নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

সাইফ নাদির

এক টুকরো কাগজে পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম হাতে বসে আছি

সাইফ নাদির › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনী / সাইফ

২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৫

নিজের জীবন সম্পর্কে লিখতে বসে ভাবছি কি লিখবো, কোথা থেকে শুরু করবো, কোথায় গিয়ে শেষ করবো। সামান্য পাতায় কী একটা জীবন লিখে শেষ করা যায়! সম্ভব নয়, উচিৎও নয়। তাই কিছু কথা আজ এখানে লিখবো, সব নয়। যতটুকু না লিখলেই নয়, ততটুকু লিখবো। সব কথা লিখতে গেলে টুকরে কাগজে ধরবে না। একটা মানুষের জীবন মানে তো শুধু তার বিদ্যার দৌড়াত্য কিংবা চাকরীর সাফল্য নয়। শৈশব বা কৈশোরে ঘটে যাওয়া কয়েকটা ঘটনাও নয়। সব কিছু মিলিয়েই একটা জীবন। জীবনের চিন্তাও জীবনীর একটা অংশ। এখানে সামান্য কিছু লিখবো, বাকিটা অন্য কোনো দিনে অন্য কোনো কাগজে স্মৃতি হিসেবে লিখে রাখবো।
আমার জন্ম ১৯৯৬ সালের ২২ জুলাই। যদিও সার্টিফিকেটে সেটা ১৯৯৯ দেয়া আছে। সার্টিফিকেটের বয়স দিয়ে তো আর আসল বয়স আটকানো যায় না। জন্ম হয়েছিলো, নীলফামারীতে। সদর থানার, হাড়োয়া মিশন পাড়া গ্রামে। তারিখ অনুসারে দিনটি ছিল সোমবার। মা লিলি বেগম, বাবা মতিয়ার রহমান। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। বড় বোন শাহনাজ পারভিন বিউটি, বড় ভাই আব্দুল লতিফ, মেজো ভাই লিপন হোসেন আর ছোট ভাই রানা। মা বলে, আমার জন্মের সময়ই নাকি তার সবচে’ বেশি কষ্ট হয়েছিলো। একজন সন্তান জন্মের সাথে জড়িয়ে থাকে একজন মায়ের অসহ্য যন্ত্রনার ইতিহাস। গর্ভধারনের মাসগুলো যে কত কষ্টে কাটে তা শুধু একজন মা-ই বলতে পারে। মায়ের এই ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না, শোধ করা কখনো সম্ভবও না। মা’কে প্রায় বলি, ‘‘তোমার সন্তান হয়ে দুনিয়াতে আসতে পেরে সত্যিই ধন্য আমি। তোমার মত মা পেয়ে সত্যিই খোদার কাছে ঋণী আমি।’’ জন্মের পর পরই নাকি বাবার কোলে আমায় তুলে দেয়া হয়েছিলো, কিন্তু বাবা আমার কান্না থামাতে পারেনি। আমার কান্না দেখে সবাই নাকি সেদিন খুব হেসেছিলো।
শৈশব কেটেছে একই পাড়ায়, তবে দু’টি বাড়িতে। প্রথম বাড়ির জমি নিয়ে ঝামেলা ছিলো, তাই দ্বিতীয় বাড়ি তৈরি করতে হয়েছিলো। অনেক ছোট ছিলাম তেমন কিছুই বুঝতাম না, আবছা আবছা মনে পড়ে, যে দিন জমি খালি করে দিতে হয়েছিলো, সেদিন বাবা ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিলো। আপন জনের এই কঠিন ধোকা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। মা এখনো মাঝে মাঝে বলে, ‘‘যে ঘরে সংসার শুরু করেছিলাম সেই ঘরটা ছেড়ে আসতে হয়েছে। যে মাটিতে আমার চার ছেলে মেয়ের নাভি পোতা আছে, সেই জমি ছেড়ে দিতে হয়েছে।’’ ওই বাড়িতেই আমাদের চার ভাই বোনের জন্ম হয়েছিলো। শুধু রানার জন্ম হয়েছিলো দ্বিতীয় বাড়িতে। নতুন বাড়িতে, পশ্চিমের বড় ঘরটায় ব্রাক স্কুল ছিলো। পাড়ার অনেক ছেলে মেয়ে তখন আমাদের বাড়িতে এসে ব্রাক স্কুলে পড়তো। নিজের বাড়িতে স্কুল থাকায় পিচ্চি হলেও খুব ভাব নিয়ে থাকতাম। ওখানেই বড় ভাই বোনরা আমায় চক সিলেটে টুকটাক দুই একটা অক্ষর লিখতে শেখায়। মনে পড়ে, ম্যাডাম যখন পড়াতেন তখন আমি দরজার পাশে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতাম। লুনা আপু তখন আদর করে পাশে বসিয়ে রাখতো। আমি এর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সত্যিই, সেই দিনগুলি কখনো ভুলতে পারবো না। সকাল বেলা মা জোড় করে ঘুম থেকে ডেকে তুলতো, হাতে একটা খাবারের প্যাকেট দিয়ে মক্তবে পাঠিয়ে দিতো। যেতে ইচ্ছে করতো না তবুও যাওয়া লাগতো, কোনো বাহানাই মা মানতে চাইতো না। আমি মুক্তা আপুর জন্য বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আপুর সাথেই যেতাম মক্তবে। আপু অনেক আদর করতো আমায়। অনেক মিস করি মুক্তা আপুকে।
বড় ভাই খুব শাসন করতো, সন্ধা হলেই সাথে নিয়ে পড়তে বসতো । তবে বড় বোন ঠিক ওর বিপরীত ছিলো, আমাকে সাথে নিয়ে গান গান খেলতো। বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে গান গেয়ে শোনাতো। আপুর কণ্ঠ অনেক মিষ্টি ছিলো, বেশ চমৎকার গাইতো। মনে পড়ে, তখন আমরা উঠানে পাটি বিছিয়ে আকাশের তারা গুণতাম আর গান গাইতাম।
তখন সবে মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি, শাখামাছা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলে যেতাম দল বেধে, আসতামও দল বেধে। পাড়ার অনেক ছেলে মেয়েই তখন শাখামাছা স্কুলে পড়তো। সবাই মিলে স্কুল মাঠে দৌড়ঝাঁপ করতাম। চালতা আচার, তেতুল আচার, মুড়ি মাখা ও ফুসকা পাওয়া যেত মাঠে। প্রতিদিন কোনো না কোনো আইটেম খাওয়াই লাগতো, নয়ত স্কুলে যাওয়াটাই বৃথা মনে হতো। ক্লাসে বসতাম লাস্টবেঞ্চে। কিন্তু আফরোজা ম্যাডাম কিভাবে যেন এই লাস্টবেঞ্চার ছেলেটাকেই খুঁজে বের করে প্রশ্ন করতো। আর কিছু পাই আর না পাই ফাকি বেশ ভালোই দিতে পারতাম। তবে পরিক্ষায় কিভাবে যেন রেজাল্ট ভালো হয়ে যেতো।
এখনো মনে পড়ে, সপ্তাহে একদিন স্কুল পালিয়ে ‘‘জুনিয়রজী’’ দেখতাম ইমনদের বাসায়। ইমনরা ‘‘বেহারী’’ ছিলো, ওদের বাংলা হিন্দি মিশ্রিত ভাষা শুনতে বেশ ভালোই লাগতো। মনে পড়ে, বৃষ্টির দিনে ইচ্ছে করেই ভিজে ভিজে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম আর মা’র একগাদা বকা খেতাম।
শৈশবের কথা বললেই ফুটে উঠে দুরন্ত একটা মুখের ছবি। পাড়ার ছেলে মেয়েরা মিলে বেশ ভালোই ছুটাছুটি করতাম। বেশ মজা করে চোর ডাকাত খেলতাম। গোল্লাছুট, কাবাডি, সাত তারা, পাতা ছুয়ান্তি, মার্বেল, ফুটবল, ক্রিকেট কম খেলিনি। মধ্য দুপুরে গ্রামের পুকুরে বেশ ভালোই বিচরন করা হতো।
নিয়মিত স্কুল ফাকি দিতাম। পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথার অজুহাত দিয়ে বাড়িতে বসে থাকতাম। কিন্তু মা কিভাবে যেন বুঝে ফেলতো, ‘‘আমি অভিনয় করছি’’ তাই পিটিয়ে হলেও স্কুলে পাঠাতো।
ক্লাস থ্রীর ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হলো, আব্বা আমায় নিয়ে গেলেন মাদরাসায়। শুরু হলো পড়ালেখার দু’টি অধ্যায়, জেনারেল আর এরাবিক। ভর্তি করিয়ে দিলেন সৌদি সংস্থা আল-ফোরকান ফাউন্ডেশন পরিচালিত মাদরাসায়। জীবনের প্রথম বাড়ি ছেড়ে মাদরাসার হলে রাত কাটানো শুরু হলো। খুবই কান্নাকাটি করতাম বাড়িতে যাওয়ার জন্য। প্রতিদিন আব্বা এসে দেখে যেতেন। সাথে বিস্কুট, চকোলেট নিয়ে আসতেন।
এখানেই শাওন, হাদি ও পান্নার মত বন্ধু পেয়েছি। ওদের কথা না হয় আরেকদিন লিখবো। বেশ জমিয়ে মজা করতাম আর প্রতিযোগিতা করে পড়তাম। বিকেলবেলা ক্রিকেট খেলায় আফ্রিদির খেতাবও পেয়েছিলাম। ওদিকে স্কুলের পরিক্ষাগুলোও নিয়মিত দিয়ে আসতাম। হুজুরদের আদর আর শাসনে বেশ ভালোই পড়াশোনা করতাম আমরা। এভাবে আড়াই বছরে পবিত্র কোরআন হিফজ করার তৌফীক পেয়েছিলাম। যেদিন হিফজ খতম করেছিলাম, সেদিনটা ছিলো আমার জীবনে সবচে’ বড় আনন্দের দিন। মনে হয়েছিলো, যেন মহান আল্লাহ্ আমায় নিজ কুদরতি হাতে নূরের মুকুট পরিয়ে দিয়েছেন। এই ছোট্ট জীবনে এরচে’ বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না। ওদিকে ক্লাস ফাইভও শেষ হয়ে গেলো।
সময়ের আবর্তে শৈশব পার করে কৈশোর এ পা দিলাম। বাসা থেকে এবার আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু বড় হুযুর (হাবিবুল্লাহ্) আর ছোট হুযুর (আজিজুল হক) আব্বাকে বুঝিয়ে বললেন যে, ‘‘ ছেলেকে এলাকার আলিয়ায় ভর্তি করালে ভুল সঙ্গে জড়িয়ে বিপথে চলে যেতে পারে। তাই টাংগাইলের ‘‘আন নূর ইনস্টিটিউট মাদরাসাতুন নূরে’’ ভর্তি করানোর পরামর্শ দিলেন। তখন আমাকে আর শাওনকে বড় হুজুর আন নূরে ভর্তি করিয়ে দিলেন। লাইফের প্রথম নিজ জেলা থেকে দূরে ভিন্ন জেলায় রাতদিন কাটাতে লাগলাম। যেহেতু ছাত্রদের জন্য ফোন ব্যবহার করার অনুমতি ছিলো না সেহেতু প্রতিদিন বিকেলবেলা দোকানের ফোন দিয়ে বাড়িতে কথা বলতাম। ভাইয়া মাঝে মাঝে মাওলানা আব্দুর রউফ সাহেব হুজুরের ফোনে কল দিতো তখন হুজুরের ফোনে কথা বলতাম। কথা শেষে চোখের পানি মুছতে দেখে হুজুর বিভিন্ন ফানি কথা বলে মন ভালো করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। আন নূরে পড়তাম আবার নীলফামারী আদর্শ হাই স্কুলেও পড়তাম। পড়াশোনার দু’টি অধ্যায় এক সাথে চালানো সত্যিই অনেক কষ্টকর ছিলো, তবে বেশ আনন্দও পেতাম। আন নূরে তিন বছর পড়েছি আর আদর্শ থেকে জিএসসি দিয়েছি। পরের বছর ক্লাস নাইনে সাইন্স নিলাম আর উড়াল দিলাম ব্যস্ত শহর ঢাকায়। দু’বছর জালালাইন, মেশকাত ও পাশাপাশি ক্লাস নাইন ও টেন শেষ করলাম। ঢাকায় গিয়ে মনে হলো যেন ডিম থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে এসেছি। আস্তে আস্তে দুনিয়া চিনতে শুরু করলাম। তখন বেশ ভালোই বড় হয়েছি, দেশের প্রায় সব জেলার বন্ধুদের সাথে উঠাবসা করার সুযোগ পেয়েছি।
কৈশোর শেষ করে এবার যৌবনে পা রাখলাম। মশিউর রহমান কলেজে ইন্টারে ভর্তি হলাম, পাশাপাশি ঢাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগে দাওরা হাদীসে (তাকমিল) ভর্তি হলাম। বেফাক বোর্ডের অধিনে দাওরা হাদীসে জায়্যেদ জিদ্দান পেয়ে উত্তীর্ণ হলাম। এ দিকে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারও শেষ হয়ে গেলো। সেকেন্ড ইয়ারে উঠে নিয়মিত ক্লাস করতে লাগলাম। এস এস সি এক্সাম শেষে রেজাল্টের অপেক্ষা করতে লাগলাম। কোচিং করতে বলেছিলো বাড়ি থেকে কিন্তু ইচ্ছা করেই করিনি।
স্বপ্ন ছিলো ইবিতে পড়বো আবার ভয়ও ছিলো, যদি চান্স না হয়! তাই তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। কিছুদিন পর ইবির ভর্তি পরিক্ষা। তেজগাঁও কলেজে নামে মাত্র ভর্তি হয়েছিলাম। মন আর প্রাণ ঝুকে ছিলো ইবির দিকে। তাই কোচিং না করেও বাসায় বসে প্রিপারেশন নিতে শুরু করলাম। পরিক্ষার দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলো, আমারো দিনরাত এক করে পড়ার অবসান হলো। পরিক্ষা দিলাম, আল্লাহর রহমতে চান্সও পেয়ে গেলাম। তেজগাঁও কলেজ থেকে ভর্তি বাতিল করে ইবিতে ভর্তি হলাম। বর্তমানে ফার্স্ট সেমিস্টার শেষ করে সেকেন্ড সেমিস্টার পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এই হলো এ পর্যন্ত, জীবন ইতিহাস। বাকি জীবনে কি ঘটবে কি হবে কিছুই জানি না। তবে কিছু স্বপ্ন আছে, সেগুলো পূরণে অবশ্যই সচেষ্ট থাকবো। মহান আল্লাহ্ সুযোগ দিলে লক্ষ পানে অবশ্যই ছুটে চলবো।
..................................................
জীবনী / সাইফ
ইবি, কুষ্টিয়া
২ নভেম্বর, ২০১৮ ইং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.