![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, সত্য তো সত্যই।
ঘটনার আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়। ভবনটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কারখানা চালু না করার জন্য মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিল তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কিন্তু সে নিষেধ অমান্য করে কারখানা মালিকরা শুনলেন রানা প্লাজার মালিক মো. সোহেল রানার কথা। কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে শ্রমিকদের বাধ্য করেছিলেন কাজে যোগ দিতে। শ্রমিকদের বাসা থেকে ফোন করে মৃত্যুপুরীতে নিয়ে আসা হয়! বুধবার রানা প্লাজা ধসে পড়ে। হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছেই। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ২৫০ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আহত সহস্রাধিক লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত ছিল।
রানা প্লাজার মালিক সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহেল রানা সাভার পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। বাবা আব্দুল খালেক এক সময় কলু ছিলেন, সবাই তাকে খালেক কলু বলেই চিনতেন। এই সোহেল রানা তার বাবার তেলের ঘানিতে কাজ করতেন। পায়ে হেঁটে বোতলে সরিষার তেল বিক্রি করতেন। বাড়ি সাভারের বাজার রোডে। তাদের বাড়িটিকে এখনও কলুর বাড়ি হিসেবেই স্থানীয়রা চেনেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার জয়মন্টব গ্রামে।
এই দৃশ্যপট বদলে কলুর ছেলে রানা বনে যান কোটিপতি। বর্তমানে ৩০ বছর বয়সী এই যুবক পৌর এলাকায় রানা প্লাজা, বাটা ভবন ছাড়াও নামা বাজারে মিয়া অয়েল মিল নামে একটি তেল কারখানারও মালিক। এছাড়া ধামরাইয়ে এমএকে এবং মেসার্স আব্দুল খালেক নামে দুইটি ইটের ভাটা রয়েছে। সবই হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর।
সুত্র জানায়, ২০০৫ সালের শেষের দিকে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার মেয়ে মিতুকে বিয়ে করেন রানা। তাদের ঘরে দুইটি সন্তান রয়েছে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সোহেল রানা দ্বিতীয়। বড় বোন সুমি ও ছোট বোন সুফিয়া। স্থানীয় অধরচন্দ্র হাইস্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পাস করেছেন রানা। এরপর অভাবের তাড়নায় তার আর লেখাপড়া হয়নি। প্রথমে গরুর ঘানি থেকে একটি তেল তৈরির মেশিন বসান। গোলাপ ফুল মার্কা নামের সেই সরিষার তেল সরবরাহ করা হয় রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায়। সেই রানা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক!
একাধিক সূত্রে জানায়, ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে রানা স্থানীয় রবীন্দ্রনাথ সাহার জমি দখল করেন। সেখানে ডোবার ওপরে রানা প্লাজা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ওই বছরই। রবীন্দ্রনাথ সাহা আদালতে মামলা করলেও সে মামলা বেশি দূর এগোয়নি। একপর্যায়ে পাগল হয়ে যান রবীন্দ্রনাথ সাহা।
২০০৬ সালে পৌরসভা থেকে রানা প্লাজার পাঁচতলা ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয়। ২০১০ সালে মার্কেট উদ্বোধন করা হয় এবং ২০১২ সালে পৌরসভা থেকে আবার ১২ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়।
স্থানীয় যুবলীগের এক নেতা জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রানা ছাত্রলীগে যোগ দেয়। ১৯৯৮ সালে সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন ওই পদে ছিলেন।
২০১২ সালের শেষের দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদের অনুসারী ১৭২ সদস্য বিশিষ্ট সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় যা দেশের ইতিহাসে কোথাও নেই। এমনকি ওই কমিটিতে জেলা বা কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনও ছিল না। ওই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন রানা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাভারের অসংখ্য মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন রানা। স্থানীয় প্রশাসন তার খেলার পুতুল। এলাকায় তার রয়েছে বিশাল বাহিনী। এই বাহিনী সাভারের বেশির ভাগ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে।
২০০৮ সালে গাজী আব্দুল্লাহ নিহত, এর আগে রানার বোন সুফিয়ার স্বামী জাকিরকে হত্যা, ভিপি হেলাল গুম, স্থানীয় খোকন ও শিমুলকে ক্রসফায়ারসহ একাধিক হত্যাকাণ্ডে রানা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় কোন হত্যাকাণ্ডেই তার নাম উঠে আসেনি।
©somewhere in net ltd.