নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যত কথা

আমি যে আমার মতো থাকতে পারি না ।

সাবিউল হক

আমি আমার কথাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে ঢাই ।

সাবিউল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা

০৫ ই মে, ২০১৪ ভোর ৪:২২

ফেরা হবে না

সাবিউল হক



আমি জানি আমার আর কোনোদিন বাড়ি ফেরা হবে না।

অথচ একসময় ফিরবার জন্য ছিলাম

স্থিরপ্রতিজ্ঞ।

কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করে ফিরে আসব

গ্রামে যে নতুন কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

সেখানে শিক্ষকতার কাজ নেব।

থাকব মায়ের বুকের কাছাকাছি।

সবুজ ধানক্ষেতের কাছাকাছি।

নদী আর নিসর্গের কাছাকাছি।

ফুল আর পাখির কাছাকাছি।

সোঁদামাটির গন্ধের কাছাকাছি।

গ্রামের মানুষদের হৃদয়ের কাছাকাছি।



অথচ আজ আগষ্ট মাসের সতেরো তারিখ। ১৯৭১।

বুকে ষ্টেনগান চেপে পদ্মার চরে সবুজ কাশবনের মধ্যে

ওঁত পেতে আছি শত্রুহননের জন্য।

সংবাদ পেয়েছি আর খানিক্ষণের মধ্যেই

খানসেনাভর্তি একটা লঞ্চ আমাদের সামনে দিয়ে যাবে

আর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ব আমরা।



সংবাদ পেয়েছি মাত্র সাতদিন আগে

আমাদের গ্রামে ওরা আক্রমন চালিয়েছে।

মেরে ফেলেছে আমার ¯েœহময় পিতা আর দুই সহোদরকে।

নির্যাতিতা মায়ের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে রাতের বাতাস।

বোনদের কোনো সংবাদ পাইনি।

আর নাসরিন । যে মেয়েটির সঙ্গে আমার

বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি হয়েছিল

সেই শ্যামলা কিশোরী মিষ্টি মেয়েটিকে

ওরা তুলে নিয়ে গেছে ক্যাম্পে।

সংবাদ পেয়েছি তিনদিন পর আবার ওর

ধর্ষিতা উলঙ্গ লাশ ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে



বেগুনি কচুরিপানা ফুলের পাশে , বিলের পানিতে।



বুকের ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে আগুন

কিন্তু চোখ দিয়ে একফোটা পানিও পড়েনি।



সংবাদ পেয়েছি গোটা গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে।

ঐ পোড়ামাটির গ্রামে আমি আর ফিরে যাব কেমন করে ?

অথচ কথা ছিল অনার্স পরীক্ষা শেষ হলেই

আমি বাড়ি ফিরব।

শুষে নেব মায়ের আদর।

কয়দিন খালিপায়ে সবুজ ঘাসের মধ্যে হাঁটব।

পদ্মার টাটকা ইলিশের পেটি ভাজা আর

কলমিলতার শাক দিয়ে , কলারমোচা ভাজি দিয়ে

টাকি মাছের ঝাল ভর্তা দিয়ে

গোগ্রাসে খাব বাঁশমতি চাউলের ভাত।



অথচ আজ আমি জানি আমার আর কোনোদিনও

বাড়ি ফেরা হবে না।

যদিও স্মৃতির কাছে , শৈশবের কাছে , গ্রামের কাছে

ফিরতে ইচ্ছে করে খুব।

ফিরতে ইচ্ছে করে মায়ের কাছে । মা উন্মাদ।

ফিরতে ইচ্ছে করে বাবার কাছে। বাবা নেই।

ফিরতে ইচ্ছে করে ভাইদের কাছে। ভাইয়েরা নেই।

ফিরতে ইচ্ছে করে বোনদের কাছে। বোনেরা কে কেমন

আছে জানি না।



গ্রামের কাছে ফিরতে ইচ্ছে করে খুব। গ্রাম পুড়ে গেছে।

বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে খুব। বাড়ি পুড়ে গেছে।

গ্রামবাসীদের কাছে ফিরতে ইচ্ছে করে খুব। কে কে আছে জানি না।

আর নাসরিন। সোনার মেয়ে । তোমার কাছেও

ফিরতে ইচ্ছে করে ভীষণ।

অথচ আমার হৃদয়ে ছাড়া এই পৃথিবীর আলো বাতাস

কোথাও তুমি নেই।

আমি কার কাছে ফিরে যাব ?

বাবার কাছে ?

মায়ের কাছে ?

ভাইদের কাছে ?

বোনদের কাছে ?

নাসরিনের কাছে ? না গ্রামবাসীর ?



তাই আমি জানি আমার আর কোনোদিন বাড়ি ফেরা হবে না।



আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে শত্রুদের লঞ্চ।

তখন আমি জানি আমার আর হিতাহিত জ্ঞান থাকবে না।

ষ্টেনগান বুকে চেপে ধরে গুলি বর্ষন করতে করতে

আমি এগিয়ে যাব বেপরোয়া।

আর শত্রুহননের সঙ্গে সঙ্গে একসময়

আমি , আমিও গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ব মাটিতে।

মৃত্যযন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকব দীর্ঘক্ষণ।

লাল রক্তে ভিজে যাবে কাশবন। পদ্মার চর।

কাদামাটির মধ্যে রক্তে ভিজে সোঁদাগন্ধ মাটি মেখে

পড়ে থাকবে আমার লাশ ।

নির্যাতনের বিরুদ্ধে

অত্যাচারের বিরুদ্ধে

অন্যায়ের বিরুদ্ধে

প্রতিবাদ হয়ে ।



আমি জানি আমার আর কোনোদিনও বাড়ি ফেরা হবে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.