নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যত কথা

আমি যে আমার মতো থাকতে পারি না ।

সাবিউল হক

আমি আমার কথাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে ঢাই ।

সাবিউল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - গোরুর গোশত

০৯ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:০৬

গরুর গোশত

সাবিউল হক



১৯৮২ সাল।

আমার মামাতে বোন রুমির বিয়ে। বয়সে সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়ো। তবে সাইজে ছোটখাট। পড়াতেও। আমি এবার ইন্টারমিডিয়েট ফার্ষ্ট ইয়ার। ও ক্লাস টেনে। পড়াশুনাতে একদম কমা। মামা তাই আরও তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। গ্রামের স্কুলে পড়ে। এখানে দুই তিন সাবজেক্টে ফেল করলেও পরের শ্রেণিতে তুলে দেয়া হয়। বিশেষ করে মেয়েদের। সার্টিফিকেট পরীক্ষায় তো আর তা দেবে না। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা।

রুমিকে আমার বেশ ভালোলাগে। ছোটখাট মেয়েটি। শান্তশিষ্ট। আমুদে।

তবে পিঠাপিঠি ভাইবোন বলে সে আমার উপর কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করে। আমাকে বড়োর সুবাদে ‘তুই’ করে ডাকে। আমি অবশ্য ‘তুমি’ বলি। আসলে তো ‘আপনি’ বলা উচিত। পিঠাপিঠি তাই ‘তুমি’। কোনো কোনো সময় ‘তুই’।

ওর বিয়ে লেগে যাওয়ার পর একদিন আমাকে চুপে চুপে ডেকে বলে , সুমন কাল রাতে অনেক ভেবেছি তোকে নিয়ে। দেখলাম আমি তোকেই ভালবাসি। বিয়ে ভেঙ্গে দেব নাকি রে ?

আমি চমকে যাই। ওর সাথে ফাজলামী করতাম। বলতাম , এই যে শ্যামলা সুন্দরী , আমি তোমাকেই বৌ করে ঘরে তুলে নেব। আপাতত মন দিয়ে পড়াশুনা কর।

ও খিলখিল করে হাসত। কখনও রেগে গিয়ে দুমদাম দু’চার কিল পিঠে বসিয়েও দিত। মোটকথা , কৈশোরের মধুর দিনগুলো এভাবেই পার হয়েছে। ও কিভাবে কিভাবে বড়ো হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি।

এখন আমি একেতো ছাত্র তার উপর আমার বা ওর কারো বিয়ের সরকারি বয়সই হয় নি। তার উপর ওর বর ওকে দেখে পছন্দ করেছে। ওরা যৌতুক বলে কিছু চাই নি। যদিও মামা খুশি হয়ে অনেককিছু উপহার দেবেন। পাত্ররাই রুমিকে একসেটগয়না দেবে। মামা মামী তো বটেই আমরাসহ সমস্ত আতœীয়স্বজনই খুশি। একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় হবু দুলাভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা । কী খাতির যতœ ! ছাড়লেনই না। হোটেলে ধরে নিয়ে গিয়ে চা , কলিজার সিঙাড়া খাওয়ালেন। আর রুমি বলে কী ?

আমি আতংকিত হয়ে বলি , আমিতো বেকার আর ছাত্র। এখন বিয়ে করব কেমন করে ?

ও আমার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে।

বলে , তোকে পরীক্ষা করছিলাম সুমন। আমাকে খুব ভালবাসিস নারে ? এত ভালো বর রেখে তোকে বিয়ে করব ক্যান রে গাধা ?

আমার খুব রাগ হয়।

চোখমুখ সিরিয়াস করে বলি , রুমি আমিও তোকে ভালবাসি। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না। চল দু’জনে পালাই। পরের কথা পরে ভাবা যাবে।

ও শুনে বলে , চল।

যা বোঝার তা বুঝে নিই। ওকে ভাগিয়ে নিলে ও এক সেকেন্ড দেরী করবে না। তবে আমিতো ওকে ভালবাসিনা। তাছাড়া মামা আর আমার আব্বা দু’জনেই এই ব্যাপারে এক হয়ে যাবেন। আর আমার হাড্ডি একটাও আস্ত থাকবে না। আর রুমি যে চরিত্রের মেয়ে যখন চাপ আসবে ও ঠিক অস্বীকার করে বসবে। ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেবে আমার ঘাড়ে।

বললাম , না রে রুমি মামাদের বেইজ্জত করা ঠিক হবে না। তাছাড়া আইনও আমাদের সমর্থন দেবে না। নাবালিকা মেয়ে অপহরণের মামলায় ফেঁসে যাব। মামাকে গত পরশু কাজী সাহেব ওয়ার্নিং দিয়ে গেছেন। মেয়ের নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আঠারো বছর বলে নিবন্ধন কার্ড করে নেবেন। নাহলে ক্লাস টেনের ছাত্রী। শেষমেশ আমি ফেঁসে যাব। নাবালিকা প্রমাণ হয়ে গেলে আমার কাজীর লাইসেন্সও বাতিল হবে , জেলও হবে।

রুমি দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বলে , তাই ?

ও মন খারাপ করে অন্যদিকে চলে যায়। প্রেম নয় তবু ওর জন্যে আমার বুকের ভেতরে একটা সফ্টকর্ণার তৈরী হয়ে যায়।

আজ বিয়ে। গ্রামে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে খানার আয়োজন করা হয়েছে। আমার দায়িত্ব পড়েছে গোশত্ তুলে দেওয়ার। মামা পঁইপঁই করে বলে দিয়েছেন , দেখেশুনে দিবি সুমন। যদিও যথেষ্ট আছে তবু অযথা নষ্ট যেন না হয়। তুই সবচেয়ে চালাক চতুর। তোর উপরে আমার আস্থা আছে। সেইজন্য সবচেয়ে দায়িত্বশীল কাজটা তোকে দিলাম। দেখিস নাম ডোবাস না।

খানা আরম্ভ হয়েছে। এক ব্যাচ শেষ। একটুও মাংস নষ্ট হয় নি। আমি খুব খুশি।

দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু। সবাইকে যতœ করে খাওয়াচ্ছি। রশিদ চাচা মামার বড়ো মেয়ের শ্বশুরের বেহায়। শুনেছি খুব ভোজন রসিক লোক। উপহারও এনেছেন দেখলাম একটা বড়ো পিতলের কলস। দাম ভালোই। উনার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলাম , চাচা গরুর গোশত্ পছন্দ করেন ?

উনি বললেন , হ্যাঁ সুমন। গরুর গোশত্ আমার সবচেয়ে ফেবরিট তবে .....

উনার কথা শেষ হবার আগেই প্লেট ভর্তি করে মাংস তুলে দিলাম। উনি হাত উঠিয়ে নিলেন।

বললেন , প্লেটটা যে বদলাতে হয়। আমিতো আর গরুর মাংস খাই না। এগারো বছর।

কেন ? এলার্জি ?

না।

তাহলে ?

পরে শুনো। আপাতত প্লেটটা বদলার ব্যবস্থা কর।

বদলে দিলাম কিন্তু কৌতুহলটা যায় না।

খানার পরেও দেখি আছে।

চেপে ধরলাম , ব্যাপার কী ?

ব্যাপার তেমন কিছুই না সুমন। একাত্তর সালের মে মাস। আমরা খেতে বসেছি। রাতের বেলা। আমার বড়ো ছেলে রাসেলের বয়স তখন তোমাদের মতো। কলেজে পড়ে। গরুর মাংস রান্না হয়েছে। ভুনা করে রান্না। আমার মতো ওরও খুব পছন্দ। ভাত মেখে প্রথম লোকমা মুখে তুলতে যাবে। দরজায় করাঘাত। ও যেয়ে দরজা খুলে দিতেই খানেরা ঢুকে পড়ে। ওকে আমাদের চোখের সামনেই ‘তোম মুক্তি হো’ বলে লাথি ঘুষি মেরে শুইয়ে দিল। আমাদের শত অনুরোধ বিনোরোধেও কান দিল না। রাসেলকে সেই যে ধরে নিয়ে গেল , আর ফেরৎ পাই নি। লাশটাও না। সেই থেকে আর গরুর মাংস খেতে পারি না সুমন। শুধু রাসেলের মুখটা সামনে চলে আসে।

আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। শান্তনার কোনো বাণীও না। এক শোকাহত পিতার হাহাকারে ভরা বুক কি আমি শুধু কথা দিয়ে ভরাতে পারব ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:৫৩

পংবাড়ী বলেছেন: গল্প যদি সত্য ঘটনার উপর লিখিত হয়; আপনি ১৭ কোটীর মাঝে সবচেয়ে বড় বেকুব।

০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:০৭

সাবিউল হক বলেছেন: আপনার মন্তব্য ঠিক আমার মায়ের মত । আমি বোধহয় সত্যিই একটু বেকুব । তবু আমি বোকাই হব-এটাই আমার এম্বিশন । তবে এটা ১০০ পারসেন্ট গল্প । স্রেফ কল্পনা । মূল্যবান সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.