![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা ভাষাতে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ৮০ বছর বয়সেও তিনি যেভাবে লিখে চলছেন তা আমার কাছে এক বিস্ময়ের কারণই বৈকি। “সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে” তার একটি অন্যতম জনপ্রিয় থ্রিলার উপন্যাস। এটি তার গোয়েন্দা শবর সিরিজের তৃতীয় কিস্তি।
লেখকের ভাষায় “”
“সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে” পড়ে এক শ্রদ্ধেয় মানুষ বলেছিলেন, এটার মধ্যে তিনি আগাথা ক্রিস্টির ‘টুওয়ার্ডস জিরো’ উপন্যাসটির ছায়া দেখেছেন। ‘টুওয়ার্ডস জিরো’ আমার প্রিয় উপন্যাস। কিন্তু বস্তুতপক্ষে লিফট অচল করে দিয়ে একজন হৃদরোগীকে হত্যার পরিকল্পনাটি হয়তো সদৃশ, কিন্তু ছায়াপাত যে নেই তা নিশ্চিত। “সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে” ঠিক হত্যাকাহিনিও নয়। এ মানুষের বিভ্রান্তি, মায়া, লালসা এসব কিছুর মন্থনজাত কিছু।
গল্পের শুরু হয় বাসুদেব সেনগুপ্তের সিঁড়ি ভেঙে উঠতে গিয়ে হঠাৎ হার্ট এট্যাকের মাধ্যমে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে সিঁড়ি বাইতে মানা করা হয়েছে কিন্তু লিফট মেরামতের কারণে তার মধ্যে এক প্রবল অহংবোধ জেগে উঠে, যে অহংবোধ তার জীবনের গল্পকে নানাদিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়েছে। সামান্য আট তলা সিঁড়ি বাইতে পারবেন না এককালের তুখড় এই স্পোর্টস ম্যান ? মানতেই পারলেন না বাসুদেব। ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকলেন আর একে একে মনে পড়তে থাকে তার অতীত কৃতকর্মসমূহ। তার স্ত্রী, বান্ধবী, ছেলে মেয়ে, খেলার মাঠে চিরকালের মতো ইনজুরড করে দেয়া সেই তরুণ খেলোয়াড় অথবা আত্মীয়দের ঠকিয়ে জায়গা নিজের করে নেওয়া। একের পর এক ঘটনা যেন সেদিন তার চোখের সামনে স্লাইড শো এর মতো চলতে থাকে।
বাসুদেবের মৃত্যুটা কি স্বাভাবিক ছিল নাকি খুব সুক্ষ্ণভাবে সাজানো কোন চক্রান্ত; তা জানতে শবর যখন তদন্তে নেমে পড়েন তখন পরিচয় হয় আত্মীয় গোপালের সাথে, যে কিনা খুন করার জন্য হুমকি দিয়েছিল। থলের বিড়ালের মতো বের হয়ে আসে রীণা নামে তার এক প্রাক্তন বান্ধবীর খবর, স্বামী শঙ্করের ঘর করলেও প্রথম সন্তানের পিতা ছিল সেই বাসুদেবই। ১৮ বছর ধরে এই তীব্র মানসিক যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল শঙ্করকে। স্ত্রীকে ভালবাসার কারণে দূরে ঠেলে দিতে না পারলেও এই সন্তানকে সে সহ্য করতে পারবে না এবং অবশ্যই বাসুদেবকেও না। এদিকে সেই ছেলে অজু নিজেও কি কিছু জানতো ? নাকি সবুজ সংঘের সেই ছেলেগুলো কিছু করছে, যাদের চাঁদা না দিয়ে উলটো তাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাসুদেব ?
লালবাজারের গোয়েন্দা শবর এমন এক কেসের মুখোমুখি হয়েছে যা কখনই তার সাথে হয়নি। সব প্রশ্নের উত্তরই হয়তো জানা আবার মনে হচ্ছে কিছুই ঘটেনি। সাথে যুক্ত হয়েছে সহকর্মী ঘোষালের উপর আনা অভিযোগ, হয়তো বেচারার চাকরিটা চলেই যাবে, সাথে জুটবে কিছু বদনাম। কখনো ঘুষ না খাওয়া পরাশর ঘোষাল তার ছেলের জীবন বাঁচাতে লালচাঁদ মার্ডার এবং উল্টোডাঙার ডাকাতির দুটো ঘটনার যোগসূত্র পেয়েও প্রশাসনকে জানায়নি, উপরন্তু কিছু নথিপত্রও এলোমেলো করে দেয় সে।
স্বীকার করতে হবে “সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে” আমার পড়া সবচেয়ে মানবিক থ্রিলার। বইটা শেষ করে আমি চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। কনসেপ্টটা খুব স্ট্রং ছিল সেটা বলব না, একইভাবে এটাও ঠিক যে খুব বেশি প্রেডিক্টেবল এই গল্পটা হয়তো ক্লাসিকের মর্যাদা পাবে না। কিন্তু এমন মানবিক থ্রিলার আর ক’জন লেখক লিখতে পারেন তা আমার জানা নেই। বইটা পড়ার সময় কখনই আমার মনে হয়নি যে আমি কোন রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার পড়ছি, বরং মনে হচ্ছিল মনুষ্যত্ব এবং অহংকারের এক অদ্ভুত খেলা দেখছি। এইধরনের বইকে কোন অঙ্কের নাম্বার দিয়ে বিচার করা যায় না। এটা অনেক উপরের কিছু একটা।
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
সাইফ রাসেল বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
শুভ নববর্ষ
২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪৪
আজমান আন্দালিব বলেছেন:
পড়া দরকার।
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
সাইফ রাসেল বলেছেন: পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন
৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শীর্ষেন্দু আমার অন্যতম প্রীয় সাহিত্যিক| কিশোরকাল থেকেই তাঁর রচনার সাথে পরিচিত| আমার পড়া তাঁর প্রথম উপন্যাস হলো, ময়নাগড়ের বৃতান্ত| সেটা আমার জীবনে পড়া দ্বিতীয় উপন্যাস| সেটা আমার কিশোর মনকে এতো বেশি ছুঁয়ে গিয়েছিল যে তারপর থেকে আমি গল্প উপন্যাস দেখলেই পড়া শুরু করে দিতাম| সাম্প্রতি তার বাঁশীওয়ালা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি|
আপনার রিভিউটি চমৎকার| সংগ্রহ করতে চেষ্টা করবো
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
সাইফ রাসেল বলেছেন: আমিও ছোট থাকতে যখন পুরনো বই এর দোকানে নামমাত্র মূল্যে তার একটি কিশোর উপন্যাস (এই মুহুর্তে নাম খেয়াল নেই) পড়েছিলাম তখনই মন্ত্রমুগ্ধের মতো ভাবছিলাম আমার ঠিক যেমন গল্প পছন্দ ঠিক তেমন একজন লেখককেই বোধকরি পেয়ে গেলাম আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৫৭
রুদ্র জাহেদ বলেছেন: চমৎকার রিভিউ।বইটা পড়তে হবে
০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৩৬
সাইফ রাসেল বলেছেন: আপনার কেমন লাগলো বইটি জানাতে ভুলবেন না
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৯
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: পড়েছিলাম বইটা, বেশ লেগেছিল। রিভিউটাও ভালো লাগলো।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫
সাইফ রাসেল বলেছেন: শীর্ষেন্দু বরাবরই আমার প্রিয় লেখক আমাকে সবসময় মুগ্ধ করেন তিনি
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫০
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন ।
শুভ নববর্ষ