নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমরা মৃত। যে মানবের মধ্যে বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব, মানবতা বলে কিছু থাকে না, আমাদের মধ্যে ভাল মানুটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখি, প্রকৃত। মানুষের যে গুন গুলো থাকার কথা সেগুলা যদি আমাদের মধ্যে বহমান না থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই জীবত থেকে মৃত। মানুষ হয়ে যেমন জন্ম নিলে

Msd Sagor

Msd Sagor › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিসমাপ্তি ঘটবে তবু মানুষ বদলাবে না........

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:১৫

রাস্তার ধারে ছোট একটা চায়ের দোকানে বসে বন্ধুরা মিলে চায়ের আড্ডা হচ্ছিলো। কয়েকজনের মাঝে রাহির চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরা রাহিকে বলছিল কিরে রাহি সারাদিন শুধু মোবাইলে ফেইসবুক নিয়েই থাকিস, তোর চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, চা খাবি না?
.
রাহি উত্তর দিল আরে পাগল হচ্ছিস কেনো, আমি তো চা ঠান্ডা করেই খাই।
.
বন্ধুরা হেসে হেসে বললো তাহলে তুই এক কাজ করিস তর বাসর রাত যেদিন হবে তুই দুইদিন পর বাসর করবি। এই বলে সবাই হাসতে শুরু করলো।
.
.
রাহি এক হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটি হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিল। সে কিছুটা শুনতে পেলো কেউ তাদের বলছে ভাইয়া আমার ঘরে আম্মু অনেক অসুস্থ, আমরা দুদিন ধরে কিছু খেতে পারছিনা, আমাকে আপনারা কিছু খাবার দিন না দোয়া করে।
.
রাহির বন্ধুরা ছেলেটিকে অনেকটাই ধমকের সুরে বলতে লাগলো, কোথাও কাজ করে খেতে পারিস না, ভিক্ষে করিস কেন?
.
.
রাহি তাদের বন্ধুদের কথা শুনে মোবাইল কিছুটা সময়ের জন্যে অফ করে খেয়াল করে দেকলো। একটা ছোট ছেলে, গায়ে পড়া শুধু অনেক পুরাতন একটি হাফপেন্ট, মাথার চুল গুলো এলোমেলো, ছেলেটা এই প্রচন্ড রৌদে ঘুরতে ঘুরতে যেন গায়ের রং কালো হয়ে গেছে, শরীর দিয়ে শুধু ঘাম ঝরছে। এর একটা ছেলেকে দেখে রাহির বুকটা যেন কেমন করে উঠলো। রাহি বন্ধুদের কে বলো তোরা এভাবে বলছিস কেনো? ওর এই অবস্থায় কে ওকে কাজ দিবে?
বন্ধুরা তখন বললো - কাজ দিবে কিভাবে, সব জাগায় হতো চুরি চামারি করে।
রাহি বন্ধুদের কথায় কিছুটা কস্ট পেলো ও তাদেরকে চুপ থাকার জন্য বললো।
.
.
রাহি ছেলেটার কাছে গিয়ে তার সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলো। ছেলেটা তার আম্মুর অসুস্থের কথা খুলে বললো, ঘরে তার একটা ছোটও বোনও আছে। রাহি ছেলেটার বাসা কথায় জিজ্ঞেস করায় ছিলেটি বললো- ওই কিছু দুর গিয়ে একটা বস্তি আছে ওইখানেই আমরা থাকি। রাহি বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছেলেটির বাসায় দিকে রওনা হলো। বাসায় যাবার পর ছেলেটি ঘরে গিয়ে ডুকে ঘুমন্ত অবস্থায় মা'কে ডাকতে লাগলো (মা, মা, দেখো কে এসেছে) সাথে তার ছোট বোনটি মায়ের মাথার পাশে বসে আছে। ছেলেটির মা জেগে রাহির দিকে তাকিয়ে বলো- বাবা আমার ছেলেটা কি কিছু করেছে, যদি কিছু করে থাকে তাহলে ওকে মাপ করে দাও, ওর কোন দোষ নেই, সব দোষ আমার।
.
.
রাহি- না, খালাম্মা ও কিছু করেনি আসলে ওর মাধম্যে জানতে পারলাম আপনি খুব অসুস্থ তাই দেকতে এলাম।
ছেলেটির মা- বলো কি বাবা, তুমি আমাকে দেকতে এসেছো আমি আসলে বিশ্বাসই করতে পারছিনা। এই দুনিয়ায় আমাকে দেকবার জন্যে কেউ আছে কিনা আমার মনে হয়না।
রাহি- খালাম্মা এভাবে বলছেন কেনো যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ২৪৫ টাকা দিয়ে বললো এই নিন আপনারা আপাতত কিছু কিনে খেয়েন, আমি আবার কাল এসে আপনাকে দেখে যাবো। রাহি সব টাকা দিয়ে হেটে হেটে বাসায় ফিরলো।
.
.
পরের দিন সকালে রাহি কলেজের বাবার কাছ থেকে ভর্তির নিল, আজ ভর্তির শেষ তারিখ। বন্ধুদের সাথে রাস্তায় এক হবার পর রাহি সেই ছোট ছেলেটার কথা তাদের মধ্যে শেয়ার করলো। সেখান থেকে প্রথমে কয়েকজনকে নিয়ে বস্তিতে রওনা দিল। তারা ছেলেটির মায়ের অবস্থা দেখে তারপর কলেজে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছেলেটি ঘরে ডুকার পর তারা বুঝতে পারলো ছেলেটির মায়ের অবস্থা খুব খারাপ তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু সবাই চিন্তিত কি করবে, টাকা পয়সারও ব্যাপার আছে। ছেলেটি মায়ের অবস্থা দেখে রাহি কথা না বাড়িয়ে বন্ধুদের সাহায্যে হাসপাতালে নিয়ে গেলো এবং সেখানে তার নিজের ভর্তির টাকা ইনবেস্ট করলো।
.
.
ডাক্তার জানায় তার পেটের ডান সাইটে অনেক বড় টিউমার হয়েছে অপারেশন করা লাগবে, তার জন্যে অনেক রক্তের প্রয়োজন আর সেটা রাতের মধ্যেই লাগবে। রাহি আর সেদিন কলেজেই গেলো না। রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী অনেক জাগায় খুঁজতে বের হলো কিন্তু রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী কোথাও রক্ত মেলাতে পারলো না। কিছু পেরে না উঠতে পেরে রাহি ফেইসবুকে রক্তের জন্যে পোস্ট করে এবং সবাইকে বলে পোস্টটা শেয়ার ও কপি করার জন্যে। কিন্তু অনেকেই সেটা এড়িয়ে গেলো।
.
.
দুই একজন রক্ত দেবার আশ্বাস দেন। ঠিক তখনি কয়েকজন এসে পোস্টে আজে বাজে কমেন্ট করতে শুরু করলো। বলতে লাগলো- এইসব ধান্দাবাজী, হয়রানি করার জন্যে ইত্যাদি তাদেরকে কোন ভাবেই বুঝানো গেলো না। তাদের জন্যে যারা রক্ত দেবার জন্য আশ্বাস দিয়েছিল তারাও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
.
.
এক পর্যায়ে রাহি এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে কিছু করতে পারলো না। অনেক ক্লান্ত অবস্থায় রাহি কোন রকম হাসপাতালে পৌছাঁলো। রাহি কিছুটা শব্ধ শুনতে পেল বাচ্চাদের কান্নার। একটু এগিয়ে গিয়ে দেকলো ছেলে গুলো হাউ মাউ করে আম্মু, আম্মু, বলে কাঁদছে। তাদের কান্না দেখে হাসপাতালে অনেকেই চোখের পানি ধরে না রাখতে পেরে কাঁদছে।
.
.
রাহি তখন কাঁদো কাঁদো অবস্থায় ফেইসবুকে তার শেষ স্ট্যাটাস বলে একটা পোস্ট করলো-
আজ আকাশে কোন মেঘ ছিল না তাই আকাশ বৃষ্টি হয়ে কাদেঁনি তবে এই ছোট বাচ্চা গুলো আজ কেনো কাদঁলো? আকাশ তো অনেক বিশাল তবুও সে একা নয় তার মধ্যে অনেক কিছুর বহমান তবে এই বাচ্চাগুলো আজ কেউ নেই কেনো? হয়তো আমি ভর্তির টাকা না জমা দিতে পেরে আমার লাইফের এক বছর পিছিয়ে গেছি কিন্তু এই দেশ কঙ্লকিত হয়ে হাজারো বছর পিছিয়ে গেছে। আজ বাচ্চাগুলোর তাদের তাদের মা হারিয়েছে শুধু আমাদের জন্যে তবে কখনো হয়তো আমাদেরকেও এভাবে খুব আপনজকে হারাতে হবে। আজ বাচ্চা গুলোর চোখের পানি দেখার মত কেউ নেই, কিন্তু সেই চোখের পানি কোন এক সময় সমুদ্রের বন্যা হয়ে আমাদের অনেকেই ডুবিয়ে দেবে। আর এভাবেই হয়তো আমাদের দুনিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটবে, তবু মানুষ বদলাবে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩৫

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: দারুণ বলেছেন। সুন্দর পোস্ট।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৪২

Msd Sagor বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.