![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অহনা ধীরে ধীরে নিচে নামছে অফিসের পোর্সেলিন টাইলসের সিঁড়ির ওপর দিয়ে চারপাশ এতই নিরব যে ওর হিলের চাপা শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
অফিস টাইম শেষে বেশিরভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী যার যার মত চলে যায় তাই বেসমেন্টের লিফট বন্ধ করে দেয় এই সময়টাতে।
আজকের দিনটা ছিল ক্লান্তিকর মন ভার করে ভাবে সে কথা,
সিঁড়ির শেষ ধাপে পা রেখে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকলো; সেখানে আরো একটি দরজা, লক, সেকেন্ড ধাপের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তার আগে মোবাইল বের করে অফিস বাস গ্রুপে ম্যাসেজ করে দিলো ও " আজ অফিস বাসে যাবো না, কাজে আটকা পড়েছি।" প্রতিদিন কেউ না কেউ কাজে আটকা পড়ে তখন ম্যাসেজ করে গ্রুপে জানিয়ে দিতে হয়। নয়তো ড্রাইভার আবুল ভাই কিছুতেই বাস ছাড়ে না।
অন্ধকার নিস্তব্ধ অফিসের বেসমেন্টের এই তিনটি তলা একেবারে মাটির নিচে, যেন পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা কোনো গুহার মতো। উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না।
কোথাও কোনো জানালা নেই, সূর্যের আলোরও বালাই নেই লম্বা করিডোর তিনটি ভাগ হয়ে তিন দিকে গিয়েছে, ডান দিক থেকে সামনে এগোলেই পর পর তিনটি রুম; সবগুলো এডমিনের, ভিতরে আছে বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় ক্যাবিনেট, প্রয়োজনীয় অফিস ফার্নিচার, সেগুলোর অস্তিত্ব রুমের লাইট অন করার পরই টের পাওয়া যায়। অন্যথায়, এই জায়গা ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকে। টুং টুং শব্দ হতেই মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখে ও, বুলবুল ভাই অহনার ম্যাসেজের জবাবে একটা ফানি ইমোজি দিয়েছে, রোজ এই করে গ্রুপে যে যাই ম্যাসেজ করুক না কেনো তার একটা ফানি রিপ্লাই থাকবেই। মুহুর্ত পরেই ম্যাসেজ থেকে চোখ তুলে নিজের অবস্থানে ফিরে আসে ও;
আচ্ছা যদি হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়? এই ঘুটঘুটে অন্ধকার আর বদ্ধ পরিবেশে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে না? অক্সিজেনের অভাব হবে না এসি বন্ধ হয়ে গেলে! অথবা কোন কারনে যদি আগুন লেগে যায় আর ও যদি একাই বন্দী থাকে।
এরকম তো হয়েছে সেলিমের সাথে, সেলিম ছিল আট তলায় কিচেনে, কফি মেকারের মেশিন দিয়ে আফতাব স্যারের জন্য কফি বানাতে গিয়েছিল, শর্ট সার্কিট বা অন্য কোন কারণে আগুন লেগে যায় ওই রুমে, ও একাই ছিল সেখানে দ্রুত ওর আইডি কার্ড পাঞ্চ করে রুম থেকে বের হওয়ার সময় দেখে যে ওটা কাজ করছে না, আগুন লাগার কারণে অটো সিকিউরিটির জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পাশের রুমে হাবিব স্যার ছিল, সে কিছু টেরই পায়নি, কোন শব্দ কিংবা সেলিমের চিৎকার তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি!
কোন ভাবে ধোঁয়া তার চোখে পড়ে গিয়েছিল, যখন সে সিকিউরিটি ডেকে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো ততক্ষণে নাইনটি ভাগ পুড়ে গিয়েছে সেলিমের, পানি পানি করে চিৎকার করছে, বেচারা!!
সেন্সর কাজ না করায় কল থেকে পানিও বের হচ্ছিল না, সেলিমের মৃত্যু হল তিনদিন পর হাসপাতালে।
ঘটনার সময় সবাই উপরের ফ্লোরে কাজ করছিলো কিচ্ছুটি টের পায়নি কেউ, সবাই ঘটনা জানতে পারে সেলিমের মৃত্যুরও এক সপ্তাহ পর, বড় স্যাররা ঘটনাটা ধামা চাপা দিয়ে রেখেছিল, ওর মৃত্যুর জন্য বীমা দিয়ে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছিল সেলিমের পরিবারকে। তারাও আর কোন এ নিয়ে টু শব্দটিও করেনি টাকা পেয়ে সব খুশি। অহনার বেলায় ও তো এটা হতে পারে, পারে না? এমন চিন্তায় নিজেই শিউরে ওঠে ও।
এই কাঁচের দরজাগুলো এতটাই শক্ত যে ভেতর থেকে কখনোই খোলা যাবেনা যদি কার্ড কাজ না করে।
এমন ভয়াবহ কল্পনা থেকে মুক্ত হতে অহনা দ্রুত কাজ করতে শুরু করে।
নারী দিবস উপলক্ষ্যে অফিস ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা হিসেবে নারী কলিগদের ডায়েরি, শাড়ি, স্টিকার নারী দিবস কার্ড আর নামকরা এক লেখকের বই গিফট করবে। কপি গুলো স্টোর রুমে একটা কার্টুন ভর্তি করে রাখা, এডমিনের কাজের অংশ হিসেবে সহকর্মীর কথায় গিফটগুলো আগামীকাল অফিসের আওয়ার শুরুর আগেই সকল নারী কলিগদের ডেস্কে সাজিয়ে রাখার দায়িত্বটা অহনার কাঁধে দিয়েছে সহকর্মী ঈশান ও ওলি ভাই।
এটা তেমন বড় কোন কাজ নয় মনে হয়েছিল অহনার, জাস্ট তার নিজের আইডি কার্ড দিয়ে স্টোর রুমের লক খুলে কার্টুনটা বাইরে রেখে দিলেই হবে। সকালে পিয়ন এসে সেটা থেকে কপি গুলো বের করে লেডি সহকর্মীদের ডেস্কে সাজিয়ে রেখে দেবে। অহনা অফিসে এসে একটু ঝটিকা সফরে চেক করে নিলেই হবে সবাই ঠিকঠাক পেয়েছে কিনা
কিন্তু ওর কাছে এই মুহূর্তে বাস্তব পরিস্থিতি ক্রমেই অস্বস্তিকর লাগছে বেসমেন্ট পুরোপুরি জনমানবশূন্য। এখানে এসে বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুল করে ফেলেছে যদিও অহনা নিজেকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিল এ আর এমন কি?
স্টোর রুমের কাঁচের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার হাত কাঁপতে লাগল। কার্ডটা স্লটে ঢোকানোর সময় অদ্ভুত অনুভূতি শরীরে বয়ে গেল আর দরজার লক খুলে গেল। ভেতরে ঢুকে দেখলো বিশাল রুমটা আলো জ্বালানোর পর ও কেমন নিস্তব্ধ লাগছে।
কার্টুনটা খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগল না ওর, সেটা দরজার সামনে রেখে বেরিয়ে আসার সময় অহনা বারবার পেছনে তাকাচ্ছিল যেন কেউ ওর ওপর নজর রাখছে এরকম অনুভুতি নিয়ে, রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর ওর নিঃশ্বাস ছাড়ার শব্দ পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিল। তারপরও তখনই সিঁড়ি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে দৌড়াতে দৌড়াতে উপরে উঠে এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরের দরজার কাছে পৌঁছালো, বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে কার্ড পাঞ্চ করল, না দরজা সত্যি সত্যিই খুলছে না
অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইল সেদিকে।
তারপর আবার বারবার বারবার চেষ্টা করতে থাকলো, নাহ দরজাটা খুলছেই না। দুটি কারণে এটা হতে পারে, হয় তার কার্ড কাজ করছে না নয়তো কেউ ডোরের সমস্ত এক্সেস লক করে দিয়েছে ।
পুরো ব্যাপারটা এতটাই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে যে অহনার মনে হল সারা রাত বুঝি এখানেই পড়ে থাকতে হবে।
দিশেহারা হয়ে নিচের দিকে তাকাতেই বুকটা ধুকপুক করে উঠলো। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে, সিঁড়ির শেষ প্রান্তটা আর দেখা যাচ্ছে না বাইরের আলোয়। সে দ্রুত নেমে গিয়ে প্রথম ধাপের লাইট গুলো জ্বালালো।
আবার উপরে উঠে দরজার সামনে এসে কার্ড পাঞ্জ করলো।
নাহ কোনো কাজ হলো না। কি হচ্ছে এখানে? অহনা হতভম্ব হয়ে চিন্তা করতে করতে দ্রুত মোবাইলটা বের করে ওর ডিপার্টমেন্টের রুনু আপুকে ফোন দিল, রুনু আপু তখন গাড়িতে উঠে পড়েছে তাদের গাড়ি অলরেডি গুলশান ক্রস করে ফেলেছে, বলল
-কি হয়েছে অহনা তুমি কি এখনো অফিসে?
- হ্যাঁ আপু, আমি বেসমেন্টে,
-বেসমেন্টে গিয়েছো কেন?
-ওই যে ওমেন্স ডে'র গিফট গুলো আনার জন্য।
-কেন সেগুলো তো কোন পিয়নও নিতে পারতো?
- ইশান ভাই বললো আমাকে স্টোর রুম থেকে বের করে রাখতে ওদের কাছে তো আর এক্সেস নাই রুমের।
- এটা তো কাল ও করা যেত,
-এখন এটা বললে হবে আপু আমাকে তো আপনার সামনেই নিচে পাঠালো, এসব না বলে বলেন এখন কি করবো? দরজা খুলছে না।
রুনু আপু আর রেহানা আপুর হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তারা দুজন একই এলাকায় থাকে তাই অফিসের গাড়িতে একসাথে যায়, যেতে যেতে সারা পথ এর ওর নামে আলোচনা সমালোচনা করেন, আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু অহনা হতে যাচ্ছে বুঝলো ও, উনাকে ফোন করে কি অতিরিক্ত ভুল করেছে সাথে সাথে রিয়ালাইজ করে সেটা। ওপাশ থেকে কুটকুট করা কুটনামি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো
-তুমি এক কাজ করো আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড স্যার কে ফোন দাও, উনি আইটিতে ফোন করলেই তো লক খুলে দেবে।
- এখন আবার আইটি, আইটির নুহা, জারা জানলে যে কি ওভার এক্টিন করবে এসব নিয়ে আল্লাহ মালুম।
-কি বলছো
- কিছু না আপু দেখছি আমি কি করা যায়,
- তুমি স্যার কে ফোন দাও আর বের হয়ে জানিও নয়তো টেনশনে থাকবো, টেনসনে বলার সময় লম্বা টান দিলেন রুনু আপু।
কি যে টেনশনে থাকবে অহনা ঠিক ঠিক বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে ফোন কেটে দিয়ে চারপাশে তাকায় ও, নিজেকে খুব দুঃখী আর একা লাগছে। (চলবে)
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৬
সামিয়া বলেছেন: ঢাকার বেশিরভাগ বিল্ডিং গুলোই এখন এরকম। গ্রাউন্ড ফ্লোরের পর লিফট বাটনে গ্রাউন্ড ওয়ান গ্রাউন্ড টু এরকম কত ফ্লোর আছে, ধন্যবাদ,
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৬
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৭
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২০
নকল কাক বলেছেন: সুন্দর গল্প।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০১
এ পথের পথিক বলেছেন: ভাল লিখেছেন ।
গল্প পড়ার সময় মস্তিষ্কে গল্পের একধরনের কাল্পনিক দৃশ্য তৈরি হয় । শহরের বড় বড় বিল্ডিং বা আপনার বিবরন দেয়া এমন অফিস দেখিনি তাই পরিবেশটা কল্পনা করতে পারছি না ।
চলুক .....