নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদর্শ

েমাহাম্মাদ

আমি একজন স্টুডেন্ট এবং বর্তমানে ইরানের পবিত্র কোম শহরে ইসলামী লাইনে পড়াশুনা করছি। আমি পৃথিবীর সকল মানুষকে ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি আর সাম্মে বিশ্বাসী।

েমাহাম্মাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম মঞ্জিল - মৃত্যু

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫২

প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু হল দেহ এবং রুহের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাওয়া। দেহের সাথে রুহের বন্ধন সম্পর্কে বিভিন্ন উপমা দেয়া হয়েছে। অনেকে বলেনঃ দেহের সাথে রুহের সম্পর্ক জাহাজ এবং নাবিকের মত। মৃত্যু জাহাজকে নাবিকের আয়ত্বের বাইরে নিয়ে যায়। আমরা বলে থাকি আমার পা, আমার হাত, আমার চোখ ইত্যাদি। এখানে আমি এবং হাত, পা ও চোখ দু’টি পৃথক জিনিস। আপনি যখন বলেন যে আমি গিয়েছিলাম। কথাটি সত্য যে আপনি গিয়েছিলেন কিন্তু আপনি পায়ে হেটে গিয়েছেন আর এখানে আপনি এবং পা দু’টি পৃথক জিনিস। আমরা বলে থাকি দেখেছি, শুনেছি এবং বলেছি এখানে দেখা, বলা এবং শোনা পৃথক তিনটি জিনিস কিন্তু আমি বলতে একটি জিনিসকেই বুঝে থাকি আর সেটা হল সম্মানিত আত্মা যার ক্রিয়া এগুলির মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। আত্মাই দেখে, আত্মাই শোনে কিন্তু তা হল এই চোখ ও কানের ছিদ্র দিয়ে? অতএব প্রকৃত পক্ষে আত্মাই দেখে। চোখ হচ্ছে তার দেখার মাধ্যম। আত্মা বা রুহ এই অন্ধকার শরীরের প্রদীপ শিখা এবং আত্মাই চোখ, কান এবং শরীরের প্রতিটি ইন্দ্রিয়ে আলো সঞ্চার করে।

মৃত্যু অর্থাৎ প্রদীপের স্থানান্তর। যেমন ধরুন একটি কুঁটিরে যদি কয়েকটি ছিদ্র থাকে তার মধ্যে প্রদীপ রাখলে আলো বিকিরণ করে কিন্তু সেখান থেকে প্রদীপ বের করে নিলে অন্ধকার হয়ে যায়। মৃত্যু হল শরীর থেকে প্রদীপ বের করে নেয়া। তবে মনে রাখতে হবে যে রুহ এবং শরীরের সম্পর্ক অনুপ্রবেশ জাতীয় কোন বিষয় নয় অর্থাৎ এমনটি নয় যে রুহ শরীরের ভিতরে রয়েছে। কেননা রুহের কোন আকৃতি নেই এবং রুহ হল অবস্তুক। কাজেই রুহের ক্ষেত্রে প্রবেশ ও বাহিরের কোন অর্থ হয়না। শুধুমাত্র দেহের প্রতি রুহের পরিপূর্ণ দৃষ্টি ও বন্ধন রয়েছে। সুতরাং মৃত্যু হল দেহের সাথে আত্মার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাওয়া।

আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছাতেই মৃত্যু হয়। যিনি মাতৃ গর্ভেই দেহের সাথে রুহের বন্ধন সৃষ্টি করেছেন তিনিই আবার মৃত্যুর সময় রুহের সাথে শরীরের সম্পর্ককে ছিন্ন করবেন। তিনি বাঁচান আবার তিনিই মারেন। পবিত্র কোরআনেও বহুবার বর্ণিত হয়েছে যে আল্লাহই জীবিত করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। অনেকেই আজরাইল (আ.)-কে ভয় করে এবং তাঁকে গাল-মন্দ করে। কিন্তু তারা জানে না যে আজরাইল(আ.) কেবল মাত্র আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে থাকেন।



কিরূপে রুহ কবজ হয়

রুহ কবজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মিরাজ সম্পর্কিত হাদীসসমূহে এভাবে বলা হয়েছে। হযরত আজরাইলের সামনে একটি তালিকা রয়েছে যাতে সকল মানুষের নাম রয়েছে। যার মৃত্যু ঘনিয়ে আসে তার নাম ঐ তালিকা থেকে মুছে ফেলা হয় এবং হযরত আজরাইল(আ.) সাথে সাথে তার রুহ কবজ করে নেন। হতে পারে একত্রে সহস্রাধিক মানুষের নাম মুছে যেতে পারে এবং হযরত আজরাইল(আ.) তাদের সকলের রুহ কবজ করে নিতে পারেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ নেই। যেমন ঝড় এক মূহুর্তে সহস্র প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে। এ সবই আল্লাহ্র ইচ্ছায় হয়ে থাকে। হযরত আজরাইল রুহ কবজ করেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই মৃত্যু দান করেন। কেননা আজরাইল আল্লাহ্র নির্দেশে রুহ কবজ করেন আর একারণেই কোরআন মজিদে কখনো বলা হয়েছে আল্লাহ্ রুহ কবজ করেন। আবার কখনো বলা হয়েছে হযরত আজরাইল রুহ কবজ করেন। কখনো আবার বলা হয়েছে ফেরেশতাগণ রুহ কবজ করেন, তিনটিই ঠিক। কেননা হযরত আজরাইল(আ.) এবং তাঁর সহকর্মী ফেরেশ্তাগণ আল্লাহর নির্দেশেই রুহ কবজ করে থাকেন। যেমন কোন সম্রাট তার সৈন্য ও সেনাবাহিনীর প্রধানদের সাহায্যে কোন দেশ জয় করে থাকে। অতএব এটা বলা ঠিক হবে যে সৈন্যরা অমুক রাষ্ট্র জয় করেছে। আবার বলতে পারি যে সিপাহসালার (সেনাপ্রধান)দেশটিকে জয় করেছে। আবার এটা বলাও ঠিক যে সম্রাট দেশটিকে জয় করেছে। উদাহরণটি বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য আনা হয়েছে নইলে বিষয়টি এসবের অনেক উর্ধ্বে।

মোদ্দাকথা আল্লাহই মানুষের মৃত্যু দিয়ে থাকেন। তবে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ পৃথিবীকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সৃষ্টি করেছেন। অতএব মৃত্যুর জন্যেও কিছু কারণ তিনি নির্দিষ্ট করেছেন। যেমন কোন উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, অসুস্থ হওয়া, নিহত হওয়া ইত্যাদি। তবে এসব হচ্ছে ওছিলা বা কারণ মাত্র। কেননা এমনও দেখা যায় যে অতি মুমূর্ষ রোগীও অনেক সময় বেঁচে ওঠে আবার অতি সামান্য অসুখে অনেকে মারা যায়। সুতরাং অসুস্থতা, নিহত হওয়া, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি মৃত্যুর অনিবার্র্য কারণ নয়। আয়ু শেষ হয়ে গেলে মহান আল্লাহ তার জান কবজ করে নেন। এমন প্রচুর দেখা যায় যে অনেক ব্যক্তিই কোন ধরণের অসুস্থতা ছাড়াই মারা যায়।

মালাকুল মাউত সম্পর্কে আরও একটি কথা হচ্ছে যে, যখন তিনি জান কবজ করতে আসেন ব্যক্তি অনুসারে তার চেহারায় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) বললেন,“কাফেরদের জান কবজ করার সময় আজরাইলের চেহারা কেমন হয় আমি তা দেখতে চাই।” বলা হলঃ তুমি তা দেখে সহ্য করতে পারবে না। ইব্রাহীম (আ.) বললেন,“ আমার দেখার ইচ্ছা হচ্ছে।” আজরাইল (আ.) ঐ অবস্থায় তাঁর সামনে হাজির হলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) দেখলেন, একজন ময়লা ও কালো কাপড় পরা দুর্গন্ধ যুক্ত কুৎসিত লোক যার শরীরের পশম খাড়া হয়ে আছে এবং নাক ও মুখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। ইব্রাহীম (আ.) অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরে আসার পর বললেন: কাফেরদের যদি আর কোন আজাব নাও হয় তোমাকে দেখার আজাবই তাদের জন্য যথেষ্ট। মোমিনদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত।

শয়তান বাম দিক থেকে মুমূর্ষ (মৃত্যুমুখী) ব্যক্তির কাছে আসে আর ফেরেশতাগণ ডান দিক থেকে আসেন। শয়তানদের কাজ হল প্রতারণা করা বিশেষ করে মৃত্যুর সময়। যদি সামান্যতম ঈমানও কারো অবশিষ্ট থাকে সেটাও ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। কেননা শেষ পরিণতিই মানুষের সৌভাগ্য ও দূর্ভাগ্যকে নির্ণয় করে। যে যেমনভাবে জীবন-যাপন করেছে তেমনভাবেই মৃত্যুবরণ করবে এবং যেমনভাবে মৃত্যুবরণ করবে তেমনভাবেই পূণরুত্থিত হবে। মৃত্যুর সময় তোমরা যে আশা নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে, যদি তোমাদের আশা থাকে হযরত আলী (আ.)-এর পবিত্র চেহারা দেখার, তাঁকে দেখতে পাবে। আর যদি প্রবৃত্তির তাড়না থাকে তাহলে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তবে যদি কেউ সত্যিকার অর্থে ঈমান আনয়ন করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন যে শয়তান তাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না।

আবু যাকারিয়া রাজিকে মৃত্যুর সময় বলা হল, বল: لا اله الا الله তিনি বললেন: বলব না। অত:পর বেহুশ হয়ে গেল, জ্ঞান ফেরার পর বলল: কেউ একজন আমাকে বলছিল যদি সৌভাগ্যবান হতে চাও তাহলে বলঃ ঈসা ইবনুল্লাহ। আমি বললাম বলবনা, অনেকক্ষণ পর বলল, বল: لا اله الا الله । আমি বললাম: তুমি বলছ একারণে আমি বলবনা। তখন তার মাথায় সজোরে কিছুর আঘাত হওয়াতে সে পড়ে গেল। তখন রাজি কলেমা শাহাদৎ পাঠ করল এবং মৃত্যুবরণ করল।

যে সারা জীবন সঠিকভাবে তৌহিদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে শয়তান কখনোই তার ওপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না। হ্যাঁ যদি কেউ তার জীবনের কিছু অংশ শয়তানের আনুগত্য করে থাকে মৃত্যুর সময়ও শয়তান তার সঙ্গী হবে।



কঠিন এবং সহজ মৃত্যু

হাদীস এবং রেওয়ায়াতে কঠিন ও আরামদায়ক মৃত্যু সম্পর্কে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদীসে মৃত্যুকে জীবিত মানুষের শরীর থেকে চামড়া পৃথক করে নেওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে যদি ধারাল পাথর অথবা কোন দূর্গের দরজার বড় পেরেক কারও চোখের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় এবং ঐ দরজা চলতে শুরু করে তা মৃত্যুর কষ্ট থেকেও সহজতর। কোন কোন হাদীসে আবার মৃত্যুকে জীবিত শরীরকে কাঁচি দিয়ে টুকরা টুকরা করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। অনেক সময় আবার মৃত্যুপথ যাত্রিকে এতবেশী কষ্ট পেতে দেখা যায় যা বর্ণনার অতীত।

অনেকের জন্য মৃত্যু সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার মতই সুখকর। কিছু হাদীসে মৃত্যুকে নোংরা পোশাক পরিবর্তন করে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কখনো আবার মৃত্যুকে শিকল ও বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে অর্থাৎ মৃত্যু হল পৃথিবী নামক বন্দীশালা থেকে পরিত্রাণ লাভের মাধ্যম।

মোটকথা এ দু’ধরনের মৃত্যুর কোনটাই সার্বিক নিয়মের অধীন নয় অর্থাৎ এমনটি নয় যে যদি কেউ মোমিন হয় সে সহজ মৃত্যুবরণ করবে। বরং এমন অনেক মোমিন বান্দা রয়েছেন যাদের প্রতি মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে থাকেন এবং কঠিন মৃত্যুর মাধ্যমে তার গুনাহমাফ করে দেন। যদিও সে মোমিন হিসাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে কিন্তু তাকে পবিত্র করার জন্য আল্লাহ এভাবে পরিশুদ্ধ করে নেন। আর অন্য দিকে মৃত্যু কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুন ও আযাবের সূচনা স্বরূপ।

কখনো আবার কাফের ও ফাসেক সহজ মৃত্যুবরণ করে থাকে। কেননা যদিও সে (কাফের, মুশরিক, ফাসেক) আজাবের উপযুক্ত কিন্তু জীবনে হয়তো কিছু ভাল কর্ম করেছে তাই সহজ মৃত্যুর মাধ্যমে তার ভাল কর্মের ফল দুনিয়াতেই পরিশোধ করা হয়। যেমন: হয়তো সে দান করেছে অথবা কোন অত্যাচারিতকে সাহায্য করেছে তার প্রতিদান স্বরূপ সে সহজেই মৃত্যুবরণ করে থাকে যাতে করে সে আখেরাতে আর কিছু না চাইতে পারে। যেমনটি মোমিনের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে অর্থাৎ গুনাহথেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তার মৃত্যু কঠিন হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কাফেরদের জন্য মৃত্যু হল আজাবের শুরু, তাই সে মৃত্যু সহজ হোক আর কঠিনই হোক এবং মোমিনদের জন্য মৃত্যু হল নেয়ামত ও সৌভাগ্যের শুরু তাই সে সহজ হোক আর কঠিনই হোক।

সুতরাং কোন ক্রমেই সহজ ও কঠিন মৃত্যু কোন মোমিন ব্যক্তি ও কাফেরের জন্য সৎকর্ম পরায়ন ও অসৎকর্ম পরায়ন হওয়ার চুড়ান্ত মানদন্ড নয়।

বিহারুল আনওয়ারের তৃতীয় খণ্ডে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, একদা রাসূল (সা.) তাঁর চাচাত ভাই হযরত আলীর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলেন যে তিনি চোখের যন্ত্রনায় আর্তনাদ করছেন। যদিও হযরত আলী ধৈর্যের পাহাড় ছিলেন কিন্তু ব্যথা এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি অস্থির হয়ে পড়েছিলেন এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) তাঁকে এমন একটি খবর দিলেন যে তিনি তাঁর চোখের যন্ত্রনা বেমালুম ভুলে গেলেন। রাসূল (সা.) বললেন,“ হে আলী জীব্রাইল আমাকে খবর দিয়েছেন যে যখন কাফেরদের জান কবজ করা হয় তখন আজাবের ফেরেশতাগণ চাবুক ও লোহার গরম শিক দিয়ে তাদের জান কবজ করে থাকেন। হযরত আলী (আ.) বললেন,“ হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার উম্মতের মধ্যেও কি কারও এভাবে জান কবজ করা হবে? রাসূল (সা.) বললেন,“ হ্যাঁ, মুসলমানদের মধ্যে তিন শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা এভাবে মৃত্যুবরণ করবে। ১. অত্যাচারী শাসক ২. ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণকারী এবং ৩. মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী।

মোটকথা যেমন কর্ম তেমন ফল। কঠিন ও সহজ মৃত্যু আমাদেরই কর্মফল।

আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন, এমনও হতে পারে যে একজন মুসলমান তার অসৎকর্মের ফলে কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।

জীবনইতিহাস গ্রন্থসমূহে, প্রশিদ্ধ তওবাকারী “ফুযাইল আইয়ায” সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে: তার এক বুদ্ধিমান ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং প্রায় মৃত্যুমুখে উপনীত হল। ফুযাইল তার কিছু সাথীদেরকে নিয়ে তাকে দেখতে গেল। ফুযাইল সূরা ইয়াসীন পড়তে শুরু করল অপদার্থ ছাত্র তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল, তোমার কোরআন পড়া থামাও। যে ছাত্র দীর্ঘদিন ধরে নামাজ পড়েছে, মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছে, দোয়ার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এবং কোরআন তেলাওয়াত করেছে সে এখন বলছে কোরআন পড়বো না। অবশেষে কলেমা শাহাদত না পড়েই মৃত্যুবরণ করল। এ ঘটনার পর ফুযাইল এতই বেদনাবিধুর হল যে, ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিল এভাবে একদিন সে তার ঐ ছাত্রকে স্বপ্নে দেখল। তার কাছে জিজ্ঞাসা করল কি কারণে তোমার শেষ পরিণতি এত খারাপ হল। সে বলল: তিনটি বৈশিষ্ট্য আমার মধ্যে থাকার কারণে কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছি। প্রথমঃ হিংসা, অর্থাৎ কাউকেই নিজের চেয়ে উত্তম মনে করতে পারতাম না। সত্যিই আগুন যেমন কাঠ পুড়িয়ে দেয়, হিংসা তেমনি ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়।

দ্বিতীয়: চোগলখুরীর মাধ্যমে মানুষের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানো। এমন কথা কাউকে বলা উচিৎ নয় যার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন ছিন্ন হয়। যদি কেউ কারও পিছনে কথা বলে সেই কথাকে তার কানে পৌঁছানো কখনই উচিৎ নয়। যদি কেউ কাউকে তার অনুপস্থিতিতে গালাগাল দিয়ে থাকে তাকে বলা উচিৎ নয় যে অমুক তোমাকে গালাগালি করছিল। বরং এর বিপরীতে, যদি কোন দুই জনের মধ্যে ভাল সম্পর্ক না থাকে তোমার উচিৎ তাকে গিয়ে বলা যে অমুক তোমার অনেক প্রশংসা করছিল। এরূপ ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা দূষণীয় নয়, কেননা তা দু’জনের মধ্যে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করে। কিন্তু চোগলখুরী বড় অপরাধ। একের কথা অপরকে লাগানো বিদ্বেষ ও কপটতা বৃদ্ধি করা ছাড়াও শ্রোতার অন্তরকে অস্থির করে তোলে। মানুষের অন্তরকে কুৎসিত করে ও ফেৎনার সৃষ্টি করে যা হত্যাকান্ডের চেয়েও ভয়ানক।

তৃতীয়: মদ্য পান করা। হ্যাঁ এই তিন কবিরা গোনাহর ফলে একজন ভাল মানুষও কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে পারে।



মৃত্যুকে পছন্দ করা

যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানা প্রয়োজন তা হল “হুব্বে লেকা আল্লাহ” (আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্খা ও তাঁর সাক্ষাতকে পছন্দ করা)। অর্থাৎ মোমিন ব্যক্তি কখনোই মৃত্যুকে ভয় পায়না বা ঘৃণা করে না। তবে এমনটিও নয় যে, সকল সময় মৃত্যুকে ডাকবে অথবা ( আল্লাহ না করুন) আত্মহত্যা করবে। কেননা যতদিন দুনিয়াতে আছে কৃত গোনাহ থেকে তওবা করবে, নিজেকে পবিত্র করবে এবং নেকি বৃদ্ধি করবে। যখনই আল্লাহ মৃত্যু দান করবেন তখনই মৃত্যুকে নেয়ামত হিসাবে মেনে নিতে হবে। বরং মুমিন সৎকর্মশীল হলে আল্লাহ খুব শীঘ্রই তার সুফল দান করবেন আর গোনাহগার হলে মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ তার গোনাহর পথকে রুদ্ধ করে শাস্তি কম করবেন।

মোটকথা বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিৎ যে, আল্লাহ যখনই তাকে মৃত্যু দিবে সে হাসি মুখে তা মেনে নিবে। কেননা মৃত্যু একমাত্র মাধ্যম যার সাহায্যে মানুষ সৌভাগ্যের চরম শিখরে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ অশান্তির দুনিয়া থেকে মুক্তি নিয়ে শান্তির দুনিয়ায় পদার্পণ করবে। সৃষ্টিকর্তার প্রস্তুতকৃত বাসস্থানে প্রবেশ করবে এবং প্রকৃত বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আ.) এবং সকল পবিত্র আত্মার সাথে সাক্ষাৎ পাবে।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তার বান্দার মৃত্যুকে যতই পিছিয়ে নিয়ে যাক এবং আয়ূ দীর্ঘায়িত করুক তা পছন্দ করতে হবে। এজন্যে যে, এই শুভ ও সুদীর্ঘ সফরের জন্য যেন বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫৫

েমাহাম্মাদ বলেছেন: লেখাটি অবশ্যই পড়বেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.