![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার কথাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে ঢাই ।
একটি গল্প
শোধ
সাবিউল হক
হাসনাইন ঘুম ঘুম চোখে তার আব্বার চেম্বারে এসে বসে। সকালবেলা। একটু পরে সেখানে অনেক ভীড় হবে। তার আব্বা একজন নামকরা এ্যাডভোকেট। একটু পর থেকে শুরু হবে ক্লায়েন্টদের আনাগোনা। হাসনাইন দেখে ফাঁকা সময়টার সুযোগ নিয়ে তাদের প্রতিবেশী রাসেলের মা এসেছে দেখা করতে ।
তোমার আবার কী হল রাসেলের মা ?
আমরা খুব অসুবিদার মইদ্দে আছি চাচাজান।
কী অসুবিধা ?
কালক্যা রাসেলের আব্বার ক্যানসার ধরা পড়ছে।
তাই নাকি ? আহা ! তা আমার কাছে কেন ? ডাক্তারের কাছে যাও।
মেডিকেলের ডাক্তারই দেখত্যাছে চাচা। তয় শরীল খুব খারাপ। ওষুদ-পানি ছাড়াও ভালো কিছু খাওন লাগবো। ফলমুল , ডিম,দুদ, হাবি-জাবি। যদি কিছু ট্যাকা-পয়সা সাহায্য করতেন।
টাকা-পয়সা কোথায় পাব রাসেলের মা ? জীবন খুব কঠিন। বুঝলে। নতুন বাড়িটার ফিনিশিং টাচে লাগবে আরও প্রায় পাঁচ লাখ। গতমাসে সিটি কর্পোরেশনের দেয়া একটা প্লট কিনলাম। দাম নিল চল্লিশ লাখ টাকা। নগদ টাকা এখন নেই। পরে দেখা করো।
রাসেলের মা মুখ ভার করে উঠে চলে যায়। সে জানে এ্যাডভোকেট সাহেব এক কথার মানুষ।
তিনি একটা সিগারেট ধরান। একমুখ ধোঁয়া ছাড়েন। এই সময় রাসেলের বাবা এসে চেম্বারে ঢোকে।
কি ব্যাপার ! তুই আবার কবে কবে ক্যান্সার বাধিয়ে বসেছিস ?
বুঝবার পারি নাই চাচাজান। তই আমি কইছিলাম কি? একটা হাজার ট্যাকা যদি দিতেন। সাহায্য না। ধার। ডাক্তার জরুলী ভিত্তিতে একখান স্যালাইন নিতে কইছে। হাল-হকিকত খুবই খারাপ চাচাজান। মনে লয় পিথিমীর ভাত উইঠ্যা আসচে।
নারে এখন কোনো নগদ টাকা নাই। আর তুই যে ধার বলছিস শোধ দিবি কিভাবে ?
ফ্যাকাশে মুখে চুপ মেরে যায় রাসেলের আব্বা আরব আলী।
হঠাৎ তার কি মনে হয়। বলে , চাচাজান আপনি তো বেনসন সিগারেট খান। কত ট্যাহা ধোঁয়া হইয়্যা উড়্যা যায়। আমরার জন্য এট্টু দয়া করেন না চাচাজান। সিগারেটটা না খাইলেই তো কত ট্যাহা বাঁচন যায়।
তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন এ্যাডভোকেট আবুল ফজল।
বলেন , কী বললি হারামজাদা ? তোর বাপের পয়সায় সিগারেট কিনি নাকিরে ?
রাসেলের বাবা ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যায়।
বলে , ভুল হয়্যা গেছে চাচাজান। মাপ কইর্যা দিয়েন।
বলে সে ভয়ে ভয়ে উঠে একরকম পালিয়ে যায়।
হাসনাইনের চোখ খুলে যায়। সে হিসাব করে ,একটা সিগারেটের দাম যদি পাঁচ টাকা হয় , কত দাম সে সঠিক জানে না , তাহলে পাঁচ গুনিত দশ , (সারা দিনে তার বাবা দশটারও বেশী সিগারেট খায়। কমপক্ষে দশটা তো বটেই) গুনিত তিনশ’ পয়ষট্টি। তাহলে হয়
আঠার হাজার দুইশ’ পঞ্চাশ। অথচ গরীব লোকটাকে এক হাজার টাকা সাহায্য দিতে পারল না। কত অপব্যয় !
তার মনে আর একটা অঙ্কের হিসাব খেলে যায় । সে প্রতিদিন স্কুলে যায় । যেতে আসতে রিক্সাভাড়া লাগে তিরিশ টাকা। এক কিলোমিটার রাস্তা । সে ইচ্ছে করলে হেঁটেও যেতে পারে। ক্লাস বাদে কোচিংয়েও যায়। মাসে প্রায় গড়ে পঁচিশ দিন। তার মানে পঁচিশ গুনিত দুই গুনিত তিরিশ। পনেরশ’। তার মানে এক বছরে সে আঠার হাজার টাকা বাঁচাতে পারে। তার এই টাকা বাঁচানোর ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে যায় যখন এক সপ্তাহ পরে মারা যান আরব আলী।
এবার রমযান মাস আসে আগষ্টে। তার হাতে এখন দশ হাজারের বেশী টাকা। সে ঈদের আগে রাসেলের মা’কে একটা শাড়ি -ব্লাউজ- ছায়া কেনার টাকা দেয়। সঙ্গে রাসেলদের দুই ভাই বোনের পোষাক কেনার টাকা। ঈদের আগের দিন বাজার করার জন্য আরও দুই হাজার টাকা দেয় ও। বলে , আব্বা দিয়েছে। ঈদের সকালে রাসেলদের দুই ভাই বোনের হাতে হাত খরচের জন্য দেয় পাঁচশ’ করে টাকা। ওরা খুশিতে বাগবাগ।
ঈদের দিন । এ্যাডভোকেট সাহেব নামাজ পড়ে এসে চেম্বারে বসেছেন। বিভিন্ন লোকজন আসছে দেখা সাক্ষাৎ করতে। । ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে। এসেছে রাসেলের মা। তার দুই ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে। ছেলেমেয়েসহ কদমবুসি করে উঠে বলে , চাচাজান এবারের ঈদটা আপনার দয়ায় খুব শান্তিমত করছি।
মানে ?
হ। আপনি যে টাকা দিছেন তাই দিয়্যা আমার শাড়ি বেলাউজ , রাসেল আর তিতলির জামা কাপড় কিনছি। ঈদের দিনের চিনি , সেমাই , বয়লার সব কিনছি। পোলাপান মজা কইর্যা খাইছে। আবার রাসেল আর তিতলীর হাতে পাঁচশ’ ট্যাহা কইর্যা ঈদি দিছেন। হেরা তো বেজায় খুশি। বাপ মরা পোলাপান , নগদ ট্যাহা তো চোহেই দ্যাহে না। আপনার দয়ায় এবারের ঈদডা আমার জীবনের সেরা ঈদ। এত আনন্দ রাসেলরা কোনোদিন হ্যার বাপ বাঁইচ্যা থাকনের সময়ও করে নাই।
রাসেলরা চলে যায়। এ্যাডভোকেট আবুল ফজল বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যান। তিনি অনুমান করেন নিশ্চয়ই হাসনাইন তার টাকা চুরি করে এই কান্ড করেছে।
তিনি তার স্ত্রীর মাধ্যমে হাসনাইনকে ডাকেন। হাসনাইনের ছোটবোন আসফিয়াও চলে আসে।
ফজল সাহেব বলেন , তুই কি রাসেলের মা’কে টাকা দিয়েছিস ?
হ্যাঁ।
কোথায় পেলি টাকা ?
হাসনাইন তোতলাতে থাকে। তার খুব শরম লাগে সত্যি ঘটনা খুলে বলতে। কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে।
তার আব্বা ভাবেন তার টাকা চুরি হয়েছে তার অজান্তে। তিনি ভীষণ রেগে যান। এই বয়সেই টাকা চুরি। চুরি করে দান। তিনি এক থাপ্পড় বসিয়ে দেন হাসনাইনের গালে। হাসনাইন অভিমান করে আর কিছু বলে না । অশ্রুসিক্ত নয়নে ভেতরে চলে যায়।
একটু পরে তার বন্ধুরা আসে । সে তাদের সঙ্গে চলে যায় ক্রিকেট খেলতে। আজ প্রীতি ম্যাচ। পাশের মহল্লার সঙ্গে। ওদের টিমটা হেভী শক্তিশালী। হাসনাইনদেরটাও খারাপ না। তবে ওদের টিমে কুটনীতি বেশি। যেমন হাসনাইন স্কুল দলের ক্যাপ্টেন। ওপেনিংয়ে ভালো খেলে । তবু ওকে নামায় ছয় নম্বরে। যখন আর খুব বেশি কিছু করার থাকে না।
খেলা শুরু হয়ে যায়। টসে জেতে প্রতিপক্ষ। ব্যাট নেয় । বিশ ওভারে করে ছিয়ানব্বই। টি- টুয়েন্টির জন্য খুব বেশি রান না। তবু ওরা পারে না। উনিশ ওভারে করে পাঁচ উইকেটে তিয়াত্তর। আর বল বাকি আছে ছয়টি। রান করতে হবে চব্বিশ। তেইশ রান করলে টাই। চব্বিশে জিত। বল পিছু চার। তার মানে প্রত্যেকটা বলে বাউন্ডারি। অসম্ভব।
নতুন ওভার শুরু হয়। এক রানও পায় না। উইকেট পড়ে যায়। এখন পাঁচ বলে চব্বিশ। তার মানে প্রত্যেক বলে চার ছাড়াও দুটো বলে ওভার বাউন্ডারিও মারতে হবে। অসম্ভব।
এই সময় ডাক পড়ে হাসনাইনের। এই পাঁচ বলে সে কী করবে ? ওপেনিংয়ে নামালে সে জেতানোর চেষ্টা করতো।
মাঠে নেমে সে দেখে তার বোন আসফিয়া , বাবা আর মা ও খেলা দেখতে এসেছে। এবার তার মনে হয় আরব আলীর কথা। বিন্দু বিন্দু করে টাকা সঞ্চয়ের কথা। ঈদের নামাজ পড়ে আসার পর বাবার হাতে চড় খাওয়ার কথা। তার খুব জেদ চড়ে যায়। সে অন্তত একটা বল খেলবে। মারবে ছয়। দেখা যাক কী হয় ?
প্রথম বল আসে । ওভারের দ্বিতীয় বল। খুব নিচু হয়ে । সে কিছু করতে পারে না। শুধু উইকেট রক্ষা করে। বোলার হাসে। তারা নিশ্চিত জিতছে। আর চার বলে চব্বিশ।
এবার সে একটা ফুলটস বল দেয়। হাসনাইন প্রাণপনে ব্যাট চালায়। সোজা বোলারের মাথার উপর দিয়ে। ছয়। আসফিয়া নাচছে। বেশিরভাগ দর্শকও উৎফুল্ল। মাঠতো তাদের মহল্লায়। প্রতিপক্ষের বোলার তবুও হাসে। এখনও তিন বলে আঠার। ‘ মারো বাবা দেখি কত পারো ’ এরকম মনোভাব তার।
এবার সে বলটা ঠুকে দেয়। বলটা সামনে ড্রপ খেয়ে মাথা সমান উঁচু হয়ে তীব্র আর ভয়ংকর গতিতে ছুটে আসছে। হাসনাইনের মনে হয় তার বাবার হাতের চড়। সে হুক করে। জাভেদ মিয়ানদাদের মতো। বল সোজা গ্যালারীতে। ছয়। আর দুই বল। বারো রান। সে কী পারবে ?
পরের বলটাও মারে তবে শেষ পর্যন্ত সেটা চার হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে সীমানার ভেতরে ড্রপ খায় বলটা। চার। আর এক বল । দরকার আট রান। তাহলে হেরেই গেল শেষ পর্যন্ত। হাসনাইনের চোখে পানি চলে আসে। এভাবেই মারা যায় আরব আলীরা। সে আর কি করবে ? নিয়তি । এটা মানতেই হবে। সে যেমন উপকার করার পরও বাবার হাতে চড় খেয়েছে।
জিতুক আর হারুক পরের বলটাকেও ছক্কায় পরিনত করে হাসনাইন। মাঠে ভীষণ উল্লাস। আসফিয়ারা নাচছে। তার আব্বা আর মা ও উঠে দাঁড়িয়েছেন । হাততালি দিচ্ছেন। কী ব্যাপার ? প্রতিপক্ষের মুখ চুন। হাসনাইনদের মহল্লার লোকজন রীতিমতো উৎসব আরম্ভ করেছে। ব্যাপার কী ?
সে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ওপার থেকে ছুটে আসে ব্যাটসম্যান আদনান। বলে , বস এটা নো বল হয়েছে। আর জেতার জন্য দরকার মাত্র এক রান। তাহলেই আমরা হব বিজয়ী। তোকে অভিনন্দন। তোর জন্যই জিতলাম। মার। বোলার ভয় পেয়ে গেছে। না লাগলেও ঠেকিয়েই দৌড় দিবি। হারাতে তো আর পারছে না। বোল্ড বা রান আউট হলেও ভয় নেই। এক রান না নিলেও টাই। নিলেই জিত ।
হাসনাইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বিধিও তাহলে মুখ তুলে তাকিয়েছে। তার মন বলে এটাও হবে ছয়। অবশ্যই ছয়। তার বাবা সবকিছু জানতে পারবেন। এবার তিনিও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরবেন।
সে আর একটি বলের জন্য অপেক্ষা করে। যাকে সে নিশ্চিত ছ’য়ে পরিনত করবে। শোধ নেবে তার বাবার চড়ের।
সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকা ব্লগার বন্ধুরা , ব্লগে আমি নতুন। আজকেই কনফার্মেশন পাওয়ার কথা । জানি না এখানে কয়দিনে সপ্তাহ ।আমি সাধারণত লিখি ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। মাঝে মাঝে প্রবন্ধ। আমার ব্লগে আপনাদের স্বাগতম। আমি এই ব্লগে গত সাতদিনে দেখেছি অনেক প্রতিভাধর কবি, তুখোড় ছড়াকার,অসামান্য গল্পকার, মেধাবী প্রবন্ধকার আছেন। আমিও একটু একটু লেখার চেষ্টা করি, তাই আপনাদের লেখা পড়ে বুঝতে পারছি। আমি আপনাদের সমালোচনা চাই। যে কোনো রকমের গঠনমুলক সমালোচনাকে স্বাগতম। ভুলত্রুটিগুলো শুধরানোর জন্য সব রকমের সমালোচনা কাম্য। আপনার নিজের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে যা খুশি লিখুন। মন খুলে আপনার মতামত পাঠান। কড়া সমালোচনা হলেও আমি খুশি। ধন্যবাদ।
ব্লকটি যারা দেখছেন তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
সামনের দিনগুলো সবার সঙ্গে মজায় মজায় কাটাব আশা করি। দোয়া চাই সবার। সবাইকে আরেকবার ধন্যবাদ। সবার দিনগুলোই কাটুক সুখে। আনন্দে।
©somewhere in net ltd.