নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://web.facebook.com/salauddin.shahria

সালাউদ্দিন শাহরিয়া

আমার মনের মৃত্যু হয়েগেছে দেহের মৃত্যু বাকি, বিষাক্ত ধুলিমাখা দীর্ঘজটে দেহটা কোথায় রাখি? - সালাউদ্দিন শাহরিয়া

সালাউদ্দিন শাহরিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৭

সালাউদ্দিন শাহরিয়া

ভার্সিটিতে একমাত্র বন্ধু ছিলো সামির। মজার ব্যাপার হলো আবিরের নামের সাথে সামিরের নামেরও মিল আছে। আরো দুইজন বন্ধু ছিলো যদিও ঘনিষ্ট না। তবে প্রায় সময়ই তারা চারজন একসাথে থাকতো। গ্রুপ স্টাডি, আড্ডা আর গল্পগুজব। আবির, বৃষ্টি ও সাকিব তারা তিন জনকে আবির বইপোকা বলে। কারণ সে সাহিত্য, গল্প, কবিতা এইসব পড়ে না ও পড়তেও চায়না। বই মেলা এসেছে সে যেতে না চাইলেও জোর করে তাকে নেওয়া হচ্ছে। যাইহোক অবশেষে বইমেলায় সামির, বৃষ্ট্ িও সাকিব যার যার পছন্দের লেখকের বই কিনলো ও আবির তাদের সাথে থাকলো। বই কেনা শেষ এখন রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি খাবে। অর্ডার করলো। হঠাৎ আবিরের মা ফোন দিলেন।
_ আবির তুই কই ?
_ মা! আমি বইমেলায়। আচ্ছা কি হয়েছে কাদঁছো কেন ?
_ হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলেন আবিরের মা।
_ মায়ের কান্না সহ্য করতে না পেরে সেও কাদঁতে লাগলো। কিন্তু কেনো কাদঁছে সে এখনো জানেনা। সামির, বৃষ্টি আর সাকিবও অবাক। কি হয়েছে ? আবির ?
_ মা বলনা কি হয়েছে।
_ আবির তোর গত সপ্তাহে বাবা এক্সিডেন্ট করেছেন। বিদেশের একটি হসপিটালে আছেন। এখনো জ্ঞান ফিরেনি আই.সি.ইউ-তে আছেন।
আবির ভেঙ্গে পড়লো। ফ্রেন্ডরা রেস্টুরেন্ট আর বিল দিয়ে কোন রকম তাকে হোস্টেলে নিলো। ঐদিন রাতে সে ঢাকা থেকে রওনা দিলো সাথে বন্ধুরাও। বাড়িতে আত্মীয়রাও আসছেন। চোখের কান্নার ফোটা সবার। তাকে দেখেই মা হাউমাউ করে কাদঁতে লাগলেন। এই আবার আরেক কান্নার ঝড় হইলো। আবির কাদঁছে, মা কাঁদছে তার আত্মীয় ও ফ্রেন্ডরাও কাদঁছেন। হঠাৎ তার চাচা এসে ধমক দিলেনÑ কি শুরু করছো, কাদঁলে কি হয় বলে তিনি কাদঁতে লাগলেন। চাচা আবার ভেঙ্গে না পড়ে সবাইকে শান্তনা দিলেন। তার বন্ধুরাও চলে গেলো।

ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করলো। তারপর একটু হাটলো গ্রামের রাস্তায়। এমনিতেই তার মন খারাপ এদিকে যে তাকে পায় বলে তোর বাবা খুব ভালো ছিলেন, ছুটিতে আসলে প্রায়ই আমার গল্প-গুজব করতেন। ইশ! আচ্ছা তোমার বাবার কি জ্ঞান ফিরেছে। আবির ভাঙ্গা কন্ঠে বললো না। আরো একটু পথ সামনে যেতেই আরেকজন এরপর আরেকজন জিজ্ঞেস করতে লাগলো তোর বাবার কি খবর আর সুনাম আর সুনাম। সে বাড়িতে চলে আসলো। মা এখন নামাজের খাটে বসে আছেন ও তসবিহ পড়ছেন। হঠাৎ ফোন আসলো তার বাবার তার বাবা নেই। আজই দেশে পাঠানো হবে। এইতো কান্না আর কান্না। চিৎকার আর চিৎকার। জানাজানি হয়ে গেলো আবিরের বাবা আর নেই। তার ছোট বোন সাদিয়া আর সে। এক ভাই এক বোনের মাঝে সে বড়। সাদিয়া ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। চাচা একজন শফিক আলী। আত্মীয়রা আসলেন চারিদিক থেকে। রাত পরেরদিন মাগরিবের সময় লাশ রিসিভ করতে গেলেন তার চাচা, মামা, আর সে। অবশেষে দাফন হলো।

চারদিন পর শুক্রবারে শিন্নির আয়োজন করা হলো। মসজিদে দেওয়া হলো আর আত্মীয় ও এলাকার মানুষজনদের দাওয়াত দেওয়া হলো। শিন্নির সম্পন্ন। পরিবেশ মোটামোটি শান্ত। তার পরীক্ষাও কাছাকাছি সে চলেগেলো ভার্সিটিতে।
আবিরের চাচা ভূমি জরিপের একজন কর্মকর্তা। আর তার হচ্ছেন বড় ভাই। ছোট ভাই মানে আবিরের চাচাকে অন্ধবিশ^াস করতেন। জায়গা জমি সব কিনতে শফিক আলীকে দায়িত্ব দিতেন। দুই ভাই মিলে কিনতেন। আবির তো আর এইসবে কান দিতো না। সে বলতো চাচা থাকতে আমি কি করবো। তার কাজ হচ্ছে ভার্সিটিতে মেয়ে পটানো আর আড্ডা। সামির, বৃষ্টি ও সাকিব বইপড়–য়া হলেও সে ছিলো প্রেমিক পুরুষ। একটার পর একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম করতো। যাই হোক এগুলো অতীত। বর্তমানে সে ভার্সিটিতে গিয়েও পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তার ২টা গালফ্রেন্ড যখন জানলো আবিরের বাবা এক্সিডেন্ট এ মারা গেছেন একবারও তার কাছে এসে জানতেও চাইলো না শান্তনা দিলনা। একবারও আবিরকে ফোনও করল না। আবির মনে করেনি যে, তার গালফ্রেন্ডরা তাকে ফোনও দিচ্ছে না এক কথায় কোন যোগাযোগ করছে না। পরীক্ষা শেষ করে নতুন সেমিষ্টারে উঠবে। সেমিষ্টার ফি এর জন্য মাকে ফোন করলো। মা বললেন তোর বাবা তো আমাকে কোন লেনদেন করতো না। তোর চাচাকে বল। চাচাকে ফোন করে বললো। চাচা সেমিষ্টার ফি লাগবে। চাচা বললো কত টাকা। সে বললো বাইশ হাজার টাকা আর আমার আরো তিন হাজার টাকা। মোট পঁচিশ হাজার টাকা। চাচা তাকে দিয়ে দিলেন। আস্তে আস্তে হোস্টেলের মাসিক টাকা ও সেমিষ্টার ফি দিতে চাচা নাকোচ নাকোচ ভাব। পরে সে বুঝতে পারলো।

বাড়িতে আসার পর বাবার ক্রয় করা জমি জমা দলিল পত্র বের করে দেখে। তেমন কিচ্ছু নাই। বাড়ির অংশ আর দাদার দেওয়া সামান্য জমি জমা ছাড়া সব কিছু তার চাচার নামে। সে শুনছিলো তার বাবা নাকি বাজারের একটি মার্কেটও কিনেছিলেন। কিন্তু সেই মার্কেটেরও মালিক তার চাচা। এখানে তার বাবার নামের ও কোন দলিলও নেই প্রমাণও নেই। এই বিষয়ে সে এলাকার কিছু মুরব্বিদের জড়াও করলো। কিন্তু তার চাচা শফিক মিয়া রঙ চা আর কিছু হাদিয়া দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দিলো। আত্মীয়স্বজনেরাও তেমন পাত্তা দিচ্ছেনা। অথচ তার বাবা থাকাকালীন তাদের ঘরে আসা যাওয়া খোঁজ খবর করতো বেশি। আর এখন আত্মীয়রাও আস্তে আস্তে পর হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে কোন প্রমাণ না থাকায় কি আর করবে। দামী দামী জায়গা আর সম্পত্তির মালিক তার চাচা।

ইংরেজীতে অনার্স করছে সে। এখন ২য় বর্ষে ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। হোস্টেলের থাকা খাওয়ার খরচ আর সেমিষ্টার ফি কিভাবে দেবে এ নিয়ে তার ঘুম আসছে না। লেখাপড়া বাদ দিয়ে দেবে নাকি পড়বে। অথচ কিন্তু সে পড়তে চায়। কেউ পাশেও নেই। সবচেয়ে কাছের বন্ধু সামিরও তাকে এখন পাত্তা দেয়না। কারণ পার্টি, আড্ডা মাস্তি করতে অনেক টাকা লাগে তা আবির দিতে পারে না। প্রথম দিকে সামির বহন করছিলো আর কতো। তাই তার বন্ধুও নাই বললে চলে। তার বোন সাদিয়া ৪র্থ শ্রেণিতে উঠছে। পড়ালেখার খরচও বাড়ছে। সে কি করবে ? একা একা ভাবছে। অতপর বাবার শেষ সম্বল একটু টুকরো জমি বিক্রি করলো। সেমিষ্টার ফি এর জন্য তো শেষ হয়ে যায়। এদিকে তার পরিবার চলবে কিভাবে আর সেও তার লেখাপড়া চালাবে কি করে। আড্ডা মাস্তি, প্রেম পিরিতির জন্য তার একস্ট্রা কোন স্কীল ডেভেলপমেন্টও নাই যে, সে পার্ট টাইম একটা জব করবে। জমি বিক্রি করে দিলো অবশেষে।

পার্ট টাইম জব করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। যাতে করে সে লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের জন্য কিছু দিতে পারে। কিন্তু ফুল টাইম হলে কথা। পার্ট টাইমে তো এতো কিছু করা যায়না। তারপরও চেষ্টা চালাতে লাগলো। একটি অনলাইন সাইটের এডমিন পেনেলের দায়িত্ব পেলো। এই চাকরিটি তার ক্যাম্পাসের বড় ভাই দিয়েছে। ক্যাম্পাসের বড় ভাই সব জেনে একটু দয়া ঢুকেছিলো আর ভাবছিলো অন্যএকজনকে এই পোস্ট দেবো তাহলে তাকেই দেই। যাতে সে লেখাপড়াও চালাতে পারে পরিবারকেও কিছু দিতে পারে। একটু শান্তি লাগলো তার।

এই অগ্নি পরীক্ষা থেকে মহান আল্লাহর শেষ রহমতে সে অনার্স শেস করলো। এবং অনলাইন একটি চাকরি করে ও ভালো চাকরীর জন্যও ইন্টারভিও দিচ্ছে। তার মা ও বোন সে শান্তিতেই আছে। সে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে কেউ বিপদের সময় কেউ পাশে না থাকলেও তিনি থাকেন।

মানুষের জীবনে কার কি পরীক্ষা আসবে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন।

[সম্পূর্ণ কাল্পনিক]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: এই অগ্নি পরীক্ষা থেকে মহান আল্লাহর শেষ রহমতে সে অনার্স শেস কর
অশেষ রহমতে হবে।বানানটা ঠিক করে নিন।

মানুষ নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনেন আর উদ্ধার করেন মহান আল্লাহ।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.