![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, সত্য তো সত্যই।
কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলের পানিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তাদের কাছে এখনও কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। তিস্তা ও যমুনাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এজন্য হুমকির মুখে রয়েছে তিস্তা ব্যারাজ। ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যায় পানি নিষ্কাশনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে পানিবন্দি মানুষ। ব্যুরো অফিস ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরÑ
লালমনিরহাট : বুধবার দুপুরে তিস্তার পানি ফের বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানির তোড়ে তিস্তা ব্যারাজের সবক’টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের উপ-সহকারি উপ-প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন মÐল জানান, ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানির কারণে ৫৬টি চরের ২ লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট পাউবো আরও জানায়, খরা মৌসুমে ব্যারাজের ভাটিতে বাইশপুকুর এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর ডান চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়ায় চরের মানুষ আরও বেশি বিপাকে পড়েছে। ডুবে গেছে ৫৬ চরের লক্ষাধিক পরিবার। এসব এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে ভারি বর্ষণের সঙ্গে বজ্রপাতে লালমনিরহাটের মৌজা শাখাতি গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ইমরান (২৩) এবং জোংড়া গ্রামে রসুল (৫৪) নামের দুই ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে মারা গেছে।
নীলফামারী : কয়েকদিনের অব্যাহত টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বুধবার দুপুরে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার (৭০ দশমিক ২ মি.) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সবক’টি গেট খুলে দিয়েও পানির প্রবল স্রোত নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে তিস্তা ব্যারাজ পড়েছে হুমকির মুখে। তিস্তা ব্যারাজের পানির পরিমাপ কন্ট্রোল রুম রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রæত বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে।
রংপুর : রংপুর বিভাগের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, ঘাঘট, ইছামতি, যমুনেশ্বরী, পুনর্ভবা, আত্রাই, টাঙ্গন, ইছামতি, করতোয়াসহ অর্ধশত নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী অববাহিকা এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও উত্তরের এ আট জেলার নদী এলাকার ৫ শতাধিক মানুষ নদীভাঙনের ভয়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। অনেক স্থানে বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে।
ডিমলা : নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড় ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ ডুবে আছে বন্যার পানিতে। বন্যাকবলিত মানুষের ভাগ্যে মিলছে না সরকারি-বেসরকারি ত্রাণসামগ্রী। তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ফলে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত ছাতনাই, দোহলপাড়া, টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী, পূর্বখড়িবাড়ী, উত্তর খড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর, ছোটখাতা এবং ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা, ভেÐাবাড়ী ও সোনাখুলি গ্রামের কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষের বাড়িঘর কোথাও হাঁটু আবার কোথায় কোমর পানিতে ডুবে গেছে।
ঠাকুরগাঁও : গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকারপাড়া মহল্লা প্লাবিত হওয়ায় ওই এলাকায় যাতায়াতের বিঘœ ঘটে। বুধবার সকাল ১১টায় পানি নিষ্কাশনের দাবিতে ঠাকুরগাঁও শহরের সার্কিট হাউসের সামনের সড়ক দেড় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে এলাকার পানিবন্দি মানুষ। সরকারপাড়া মহল্লায় পানিবন্দি জাহাঙ্গীর ও তোরাব মানিক জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। পৌরসভায় একাধিকবার আবেদন করা হলেও অদ্যাবধি কোনো কাজ হয়নি। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পরে পৌর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে পানিবন্দি মানুষ অবরোধ তুলে নেয়।
দিনাজপুর : দিনাজপুরে ৪টি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ৪টি উপজেলার ৩৭টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের কোনো খোঁজ নেয়া হয়নি।
জামালপুর : গত এক সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রনদের পানি ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে জামালপুর শহরতলীর নাওভাঙ্গা চরের ২ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নদনদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ২৮টি ইউনিয়নের ২৫০টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৫ হাজার মানুষ। গত ৫ দিন ধরে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি থাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ২শ’ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও উঠতি শাকসবজি। নিম্নাঞ্চলের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসী মানুষ। এ অবস্থায় নৌকা ও কলাগাছের ভেলাই তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।
সিরাজগঞ্জ : প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতীরবর্তী সিরাজগঞ্জসহ ৬টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ভাঙনের প্রভাব তীব্র আকার ধারণ করছে। এরই মধ্যে ৫ সহস্রাধিক বাড়িঘর ও গাছপালাসহ বহু জায়গাজমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে প্রকাশ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানিবৃদ্ধিতে ভাঙন পরিস্থিতি অনেক স্থানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ঈশ্বরদী : ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানির তোড়ে নদীপাড়ের বসতবাড়ি, জমি, গাছপালা প্রভৃতি নদীতে বিলীন হচ্ছে। ওই এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। বুধবার বিকালে আড়ামবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, স্কুলটি রক্ষার জন্য তারা দিনভর বালির বস্তা ফেলছে। কিন্তু পানির প্রবল তোড়ে বালির বস্তাগুলো নিচে চলে যাচ্ছে।
ভোলা : ভোলার মনপুরায় পূর্ণিমার জোয়ারে দু’দিন ধরে বনাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। এ বনাঞ্চলে হরিণের অবাধ বিচরণ। সম্প্রতি বেড়িবাঁধ ভেঙে মনপুরার ৩ নং সাকুচিয়া ও ৪ নং সাকুচিয়া ইউনিয়নের বনবিভাগের পুরো বনাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় একটি হরিণ মারা গেছে বলে জানা গেছে
সুত্রঃ Click This Link
©somewhere in net ltd.