নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, সত্য সত্যই।

দেশ,জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার জয়গান গাই

সাগরের হাসি

সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, সত্য তো সত্যই।

সাগরের হাসি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি পোস্টমর্টেম। সত্যিই ভাবতে বাধ্য করে।

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:১৯

ভালবাসায় আবদ্ধ কত প্রেমিক তার প্রেমিকার কোমল হাত নিজের হাতে নিয়ে প্রায়ই বলে থাকে বলে, “তোমার জন্য আমি জীবন দিয়ে দিতে পারি”



বাস্তবিকপক্ষে কয়জন প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে রাজি আছে?



আমরা অনেক সময়ই মিছিল করে শ্লোগান দেই, “অমুক ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই”, “তমুক ভাই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে”



বাস্তবিকপক্ষে এদের মধ্যে কয়জন এই অমুক/তমুক ভাইয়ের জন্য জীবন দিয়ে দিতে প্রস্তুত আছে?



গত মঙ্গলবার বিএনপির ডাকা হরতালের দিন টিভিতে লাইভ বিএনপির মিছিল দেখছিলাম। হঠাৎ আশেপাশে কোথাও একটি গুলির শব্দ শোনা গেল। সাথে সাথে দেখলাম মিছিলের ব্যানার গুটিয়ে লোকগুলো দাঁড়িয়ে গেল। তারপর জনতার মধ্যে মিশে গেল। শেষ মিছিল। কোথায় গেল সেই শ্লোগান?



অথচ একজন মানুষের ফাঁসির রায় হয়েছে। এখনও ফাঁসি হয়ে যায় নাই। এখনও আপিল করার সুযোগ আছে। তারপরও শুরু হয়ে গেল দেশজুড়ে অরাজকতা। শুরু হল আন্দোলন। মিছিলে পুলিশের নির্বিচার গুলি সত্ত্বেও পিছু হঠতে তাঁরা নারাজ। ঘোষণা দিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিল রাস্তায়, ত্যাগ করল এই সুন্দর পৃথিবীকে চিরতরের জন্য। একজন দুইজন নয়। রাজনৈতিক মদদপুস্থ বিভিন্ন পত্রিকার হিসেবে সংখ্যায় বিভিন্ন রকম। প্রায় ৫০-১৫০ জন। বিভিন্ন এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শুনে মনে হয় সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। আহতদের মধ্য থেকে মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। চিরতরে পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েকশ। আর আহত/গুলিবিদ্ধ কয়েক হাজার। তবুও আন্দোলন থেমে যাওয়ার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। ভঙ্গ করছে ১৪৪ ধারা। আরও অনেক তরুন বুকের রক্ত দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মিছিলে আসছে।



একবারও কি আমরা ভেবে দেখি না এটা কিভাবে সম্ভব?

- এত মানুষ। সবার কি ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে? সেটা কখনও সম্ভব?

- এদেরকে টাকা দিয়ে মিছিলে আনা হয়েছে? টাকার বিনিময়ে তাঁরা জীবন দিয়ে দিচ্ছে?

- কেউ কি বলেছে যে সে জীবন দিলে বাংলাদেশ উন্নত হয়ে যাবে?

- শুধুই কি একজন দলীয় নেতার জন্য এভাবে দল বেঁধে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেওয়া?

- এই মৃত্যু কি তাদের পরিবার পরিজনের ভালবাসার চেয়ে উত্তম? কি টান তাদের বাবা-মা-ভাই-বোন-স্ত্রী-সন্তান থেকে আলাদা করে দিচ্ছে?

- নাকি শুধুই একজন মানুষের প্রতি ভালবাসা যাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে? এই ভালবাসার গভীরতা কত বেশি?



জীবনে এতোগুলো বছর পার করলাম। কই এমন তো কোন নেতা দেখলাম না যাকে নিয়ে এভাবে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে? কে আছে যে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে তার জন্য এভাবে উন্মাদনা সৃষ্টি হবে?

- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা?

- বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া?

- সাবেক রাষ্ট্রপ্রতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ?

- বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্ণধার তারেক রহমান?

- আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কর্ণধার সজীব ওয়াজেদ জয়?

- বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা?

- প্রজন্ম চত্বরের নেতা ডাঃ ইমরান এইচ সরকার?

- জামায়েত ইসলামীর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক গোলাম আজম?

- জামায়েত ইসলামীর বর্তমান সভাপতি মওলানা মতিউর রহমান নিজামি?

- প্রথম বাংলাদেশী নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহম্মদ ইউনুস?

- যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারাধীন আর কোন ব্যাক্তি?



কেউ না। ইনাদের কেউ হয়ত নিজের বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে তার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে।



অথচ রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় এই ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত। দেলোয়ার সিকদারের বিরুদ্ধে সকল যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের পর প্রসিকিউসন দাবি করছে দেলোয়ার শিকদার ওরফে দেলু রাজাকার এবং দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী একই ব্যক্তি।



আর আত্মত্যাগকারী পাগলপ্রায় এই মানুষ গুলোর বিবেচনায় তিনি নির্দোষ। অন্য একজন যুদ্ধাপরাধীর অপরাধগুলো নাকি তার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে। তাদের মতে পিরোজপুর জেলার চিলা গ্রামের সিকদার বাড়ির রসুল সিকদারের পুত্র দেলোয়ার সিকদার ওরফে দেলু রাজাকার এবং জিয়া নগর উপজেলার সাঈদখালী গ্রামের মাওলানা ইউসুফ সাঈদীর পুত্র দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী ভিন্ন ব্যক্তি।



দুই পক্ষই তাদের প্রমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। কখনও আদালতে, কখনও টিভিতে, কখনও পত্রিকায়, কখনও অনলাইন ব্লগ বা ফেসবুকে। দ্বিতীয়ও গ্রুপটির পক্ষ থেকে আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে দোষী-নির্দোষী বিবেচনার ভার আপনার উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।



এখন যদি প্রসিকিউশনের বক্তব্য সত্য হয়, আর সেই অনুসারে সাঈদীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। সেটা সরকারের বিরাট সাফল্য। আর যদি এই পাগলপ্রায় মানুষগুলোর কথা আসলেই সত্য হয়? তাহলে এত মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নেওয়া এই নিরাপরাধ ব্যক্তিকে জোর করে ফাঁসি দিলে এই মানুষগুলোর মনের অবস্থা কি হবে বুঝতে পারছেন? যদি তিনি নির্দোষ হয়ে থাকেন তাহলেও আপনি কি চাইবেন তাঁকে ফাঁসি দিতে?



ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি শুধু বলব কাউকে ভালবেসে এভাবে দল বেঁধে জীবন উৎসর্গ করা আমার কাছে সত্যিই নতুন। এরা তালেবান না। এরা আলকায়দা না। এরা হামাস না। পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষের করার প্রাতিষ্ঠানিক কোন ট্রেনিং তাদের নেই। শুধু মনের জোরে, ভালবাসার টানে এভাবেই প্রানের মায়া ত্যাগ?



সত্যিই আমি স্যালুট করি এই মানুষ গুলোকে।



Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.