![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা সময় খুব ইচ্ছে ছিলো,
সংস্কৃতির আঙ্গিনার
নিজেও একজন হওয়ার।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে
হয়েছিলোও পথচলা।
স্বরচিত কবিতা পাঠের ১লা ফেব্রুয়ারীর
কবিতা উৎসবে ,
বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র,টিএসসি চত্বর,একুশের বইমেলা,চারুকলাতে।
হয়েছিলো ছাপার কালিতে
নিজের লেখার অবলোকন।
স্বপ্ন ছিলো ২১শে বই মেলায় লেখাগুলো আমার
বই আকারে দেখতে পাবার।
তারুণ্যের দেখা সেই স্বপ্ন, কুড়ি থেকে দল মেলে বিকশিত হবে একদিন ইনশাআল্লাহ।
সেটা ছিল আমার
যাকে বলে সেক্যুলার
মুসলিমের যুগ।
তবে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল সেটা
যদিও তা আমি জানতাম না ;
লেখক, কবি হওয়ার ইচ্ছে
ছিলো খুব।
তারপর হারাম মনে করে
নিজেকে গুটিয়ে নেয়া
সেখান থেকে নিজেকে
নিজেই ছুটি দেয়া।
লেখালেখি এমন কাজ যেটা হালাল। যদি ইলম চর্চার মাধ্যমে দ্বীনের খেদমত করা যায় ইসলামের সীমা রেখা মেনে। এবং সেটা প্রশংসনীয় ও।
আমরা অনেকে অনেক কিছু না জানা অথবা ভুল জানার কারনে দ্বীনের খেদমত থেকে নিজেকে বন্চিত করি।
ইলম চর্চা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই।
ইসলাম কোন প্রতিভাকে বাধা প্রদান করেনি। তবে তা হতে হবে শরিয়তের গন্ডির সীমারেখা মেনে।
সেইকালে সেভাবে বুঝ আসে নাই; ইসলামী চিন্তা ভাবনা নিয়েও কবিতা লেখা যায়। বয়সের অপরিপক্কতা ও জ্ঞানের অভাব। আসলে তখন বয়সে ছেলেমানুষই ছিলাম বটে।
সাধারনত কবিতায়, লেখাতে দেখা যায় মনুষ্যপ্রেম নিয়ে মানুষের কাব্যগাথা। কিংবা প্রকৃতির সৌন্দর্য, কল্পনার সাহায্যে চিত্র ফুটিয়ে তোলেন কবিগন। মনের মাধুরি মিশিয়ে তারা সৃষ্টির প্রেমে হয় আত্মহারা।
তবে যারা লেখালেখি করে কবি এবং পাঠক উভয় (মুসলিম ঈমানদারদের জন্য) রয়েছে সতর্কবানী---
( কোরআনে কারীমে দুনিয়াদার কবিদের সম্পর্কে সুরা আশ- শোয়ারায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন---
وَالشُّعَرَآءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوٗنَؕ
সূরা নম্বর: ২৬ আয়াত নম্বর: ২২৪
এবং কবিদেরকে অনুসরণ করে বিভ্রান্তরাই।
اَلَمْ تَرَ اَنَّهُمْ فِىْ كُلِّ وَادٍ يَّهِيْمُوْنَۙ
সূরা নম্বর: ২৬ আয়াত নম্বর: ২২৫
এবং তুমি কি দেখ না উহারা উদভ্রান্ত হইয়া প্রত্যেক
উপত্যকায় ঘুরিয়া বেড়ায়?
وَاَنَّهُمْ يَقُوْلُوْنَ مَا لَا يَفْعَلُوْنَۙ
সূরা নম্বর: ২৬ আয়াত নম্বর: ২২৬
এবং তাহারা তো যা বলে, যাহা তাহারা করে না।
اِلَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَذَكَرُوا اللّٰهَ كَثِيْرًا وَّانْتَصَرُوْا مِنْۢ بَعْدِ مَا ظُلِمُوْا ؕ وَسَيَـعْلَمُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْۤا اَىَّ مُنْقَلَبٍ يَّـنْقَلِبُوْنَ
সূরা নম্বর: ২৬ আয়াত নম্বর: ২২৭)
কিন্তু উহারা ব্যতীত,যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে ও অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানিবে কোন স্হলে উহারা প্রত্যাবর্তন করিবে।)
**আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসে (কিয়ামতে) সে তারই সাথী হবে।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। তিনি বললেন, মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।
-----------------------------------------------------------------------
যুগান্তর পত্রিকার এই লেখাটি আমাকে নতুন করে লেখার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
**কবিতা ও কাব্যচর্চায় ইসলামের দৃষ্টিভংগিঃ----
সম্বলহীন পাথেয় বিহীন/ আমি দেওয়ানা।
তোমার তো ওগো আছে বহু জন/ আমার তো কেউ নাই কেউ নাই/ পাগল আমি তোমারি দেওয়ানা। হে রাসূল/ ওগো প্রিয়/ ফেলে দিও না/ ছেড়ে যেও না।’- আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যচর্চা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়েছে ছন্দবদ্ধ বাক্য। কিন্তু ওইসব ছন্দবদ্ধ বাক্যকে কবিতা বলা হত কিনা জানিনা। তবে এটা সত্য, ভাষা ও সাহিত্যজগৎ কাব্য ও ছন্দ নিয়েই তার যাত্রা শুরু করেছিল। কবিতাই ছিল মানুষের সাহিত্য সৃষ্টির প্রাথমিক মাধ্যম।
পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকে সব যুগেই কাব্যসাহিত্য সমাদৃত ছিল। কবিরা তাদের কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন সম্প্রদায়, সমাজ, দেশ ও জাতির গৌরব গাথা। কবিতার ময়দান সবসময় ছিল প্রতিযোগিতামূলক।
কবিদের মধ্যে যিনি যত বেশি উন্নতমানের কবিতা উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন, তিনিই হয়েছেন বেশি সমাদৃত। আরবদের জীবন ও জীবিকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা, আশা ও আনন্দ, শত্রুতা ও মিত্রতার বাহন ছিল কবিতা।
কবিতা ছিল তাদের ইতিহাস, তাদের বিজ্ঞান, তাদের সংস্কৃতি ও তাদের সভ্যতা। এক কথায় তৎকালীন আরবে কবি ও কবিতা বহুল প্রচলিত ও চর্চিত একটি বিষয় ছিল। আরবের মানুষের মন ও মনন, আরবের পথ ও প্রান্তর কবি ও কবিতার দ্বারা মেঘমালার মতো আবৃত ছিল।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এই ধরনীতে শুভাগমন করেছিলেন, তখন ছিল আরবি কাব্য-সাহিত্যেও সোনালি যুগ।
বিশ্ববিখ্যাত কবিরা প্রতিযোগিতার ময়দানে অবতীর্ণ হতো আরবের প্রখ্যাত ‘ওকাজ’ মেলায়। যার কবিতা ওই মেলায় শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো তাকে ‘বছরের সেরা মানুষ’ উপাধিতে ভূষিত করা হতো।
আর যেই কবিতার কারণে তিনি ‘বছরের সেরা মানুষ’ উপাধিতে ভূষিত হতেন ওই কবিতা কাপড়ের উপর সোনালি রঙের কালি দিয়ে লিখে দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্র, মর্যাদাবান স্থান বাইতুল্লাহর সাথে ঝুলিয়ে রাখা হতো। যাকে বলা হতো ‘মুয়াল্লাকাত’ বা ঝুলন্ত কবিতা।
বিশ্বসাহিত্যে আজও ‘সাবয়ে মুয়াল্লাকাত’ বা ‘ঝুলন্ত কবিতা সপ্তক’ সবিশেষ প্রসিদ্ধ।
অবাক করার মত বিষয় হলো, যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যখন আল্লাহর প্রেরিত পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হলো, তখন কুরআনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভাষা ও সাহিত্য আরবের সকল সাহিত্যকে ম্লান করে দিলো।
সবার উপরে স্থান করে নেয় আল-কুরআন। প্রথম দিকে যেসব কবি ইসলাম গ্রহণ করেন, তারা কুরআনি সাহিত্যের ভাবগাম্ভীর্য ও রচনাশৈলীতে ছিলেন বিভোর। কবিতা রচনা ও চর্চা করা ছিল তাদের কাছে গৌরবের বিষয়।
আল্লাহর নবী মানুষের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় জগতের জিজ্ঞাসার জবাব নিয়ে এসেছেন। ইসলাম যে মানুষের বাহ্যিক ও আত্মিক উভয় অঙ্গনের খোরাক দিতে সক্ষম তার উদাহরণ পেশ করলেন সবক্ষেত্রে। কাব্য-সাহিত্যেও এর উদাহরণ সত্যিই উজল।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যুগের কাব্য সাহিত্য নিয়ে আছে আদিগন্ত বিস্তীর্ণ কথকতা। যা নাতিদীর্ঘ ও বিশদ আলোচনার দাবি রাখে।
নবীজীসহ সাহাবায়ে কেরামের প্রত্যেকেই ছিলেন আরবি ভাষায় পারদর্শী ও সাহিত্যমনস্ক। কবিতার ক্ষেত্রে রাসূলের সাহাবিখ্যাত ‘ত্রয়ী’ হজরত হাসসান ইবনে সাবিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ও কাব ইবনে মালিক রা.-এর পারঙ্গমতা সাহিত্য মহলে সুবিদিত।
প্রধান চার খলিফার তিনজনই সাহিত্যালয়ে ঝলমলে। ইতিহাসের বিভিন্ন বর্ণনানুযায়ী তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কবিতা রয়েছে।
এতকিছুর পরেও আমাদের সমাজের কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মনে করেন, ইসলাম ধর্মে কবিতা নাজায়েয মনে করা হয়, এই ধর্মে কবিতার কোন আবেদন নেই।
কিন্তু সত্য কথা হলো, ইসলাম আসার কারণে কবিতার আবেদন ফুরায়নি এবং ইসলাম কবিতাকে নাজায়েজ ফতোয়া দেয়নি। বরং ইসলাম কখনো কখনো কবিকে উৎসাহিত করেছে আর কবিতাকে শক্ত গলায় পাঠ করেছে।
তবে হ্যাঁ, কবিতার নামে যদি নগ্নতা, বেহায়পনা বা অশ্লীলতা পাঠ দেয়; তাহলে ইসলাম সেই কবিতাকে শুধু নিষেধ করেনি, সমাজ থেকে চিরতরে মুছে ফেলার আদেশও দিয়েছে।
কবিতার নামে যদি তাওহিদবাদ আঘাত করা হয়, কবিতার নামে যদি একাত্ববোধকে কলঙ্কিত করা হয়; তখন কবি কবিতাকে উপড়ে ফেলার হুকুম দিয়েছে ইসলাম। আসলে ইসলাম চায় না কবিতার নামে কেউ নগ্নতা ছড়াক, কবিতার নামে কেউ একাত্ববোধকে নষ্ট করুক।
আমাদের পেয়ারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাক জবানে যেসব কবিতা আবৃত্তি হয়েছে, সেই কবিতার গল্প শুনাই আপনাদের।
হজরত বারা ইবনে আযিব রা.-এর সূত্রে ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেন, খন্দক যুদ্ধের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে খন্দক তথা পরিখা খননের কাজে শরীক ছিলেন।
তখন নবীজীকে আমি খন্দকের মাটি বহন করে নিয়ে যেতে দেখেছি। ধুলো-বালি তার পাকস্থলির উপরিভাগের চামড়া ঢেকে ফেলেছিল। তিনি ছিলেন ঘন চুলের অধিকারী।
এ অবস্থায় নবীজীকে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার এ পঙতিমালাকে আবৃতি করতে শুনেছি- ‘আল্লাহুম্মা লাও লা আনতা মাহতাদাইনা, ওলা তাছাদ্দাকনা ওলা সাল্লাইনা/ ফাআনযালনা সাকিনাতান আলাইনা, ওয়া সাব্বিত আকদামানা ইন লা কাইনা/ ইননালউলা রাগগিবু আলাইনা, ওয় ইন আরাদু ফিতনাতা আবাইনা।
(হে আল্লাহ! আপনি যদি আমাদের অনুগ্রহ না করতেন; আমরা হেদায়াত পেতাম না, আমরা দান খয়রাত করতাম না এবং নামাজ আদায় করতাম না। অতএব, আমাদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন এবং কাফিরদের সঙ্গে যদি আমাদেও মোকাবিলা হয়, তাহলে আমাদেরকে ধৈর্য দান করার তাওফিক দেন। তারা আমাদের বিরুদ্ধে লোকদের প্ররোচিত করেছে, যদি তারা ফেৎনা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে আমরা কখনোই মাথা নত করবো না।)
হজরত আনাস রা.-এর সূত্রে ইমাম বুখারী রহ. আরও বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খন্দকের দিকে যান। আনসার ও মুহাজির সাহাবারা তখন শীতের সকালে ঠাণ্ডার মাঝে খন্দক খনন করছিলেন।
কাজে সহযোগিতা করার মত তাদেও কোন দাস ছিল না। ফলে তারা নিজেরাই খনন কাজ করে যাচ্ছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ক্লান্তি ও ক্ষুধার কষ্ট দেখে নিম্নের পঙতিটি আবৃতি করলেন- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নালআইশা আইশুল আখিরা/ ফাগফিরিল আনসারা ওয়ল মুহাজিরা।’
(ওগো আল্লাহ, পরকালের জীবন তো প্রকৃত জীবন, আপনি আনসার ও মুহাজিরদের পাপ করো মোচন।)
কবিতার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো, কবিতার মধ্যে নগ্নতা, বেহায়াপনা বা তাওহিদ বিশ্বাসকে আঘাত জাতীয় কিছু না থাকে, তাহলে সেই কবিতা লেখা জায়েজ। এর বিপরীত হলে জায়েজ নেই।
কবিতার ব্যাপারে পবিত্র হাদিসে শরীফে বেশ কিছু নির্দেশনা দেখা যায়, যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি কবিতা জায়েজ নাকি নাজায়েজ।
হাদিস থেকেই আমরা সেইসব কথা জানি- ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবন আমর রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কবিতা তো কথারই মতো। রুচিসম্মত কবিতা উত্তম কথাতুল্য, কুরুচিপূর্ণ কবিতা কুরুচিপূর্ণ কথাতুল্য।’ (মুসলিম)
উল্লিখিত হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, কবিতার হুকুম সাধারণ কথার মতোই। উত্তম কথার মতো উত্তম কবিতাও ইসলামে উত্তম বলে গণ্য হবে। আর নাজায়েজ জিনিসে পূর্ণ কবিতা ইসলামে নাজায়েজ বলে গণ্য হবে।
কবিতায় নাজায়েজ থাকলে তার গ্রহণীয় নয়, বরং সেই কবিতার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা আছে হাদিসে।
এরকম একটি হাদিস- হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি কবিতা দিয়ে পেট ভর্তি করার চেয়ে পুঁজ দিয়ে পেট ভর্তি করা অনেক উত্তম।’
এরকম আরেকটি হাদিস শুনি। যে হাদিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিতাকে খারাপ বলেছেন।
আম্মাজান হজরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মধ্যে মারাত্মক অপরাধী হলো সেই কবি, যে সমগ্র গোত্রের নিন্দা করে এবং যে ব্যক্তি নিজ পিতাকে অস্বীকার করে।’ (মুসলিম ও মুসনাদ আহমদ)
পবিত্র কোরআনে কবিদের বিভিন্ন বর্ণনা সমৃদ্ধ ‘আশশুয়ারা’ নামের একটি সূরা আছে।
তাতে আল্লাহ তাআল ইরশাদ করেছেন, ‘কবিদের যারা অনুসরণ করে তারা বিভ্রান্ত। আপনি কি দেখেন না যে, তারা মাঠে ময়দানে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং এমন কথা বলে যা তারা করে না। তবে তাদের কথা ভিন্ন যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে এবং অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। অত্যাচারীরা অচিরেই জানবে কোন স্থানে তারা ফিরে আসবে। (সূরা আশশুয়ারা, আয়াত ২২৪-২২৭)
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর কবি ও কবিতাপ্রেমী হজরত আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা, হজরত হাসসান বিন সাবিত, হজরত কাব ইবনে মালিকসহ প্রমুখ সাহাবী কাঁদতে কাঁদতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে দরবারে হাজির হয়ে আরজ করেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা কেন এই আয়াত নাজিল করেছেন?
আমরাও তো কবিতা রচনা করি, এখন আমাদের উপায় কী হবে? তাহলে কী আমরা কবিতাচর্চা বন্ধ করে দেব?’
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আয়াতের শেষাংশ পাঠ করো। এই আয়াত নাজিলের উদ্দেশ্য হলো, তোমাদের কবিতা যেন অনর্থক ও ভ্রান্তির উদ্দেশ্যে রচিত না হয়। এই আয়াতের প্রথমাংশে মুশরিক, মুনাফিক কবিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং শেষাংশে তৎকালীন সমাজে ব্যতিক্রমী কবিদের কথা বলা হয়েছে। কাজেই তোমরা আয়াতের শেষাংশে উল্লিখিত কবিদের শামিল।’ (ফতহুল বারী)
এসব হাদিস ও কোরআনের আয়াতগুলো দ্বারা আমরা বুঝলাম। কবিতার মধ্যে মন্দ বিষয় থাকায় কবিতাকে খারাপ বলা হয়েছে। আর কবিতার মধ্যে ভালো বিষয় থাকলে ভালো বলা হয়েছে।
হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বা এক বেদুইন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও আকর্ষণীয় ভাষায় কথাবার্তা বললো। তখন নবীজী বললেন, কথায়ও যাদুকরী প্রভাব থাকে এবং কবিতাও প্রজ্ঞাপূর্ণ হতে পারে। (তিরমিযি ও আবু দাউদ)
হাদিসের একটি ঘটনা বলি! হজরত শারিদ ইবনে সালামি রা. বলেন আমি একদিন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম।
নবীজী আমাকে বলেন, তোমার কাছে কী কবি উমাইয়া ইবনে আবিস সালত এর কোনো কবিতা আছে? আমি বললাম, জি। তিনি বললেন, শোনাও আমাকে! তারপর আমি কিছু কবিতা শোনালাম। তিনি বলেন, আরো শোনাও!
আমি আরো কিছু কবিতা শোনালাম। তিনি বলেন, আরো শোনাও। এভাবে আমি তাকে উমাইয়া ইবনে আবিস সালতের প্রায় ১০০টি কবিতা শোনালাম।
প্রিয় পাঠক! উমাইয়া ইবনে আবিস সালত কে, জানেন? তিনি হলেন জাহেলি যুগের একজন কবি। কিন্তু তার কবিতায় উত্তম কথামালা থাকায় এবং অশ্লীল বেহায়াপনা ও ঈমান বিনষ্ট কোনো উপাদান না থাকায় স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবিতা বেশ সময় নিয়ে শুনেছেন এবং হজরত শারিদ ইবনে সালাম রা. উমাইয়া ইবনে আবিসের কবিতা মুখস্থ রাখার কারণে কোন বকাঝকাও করেননি।
সাহাবায়ে কেরাম ছাড়াও তাবিয়ি তাবেতাবিয়িদের মাঝে ব্যাপক কবিতার চর্চা ছিল। কবিতার দ্বারা পবিত্র কোরআনের তাফসিরও করেছেন অনেক উলামায়ে কেরাম।
হজরত আলী রা.-এর পরে তার ছেলে হজরত ইমাম হুসাইন রা. একজন তুখোড় কবি ছিলেন। ইমাম ইবনে কাসির রহ. তার আলবিদায়ার মধ্যে ইমাম হুসাইন রা.-এর থেকে বর্ণিত কয়েকটি কবিতা উল্লেখ করেন।
দ্বিতীয় শতকের শ্রেষ্ট কবিদের মধ্যে সর্বাগ্রে যার নাম আসবে তিনি হলেন আবু জুহুমাহ। যার আসল নাম কুসাইর ইবনে আবদুর রহমান। তিনি খলিফা আব্দুল মালেকের দরবারের সমাদৃত কবি ছিলেন এবং তার যাতায়াত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের দরবারেও ছিল।
ইসলামের ইতিহাস জানা ছোট্ট ছেলেটাও যে কবির নাম জানে তিনি হলেন কবি ইবনে জারির রহ.। তার মূল নাম ছিল জারির ইবনুল খাতাফি। প্রসিদ্ধ ছিলেন আবু আতিয়্যাহ নামে। তিনি ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়াহ রহ.-এর দরবারে আসা যাওয়া ছিল।
তার কবিতা দিয়ে যুদ্ধের জন্য সৈন্য প্রস্তুত করা হতো। তার সমসাময়িক কবি ছিলেন কবি ফারাযদাক ও আখতাল। ইসলামের ইতিহাসে কবিদের কাতারের একেবারের প্রথম দিকে যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে কবি ফারাযদাক।
বিশিষ্ট তাবিয়ি হজরত উমার ইবন সালাম রহ. বলেন, হজরত আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ান তার সন্তানদের আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়ার জন্য ইমাম শাবী রহ.-এর নিকট সোপর্দ করেন।
তিনি বলেন, এদের কবিতা শিক্ষা দিন, তাতে তারা উচ্চাভিলাসী ও নির্ভীক হবে। ইমাম শাফিঈ রহ. কাব্যচর্চার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর একটি সুবিখ্যাত কবিতার সংকলন আছে। এভাবে সবযুগেই কবিতার চাষাবাদ ছিল আহলে ইলমের মাঝে।
মূলত কবিতার আছে যাদুকরি প্রভাব। একারণেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবিতা শুনতেন, কবিতা পছন্দ করতেন, কবিদের ভালবাসতেন।
তিনি শুধু কবিতা রচনার নির্দেশই দেননি বরং ভালো কবিতাকে পুরস্কৃতও করেছেন। তবে নবীজী কবিতা বলতে অন্তসারশূন্য, ছন্দোবদ্ধ, উপমা বহুল ভাষাকে বুঝাননি। বরং ভাব ও ভাষার সমন্বয়ে অর্থপূর্ণ রচনাকেই কবিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং অপসংস্কৃতির সয়লাবের এই যুগে এ ধরনের কবিতাই পারে সদাচঞ্চল তারুণ্যকে সঠিক পথ দেখাতে।
সুতরাং আমাদের যারা কলমকে দ্বীন প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে আগ্রহী, যাদেও লেখনীর উদ্দেশ্য সস্তা বাহবা কুড়ানো নয় বরং আহরিত জ্ঞানকে সর্বসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, দেশ, জাতি, উম্মাহর কল্যাণে যারা নিবেদিত করতে চাই নিজেকে, তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে আরো যত্মবান হওয়ার কথা বলি।
সস্তা ভাব, চটুল ভাষা আর মিথ্যা উপমায় যেন ভারাক্রান্ত না হয় আমাদের কবিতায়।
হজরত ওমর ফারুক, হজরত আলী ইবনে আবু তালিব, হজরত হাসসান বিন সাবিত, হজরত কা’ব বিন মালিক, হজরত কা’ব বিন যুহায়র, হজরত আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. ও ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফিয়ী, ইমাম বুসিরী, শেখ সাদী, জালালুদ্দিন রুমী, জামী, ফরিদুদ্দিন আত্তার, ইবনুল আরাবি, ওমর খৈয়াম, মির্জা গালিব, আল্লামা ইকবাল, আলতাফ হালী, নজরুল, ফররুখের মত আমাদের কবিতা যেন হয় অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের হাতিয়ার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের অজেয় দুর্গ।
উম্মাহর এই দুর্দিনে, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কবিতা হোক মুসলিম উম্মাহর জাগরণের হাতিয়ার।
শেষ করি কবিতায় ভাষায়- ‘আমাদের সকাল-ঘুম না ভাঙলেই পরকাল/ প্রতিরাত শেষে আসবে সকাল/ এমন কিন্তু নয়…/ অনেক সময় সূর্য হাসলেও/ কারোর সকাল রাত্রিময়।’
----------------------------------------------------------------------
আসলে ইসলামী চিন্তা, চেতনা, ভাবধারায়ও যে লিখতে পারি সে জ্ঞানটা তখন ছিল না।
স্রষ্টার প্রতি প্রেম,এটা কবির আত্মার গভীর থেকে উঠে আসা। বাঙময় পংতি, সুর হয়ে প্রার্থনা রুপে পাঠকের অন্তরে যে ভাবের উদয় হয় তেমনভাবে সৃষ্টির বর্ননা অন্তরে দোলা দেয়না। আর যদি এমনটি হয় তবে সেটা সৃষ্টির বন্দনা বা পূজা,যেটা নিষিদ্ধ।
একটাই জীবন এই অনুভূতি, ফেলে আসা অতীতকে দোষারোপ,বা আফসোস করে কি হবে। যতটা সময় আছে গনিমত মনে করে কাজে লাগানো।
নিজে অন্তরে আল্লাহ তায়ালার প্রতি গভীর প্রেম অনুভব করা, রাসূলের মহব্বত এবং সাহাবীগনের প্রতি ভালোবাসা অন্তরে লালন করা,যার প্রকাশ কলমের আঁচড়ে পাঠকের অন্তরে ফুটিয়ে তোলার মানসে
ফের ----
এই প্রয়াস
আল্লাহ তায়ালা লেখার তৌফিক দান এবং কবুল করুন।
আমীন।
১)#আকাঙ্খা"
জাহেলি যুগের বিখ্যাত
উকাজের সেই মেলা নয়;
শাহাবাগের কবিতার আসরও নয়।।
নয় টিএসসির ১লা ফেব্রুয়াীর কবিতা উৎসব,
বটতলা, হাটতলা বা কফি হাউসের আড্ডাও নয়;
নয় টেলিভিশনের পর্দা বা বিশ্বসাহিত্যের মঞ্চ।।
যখন বসবে মেলা জান্নাতে
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে।
আবু বকর, উমর, আলী (রাঃ) কবিগন,
কবি ইমাম শাফেয়ী সহ আরো অনেকে।।
কবিদের জমবে আসর কবিতার!
জম্পেশ আড্ডা হবে।
শরাবুন তহুরা পরিববেশিত হবে,
সোনা রুপার কাঁচের পেয়ালায়!
হবে আবৃত্তি কবি লাবিদের
কবিতার সেই শ্রেষ্ঠ পঙতিমালা--
"জেনে রেখো,আল্লাহ ছাড়া
যা কিছু রয়েছে সব বাতিল।।"
রাওয়াহা রাঃ কবিতার
আবৃত্তি শুনতে চাই
কন্ঠে আপনার।।
খানসা (রাঃ)এর মতন;
চাই শোনাতে
হে প্রিয় রাসুল!
পেতে চাই স্হান
আপনার সেই আসরে
জান্নাতে।।
"রব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আংতাস সামী'য়্যুল আ'লীম। "
"হে আমাাদের রব।আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা,সর্ব জ্ঞানী। "
২) # দুঃসাহস
কিছু কিছু মানুষ আছে
হঠাৎ করে প্রচন্ড
লোভী হয়ে যায়,
লোভ বাড়তে বাড়তে
সাত আসমান ভেদ করে
লোভ তার আরশ পানে ধায়।
এর আগে স্বভাবে
এমনটা দেখা যায়নি।
সব সময় সাদামাটা
চলনে- বলনে,পোশাকে,
আসবাবে;
নিতান্তই আটপৌরে,
কোনমতে চলে গেলেই সরে।
বুঝতোও না কিছু তেমন
সমাজ সংসারে।
অনায়াসে ঠকিয়ে নিলেও
বলতো থাকগে।
কেউ ধরিয়ে দিলেও
বলতো যাকগে।
অল্পতেই সন্তুষ্ট ছিল সে।
তাই বলে উস্কোখুস্কো মোটেও নয়;
ছিমছাম,পরিপাটি সব সময়
সামান্য ঘটিবাটি,
দু-চার টে লেপ কাঁথায়
চলে যেতো বেশ
বুঝি এভাবেই জীবনের
হয়ে যাবে শেষ।
কিন্তু হঠাৎ লোভী হয়ে ওঠার
এত্তো বড় দুঃসাহস!
দ্বীনের সে কি জানে?
আমলই কি পারে বা মানে।
শুধু মাটিতে সেজদা দিয়ে
বললেই হলো---
( اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِى يُبَلِّغُنِى حُبَّكَ اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ نَفْسِى وَأَهْلِى وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাক। ওয়া হুব্বা মান ইয়ুহিব্বুক। ওয়াল আমালাল্লাজি ইয়ুবাল্লিগুনি হুব্বাক। আল্লাহুম্মাজআল হুব্বাকা আহাব্বা ইলাইয়া মিন নাফসি ওয়া আহলি ওয়া মিনাল মা-ইল বারিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার ভালোবাসা চাই
এবং আপনাকে যে ভালোবাসে তার ভালোবাসা চাই
ও সেই আমলের ভালোবাসা চাই যে আমল আপনার ভালোবাসার পাত্র করে দেয়।
হে আল্লাহ! আপনার ভালোবাসা আমার নিকট যেন আমার নিজের জীবন এবং পরিবার এবং শীতল পানি থেকেও প্রিয় হয়।)
[তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৮২৮/৩৪৯০]
লোভের তো সীমা, পরিসীমা থাকে।
তবে কবি RabAh বলে
যেন সকলে
এমন লোভের আশা রাখে।
---- RabAh✍️
----৩১--১০--২০২৩ইং
©somewhere in net ltd.