![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক পথ হাটঁতে হাটঁতে খিদের জ্বালায় রাকিবের পেট চু চু করছে। পেটের খুদায় কোন জায়গায় খাবার না পেয়ে ছুটে দৌড়ের এসেছে একটি নদীর ধারে। রাকিব কেঁদে কেঁদে বলছে মাগো তুমি কোথায় আমার খুব খিদে পেয়েছে গো মা, আমি আর পারছিনা টিকে থাকতে।
.
.
রাকিব অনেকটাই ভ্রান্তিক জগতে চলে যায়। রাকিব দেকছে তার মা তাকে আদর করে পানি খাওয়াচ্ছে। আসলে রাকিব নিজ থেকেই নদীর পানি পান করে। আর সেই পানি খেয়ে সে অনেকটাই শান্ত হয়।
.
.
রাকিব এখনো অনেক ছোট ও অবুজ। সে এখনো ভালো করে কিছু বুজতে শিখেনি, বাস্তবতা, সমাজ, ও জীবন কি? যখন সন্ধ্যা গড়িয়ে আসে তখন নদীর পাশে একটি গাছের নিচে এসে মায়ের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। তার যেন ঘুম ভাঙে তার মা'র ডাকে, উঠে দেখে কেউ নেই। তখন পেটের খিদের জ্বালায় ছুটে রাস্তার দোকান-পাট ও খাবারের দোকানে। কখনো কারো কাছে হাত পেতে, আবার কখনো কারো কাছে পায়ে ধরে খাবার ভিক্ষে চায়। অনেকেই দুর দুর করে ফিরিয়ে দেয়, আবার অনেকেই শুধু কাজ করে খাবার জন্যে বলে অথচ কেউ কাজ দেয় না। কখনো কখনো রাকিব খিদের জ্বালায় ডার্স্টবিনে ফেলে দেওয়া নস্ট খাবার গুলো খুঁজে খুজে খেত, আর তার সাথে সঙ্গী হত কিছু কুকুর ও বেড়াল।
.
.
রাকিবের বাবা অনেক আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। তবে রাকিবের মা ছেলে কে নিয়ে টিকে থাকার জন্যে নিজেদের ঘরের জমিতে চাষ করতো, বাড়ি আঙিনায় সবজি চাষ ও হাস মুরগি পালন করে সেসব বিক্রি করে ভালই চলতো।
.
.
সব কিছুই ভাল ছিল কিন্তু ভাল ছিল না কিছু সমাজের লোকেরা। রাকিবের মা' একটু দেকতে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হওয়ায় গ্রামের কিছু গণ্যমান্য লোকের চোখে পরে যায়। সেই লোকের রাকিবের মা'কে দেখে কুকুরে মত তাদের জ্বিব্বাহ লালসার পানি ঝরাতো। তারা চেস্টা করে রাকিবের মা'কে তাদের সাথে পরকীয়া করার জন্যে, অনেক লোভ দেখানোও হয়। কিন্তু বার বার ফিরিয়ে দেবার ক্ষোভে, একদিন এক ভোর রাতে তাদের ঘরে কয়েকজন ডুকে কুকুকের মত যেন রাকিবের মা'কে কামড়াতে লাগলো তাও আবার তার সেই ছোট অবুজ ছেলেটির সামনে।
.
.
এক পর্যায়ে রাকিবের মা অজ্ঞান হয়ে যায়। সেই সব কুকুরেরা তাদের জ্বালা মিটিয়ে চলে যায়। যখন একটু সকালের আলো উঠতে শুরু করলো তখন রাকিবের মা'র জ্ঞান ফিরে দেখে তার শরীরের কাপড় নেই তার ছেলে তাকে হাউ মাউ করে শুধু মাগো মাগো বলে ডাকছে। এতো বড় লজ্জা ও আঘাত না সইতে পেরে রাকিবের মা ছুটতে থাকে বাহিরের দিকে আর রাকিবও মা'র পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে মাগো মাগো বলে।
.
.
কিছু দুর গিয়ে রাকিবে মা নদীতে ঝাপ দিয়ে মারা যায়। রাকিব সেই দৃশ্যটি দেখেছে। নদীর ধারে দাড়িয়ে শুধু মাকেই ডাকছে। সে এখনো ভাল করে জানে না তার আম্মুর কি হয়েছে, কোথায় গেছে তার আম্মু। রাকিবের আম্মু ছাড়া কেউ নেই। রাকিব সেই নদীর ধারে শুধু মাকে ডাকে, তার বিশ্বাস তার আম্মু তার কাছে ফিরে আসবে।
.
.
সমাজের কিছু লোকই কিছু অসহায় পরিবারের উপর আঘাত হানে আবার তারাই দিনের আলোতে সবার সামনে জনদরদি ও ভাল লোক সাজে। এভাবে অনেক পরিবার ভেঙে চূরে যাচ্ছে আর আমরাই তখন বলি রাকিবের মা হয়তো আসলেই খারাপ ছিল।
.
.
আম্মু আসবে, আম্মু হয়তো আমার উপর রাগ করে লুকোচুরি খেলছে। ও আম্মু আমি কথা দিচ্ছি আমি দুস্টুমি করবো না, তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই আম্মু। তুমি কখন আসবে, চলে আসোনা আম্মু। এমন হয়তো অনেক রাকিব তার আম্মুর অপেক্ষায় ঘুমিয়ে যায় গাছের নিচে। আজ সেই নিস্পাপ অবুজ শিশুটির দিকে তাকানোর দিকে নেই। আর কিছু না হলেও কেউ কি পারবে তাকে বুঝাতে তার মা আসলে কোথায়, কি হয়েছে।
.
সমাজ থাকবে আজীবন অন্ধ, থাকবে নিস্তব্ধ। শত শত রাকিব তার আম্মুর জন্যে করবে অপেক্ষা।
©somewhere in net ltd.