নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা

সায়েমুজজ্জামান

কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে কিউং হি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। পরে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এ সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ২৮ তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের একজন সদস্য হিসেবে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রেক্টর (সচিব) এর একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপিতে লিয়েনে চাকরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। শিল্প সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷বর্তমানে সরকারের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোনো প্রয়োজনে ইমেইল করতে পারেন। [email protected]

সায়েমুজজ্জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরআন যেভাবে শিশু অধিকার রক্ষা করেছে

২৪ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩৫

কোরবানি সেমিটিক ধর্মসমূহে প্রচলিত বিষয়। এটি প্রচলনের কাহিনীটিও কিছু পার্থক্য বাদে প্রায় একই। ঘটনা আমরা যেভাবে জানি, আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে তার পুত্রকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। পরে তিনি তার পুত্রকে কোরবানি দিতে নিয়ে যান এবং কোরবানি করতে প্রস্তুতি নেন। এসময় আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে থামিয়ে দেন। পুত্রের পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি করেন। এটাই মুল থিম। আমি পবিত্র বাইবেলের বর্ণনা ও পবিত্র কোরআনের বর্ণনা উপস্থাপন করবো। আমার প্রতিটি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই জানার জন্য তুলনামূলক বিশ্লেষণ করছি। আর এতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে কোরআন কীভাবে কোন কৌশলে শিশু অধিকার রক্ষা করেছে।

বাইবেলের বর্ণনাঃ
পবিত্র বাইবেলের আদিপুস্তক ২২:১-১৯-এ আব্রাহাম ও তার পুত্র ইসহাকের বলিদানের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঈশ্বর আব্রাহামকে পরীক্ষা করার জন্য পুত্র ইসহাককে বলি দিতে বলেন। ‘‘তখন তিনি বললেন, তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, যাকে তুমি ভালবাসো, সেই ইসহাককে নিয়ে মোরিয়া দেশে যাও; এবং সেখানে যে এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলবো তার উপরে তাকে হোমার্থে বলিদান কর’’ (আদিপুস্তক ২২:১, ২)

আব্রাহাম ভোরবেলা ইসহাক, দুই দাস এবং একটি গাধা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পর্বতের কাছে পৌঁছে তিনি দাসদের রেখে ইসহাককে সঙ্গে নিয়ে উপরে ওঠেন।

‘‘আর ইসহাক আপন পিতা আব্রাহামকে বললেন, হে আমার পিতা। তিনি বললেন, হে বৎস, দেখ এই আমি| তখন তিনি বললেন, এই দেখুন আগুন ও কাঠ। কিন্তু বলিদানের জন্য মেষশাবক কোথায়? অব্রাহাম বললেন, বৎস, ঈশ্বর নিজেই বলিদানের জন্য মেষশাবক যোগাবেন। পরে উভয়ে একসঙ্গে চলে গেলেন’’ (আদিপুস্তক ২২:৭, ৮)|

‘‘ঈশ্বরের নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হলে; অব্রাহাম সেখানে যজ্ঞবেদী নির্মাণ করে, কাঠ সাজালেন। পরে আপন পুত্র ইসহাককে বেঁধে, বেদীতে কাঠের উপরে রাখলেন’’ (আদিপুস্তক ২২:৯)| ‘‘পরে অব্রাহাম হাত বিস্তার করে, আপন পুত্রকে বধ করতে হাতে ছুরি তুলে নেন।’ (আদিপুস্তক ২২:১০)|

ঠিক তখন প্রভুর দূত তাঁকে ডেকে থামান। ‘‘তখন তিনি বলিলেন, যুবকের প্রতি হাত বিস্তার করিও না, তার কিছুই করিও না: কেননা এখন আমি বুঝলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে নিজের অদ্বিতীয় পুত্র দিতেও অসম্মত নও’’ (আদিপুস্তক ২২:১০)|

"তুমি তোমার পুত্রকে রক্ষা করেছ, তোমার একমাত্র পুত্রকে" (আদিপুস্তক ২২:১৬-১৭)। এরপর আব্রাহাম একটি ঝোপ থেকে একটি মেষশাবক পেয়ে তাকে বলিদান দেন। ঈশ্বর আব্রাহামের এই আনুগত্য দেখে তাঁকে আশীর্বাদ দেন এবং তার বংশধরকে অসংখ্যতার প্রতিশ্রুতি দেন (আদিপুস্তক ২২:১৮)।

কোরআনে যেভাবে এসেছেঃ
পবিত্র কোরআনের সুরা সাফফাতের ১০০ নম্বর আয়াত থেকে ১১০ নম্বর আয়াতে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তার পুত্রের কোরবানির ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত কোরআনের বঙ্গানুবাদ সাধু থেকে চলিত রূপে এখানে তুলে ধরছি।

'হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান কর।'১০০। অতঃপর আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। ১০১। অতঃপর তিনি যখন তার পিতার সংগে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হলেন তখন ইব্রাহীম বললেন, 'বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ্ করছি, এখন তোমার অভিমত কি বল?' তিনি বললেন, 'হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।' ১০২। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইব্রাহীম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করলেন, ১০৩। তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, 'হে ইব্রাহীম ১০৪। 'তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে!'-এইভাবেই আমি সৎকর্ম-পরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি ১০৫। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা ১০৬। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক কুরবানীর বিনিময়ে ১০৭। আমি এটি পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। ১০৮ ইব্রাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক ১০৯। এভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি ১১০।

তুলনামূলক বিশ্লেষণঃ
পবিত্র বাইবেলে হযরত ইব্রাহিম আঃ কে আব্রাহাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি যে পুত্রকে জবেহ করতে নিয়ে গিয়েছিলেন তার নাম বলা হয়েছে ইসহাক। ঈশ্বর ইসহাককে সরাসরি বলিদান করতে বলেছেন। আব্রাহাম তার পুত্রকে যে বলিদান করবেন তা তিনি তাকে বলেন নি। পুত্র ইসহাক বলিদানের জন্য মেষশাবক কোথায় জানতে চাইলে আব্রাহাম বলেছেন, তা ঈশ্বর যোগাবেন। পরে আব্রাহাম বলিদানের জন্য পুত্র ইসহাককে বেঁধে ফেলেন এবং হাতে ছুরি নেন। এসময় ঈশ্বরের দূত এসে আব্রাহামকে থামান। খ্রিস্টানদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা পড়েছি। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, আব্রাহাম তার পুত্রকে ভুল বলেন নি। কারণ ঈশ্বর তার অসংখ্য বংশধর দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর একমাত্র পুত্রকে বলিদান করা হলে তো এটা সম্ভব নয়। সেকারণে তিনি যা বিশ্বাস করতেন সেটাই পুত্র ইসহাককে বলেছেন।

অন্যদিকে পবিত্র কোরআানে আব্রাহামের আরবী নাম ইব্রাহিম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তার পুত্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মুসলমানরা মনে করেন, ইব্রাহিম আঃ এর দুই পুত্র ছিলেন। প্রথম পুত্র যাকে নিয়ে ঘটনা তিনি হযরত ইসমাইল আঃ। তার কোরবানি নিয়ে হযরত ইব্রাহিম আঃ উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ তারা তখন বৃদ্ধ। আর কোনো সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা ছিলনা। নিজের একমাত্র পুত্রকে আল্লাহকে খুশী করার জন্য উৎসর্গ করায় আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে আরেকটি সন্তান দান করেছেন। তিনি হলেন ইসহাক। ইসমাইলের বংশধর হলেন আরবরা। আর ইহুদী ধর্মাবলম্বীরা হলেন ইসহাকের বংশধর।

যাই হোক, কোরআনের বর্ণনায় বুঝা যায়, হযরত ইব্রাহিম আঃ এর পুত্র তখন শিশু ছিলেন না। তিনি ভালোমন্দ বুঝতে পারতেন। একটু ব্যাখ্যা করি। কুরআনের শব্দ "বালাগা মায়াহু" বলা হয়েছে তাতে বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন মর্মে বুঝা যায়। যদিও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই শব্দদ্বয়ের অনুবাদ করেছে "পিতার সংগে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হযেছেন"। কোরআনের বর্ণনায় হযরত ইব্রাহিম আঃ তার পুত্রকে নিজের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। আর নবীদের স্বপ্ন বাস্তব। এটা ওহীরও মাধ্যম। এটা হযরত ইসমাইল আঃ জানতেন। সে কারণে তিনি কোরবানি হতে রাজি হয়েছিলেন। কোরআনের বর্ণনায় ইব্রাহিম আঃ তার পুত্রকে সঠিক বিষয়টি জানিয়ে মতামত চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে তার পুত্রকে কাত করে শুইয়ে দিয়েছিলেন। হাতে ছুরি নেয়ার বর্ণনা নেই। তাকে বেঁধে ফেলার বর্ণনা নেই। অর্থাৎ বাইবেলে যেভাবে আব্রাহামকে তার পুত্রকে বেঁধে বলিদানের জন্য ছুরি হাতে উদ্যত এক পিতা হিসেবে চিত্রিত করেছে; কোরআন সেভাবে তাকে চিত্রিত করেনি। কোরআনে ইব্রাহিম (আঃ) কে নিজ পুত্রকে নৈবেদ্যের বেদীতে শুইয়ে দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করছেন- এমন চিত্র আঁকা হয়েছে।

কোরআনের কৌশলগত বর্ণনাঃ
কোরবানির যে প্রেক্ষাপট পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে তা দেখলে বুঝা যায় কত হেকমতের সাথে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআন প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে নাজিল হয়েছিলো। তখনকার দিনে মানবাধিকার ও শিশু অধিকারের ধারণা আবিস্কৃত হয়নি। তখন পবিত্র কোরআনে এই কোরবানির ঘটনাটি যদি শিশু পুত্রকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে ছুরি গলায় চালিয়ে দেয়ার বর্ণনা থাকতো; তা স্বাভাবিক বর্ণনা হতো। তবে সেই বর্ণনা বর্তমান যুগে এসে কী ব্যাখ্যায় দাড়াতো চিন্তাও করা যায়না!

১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশু অধিকার সনদ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এটি আন্তর্জাতিক আইনের অংশে পরিণত হয়। শিশু অধিকার সনদ জাতিসংঘের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে গৃহিত মানবাধিকার চুক্তি যা জাতিসংঘের প্রায় সকল রাষ্ট্রই অনুমোদন করেছে। আমাদের দেশও শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে।

আমাদের পবিত্র কোরআনে শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এমন কিছু নেই। বর্ণনার ক্যারিশম্যাটিক ক্ষমতায় বিতর্কগুলোকে এড়িয়ে গেছে। কোরআনে এই ধরণের শিশু নির্যাতনের বিষয়টি থাকলে কী হতো ভাবতে পারেন! তখন কোরআনকে শিশু অধিকার পরিপন্থী হিসেবে প্রচার করা হতো। এই আধুনিককালে এসেও কোরআনের কৌশলগত বর্ণনায় সেটি সম্ভব হচ্ছেনা। এমনকি হত্যার বিচারে হত্যার বর্ণনাও যেখানে এসেছে সেখানেও বলা হয়েছে, এটা আসলে জীবন রক্ষা।

কোরআনের যে কয়েকটি দিক আমাকে বিস্মিত করেছে কোরবানির প্রেক্ষাপট বর্ণনা তার একটি। কোরআন বুঝতে পারলে বিস্ময়ের পর বিস্ময় জাগে।

কাজী সায়েমুজ্জামান
ঢাকা।
ঈদুল আজহার ১ম দিন
০৭ জুন ২০২৫

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০৬

মেঘনা বলেছেন: ৬ বছরে আয়েশার বিবাহটা শিশু নির্যাতনের মধ্যে পড়ে না।

২৪ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:১৭

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: ইসলাম নিয়ে গবেষণা করেন। নিজেই খুঁজে দেখুন- হযরত দঃ তাকে নিয়ে যখন সংসার শুরু করেছেন তখন তার বয়স কত ছিল? আমার হিসেবে ১৬ থেকে ১৮ ছিল।
এটা নিয়ে অনেক গবেষণাও হয়েছে। ইংরেজি ভাষায়ও পাবেন। ধন্যবাদ।

২৪ শে জুন, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

সায়েমুজজ্জামান বলেছেন: আয়েশা রা. ছয় বছরের বিয়ে : অলিক কল্পকাহিনির স্বরূপ উন্মোচন
টি. ও শানাবাস
অনুবাদ: বাছির জামাল

এক খ্রিস্টান বন্ধু আমাকে একবার জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি একজন ৫০ বছর লোকের সঙ্গে তোমার ৭ বছরের কন্যাকে বিয়ে দেবে?” আমি তৎক্ষনাত এর কোন উত্তর না দিয়ে নিরব থাকলাম। বন্ধুটি বলতে থাকলো, “যদি তা না কর, তাহলে তোমার নবীর সঙ্গে কিভাবে সাত বছরের আয়েশার বিয়েকে মেনে নিলে?”
আমি তাকে বললাম, ‘আমার কাছে এ মুহূর্তে এর কোন উত্তর নেই।” বন্ধুটি একটি হাসি দিলো এবং আমার বিশ্বাসের হৃদয়ে একটি পাথর নিক্ষেপ করে চলে গেলো। তবে আমি জানি অধিকাংশ মুসলমান এই প্রশ্নের উত্তর দেবে এই বলে যে, এ ধরনের বিবাহ তখনকার সময়ে গ্রহণযোগ্য ছিল। তানাহলে জনগণ নবীর সঙ্গে আয়েশার বিয়েকে মেনে নিত না, বিরোধিতা করত।
যাইহোক, আসলে এ ধরনের ব্যাখ্যা ওই সব সহজসরল লোকের সঙ্গে এক রকমের প্রতারণা যারা তা বিশ্বাস করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি এই উত্তরে সন্তুষ্ট নই মোটেই।
নবীজি হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর সব কাজ খুবই পবিত্র; তাই আমরা, মুসলমানরা এসব কাজ নিজেরা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। আমিসহ আমাদের অঞ্চলের লোকদের কেউই চিন্তা করি না যে, আমাদের সাত বছরের কন্যাকে একজন ৫০ বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে দেব। যদি কোন মা-বাবা এ রকম বিয়েতে রাজি হয়, তাহলে অধিকাংশ লোকই ওই কন্যার বাবা বা স্বামীকে ঘৃণার চোখে দেখবে।
১৯২৩ সালে মিশরে কাজীদের নির্দেশনা দেয়া হলো যে, কনেদের ক্ষেত্রে ১৬ বছরের নিচে এবং বরদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হবে না এবং একই সঙ্গে কোন সনদপত্র দেয়া হবে না। এর আট বছর পর কনেদের ক্ষেত্রে ১৬ বছরের নিচে এবং বরদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে বিতর্কের শুনানি করা ছাড়াই ১৯৩১ সালের শরিয়া আদালতের বিধি ও সংগঠনের আইন উপর্যুক্ত অনুবিধিকে কার্যকর করে।১ এটাই প্রমাণ করে যে, মিশরের মত একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বাল্যবিবাহ গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং আমি বিশ্বাস করি, প্রামাণ্য প্রমাণাদি ব্যতিরেকে আমাদের নবীর বিরুদ্ধে যে সাত বছরের আয়েশার সঙ্গে ৫০ বছরের নবীর বিয়ে করার গল্প তৈরি করা হয়েছে তা নিছকই অলিক কাহিনি বৈ কিছু নয়। এ বিষয়টির সত্য আবিষ্কারে আমার দীর্ঘ অনুসন্ধিৎসা আমার ধারণাকেই সঠিক বলে প্রমাণ করে। নবী হলেন একজন ভদ্রলোক মানুষ। তাই তিনি আয়েশার মতো সাত-নয় বছরের একজন নিষ্পাপ বালিকাকে বিয়ে করেননি। হাদিসে আয়েশার বয়স ভুলভাবে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু বিয়ের বয়স নিয়ে যে কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। নবীর সঙ্গে আয়েশার বিয়ের সময়কার বয়স সম্পর্কিত কিছু কিছু হাদিস সমস্যাক্রান্ত। এ পর্যায়ে হিশাম ইবনে হুরাওয়াহ কর্তৃক বর্ণিত অলিক কাহিনির বিরুদ্ধে আমি কিছু প্রমাণাদি নিচে উপস্থাপন করতে চাই এবং নবী যে দায়িত্বজ্ঞানহীন বুড়ো লোক হিসেবে একজন নিষ্পাপ বালিকাকে শিকার করেননি তার অপনোদন করতে চাই।

প্রমাণ-১ ; উৎসের গ্রহণযোগ্যতা
নবীর (স.) সঙ্গে আয়েশার (রা.) বিয়ের সময়কার বয়স সম্পর্কিত যেসব বর্ণনা হাদিস গ্রন্থসমূহে রয়েছে, তার অধিকাংশ বর্ণনাই করেছেন হিশাম ইবনে হুরাওয়াহ। তিনি তার পিতার বরাতে এসব বর্ণনা করেন। প্রথমতঃ যৌক্তিকভাবে এক, দুই বা তিনজনের চেয়ে আরও অধিক লোকের বিয়ের বয়স সম্পর্কে বর্ণনা থাকা উচিত ছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো মদিনার কোন ব্যক্তি এই ঘটনা বর্ণনা করেননি। বরং এর মূল উৎস ছিলো ইরাক যেখানে হিশাম মদিনায় ৭১ বছরের জীবন অতিবাহিত করে চলে গিয়েছিলেন।এসব সত্ত্বেও মদিনায় তার অনেক ছাত্র ছিল। তারমধ্যে বহুল পরিচিত সকলের শ্রদ্ধেয় মালিক ইবনে আনাসের নাম উল্লেখযোগ্য।
নবীর (স.) হাদিস বর্ণনাকারীগণের জীবনীগ্রন্থের মধ্যে বিশেষ পরিচিত গ্রন্থ তেহজিবু’ল-তেহজিব-এ আছে, ইয়াকুব ইবনে শাইবাহ’র মতে : “তিনি (হিশাম) খুবই বিশ্বাসযোগ্য মানুষ। তাঁর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য; তবে তিনি ইরাক যাওয়ার পর যেসব হাদিস বর্ণনা করেছেন সেগুলো ছাড়া।”২
ওই গ্রন্থে আবার বলা হয়েছে যে, মালিক ইবনে আনাস হিশামের বর্ণনা করা হাদিসের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন যা ইরাকের লোকদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে : “আমি বলেছি যে, মালিক ইবনে আনাস হিশামের বর্ণনা করা হাদিসের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন যা ইরাকের লোকদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।”৩
মিজানুল-আই টাইডাল, হাদিস বর্ণনাকারীগণের আরেকটি জীবনীগ্রন্থ যেখানে বলা হয়েছে, “বৃদ্ধ বয়সে হিশামের স্মরণশক্তি মারাত্মকভাবে লোপ পায়।”৪
উপরিউক্ত তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে বলা যায় যে, হিশামের স্মরণশক্তি লোপ পেয়েছিল। তাই তিনি ইরাকে অবস্থানকালে যেসব হাদিস বর্ণনা করেছিলেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং তার বর্ণনা করা আয়েশার বিয়ে ও তখনকার বয়স সম্পর্কিত হাদিসও গ্রহণযোগ্য নয়।
এ পর্যায়ে নিচে উল্লেখিত ইসলামের ইতিহাসের কিছু প্রাসঙ্গিক তারিখ আমাদের মনে রাখা জরুরি। সেগুলো হলোÑ
# পূর্বÑ৬১০ খ্রিস্টাব্দ : জাহেলিয়া (ইসলামপূর্ব যুগ) ওহী আসার পূর্ব পর্যন্ত
# ৬১০ খ্রিস্টাব্দ : প্রথম ওহী
# ৬১০ খ্রিস্টাব্দ : আবু বকরের ইসলাম গ্রহণ
# ৬১৩ খ্রিস্টাব্দ : নবীর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু
# ৬১৫ খ্রিস্টাব্দ : আবিসিনিয়ায় গমণ
# ৬১৬ খ্রিস্টাব্দ : ওমর বিন আল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ
# ৬২০ খ্রিস্টাব্দ : সাধারণভাবে মনে করা হয় নবী ও আয়েশার বিয়ে
# ৬২২ খ্রিস্টাব্দ : হিজরত (ইয়াসরিবে গমন, পরে এই শহরের নামকরণ হয় মদিনা)
# ৬২৩/৬২৪ খ্রিস্টাব্দ : সাধারণভাবে মনে করা হয় নবী ও আয়েশা একত্রেবাস শুরু করেন

প্রমাণ # ২: বিবাহ
তাবারি’র মতে, (হিশাম ইবনে হুরাওয়াহ, ইবনে হানবাল এবং ইবনে সাদ-এর মতেও) আয়েশার বিয়ে হয় তাঁর সাত বছর বয়সে এবং নবীর সঙ্গে একত্রে বসবাস শুরু করেন নয় বছর বয়সে।
অন্যএক স্থানে আল-তাবারি উল্লেখ করেন, “ইসলামপূর্ব যুগে দুই স্ত্রীর ঔরসে তাঁর (আবু বকরের) চার সন্তানের জন্ম হয়।”৫ যদি আয়েশার বিয়ে হয় ৬২০ খ্রিস্টাব্দে সাত বছর বয়সে এবং নবীর সঙ্গে একত্রে বসবাস শুরু হয় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে নয় বছর বয়সে, তাহলে আয়েশার জন্ম হয় ৬১৩ খ্রিস্টাব্দে এবং নয় বছর বয়সে তিনি নবীর সঙ্গে একত্রে থাকতে শুরু করেন বলে প্রতীয়ামান হয়। অতএব, আল-তাবারির একটি বর্ণনার ভিত্তিতে সাল ও তারিখগুলো প্রমাণ করে যে, আয়েশার জন্ম হয়েছে অবশ্যই ৬১৩ খ্রিস্টাব্দে, নবীর কাছে ওহী (৬১০ খ্রিস্টাব্দ) আসার ৩ বছর পর। তাবারি আরও বর্ণনা দিয়েছে যে, আয়েশার জন্ম হয় ইসলামপূর্ব আমলে জাহেলিয়া যুগে। যদি তাঁর জন্ম হয় ৬১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, তাহলে নবীর সঙ্গে একত্রে থাকতে শুরু করেন তিনি যখন কমপক্ষে ১৪ বছর বয়সে উপনীত হন। এখানে দেখা যাচ্ছে, তাবারির বর্ণনা পরস্পর বিরোধী। তাহলে আমরা বলতে পারি বিয়ের সময় আয়েশার বয়স নিয়ে আল-তাবারি যে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রমাণ # ৩ : ফাতিমার তুলনায় আয়েশার বয়স
ইবনে হজর-এর মতে, কাবা শরিফ পুনরায় তৈরি করার সময় ফাতিমার জন্ম হয়। তখন নবীর বয়স ছিল ৩৫ বছর। ফাতেমা আয়েশার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়।৬ ইবনে হজরের তথ্য যদি সঠিক হয় তাহলে নবীর বয়স যখন ৪০ বছর তখন আয়েশার জন্ম হয়। আয়েশা যদি নবীকে তাঁর (নবী) ৫২ বছর বয়সে বিয়ে করেন, তাহলে বিয়ের সময় আয়েশার বয়স হবে ১২ বছর। উপসংহারে এটাই বলা যায় যে, ইবনে হজর, তাবারি, ইবনে হিশাম ও ইবনে হাম্বল আয়েশার বিয়ের সময়ের বয়স নিয়ে যেসব তথ্য দিয়েছেন তা পরস্পর বিরোধী ও অসংগতিপূর্ণ। সুতরাং সাত বছর বয়সে আয়েশার বিয়ে হয়েছে বলে প্রচারণা চলছে তা অলিক বৈ অন্য কিছু নয়।
প্রমাণ # ৪ : আসমার বয়সের তুলনায় আয়েশার বয়স
আবদা’ল রহমান ইবনে আবি জাননাদ-এর মতে, “আসমা আয়েশার চেয়ে ১০ বছরের বড়।”৭ ইবনে কাছিরের মতে, “সে (আসমা) তার বোনের (আয়েশা) তুলনায় ১০ বছরের বড়।”৮ ইবনে কাছির আরও বলেন, সে (আসমা) তার ছেলের হত্যাকান্ড দেখেছে (৭৩ হিজরি)। এই হত্যাকান্ডের পাঁচ বছর পর তার ইন্তেকাল হয়। অন্য বর্ণনাকারীদের মতে, আসমা তার সন্তানের হত্যাকান্ডের পাঁচ বছর পর মারা যাননি, বরং ১০, ২০ এবং এরও অধিক কিংবা ১০০ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বর্ণনা হলো এটাই যে, সন্তানের হত্যাঘটনার ১০ দিন পর মা আসমার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।৯
ইবনে হজর আল-আসকালানির মতে, তিনি (আসমা) ১০০ বছর বেঁচেছিলেন এবং তার ইন্তেকাল হয় ৭৩ অথবা ৭৪ হিজরিতে।”১০
মোটের ওপর সকল ইতিহাসবিদের মত্ই হলো আসমা তার ছোট বোন আয়েশার চেয়ে ১০ বছরের বড়। আসমার যদি ৭৩ হিজরিতে ১০০ বছর হয় তাহলে হিজরতের সময় তার ২৭ কিংবা ২৮ বছর হওয়া উচিত। এই যুক্তিতে হিজরতের সময় আয়েশার বয়স হওয়া উচিত ১৭ কিংবা ১৮ বছর। হিজরতের সময় আয়েশার ওই রকম বয়স হলে নবীর সঙ্গে তিনি একত্রে থাকতে শুরু করেন ১৯ কিংবা ২০ বছর বয়সের কোন এক সময়ে।
গুতরাং হজর, ইবনে কাছির এবং আবদা’ল রহমান ইবনে আবি জাননাদ-এর মতামত অনুযায়ী নবীর সঙ্গে একত্রে বাস শুরু করার সময় আয়েশার বয়স হবে ১৯ কিংবা ২০। প্রমাণ # ৩ অনুযায়ী ইবনে হজর বলেছিলেন, বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ছিল ১২ এবং প্রমাণ # ৪ অনুযায়ী বিয়ের সময় আয়েশার বয়স যদি হয় ১৭ কিংবা ১৮ তাহলে তার বর্ণনা পরস্পর বিরোধী। তাহলে বিয়ের সময় আয়েশার সঠিক বয়স কোনটি ১২ না ১৮? সুতরাং বলা চলে, আয়েশার বয়স সম্পর্কে যেসব বর্ণনা দিয়েছেন, তার উৎস হিসেবে ইবনে হজর অগ্রহণযোগ্য।
প্রমাণ # ৫ : বদর ও ওহুদ যুদ্ধ
পবিত্র হাদিসের সুবিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিম শরিফে বদর যুদ্ধে আয়েশার অংশগ্রহণ সম্পর্কিত একটি বর্ণনা পাওয়া যায় (করঃধনঁ’ষ-লরযধফ ধি’ষ-ংরুধৎ, ইধন কধৎধযঃরুধঃর’ষ-রংঃর’ ধহধয ভর’ষ-মযধুধরি নরশধভরৎ)। আয়েশা যখন বদর যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করছিলেন এবং পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, “আমরা যখন শাজাবাহ পৌঁছলাম।” স্পষ্টত একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে আয়েশা বদর যুদ্ধে যাচ্ছিলেন।
অন্যদিকে হাদিসের প্রধানতম গ্রন্থ বুখারি শরিফে ওহুদ যুদ্ধে আয়েশার অংশগ্রহণ সম্পর্কিত বর্ণনা স্থান পেয়েছে (করঃধনঁ’ষ-লরযধফ ধি’ষ-ংরুধৎ, ইধন এযধুরি’ষ-হরংধ’ ধি য়রঃধষরযরহহধ সধ’ধ’ষৎরলধ’ষ) । এখানে বলা হয়েছে, “আনাস ওহুদ যুুদ্ধের বর্ণনা করছিলেন এভাবে, ওহুদের (যুদ্ধের) দিন লোকেরা নবীকে ফেলে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলো এবং সেখানে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ল। তখন আমি দেখলাম, আয়েশা ও উম্মে সুলাইম তাদের পরিধেয় বন্ত্রের নিম্ন প্রান্ত টেনে ধরেছে, যেজন্য তাদের পায়ের গোছা আমার দৃষ্টিগোছর হ্িচ্ছল।” এ থেকে বুঝা যায় যে, আয়েশা বদর ও ওহুদ উভয় যুদ্ধেই উপস্থিত ছিলেন।
বুখারি শরিফের (করঃধনঁ’ষ-সধমযধুর, ইধন এযধুধিঃর’ষ-কযধহফধয় ধি যরুধষ-ধুলধ’ন) এক বর্ণনায় রয়েছে যে, ইবন ওমর বলেছেন যে, নবী আমাকে ওহুদ যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দেননি। ওই সময় আমার বয়স ছিল ১৪ বছর। কিন্তু খন্দকের যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তখন আমার বয়স হয়েছিল ১৫ বছর। উপরিউক্ত বর্ণনায় দেখা যায়, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম তাদের তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি না দিয়ে বরং ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু আয়েশা বদর ও ওহুদ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সুতরাং এ থেকে প্রতীয়মান হয়, তখন আয়েশার বয়স নয় ছিল না, কমপক্ষে ১৫ বছর তো ছিলই। সর্বোপরি যুদ্ধ ময়দানে মহিলারা সাহায্য করার জন্য পুরুষদের সাহচর্য দিত, তাদের বোঝা হত না। এই বিষয়টি আয়েশার বিয়ের সময়ের বয়স নিয়ে আরও একটি বিরোধিতা তৈরি করল।
প্রমাণ # ৬ : সুরা আল ক্বামার (চাঁদ)
সাধারণভাবে মনে করা হয় আয়েশা হিজরতের প্রায় আট বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বুখারি শরিফে অন্য এক বর্ণনাকারীর মতে, আয়েশা বলেছিলেন, “সুরা আল ক্বামার নাজিল হওয়ার সময় আমি তরুণি ছিলাম (আরবিতে তরুণিকে জারিয়াহ বলা হয়)।”১১ পবিত্র কোরআন শরিফের ৫৪ পরিচ্ছেদ হিজরতের আট বছর পূর্বে নাজিল হয়েছিল।১২ তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সুরাটি নাজিল হয়েছিল ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে। ৬২৩ কিংবা ৬২৪ সালে ৯ বছর বয়সে আয়েশা যদি নবীর সঙ্গে একত্রে থাকা শুরু করেন তাহলে সুরা আল ক্বামার নাজিল হওয়ার সময় সে নতুন জন্ম নেয়া শিশু মাত্র (আরবিতে নতুন জন্ম নেয়া শিশুকে সিবাইয়াহ বলা হয়)। উপরিউক্ত জনবিশ্বাস মতে, সুরা আল ক্বামার নাজিল হওয়ার সময় আয়েশা সত্যিকার অর্থে তরুণিই ছিলেন, শিশু নয়। আরবি শব্দ ‘জারিয়াহ’র অর্থ হচ্ছে খেলাধূলা করতে পারে এমন তরুণি (খধহব’ং অৎধনরপ ঊহমষরংয খবীরপড়হ)। সুতরাং সুরা আল ক্বামার নাজিল হওয়ার সময় আয়েশার বয়স হতে হবে ৬ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। অতএব, নবীকে বিয়ে করার সময় আয়েশার বয়স থাকতে হবে ১৪ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। এই জনবিশ্বাস আয়েশার ৯ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার বিষয়টিকে অসংগতি করে তুললো।
প্রমাণ # ৭ : আরবীয় পরিভাষা
ইবনে হানবল-এর এক বর্ণনা মতে, প্রথম স্ত্রী খাদিজার ইন্তেকালের পর খাউলা নামের এক মহিলা নবীকে আরেকটি বিয়ের কথা বলল। নবী তার কোন পছন্দ আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে মহিলা উত্তর দিল, তুমি কোন কুমারি (বিকর) কন্যাকে কিংবা বিয়ে হয়েছিল এমন কোন মহিলাকে (থাইয়িব) বিয়ে কর।” কুমারি কন্যার পরিচয় জানতে চাইলে নবীকে মহিলা আয়েশার নাম বলল।
আরবি ভাষা সম্পর্কে যারা অবগত আছেন, তারা জানেন যে, আরবি শব্দ ‘বিকর’ কোন ৯ বছরের অপরিপক্ক মেয়ের বেলায় ব্যবহার হয় না। ক্রীড়নশীল তরুণি মেয়েকে বুঝাতে আরবি ভাষায় যে সঠিক শব্দটি ব্যবহৃত হয়Ñযা ইতোমধ্যেই আমরা উল্লেখ করেছি, তা হচ্ছে ‘জারিয়াহ’। অন্যদিকে আরবি ভাষায় ‘বিকর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় অবিবাহিত মহিলাদের বেলায় যারা বিয়ের আগে দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেনি; ঠিক ইংরেজি ভাষায় ভার্জিন শব্দটি দিয়ে আমরা তাই বুঝে থাকি। অতএব, স্পষ্টত ৯ বছরের একটি বালিকা মহিলা নয় (বিকর)।১৩
উপসংহারে বলা যায় যে, উপরে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী ‘বিকর’ (ভার্জিন) শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে বিয়ের আগে কোন ধরনের যৌন অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়নি এমন পরিপক্ক মহিলা। অতএব, আয়েশা তার বিয়ের সময় ছিলেন একজন পরিপক্ক মহিলা।
প্রমাণ # ৮ : আল কোরআনের ভাষ্য
আল কোরআন হচ্ছে পথপ্রদর্শনকারী একটি গ্রন্থ-এ ব্যাপারে সকল মুসলমানই একমত। সুতরাং বিয়ের সময় আয়েশার বয়স নিয়ে ইসলামের প্রথমদিকের গন্যমান্য ব্যক্তিরা যে সন্দেহ ও ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছিলেন, তা পরিষ্কার করতে আমরা এখন আল কোরআনের পথনির্দেশ চাইব। কোরআন কী সাত বছরের একটি অপরিপক্ক বালিকার বিয়ে অনুমোদন করে, না করে না?
কোরআনে এমন কোন আয়াত নেই যা পরিষ্কারভাবে এ ধরনের বিয়েকে অনুমোদন করে। এক আয়াত আছে যা এতিম বাচ্চাদেল লালন-পালনের কর্তব্য সম্পর্কে মুসলমানদের পথনির্দেশ দেয়। এতিমদের লালন-পালনে কোরআনের পথনির্দেশ আমাদের নিজেদের সন্তানাদির লালন-পালনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আয়াতে বলা হয়েছে, আর যে সম্পদ আল্লাহ তোমাদের জীবনযাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অল্প বুদ্ধিসম্পন্নদের (বালেগ এতিম) হাতে তুলে দিও না। বরং তা থেকে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং উপযুক্ত শিক্ষা দাও। তারা তাদের বিয়ের বয়স পর্যন্ত না পৌঁছা পর্যন্ত তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কর। পরে যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাও, তাহলে তাদের ধনসম্পদ তাদের কাছে সমর্পন করে দাও (আন নিসা, আয়াত নং ৫ ও ৬)।
উপরের আয়াতে মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, এতিমদের প্রথমত. খাওয়াতে দ্বিতীয়ত. কাপড়চোপড় পরাতে তৃতীয়ত. শিক্ষা দিতে এবং শেষত. আর্থিক বিষয়াদির ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে তাদের ওপর ভরসা করার আগে তাদের পরিপক্কতা জন্য তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যতদিন না তারা বিয়ের বয়স অবধি পৌঁছায়।
এখানে কোরআনের আয়াতের দাবি হচ্ছে, বিয়ের বয়স হওয়ার পূর্বেই বস্তুনিষ্ঠ যাছাইবাছাইয়ের মাধ্যমে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরীক পরিপক্কতার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রমাণ নেওয়া; যাতে তাদের সম্পত্তি তাদের কাছে হস্তান্তর করা যাবেÑএমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন হয়।
উপর্যুক্ত আয়াতগুলোর আলোকে দিবালোকের মতই সুষ্পষ্ট যে, কোন দায়িত্ববান মুসলমানকেই পাওয়া যাবে না যিনি সাত কিংবা নয় বছর বয়সের অপরিপক্ক মেয়ের হাতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর করতে চাইবেন। যদি আমরা আর্থিক বিষয়াদির ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সাত বছরের মেয়েকে বিশ্বাস করতে না পারি, তাহলে সেই মেয়ে বিয়ের জন্য শারীরীক ও মানসিক দিক থেকেও উপযুক্ত হতে পারে না। ইবনে হাম্বল (গঁংহধফ, অযসধফ ওনহ ঐধসনধষ, াড়ষ. ৬, ঢ়. ৩৩ ্ ৯৯) দাবি করেন যে, নয় বছর বয়সের আয়েশার একজন স্ত্রীর দায়িত্বপূর্ণ কাজ করার চেয়ে বরং খেলনা নিয়ে আমোদপ্রমোদে ব্যস্ত থাকায় পছন্দ ছিল। মুসলমানদের মধ্যে মহান বিশ্বাসী আবুবকর তাঁর সাত বছর বয়সের অপরিপক্ক কন্যাকে একজন ৫০ বছর বয়সের নবীর সঙ্গে বিয়ে দেবেন তা বিশ্বাস করা কঠিন। একইভাবে একজন নবী সাতবছরের অপরিপক্ক মেয়েকে বিয়ে করবেন-তাও ধারণা করা কঠিন।
সন্তানদের অভিভাবকদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে সন্তানদের তারা শিক্ষা দেবে। আসুন আমরা প্রশ্ন করি, “আমাদের কতজন বিশ্বাস করি যে, সাত অথবা নয় বছর বয়সে পৌঁছার আগে আমরা আমাদের সন্তানদের সন্তোষজনকভাবে শিক্ষিত করতে পারি।” উত্তর হচ্ছে একজনকেও না। যৌক্তিকভাবে বলা যায় সাত বছর বয়সে পৌঁছার আগে একটি শিশুকে সন্তোষজনকভাবে শিক্ষা দেয়া অসম্ভব কাজ । তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব যে, আয়েশা তার বিয়ের সময় দাবিকৃত সাত বছর বয়সে সন্তোষজনকভাবেই শিক্ষিত ছিল?
আবুবকর আমাদের সকলের চেয়ে বেশি বিচক্ষণ ছিলেন। সেজন্য তিনি নির্দিষ্টভাবেই সাব্যস্ত করতে পারতেন যে, আয়েশা প্রকৃতই শিশু ছিল এবং কোরআনের দাবি অনুযায়ী শিক্ষিত ছিল না। তিনি কারও সঙ্গে তার মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। অপরিপক্ক ও শিক্ষায়রত সাত বছরের আয়েশার বিয়ের প্রস্তাব যদি নবীর কাছে দেওয়া হত তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতেন, কারণ নবী কিংবা আবুবকর দু’জনের কেউই কোরআনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করবেন না।
উপসংহারে বলা যায়, সাত বছর বয়সে আয়েশার বিয়ে হওয়া কোরআনে বিয়ে করার জন্য যে পরিপক্কতা অর্জনের আইন-বিধি রয়েছে, তার লঙ্ঘন হত। অতএব, সাত বছরের অপরিপক্ক আয়েশার বিয়ের গল্প হচ্ছে অলিক কল্পনা।
প্রমাণ # ৯ : বিয়েতে সম্মতি
বিবাহের বৈধতার জন্য মহিলাদের অবশ্যই বিয়ে নিয়ে পরামর্শ করতে হবে এবং বিয়েতে রাজী হতে হবে।১৪ ইসলামী মতে, বিবাহ বৈধ হওয়ার একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে যে মহিলার বিয়ে হবে বিয়ের আগে তার বিশ্বাসযোগ্য অনুমতির প্রয়োজন হবে। অলিক কল্পনার অতিরঞ্জনের মাধ্যমে একটি সাতবছর বয়সের অপরিপক্ক মেয়ের পক্ষে সম্মতি দেয়া একটি বিয়ের জন্য বৈধ অনুমোদন হতে পারে না। আর আবুবকরের মতো একজন কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ৫০ বছর বয়সের ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য সত্যি সত্যি সাত বছরের বালিকার অনুমতি নিবেনÑতা ধারণাতীত। একইভাবে নবী কোনভাবেই বিয়ের জন্য এমন এক মেয়ের অনুমতি মেনে নেবেন না যে কিনাÑমুসলিম শরিফের হাদিস অনুযায়ী, নবীর সঙ্গে থাকার জন্য সে তার খেলনাগুলোও তার সঙ্গে নিয়েছিল।
তাহলে বলা যায়, নবী আয়েশার মতো একজন সাত বছর বয়সের মেয়েকে বিয়ে করেননি। কারণ, এই বিয়ে ইসলামের বিবাহের বৈধ সম্মতি সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে, তা বরখেলাপ করা হবে। অতএব, নবী শারীরীক ও মানসিকভাবে পরিপক্ক আয়েশাকেই বিয়ে করেছিলে।
উপসংহার
কোন মেয়েকে সাত বা নয় বছর বয়সে বিয়ে দেয়া না আরব রীতি, আর না এমন বয়সে আয়েশাকে নবী বিয়ে করেছিলেন। আরবের লোকেরা এই বিয়েতে কোনো আপত্তি করেনি; কেননা, যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সেইভাবে এই বিয়ে হয়নি।
স্পষ্টতঃ হিশাম ইবন ওরওয়াহ নয় বছরের আয়েশার বিয়ে সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা সত্য হতে পারে না। কেননা, অন্য বর্ণনাকারীগণ বিয়ে নিয়ে যা বলেছেন, তা ওই বর্ণনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ । অধিকন্তু হিশাম ইবন ওরওয়াহ’র বর্ণনা সত্য হিসেবে মেনে নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না, যখন মালিক ইবন আনাসসহ অন্য পণ্ডিতদের মত হচ্ছে, তার (হিশাম) ইরাকে থাকাকালীন বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাবারির উদ্ধৃতিসমূহ ও বিখ্যাত দু’টি হাদিস গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিম শরিফ দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিয়ের সময়ে আয়েশার বয়স নিয়ে তাদের নিজেদের বর্ণনা অসংগতিতে ভরপুর। আরও দেখা যায়, এই পণ্ডিতদের অনেকেই তাদের নিজেদের দেয়া পূর্বের বর্ণনার বিপরীত বর্ণনাও দিয়েছেন। এইজন্য বিয়ের সময়ে আয়েশার বয়স সম্পর্কে যেসব বর্ণনা আছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, ইসলামের প্রথম যুগের পণ্ডিতদের মধ্যে এ নিয়ে পরিষ্কার মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়।
অতএব, আয়েশার বিয়ের বয়সের তথ্যকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই, কেননা, এই তথ্যকে অলিককল্পনা হিসেবে বাতিল করে দেয়ার যথেষ্ট ভিত্তিও রয়েছে। অধিকন্তু কোরআন অপরিপক্ক ছেলে-মেয়ের বিয়ে এবং একই সঙ্গে তাদের ওপর কোন দায়িত্ব অর্পন করতে দিতে আপত্তি দিয়েছে।
তথ্যসূত্র
1. Women in Muslim Family Law, John Esposito, 1982
2. Tehji’bu’l-tehji’b, Ibn Hajar al-‘asqala’ni, Dar Ihya al-turath al-islami, 15th century, Vol. 11, p. 50
3. Tehji’bu’l-tehji’b, Ibn Hajar al-‘asqala’ni, Dar Ihya al-turath al-islami, 15th century, Vol. 11, p. 50
4. Mizanu’l-ai’ tidal, Al-Zahbi, Al-Maktabatu’l-athriyyah, Sheikhupura, Pakistan, Vol. 4, p. 301
5. Tariqu’l-umam wa’l-mamlu’k, Al-Tabari (died 922), vol. 4, p. 50, Arabic, Dara’l-fikr, Beirut, 1979
6. Al-isabah fi tamyizi’l-sahabah, Ibn Hajar al-Asqalani, vol. 4, p. 377, Maktabatu’l-Riyadh al-haditha, al-Riyadh, 1978
7. Siyar A la’ma’l-nubala’, Al-zahabi, vol. 2, p. 289, Arabic, Mu’assatu’l-risalah, Beirut, 1992
8. Al-bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir,vol. 8, p. 371 Dar al-fikr al-arabi, al-zijah, 1933
9. Al-bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir,vol. 8, p. 372 Dar al-fikr al-arabi, al-zijah, 1933
10. Taqribu’l-tehjib, Ibn Hajar Ai-Asqalani, p. 654, Arabic, Bab fi’l-nisa’, al-harfu’l-alif, Lucknow
11. Sahih Bukhari, Kitabu’l-tafsir, Bab Qaulihi Bal al-sa’tatu, Maw’ iduhum wa’l-sa’atu adha’ wa amarr
12. The Bounteous kuran, M. M. Khatib, 1985
13. Musnad Ahmad Ibn Hanbal, Vol. 6, p. 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al-arabi, Beirut.
14. Mishakat al Masabiah, translation by James Robson, Vol. 1, p. 665

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.