নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার যত কথা

আমি যে আমার মতো থাকতে পারি না ।

সাবিউল হক

আমি আমার কথাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে বলতে ঢাই ।

সাবিউল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি নতুন আংগিকের গল্প

১০ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:২১

আমরা দু’চোখ মেলে যা দেখি সব সময় তা সত্য নয়। দৃশ্যের বাইরেও অনেক সময় থেকে যায় অদৃশ্য ঘটনা। সেই ভিন্নমাত্রার একটি কাহিনী ‘ভিন্নমাত্রা’। শেষ পর্যন্ত পড়ুন আশা করি ভালো লাগবে।



ভিন্নমাত্রা

সাবিউল হক



সকালবেলাটা অদ্ভুত এক আলস্যে ভরে যায়। ফযর নামাজ পড়ে এসে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ গা মোড়ামুড়ি না দিলে কিছুতেই ভালো লাগে না। অবশ্য বেশিক্ষণ বিশ্রাম করার উপায় নেই। আমার তিন বছরের বাচ্চাটা আমাকে ছাড়া আর কারো কাছেই দুধ , ডিম , সকালের নাস্তা এসব কিছুই খাবে না। ওকে নাস্তা করিয়ে গোশল সেরে নিজে নাস্তা করে অফিস রওনা দিতে হয়।

আজও এর ব্যতিক্রম হয় নি। নাস্তা সেরে পোষাক-আশাক পরে স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাচ্চাটাকে আদর করে অফিস রওনা দিয়েছি।

অর্ধেক রাস্তা আসার পর মনে পড়ে আজ সরকারি ছুটির দিন। অফিস নেই। আমি এমন ভুলোমন। নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হয়ে যায়।

যাই হোক , এখন কোথায় যাওয়া যায় ? কিভাবে সময়টা কাটানো যায় ? ভাবতে থাকি। ব্যাঙ্কে একটা কাজ আছে। কাগজপত্র আনা হয় নি। তাছাড়া ব্যাঙ্কও ছুটি। কিছু মার্কেট করতে হবে। প্রয়োজনীয় টাকা সঙ্গে নেই। কোথায় যাওয়া যায় খুব গভীরভাবে চিন্তা করি। তখন খুব প্রিয় একটা মুখ মনে পড়ে। মেয়েটির সঙ্গে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে বিয়ে হয়ে গেছে। এক সন্তানের মা। ওর কাছেই যাবার সিদ্ধান্ত নিই। বিচিত্র এক অনুভূতিতে মনটা ভরে যায়। এত ব্যস্ত থাকি সারাক্ষণ , নিজের খুব নিকট আত্মীয়-স্বজনদেরও খোঁজ খবর নেয়া হয় না। মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের কথা , ‘দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা , দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু / দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া / ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া / একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু’।

রওনা দিই কিন্তু মনের মধ্যে একটা আড়ষ্টতাবোধ কাঁটার মতো বিধে থাকে। এই সময়ে গিয়ে তাকে পাব তো ? বেড়াতে যেতে পারে। কোনো কাজে বের হতে পারে। হয়তো গিয়ে দেখব বাসায় নেই। কিংবা বাসায় পেলাম , সংসারের নানান রকম কাজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত। এই সময়টাতো আসলে বেড়াবার সময় নয়।

যাই হোক , রওনা হয়ে যায়। এক সময় রিক্সাটা এসে পৌঁছে যায় ওদের বাসার নামনে। ওদের বাসায় এখন কে কে আছে তাও জানি না। যদি সম্পূর্ণ একা থাকে ? শরীরটা শিরশির করে ওঠে। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মেটায়। রিক্সাওয়ালা ধীরগতিতে রিক্সা নিয়ে ফিরে যায়। অসময়ে বাসায় কড়া নাড়তে পা উঠছে না। কী বলে মেয়েটাকে সম্বোধন করব চিন্তা করি। আগে তো ‘তুমি’ বলতাম। এখন কী বলব ‘তুমি’ না ‘আপনি’ ?

দেখা যাক। বাসায় আছে কি নেই ? কেমন পরিস্থিতিতে আছে কে জানে ?

দরজায় বেশ খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখমুখ লাল করে অবশেষে কলিং বেলে টিপ দিই।

হ্যাঁ , সেই। আমার প্রাক্তন প্রেমিকা বাসাতেই আছে। দরজা খুলে আমাকে দেখেই হাতি দেখার মতো করে চমকে উঠে। চোখ দু’টো তার ভারি মায়াবী। কিন্তু এখন সেই মায়াবী চোখে একরাশ বিস্ময় ঝরে পড়ছে।

আপনি ?

হ্যাঁ , চলে এলাম।

তা তো আসবেনই। তবে অসময়ে যে ! এই সময়ে না আপনার অফিসে থাকার কথা ?

আজ সরকারি ছুটি না ? আপনারও খেয়াল নেই দেখছি।

মেয়েটির চোখে এক টুক্রো লজ্জা ঝলকে উঠে। দুষ্টু হাসিতে মুছে ফেলে তা।

বলে , সংসার করতে করতে একেবারে গোবেচারা হয়ে গেছি। কিছুই দেখছি খেয়াল নেই।

দরজায় দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল।

বলি , ভেতরে যেতে বলবেন না নাকি ? দরজায় দাঁড়িয়েই গল্প শুরু করে দিলেন ?

একথায় মেয়েটি খুবই লজ্জা পায়। তবে সে কেমন একটা রহস্যময় হাসি হাসে। এই হাসিটি লজ্জার , না ভয়ের , না সংকোচের আমি কিছুই বুঝতে পারি না।

বলে , আসুন। আসুন। কি অন্যায় ! দেখুনতো একরকম বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখেছি। অথচ একদিন কত আপন ছিলেন?

তাই ? আজ বেশ মুডে আছেন দেখছি।

কেমন ?

আপনি করে বলছেন ?

ওহ হো ! তাই তো । তা আপনিও তো আমাকে আপনি করে বলছেন। আগে তো তুমি বলতেন। তাছাড়া আপনাকে তুমি করে বলতে হবে এরকম কোনো দিব্যি আছে নাকি ?

বলতে বলতে মেযেটি হা হা করে হাসিতে ফেটে পড়ে।

আমি আচমকা হাসিতে একেবারে ব্রিবত লজ্জাবনত হয়ে যায়। মেয়েটিতো বেশ দুষ্টু হয়েছে। লজ্জার বাঁধ একেবারে ভেঙ্গে গেছে দেখছি। বিয়ে কি লজ্জার শৃংখল ছিড়ে ফেলে নাকি ? কে জানে ?

আমি ভেতরে ঢুকতেই মেয়েটি পেছন থেকে টুপ করে দরজায় খিল তুলে দেয়।

বাসায় আবার একা নেই তো ? যদি একা থাকে তাহলে অন্য কেউ এলে দু’জনকে দরজা লাগানো বাড়িতে দেখলে কী ভাববে ? ভেতরে ভেতরে ঘামতে থাকি। অসময়ে এসে আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়লাম দেখছি।

জিজ্ঞেস করি , বাড়িতে আর কে আছে ?

কেউ নেই।

তাচ্ছিল্য নাকি হুমকির মতো করে বলে কথাটা আমি ঠিক বুঝতে পারি না। তবুও ভেতরের উদ্ধীগ্নতা ভেতরে লুকিয়ে রেখে আবার জিজ্ঞেস করি , কেন আপনার পুত্রটি ? আপনার শ্বাশুড়ী আম্মা ?

তারা কেউ বাসায় নেই।

কোথায় গেছেন ?

কেমন অচেনা আর আকুল গলায় জিজ্ঞেস করি। আমি কি ভয় পাচ্ছি নাকি অস্বস্থিবোধ করছি নাকি ভেতরে ভেতরে উত্তপ্ত হচ্ছি ? ঠিক কী যে অনুভূতি তৈরী হচ্ছে তা আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। তবে আমার অসময়ে আসার জন্য এক ধরণের অপরাধবোধ যে কাজ করছে তা বুঝতে পারছি।

মেয়েটি আমার ভয়ার্ত আকুলতা দেখে হো হো করে হেসে উঠে। ও কি ব্যাপারটা নিয়ে মজা পাচ্ছে ?

বলে , আমার শ্বাশুড়ী আম্মা আমার ছেলেকে নিয়ে আপনি আসার মিনিট দশেক আগে তাঁর বোনের বাড়ি গেলেন।

তার মানে আপনি একা ?

হ্যাঁ।

অস্বস্থিবোধ আমাকে প্রচন্ডভাবে ঘিরে ফেলে। এই সময় মেয়েটি মিষ্টি হেসে আমার হাত ধরে।

বলে , আসুন বেডরুমে। বসবেন।

বেডরুমে ? না। ড্রয়িংরুমে বসি ?

আসুনতো। ভয় পাচ্ছেন কেন ?

না মানে হ্যাঁ মানে .........।

আমার ইতস্ততভাব দেখে স্বশব্দে আমার সামনে হেসে উঠে মেয়েটি।

আচ্ছা ও কোনো সংকোচ করছে না কেন ? ওর কি দূর্ণামেরও ভয় নেই ?

বেডরুমে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসছিলাম। ও টেনে নিয়ে বিছানায় বসায়।

আমি সহজ হতে চাইলাম। ভেতরে যদিও এক ধরণের উত্তেজনা বোধ করছি।

মেয়েটি একদম সহজ সরলভাবে আমার ডান পাশে এসে বসে। তারপর আচমকা ওর বাম হাতটা আমার ডান কাঁধে রাখে। আচমকা স্পর্শে আমি চমকে উঠি। মেয়েটি তা দেখে হেসে ফেলে।

বলে , কী ব্যাপার আপনি সহজ হতে পারছেন না কেন ? কেমন আড়ষ্ট হয়ে বসে আছেন। চমকে চমকে উঠছেন। ভেতরে ভেতরে খুব উত্তেজনা বোধ করছেন বোধ হয় ?

এবার আমার অবস্থা টাইট। মেয়েটি আমার মনের কথাও পড়ে ফেলেছে। আমি ঘেমে যাই। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

আমি আর কোনো কথা না বলে হাত বাড়িয়ে ওকে আমার বুকের মধ্যে টেনে নিই। মেয়েটি এবার আর হাসে না। মুখটা খানিকটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল কি ?

আমি ওর চিবুক ধরে মুখটা উপরে তুলি। মুখটা অপার্থিব এক উজ্জ্বল আলোয় ভরা। হাসি দূর হয়ে গেছে। কমনীয় মুখে ফিরে আসছে লাজুকতা।

এবার আমি বলি , খুব লজ্জা পাচ্ছেন মনে হচ্ছে ?

স্বাভাবিক নয় কি ?

কেন ? স্বাভাবিক কেন ?

একা বাড়ি। শুধু আপনি আর আমি। আবার আদর করতে শুরু করেছেন। লজ্জা পাওয়াই তো স্বাভাবিক।

তাই ? আগে যে খুব দুষ্টুমি ভাব দেখাচ্ছিলেন ?

দেখাচ্ছিলাম। আমার ইচ্ছে।

আর কী ইচ্ছে ?

ইচ্ছে যাই হোক , আপনি কিন্তু ঘেমে যাচ্ছেন। গরমের দিনে ঘাম একটা বিশ্রী ব্যাপার। দাঁড়ান ফ্যান দিই।

বলে মেয়েটি ফ্যানের সুইচ অন করে। তারপর দরজা লাগিয়ে দেয়।

কী ব্যাপার দরজা লাগালেন যে ?

লাগালাম। আমার ইচ্ছে। তবে ঘরের দরজা লাগালেও মনের দরজা কিন্তু আপনার জন্যে খুলে দিয়েছি। আপনি নিজকে খুব সাধুপুরুষ ভাবেন না ? আপনাকে আমার দেখা আছে।

না। না। আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। দরজা খুলে দিন। প্লিজ।

খুব সাধুগিরি দেখানো হচ্ছে না ? দাঁড়ান আপনার আজ ভূত ছুটাচ্ছি।

কী করবেন ?

আমি রীতিমতো আতংকিত গলায় বলি।

আমার যা ইচ্ছে তাই।

বলে মেয়েটি ছুটে এসে আমার মাথার চুল এলোমেলো করে দেয়। এরপর আমাকে এক ধাক্কায় বিছানায় শুইয়ে দেয়। এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে কে জানে ? আমি পরিস্থিতির হাতে নিজকে ছেড়ে দিই। এবার কি ও আমাকে জড়িয়ে ধরবে ? নাকি অপমান করবে ? দু’টোর যে কোনোটায় করতে পারে।

কিন্তু ঘটে তৃতীয় একটা ব্যাপার।

আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে একটা কবিতার লাইন আওড়াচ্ছিলাম , ‘প্রতীক্ষার মতো কষ্ট অন্য আর কিছুতেই নেই। / কী হবে কী হবে ভেবে ভেতরে শুকিয়ে যায় নীলকন্ঠ ফুল’।

হোক, আজ যা খুশি হোক।

কী ব্যাপার ? কোনো সাড়াশব্দ নেই। চোখ খুলে দেখি ঘরেও কেউ নেই। দরজা খোলা।

তাহলে শেষ মুহূর্তে পালিয়ে গেছে। দেখি কোথায় গেল। বাড়ি ছেড়ে পালায় নি তো আবার ?

না , বাড়ি ছেড়ে পালায় নি। রান্নাঘরে পাওয়া গেল। তরকারি কুটছে।

কী ব্যাপার , আমাকে একা রেখে পালিয়ে এলেন যে ? অসময়ে এলাম। একটু নাস্তাপানি দেবেন। দু’টো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন। তা না একেবারে পালিয়ে এলেন ?

জী , জনাব। এখন আর নাস্তা পাবেন না। দুপুরে একবারে ভাত খাবেন। আর রান্না-বান্না ফেলে প্রেম করা পোষাবে না। তাই চলে এলাম।

একটু আগেই কি রোমান্টিক ব্যবহার করছিল মেয়েটি। এখন ভূমিকা পুরোপুরি পাল্টে ফেলেছে। একেবারে আটপৌরে সংসারী মেয়ে মনে হচ্ছে।

কি ব্যাপার , কী ভাবছেন ? রান্না না করলে দুপুরে খাওয়া জুটবে কোত্থেকে ? আমি খাব। আপনি খাবেন। ছেলেটি এবং আমার শ্বাশুড়ী ? তারা না খেয়ে থাকবে বুঝি ?

আমি বুঝি তাই বলেছি ?

না বললেও ভাবনা দেখেই বুঝতে পেরেছি।

আমি সাহসী হয়ে এবার এগিয়ে যাই এবং মুখটা তুলেই নরম কোমল মায়াবী ঠোঁটদু’টোতে ঝপাত করে একটা চুমু খাই । মেয়েটি লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে যায়।

বলি , এটাও কি বুঝতে পেরেছিলেন নাকি ?

লজ্জায় রেঙে আমার চোখে চোখ রাখে ও। ডানহাতের শাহাদত আঙ্গুলি শাড়ির আঁচলে জড়াতে জড়াতে আবার চোখদু’টো নিচু করে নেয়।

তারপর ফ্যাসফেসে কিন্তু কোমল গলায় নিচুস্বরে বলে , তুমি এখনও একই রকম রোমান্টিক থেকে গেলে।

তাহলে আপনি থেকে তুমিতে নামলেন ?

এই যাও , যাও বলছি। সারাক্ষণ শুধু দুষ্টুমি না ? আমার একগাদা কাজ পড়ে আছে।

বলে আমাকে বাম হাত দিয়ে দেয় এক ঠেলা। ঠেলা খেয়ে আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসি।

ঠেলাধাক্কা খেয়ে বেরিয়ে আসাতো এক ধরণের অপমান। তবে আমি অপমানিত হই নি বরং মনটা ভরে গেছে এক ধরণের মধুর আবেশে। কারণ মেয়েটি আমার স্ত্রী এবং বাড়িটি আমার নিজের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.