নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে ঘাটে পর্ব (৮)

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮




সেদিন একটু তারাহুরা করেই বাসে উঠেছিলাম। ড্রাইভার এর পাশে এক সারি ৪ টা সীট থাকে মহিলাদের বসার জন্য ঐখানে এক মহিলার পাশে বসলাম, তার কোলে ৪/৫ বছরের এক বাচ্চা, বাচ্চাটা নানা যন্ত্রণা করছে, একবার তো ওর মায়ের গালে চর বসিয়ে দিল, আরে! এটা তো বারাবারি, আজকাল কার বাবা মা এত লাই দিয়ে বাচ্চাদের মাথায় তোলে বিরক্ত হয়ে ভাবি আমি। এই সময় মহিলা কথা বলে ওঠে আমার সাথে ,
- আমার মেয়ে আজকে বি,আর,টি,সি দোতলা বাসে যেতে চাইছিল, তা না করে অন্য বাসে উঠছি এই জন্য রাগ করতেছে ,
- হুম, বলে চুপ করে রইলাম। দেখলাম বাচ্চাটার চোখে কাজল দিয়েছে, মাথায় বড় গোলাপি রঙের ব্যান্ড দিয়ে চুল বেঁধেছে। পরে আছে গোলাপি রঙের ফুলের মত কুচিওয়ালা ফ্রগ, কালো শ্যামলা রুগ্ন হাতে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি। ছোট একটা হ্যান্ডব্যাগও নিয়েছে সাথে, সেই ব্যাগ ঘোরাচ্ছে দোলাচ্ছে ফেলে দিচ্ছে আবার তুলছে আবার ফেলে দিচ্ছে আবার তুলছে, আবার ওর মা এর মুখে ছুড়ে মারছে,
মহিলা আমার বিরক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার মনের ভাব বুঝতে পেরে বলে উঠলো, ও খুব সাঁজতে পছন্দ করে,
আমি হেসে বললাম ও আচ্ছা,

- কইল গোলাপি জামার সাথে মিলাইয়া ব্যান্ড কিন্না দেওন লাগবে গত সপ্তাহে কিন্না দিছি মাথার ব্যান্ড।
- খুব ভালো করছেন। বলে চুপ করে রইলাম।
- আমার মেয়ে অসুস্থ ডাক্তার দেখাইতে নিয়ে যাইতেছি,আবার ওবলে উঠল মহিলাটি।
-কই নিয়া যাচ্ছেন?

-ওই যে মহাখালী একটা ক্যান্সার হাসপাতাল আছেনা? ওইটায়। এমনে মাসে ২ বার করে যাওয়া লাগে। আমি তার কথায় তেমন কিছু মনে করলাম না, খারাপ কোন চিন্তা মাথায় এলনা আমার। তখন রাস্তায় অনেক জ্যাম। একটা গাড়ী আর একটা গাড়ীর পিছনে লাগিয়ে দিচ্ছে, সেটা নিয়ে ঝগড়া ঝাঁটি হচ্ছে দুই বাসের কন্টাক্টর আর ড্রাইভারদের সাথে, তাদের ঝগড়া মানে জনসমক্ষে অশ্লীল সব গালি। কিছুতেই সহ্য করা যায় না, অথচ রোজ সহ্য করি, রোজ ভাবি আমি এত গরীব কেন। আমি যদি একটা গাড়ী কিনে ফেলতে পারতাম। কিংবা যাদের গাড়ী আছে সেসব ফ্যামিলিতে কেন জন্ম হলনা আমার।
যাদের টাকা আছে তাদের বেলায় সবকিছু অন্য হিসাব। অন্য দেশে কি অবস্থা জানিনা অন্তত আমাদের সমাজ শুধু টাকা ওয়ালাদেরই সন্মান করে। তাদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা তাদের কোন ভুলত্রুটি নাই। যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু সে বিদ্বান। (অশিক্ষিত হলেও) যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু সে ফেরেশতা(পিসাচ শ্রেণীর প্রাণী হলেও) যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু সে সুন্দর(দুনিয়ার কুৎসিত চেহারা নিয়েও) যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু সে যা করে তাই ঠিক(হাজার ভুল করলেও) যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু সে কোন অন্যায় করতে পারেনা, যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু তারা মানুষ কে ছোট করে কথা বলতেই পারে। যেহেতু তার টাকা আছে সেহেতু সে সকল বিচারের উর্ধে, যেহেতু তার টাকা আছে সুন্দর ব্যবহার শুধু তারই প্রাপ্য।

আর যেহেতু তার টাকা নাই সে একটা বোকা। যেহেতু তার টাকা নাই সেহেতু তাকে শুধু করুনা করা যায়, করুনা ও যে করতেই হবে এমন কোন বাধ্য বাধকতা নাই, ডিপেণ্ড করছে ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর। যেহেতু তার টাকা নাই সে অশিক্ষিত( বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এর ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও, এই প্রসঙ্গে আর একটি কথা প্রচলিত আছে শুধু শিক্ষিত হলেই হয়!!) যেহেতু তার টাকা নেই সে দেখতে কুৎসিত।
(কেমন করে হাটে, কেমন করে কথা বলে, কেমন আনকালচার, কেমন পোশাক পরে, ইত্যাদি হাবিজাবি নানা দোষ) যেহেতু তার টাকা নাই সেহেতু ড্রেনের ময়লার দিকে তাকাতেও ভাল্লাগে তবু তার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করেনা, যেহেতু তার টাকা নাই সেহেতু যা খুশি বলে একে অপমান করা যায় গরীবদের আবার দুঃখ কি। যেহেতু তার টাকা নাই সে অসহ্য আর দেশের বোঝা। যেহেতু তার টাকা নাই সেহেতু এরা ছোটলোক। আমি অতো গরীব না হলেও গরীবদের প্রতি মানুষ যেই আচরন করে সেগুলোই বেশি ফেইস করি।

মজার ব্যাপার হল গরীবরাও কিন্তু গরীবদের সাথে একই আচরন করে, বাসের কন্টাক্টর ড্রাইভাররা এই কারনেই মেয়েরা বাসে থাকা সত্ত্বেও পরোয়া করেনা কারন যেহেতু তাদের পাবলিক বাসে মেয়েটি চড়েছে সেহেতু সেও তাদের মতই গরিব সুতরাং তাদের অসন্মান করাই যায়। একই এই ড্রাইভার কন্টাক্টর লোকেরা যখন প্রাইভেট কার থেকে নেমে আসা কোন মেয়ে হয় তখন ম্যাডাম বলে ভদ্র বিনীত আচরন করে। এই হচ্ছে আজকের পৃথিবী এতকাল চলে গেল তবু বিভেদ বৈষম্য দূর হলনা।
মেক্সিম গোর্কি, মাদার তেরেসা, এরিস্টটল যুগে যুগে সমাজ সংস্কারের জন্য, বৈষম্য বিভেদ দূর করার জন্য যে কাজ করে গেলেন আজকের পৃথিবীতে তার কি ই বা এমন প্রভাব পরেছে!! যাই হোক এই একি বৈষম্য যদি মেয়ে বলে হয় তাহলে অবস্থা আরও প্রকট। যাক সে বিষয়ে আর লিখলাম না তাহলে কথা আরও বাড়বে। পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাই। এর ভেতর মহিলা তার বাচ্চা বিষয়ক নানা গল্প করতে করতে হঠাৎ বলে ফেলল তার মেয়ের ক্যান্সার।
আমি অবাক এবং ব্যথিত
হই ভেতরে ভেতরে, মন খারাপ করে বললাম, কবে থেকে ?
- বাচ্চার বয়স যখন ৪ বছর তখন ত্থেকে । এখন ওর বয়স পাঁচ হয়েছে।
- ডাক্তার কি বলছে ?
- ডাক্তার থেরাপি দিচ্ছে ।
- আহারে বলে চুপ হয়ে রইলাম এবং লক্ষ করলাম মেয়েটা বেশ শুকনা, এতটুকু বাচ্চা অথচ চোখের কোনে কালি, যেন কতদিন ঘুমায়নি।
- এই যে এখন একটু নরাচরা করতেছে কথা বলতেছে, থেরাপি দিয়া নিয়া যাওয়ার পর আর কোন হুস থাকেনা, বেহুসের মত ঘুমাইতে থাকে, ২/৩ দিন পর্যন্ত কিছু খাইতে লইতে পারে না, ছোট মানুষ তো বলতে ও পারেনা যে ভিতরে কেমন লাগতেছে , এই যে আমার গায়ে হাত তুলতেছে তাও আমার অনেক ভাল লাগতেছে , আমার কিন্তু একটাই বাচ্চা। আমি আল্লাহর কাছে একটা কথাই বলি যে আল্লাহ আমার বুক খালি কইরো না, বলে কেঁদে দেয় মহিলা, ভেতর টা হাহাকার করে ওঠে আমার, আল্লাহ মানুষ কে কত ভাবে কত কঠিন পরিক্ষার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,
আহারে! আহারে ! !
- ওর আব্বা কি করে ? টাকা পয়সা কোত্থেকে ম্যানেজ করছেন ?
- আর বইলো না বইন, প্রতি থেরাপিতে ১৫/২০ হাজার করে টাকা লাগে, ওর আব্বা সি, এন, জি চালিয়ে যা কামায় সব যায় ওর পিছনে, তাও এখন হাসপাতালে এর ওর হাতে পায়ে ধরে কিছু কমাইতে পারছি এখন ১২ হাজার করে দেয় থেরাপি।

হুম বলে চুপ করে রইলাম, আমার ভাড়া টাকা বাদ দিয়ে পাঁচশো টাকা ছিল বারতি ব্যাগে কিন্তু সেটা তাকে দেয়ার সাহস করতে পারলাম না, যদি কিছু মনে করে! মেয়ের চিকিৎসা খরচ অনেক সেই তুলনায় এই টাকা নগণ্য। কিংবা উনি এটা সহজ ভাবে নাও নিতে পারে তাই জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারলাম না শেষ পর্যন্ত। দেখতে দেখতে আমার বাস স্ট্যান্ড চলে এসেছি যেখানে নামবো। কিছুই করতে পারলাম না গাড়ী থেকে নেমে গেলাম মাথা নিচু করে। আমার জীবন নিয়ে নানা সমস্যা হতাশা এইগুলো কিছুই না এই মা মেয়ের সামনে। তার আদরের সন্তানের জীবন দুলছে জীবন মরনের মধ্যখানে, আমি তাদের কোন সাহায্য করতে পারছিলাম না।

নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল ওদের সামনে। শুধু আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা আল্লাহ এই অকালে ওর মা বাবার বুক খালি করে মেয়েটা কে দুনিয়া থেকে নিওনা। ওকে সুস্থ করে দাও।

বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: অনেক অনেক অনেক ভাল একটা পোস্ট । সেই শিশুটির জন্য অনেক দোয়া আর শুভকামনা । ইনশাআল্লাহ সে ভাল হয়ে উঠবে ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫০

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: পড়তে পড়তে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। এমন হাজারো আছে তাই না।
দোয়া করি ঐ শিশুটির জন্য। সুস্থ হয়ে উঠুক।


সিরিজটা অসাধারণভাবে এগোচ্ছে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০২

সামিয়া বলেছেন: হুম আমারও বেশ খারাপ লাগে মেয়েটার কথা মনে করলে।
আর সিরিজ টার ব্যাপারে আমার এক ফ্রেন্ড মন্তব্য করেছিল এই রকম,'' তুমি পাবলিক বাসে চলাফেরা কর বলে মন খারাপ কর !! অথচ দেখ কত অভিজ্ঞতা হয়েছে তোমার!!
সিরিজটা অসাধারণভাবে এগোচ্ছে লেখাটা পরে আমার ফ্রেন্ডের মন্তব্য মনে পড়ল। যাক গে ভালো লাগলো । আর অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বাস্তবতা বড়ই কঠিন।সুন্দর লেখা।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০২

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ মোস্তফা সোহেল

৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮

বিপরীত বাক বলেছেন: হুমম।

৫| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০০

মাআইপা বলেছেন: অনেক দিন আগের লেখা তাই যেটুকু বলতে পারি, মেয়েটা যে পারেই থাক আল্লাহ্ তার সহায় হোক।
আর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাধ্য মাঝে মাঝে মাথা নিচু করে দেয়।
শুভ কামনা রইল।

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:২৫

সামিয়া বলেছেন: আমার পুরোনো লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়ে, মতামত জানিয়ে দেয়ার জন্য সত্যিই আমি অবাক,ভালোলাগা অশেষ অনেক অনেক ভাল থাকুন শুভ কামনা ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.