দেখিয়ে দেয়।
আমি সবচে বেশি অসহায় হয়ে পড়ি ঢাকা এলে। বাস থেকে নামার সময় হলেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। আর রাস্তায় নামলে তো রীতিমত কান্না আসে। জ্যাম-টেম, নৈঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীনতা, সুষম খাবারের সংকট, মানসম্মত পানের দোকান না-থাকা ইত্যাদি তো আছেই, বেশি সমস্যায় পড়ি রাস্তা চেনা নিয়ে।
ঢাকা আমি নয় বছর কাটিয়েছি। কিন্তু হাতে গোনা অল্পকয়েকটা জায়গা ছাড়া আর কোথাও নিজে পথ চিনে যেতে পারি না। আমার চেনা-জানার মধ্যে সায়েদাবাদ অন্যতম। কিন্তু হা কপাল! একবার সেই সায়েদাবাদেই জনপথ-মোড়ের খোঁজে আমি আধা ঘণ্টার মত চক্কর কেটেছি। সাথে আব্বা ছিলেন। নয় বছর এখানে কাটিয়ে পিতাকে আমি জনপথের মোড়ে নিয়ে যেতে পারছি না- এটা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আসলে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে, আমি এটা খুঁজে পাচ্চ্ছি না। মনে হচ্ছিলো- এই তো, সামনেই। এই সামনে সামনে করে এক পর্যায়ে যখন পিতা-পুত্র সারি সারি বাসের চিপায় সেঁধিয়ে গেলাম তখন আমি খুবই হতাশ আর দুঃখিত হয়ে পড়লাম।
ঢাকায় এলে আমি সায়েদাবাদ নেমে রাশেদকে ফোন করি- রাশেদ! সায়েদাবাদ নামলাম। এখন আমার কী করা উচিত? সে বলে দেয়। এর পরের বার আসার আগে আগে এ সাজেশন খুব যত্নের সাথে ভুলে যাই। সে আবার বলে দেয়।
আজকে সায়েদাবাদাবাদ নেমেই ফোন করলাম। কিন্তু কল ঢুকার আগেই আবার কেটে দিলাম। আর কত, আমি তো বড় হয়েছি। এবার নিজের পায়ে দাঁড়ানো দরকার। ফলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সিএনজি ডাকলাম। ড্রাইভারের হাসিটা আমার পছন্দ হয়েছে। এমন করে যে হাসতে পারে এর হাতে নিজেকে নিশ্চিন্তে তোলে দেওয়া যায়। হাজিপাড়া নেমে মাওলানা যাইনুল আবিদীন সাহেবের বাসার গলিটা খুঁজতে লাগলাম। পেলাম না। অথচ দশ বছর ধরে আমি এ বাসায় আসা-যাওয়া করি। শেষে চৌধুরী পাড়া মাদরাসার লাগোয়া গলি দিয়ে বাসায় গেলাম।
এই ব্যাপারটি প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো। এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। আমি তো আমার বাড়ির পথঘাট চিনি। এটাই বা কম কিসে!
কাজী, আপনি বলেছিলেন, আপনি কোনদিন গাড়ি চালাইতে পারবেন না, কারণ পথ-ঘাট চিনেন না। তো, এই হলো আমার অবস্থা। আমি আপনার চেয়ে অনেকগুন বেশি।
২১. ১০.২০১৭ঈ. রবিবার।
©somewhere in net ltd.