নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অহনা (৭ম পর্ব)

১৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:১৫

ছবিঃনেট
অহনা (৭ম পর্ব)
লিখেছেন ইতি সামিয়া

অফিসে যাওয়ার জন্য অহনা তাড়াহুড়া করে রেডি হচ্ছে, ঘুম থেকে উঠেছে পৌনে ৭টায়, ৭টায় অফিস বাস ছেড়ে দেয় ওর লোকেশনের বাসস্ট্যান্ড থেকে, অফিস বাস ধরার জন্য ওকে মিনিমাম ৬:৫০ মিনিটে বাসস্ট্যান্ড থাকতে হয়, এরকম তাড়াহুড়ার সময়, ওর মা জানায় যে আসমার জামাই ওর বাবা-মা নিয়ে আসতে চায় আগামীকাল, ওদের ওকে পছন্দ হয়েছে, ছেলে গত সপ্তাহ দেশে এসেছে, মাত্র দেড় মাসের ছুটি, তাই সময় নষ্ট করতে চায় না ওরা। অহনা বললো
-পাত্রের সাথে আসমা আপা আর তার জামাই'র সম্পর্ক কি?
-ছেলে আসমার দেবর
- সেদিন তো সেকথা বলল না, তুমিই তো বলেছিলে ছেলে নাকি দুলাভাইয়ের বন্ধু? এখন বন্ধু আপন ভাই হয়ে গেল? এরকম মিথ্যা কথা বলার কোন মানে আছে? আর এসব মিথ্যাবাদীদের সাথে একমাত্র মেয়ে বিয়ে দেয়াই লাগবে তোমাদের?
- ওসব কথা এখন বলে লাভ নেই, তোর বাবা তাদের আসতে বলেছে, পছন্দ হলে হয়তো ওরা আংটি কালকেই পড়াবে,
— ভাইয়াদের জানিয়েছো? তারা কি বলেছে?
- তারা বলেছে আমরা যা ভালো মনে করি
- মা, তাদের পছন্দ হলেই হবে? যার সাথে আমি সারাজীবন কাটাবো তাকে আমার ভালো লাগা লাগবে না? এটা কোন কথা? তাদের হ্যাঁ'তেই আমাদের হ্যাঁ? আমি কি একটা কাঠের পুতুল? আমার কোন ইচ্ছা অনিচ্ছা নাই?
—তোর বাবা ওদেরকে আসতে বলেছে, এখানে আমার কি বলার আছে? তাছাড়া শ্বশুরবাড়ি আগে থেকেই বোনকে পাবি মন্দ কি? শোন মেয়ের ভালো মা-বাবাই তো বুঝবে, তাই না?
অহনা কোনো উত্তর দিল না। দিয়ে লাভ ও নেই, মা বাবা হল মেয়েদের একমাত্র দুর্বলতা। সব কিছু ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলাম এই রকম মন নিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে আসে যদি কোন কারনে বাসটা ধরতে পারে সেই আশায়।

অফিসে আসতে আসতে সকাল দশটা, অফিস বাস ধরতে পারে নাই ও তার উপর ভুলে ল্যাপটপ বাসায় রেখে এসেছিল, একবার বাস স্ট্যান্ড এসে আবার ফিরে গিয়ে ল্যাপটপ এনে মেইন রোডে এসে একটা সিএনজি নিয়ে অফিসে আসলো অবশেষে, ইটস সাচ এ ব্যাড ডে।

গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই পেছন‌ থেকে ঈশান বললো -অহনা ম্যাডাম আপনার ব্যাপারটা নিয়ে আজ স্যাররা সবাই বসবে, সকাল এগারোটায়, সেকেন্ড ফ্লোরের মিটিং রুমে চলে আসবেন, বলেই যেরকম রেলের গতিতে এসেছিল সে রকম রেলের গতিতে নাই হয়ে গেল।

অহনার শিঁড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ভয়ে, ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নাই আর এই জীবনে। ওলির সেদিনের করা সিনক্রিয়েট নিয়ে কিছু একটা বিচার হোক চাইছিল, কিন্তু এতদিন পর হঠাৎ করে আজই বসার কথা শোনার পরে ভয় ভয় লাগছে ওর।

ঠিক ১১ টায় মিটিং রুমে গেল অহনা, সেখানে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের চীফ ফিনান্সিয়াল অফিসার গুলশান আরা মডেলদের মতন‌ দাঁড়ানো, অ্যান্টি ব্লু লাইট লেন্সের গ্লাসের নীল ঝলকের ভেতর দিয়ে অহনার তাকিয়ে তার হাতে পড়া ঘড়ির দিকে ইশারা করে বললেন
- তুমি ৩০ সেকেন্ড লেট করেছ, ভেরি ব্যাড অহনা।
- সরি ম্যাম, আসলে…
- আসলে কী? সময়ের মূল্যটা তুমি বোঝো না? অফিসের ডিসিপ্লিন অথবা সময়ের মূল্য সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে!? আমার কতগুলো সিডিউল পেইনডিং রেখে তোমার জন্য এখানে এসেছি জানো?
-সে যাই হোক আমরা সবাই হাতের কাজ রেখে এখানে এসেছি আপা, বললেন এইচ আর হেড রবিউল স্যার।

অহনা দেখলো এডমিন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর স্যার, এডমিন হেড সামাদ স্যার, এইচআর হেড রবিউল স্যার, রুনু আপু, ওলি ও ইশান ভাই আর গুলশান ম্যাডামের পি এস জসীম ভাই একটু দূরেই দাঁড়িয়ে, জসীম ভাই ও তার বস গুলশান ম্যাডামের মতো হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা রিকোয়েস্ট করছে অহনার দিকে, এত টাইট সিডিউলের ভেতর এসবের জন্য তাদের হাতে একদম সময় নেই বোঝাতে।

- মূল বিষয়ে আসি। একটা মুভি দেখছিলাম অনেক দিন আগে অজয় দেবগনের, দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি না কি যেন নাম মুভিটার, সেখানে দেখা যায় যে অফিসে একটা নতুন মেয়ে আসে আর সবাই তার পিছনে ঘুরে তাকে কনভিন্স করা নানা রকম চেষ্টা করে তো আমাদের অহনার সেই অবস্থা হয়েছে নাকি? হালকা গলায় বললেন ডিরেক্টর স্যার। উনি এটা বলে পরিবেশটা হালকা করতে চাইলেন হয়তো ষাটোর্ধ্ব বয়সের একজন ব্যক্তি এ ধরনের মুভি দেখে অহনার বিস্ময় লাগে। তখনি ওর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন
-আমরা অবশ্য ইতিমধ্যে জানি ব্যাপারটা তারপরও অহনা আপনি যদি বলতে চান আমাদেরকে আবার বলতে পারেন। অহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই গুলশান আরা বললেন।
-ওলি তো উলটো অভিযোগ করেছে যে অহনা তাকে নিয়ে অফিসে অযথা কথা ছড়াচ্ছে এবং তার প্রতি রুড আচরণ করছে।
-আমি? আমি কিছু তো বলিনি ! অবাক হয়ে বলে অহনা
- স্যার, আমি সবসময় অহনার প্রতি রেসপেক্টফুল ছিলাম। অথচ ও আমার পেছনে গুজব ছড়িয়েছে যে আমি ওকে অফিসে এবং অফিসের বাইরে ডিস্টার্ব করি! এটা কতটা অন্যায় স্যার! হ্যাঁ সেদিন আমি হাত ধরেছিলাম কিন্তু আমি হাত ধরে তাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছিলাম এটা কি অন্যায় স্যার? আমি হয়তো আমার আবেগটাকে দমন করে রাখতে পারিনি সে ভুল আমি স্বীকার করছি তাই বলে সে আমার নামে যাতা বলে বেড়াবে? চান্সে কথাগুলো বলল ওলি
- আমি কোনো গুজব ছড়াইনি। আর ওলি ভাই সেদিন আমাকে হ্যারেজ করেছেন সেদিন করিডোরে…

- অহনা, তুমি কি জানো, অফিসের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার? কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলার আগে প্রমাণ দরকার। তোমার কি কোনো প্রমাণ আছে যে ওলি তোমাকে হ্যারেজ করেছে? বললেন ইডি স্যার
- স্যার, আমি তো তখনি প্রতিবাদ করেছিলাম, অনেকেই দেখেছে , তাছাড়া সি সি ক্যামেরা ও ওখানে ছিল, রেকর্ড দেখলেই বুঝতে পারবেন।
- তুমি অফিসিয়ালি অভিযোগ করেছিলে? অফিসিয়াল রিপোর্ট কোথায়? বললেন গুলশান ম্যাডাম
- আমি কোন লিখিত অভিযোগ করিনি আমি আমাদের স্যারকে বলেছি।
- সেটা কি লিখিত ছিল?
- না স্যার
ওলি প্রত্যেকটা স্যারকে আগে থেকেই নিজের পক্ষে বুঝিয়ে কনভিন্স করে এখানে এনেছে, ও জানে কেউ ওর বিরুদ্ধে কথা বলবে না। কারন গুলশান আরা ওর আপন মামী, শুধু মামার জোর না মামীর জোরেও কর্পোরেট সেক্টরে অনেক কিছু হয়। ও অশ্লীল একটা হাসি দিয়ে গলা উঁচু করে বলল,
- অহনা এখন নাটক করছে। আসলে ও চায় আমাকে ব্লেম দিতে, যাতে সবাই ওর কথাই বিশ্বাস করে। অথচ আমি একদম ক্লিন।
- অহনা, তুমি বুঝতে পারছো না, এসব কনফ্লিক্ট অফিসের ইমেজ নষ্ট করে, আমাদের এখানে প্রফেশনাল থাকতে হয়। ব্যক্তিগত বিষয়কে অফিসে টেনে আনা উচিত না, আমরা চাই, বিষয়টা এখানে শেষ হোক। অহনা, তুমি তোমার কাজে ফোকাস করো। আর ওলি, তুমি ওকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করবে না ।বললেন ওলির মামী গুলশান আরা।

ওলি সব কটা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললো - নিশ্চয়ই! আমি সবসময়ই ওকে সম্মান করি।

অহনার চোখে একরাশ হতাশা। ঘরে-বাইরে কোথাও তার জন্য ন্যায় বিচার নেই। মুখ খোলার চেষ্টা করলেও পারলোনা, ওর কণ্ঠ যেন বন্ধ হয়ে আছে।
হঠাৎ ঈশান দাঁড়িয়ে গিয়ে সামনে এগিয়ে এলো। তার চোখে তীব্র আগুনের ঝলক, বললো
- এটা কী হচ্ছে! অহনা হ্যারেজড হয়েছে, আর আপনারা উল্টো ওকেই দোষী বানানোর চেষ্টা করছেন? এই মেয়ে দিনের পর দিন হ্যারেজমেন্ট সহ্য করছে, অভিযোগ করার সুযোগই সে পায়নি, কি থেকে কি ভুল ধরে অফিস সেই ভয়ে, আর আপনারা ওকেই দোষারোপ করছেন? এটা কেমন বিচার?
- আপনি কি প্রমাণ দিতে পারবেন তাকে আমি হ্যারেজমেন্ট করেছি ? ওলি কথাটা বলতেই

ঈশানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল এক ঝটকায় সে ওলির কলার চেপে ধরে বললো
- তুই যা করেছিস, তার জন্য শুধু শাস্তি না, থাপ্পড়ও দরকার!
বলেই, ঈশান জোরে এক ঘুষি বসিয়ে দিল ওলির মুখে! ওলির মাথা সজোরে চেয়ারের পাশে গিয়ে ধাক্কা খেল। রুমের সবাই হতবাক! মুহূর্তে ঘটল ব্যাপারটা, কিছু সময় পর-
ওলির লাল হয়ে যাওয়া গাল আর কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে চেয়ারে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বসলো, পিয়ন ইয়াসিন এক গ্লাস পানি আর টিস্যু এগিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওলির দিকে, ইয়াসিন রুমের বাইরে ছিল মিটিং এ চা পানি কিছু লাগে যদি সেজন্য, সে ওলিকে ঈশানের হাতে মা'র খেতে দেখে চান্সে ঢুকে পড়েছে টিস্যু দেয়ার বাহানায়, এমন মজার ঘটনা এই অফিসে আগে কখনো দেখেনি। সে বারবার হাসি লুকানোর জন্য মুখ চেপে পিছনের দিকে তাকাচ্ছে, মাঝে মাঝে দরদ ভরা গলায় বলছে, "ছাআআর একটু পানি খান" টিস্যু ডা একটু নাকে ধরেন, রক্ত বের হইতেছে নাক দিয়া, আহারে। (চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:১২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এখন বোধহয় আপনিই আছেন ব্লগে ধারাবাহিক ভাবে সিরিজ লিখে যাচ্ছেন।

১৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:২৫

সামিয়া বলেছেন: দুই পর্বে শেষ করবো ভেবে শুরু করেছিলাম অথচ বেড়েই যাচ্ছে। আগামী পর্বে সিরিজটা শেষ করবোই। হুম ব্লগে সবাই কমবেশি রাজনীতি নিয়েই আলোচনা করছে অনেকদিন ধরে।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:০০

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: পড়তে ভালো লাগছে, অপেক্ষায় থাকলাম ।

১৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ২:১৪

সামিয়া বলেছেন: থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.