![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, সত্য তো সত্যই।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পূর্বপাড়া এলাকায় গতকাল সোমবার সকালে মোস্তফা ভুঁইয়া (৩৮) নামে এক শিক্ষক খুন হয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষায় নকলে বাধা দেওয়ায় রিয়াদ নামের এক পরীক্ষার্থী তাঁকে ছুরি মেরে হত্যা করে বলে শিক্ষকের পরিবার অভিযোগ করেছে।
মোস্তফা ভুঁইয়া দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আর রিয়াদ ওরিয়েন্টাল টেক্সটাইল মিল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। তার বাড়ি কেরানীগঞ্জের শুভাড্ডা ইউনিয়নের তেলঘাট এলাকায়।
চুনকুটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম ইলিয়াস হোসেন জানান, গত রোববার তাঁর বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে ৩১০ নম্বর কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষক মোস্তফা ভূঁইয়া। ওই কক্ষে নকল করার সময় রিয়াদকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তিনি। এরপর রিয়াদের পরীক্ষার খাতা নিয়ে তিনি প্রায় আধা ঘণ্টা রেখে দেন।
শিক্ষক মোস্তফা ভুঁইয়ার স্ত্রী লাকি বেগম জানান, গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর স্বামী বাসায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিছু শিক্ষার্থী ভেতরের কক্ষে অপেক্ষা করছিল। এ সময় বাসার কলবেল বেজে ওঠে। তখন তাঁর স্বামী দরজা খুলে দেন। তিনি স্বামীর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় কিশোর বয়সী একটি ছেলে প্যান্টের পকেট থেকে ছুরি বের করে মোস্তফার বুকে আঘাত করে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়।
ওই বাড়ির মালিক তাসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে শিক্ষক মোস্তফা পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। সকালে তাঁর স্ত্রীর চিৎকারে বাসা থেকে বের হয়ে দেখেন, সিঁড়ির কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন শিক্ষক মোস্তফা। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষক মোস্তফার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার দীঘলদি গ্রামে। তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।
শিক্ষক নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ স্থানীয় জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সকাল ১০টার দিকে তারা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের লিংক রোড চুনকুটিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় আশপাশের কয়েকটি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা বিক্ষোভে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেয় এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবুল মিয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ তুলে নেয়। আধা ঘণ্টা পর তারা আবার সড়কে বিক্ষোভ করতে থাকে। কদমতলী, হিজলতলায় ও চুনকুটিয়া সড়কে তারা বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। বেলা দুইটার দিকে আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে বেলা তিনটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে নিহত শিক্ষক মোস্তফা ভুঁইয়ার মরদেহ দেখতে যান। সেখানে তিনি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
দুপুরে নিহত শিক্ষকের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী আহাজারি করছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
গতকাল দুপুরে কালীগঞ্জের তেলঘাট এলাকায় রিয়াদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, তার বাবার নাম ইব্রাহিম। ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের সবাই আত্মগোপন করেছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘খুনিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের কয়েকটি দল রিয়াদের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে।
©somewhere in net ltd.