![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃনেট
সোনালি রঙের একটা সিল্কের শাড়ি পড়ে আছে লাবণ্য। গায়ে কাঁধ ছুঁয়ে আসা এলোমেলো চুল, চোখে হালকা কাজল। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক, যেটা অনেক আগেই লাগিয়েছিল, এখন আর ততটা গাঢ় নেই—টেনশনে কিছুটা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে , তবুও তাকে মনে হচ্ছে সিনেমার কোনো নায়িকা। এমনি রূপ বৈচিত্র্য ঢং তার চালচলনে।
লাবণ্যর স্বামীর প্রতি নানান ধরনের অভিযোগ-অভিমান জমে জমে কবে একেবারে সাগরের মাঝখানে এসে পড়েছে—তীরে ফিরবার আর কোনো কূল কিনারা নাই তার, ওর স্বামী তনয় অফিসে যাবার পরপরই বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছে ও নাঈম নামে একজন কবির সাথে দেখা করতে।
অন্য এই কবি, লাবণ্য তনয়ের ঠান্ডা সম্পর্কের মাঝে ঢুকে পড়েছে সুযোগে সদ্ব্যবহার করে। নাঈম একজন কবি। নাঈম তার জীবনের প্রতিটি কবিতা লিখেছে লাবণ্যকে নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে, যে পাঁচ বছর একটু একটু করে ওর স্বামীর কাছে অবহেলা পেয়েছে, সেই পাঁচ বছর সেই অবহেলিত লাবণ্যকে নিয়ে কত শত কবিতা, কত আরাধনা কবি নাঈমের। তার সদ্য লেখা কবিতাটি এরকম
প্রিয়তমা লাবন্য,
'সোনা দিয়ে মুড়বো তোমায়, পা থেকে মাথা,
তুমি হবে রাণী, আমি তোমার প্রহরী রাজা।
চুড়ি হবে সোনার, কানে ঝুলবে তারা,
তোমার হাসির তরে কিনবো সাত সাগরের ধারা।
সোনার নূপুর পায়ে, বাজবে প্রেমের গান,
একবার বলো "ভালোবাসি", হবে জগত দান।
সোনার টিকলি কপালে, চুয়ান্নটা হার,
তোমায় সাজাবো আমি, হিংসে করুক চারিধার!'
প্রতিটি কবিতার শিরোনাম প্রিয়তমা লাবণ্য' ভাবা যায়! এরকম শত শত কবিতা তার ওয়াল ভর্তি, লাবণ্য নাঈমের সাথে দেখা করতে এসেছে মূলত এই একটাই কারণে, নাঈম ওকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে ওকে শোনে । লাবণ্যর কথা, ওর দুঃখ, ওর ঘরের গল্প, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইনে কাটিয়ে দেয় ওর জন্য নাঈম।
আর লাবণ্যর স্বামী তনয়? সারাদিন অফিস, অফিস শেষে চায়ের দোকান, তারপর বাসায় ফিরে মোবাইল অথবা টিভি। ঘরে যে একটা মানুষ আছে, চোখ তুলে ফিরেও তাকায় না।
লাবণ্যই কখনও কখনও এগিয়ে যায়, দুই একটা যৎসামান্য টপিক খুঁজে বের করে কথা বলার জন্য, সেটা বেশি দূর আগায় না, মোবাইলে ততক্ষণে জানভি কাপুরের ' 'চুট্টামাল্লে... ঊরিকে উনদাদু কারেপু' নাঁচে তন্ময় হয়ে যায় তনয়, একজন মেয়ের কাছে স্বামীর এই আচরণ অত্যন্ত অপমানের, সেটা বোঝার মাথাই নেই মাথা মোটা লোকটার।
এই সবের মধ্যে কোথা থেকে এলো নাইম নিষ্পাপ ভালোবাসার শুভ্রতা নিয়ে—ভাগ্যিস ফেইসবুক ছিল, নয়তো কোথায় পেত ট্রু লাভ নাঈমের মতন এমন মানুষ। এই জন্যই তো সাত পাঁচ না ভেবে দেখা করতে এসেছে কবির সাথে, তনয়ের কথা ভাবতে চায় না লাবণ্য গোল্লায় যাক তনয়; স্বামী নামের কলঙ্ক একটা, বিয়ের পর কোন বিবাহবার্ষিকী মনে রাখে নাই, কোনদিন সারপ্রাইজ গিফট করে নাই, লাবণ্যর জন্মদিন কবে সে তো বলতেই পারবেনা—মাথা মোটা কোথাকার।
কিন্তু নাঈমের সাথে দেখা করতে এসে লাবণ্য পড়ে গেল আর এক বিপদে, ওকে পটিয়ে পাটিয়ে একটা তিন তলা ফ্যামিলি বাসার ছোট্ট ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে ওকে, বলেছিলো ওর একটা কি নাকি কাজ আছে চাচার বাসায়, কিন্তু বাসায় ঢুকে বোঝা গেল বাড়িতে আর কেউ নেই, ঘটনা এত দূর গড়াবে কিছুতেই বুঝতে পারেনি লাবণ্য, ও নিছক দেখা করতে এসেছে এক ভালোবাসাময় ভাবুক কবির সাথে।
নাঈম সামনেই বসা, তার সামনে টি টেবিলের মধ্যখানে একটা পলিথিনে মোড়া আর্টিফিশিয়াল ফুলসহ গাছের টব সাজানো। পলিথিন খোলা হচ্ছে না সম্ভবত ধুলো পড়ে নষ্ট না হবার জন্য। নাঈমকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে ওর মোবাইল বেজে উঠছে একটু পরপর, ‘মৌমিতা’ নামে একটা মেয়ের নাম ভেসে উঠছে—আড় চোখে লাবণ্য বেশ কয়েকবার দেখে নিয়েছে সেটা। কথা শুনে বুঝতে পারলো— মৌমিতা নাঈমের স্ত্রী!
লাবণ্যর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো, এত প্রেম, না পেলে বাঁচবো না, এত আকুতি! ঘরে বউ রেখে!! তার উপর দেখা করার নাম করে একটা বাসায় নিয়ে এসেছে। কি মতলবে এনেছে সেটাও ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে লাবণ্যর কাছে,
ধীরে ধীরে নাঈম লাবণ্যর কাছে আসছে একটা হাত লাবণ্যর হাতের উপর রাখতেই মুহূর্তে লাবণ্য লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো,
-তুমি বিবাহিত! অথচ .. এই এইসব কি হচ্ছে! ছিঃ, তাছাড়া আমারো সংসার আছে, এসবের জন্য আমি তোমার সাথে দেখা করতে আসিনি।
নাঈম ও উঠে দাঁড়ায়,
-এটা কেমন কথা আমরা যথেষ্ট ম্যাচিউর, দুজন মিলে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতেই পারি, তাছাড়া আমরা তো দুজন দুজনকে ভালোবাসি নাকি!
-আমি কি কখনো বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি? আমি আমার স্বামীর উপর ভেতরে জমে থাকা রাগ থেকে তোমার সাথে কিছুদিন কথা বলেছি, গত কয়েকদিনের হাজার রিকোয়েস্টের পর আজ দেখা করতে এসেছি, তার মানে এই নয় যে আমি তোমার সাথে রুম ডেট করতে চাই! লম্পট কোথাকার ঘরে বউ রেখে বাইরে মেয়েদের সাথে নোংরামি!
কবি ও তেড়ে উঠলো বলল
-তুমি কি আনম্যারিড, তুমিও ম্যারিড, আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা আমার ভালোবাসাকে কেউ এইরকম অপমান করতে পারে শুধুমাত্র আমি ম্যারিড বলে! আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারবোনা, আমার মন ভেঙ্গে দিয়েছ তুমি!
-ভাঙ্গা মন নিয়ে এখন মর গিয়ে, স্টুপিড! বলেই ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে লাবণ্য এক টানে ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওর মনে হচ্ছিল এই বুঝি পিছন থেকে এসে ওকে ধরে ফেলবে কিন্তু অত সাহসও হয়নি কাপুরুষ কবি এই নাঈমের, গেটের বাইরে বেরিয়ে একটা রিক্সা পেয়ে উঠে বসলো তাতে সবকিছু কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে ওর কাছে,
এসব কি হতে যাচ্ছিল!! ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে লাবণ্যর,
তনয় ওকে ঠিক মতো সময় দেয় না ঠিকই, কিন্তু দায়িত্বে তো অবহেলা করেনি। আর চরিত্র? এর তুলনায় তনয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র, সারা পথ এসব ভেবে ভেবে যখন বাসায় পৌঁছালো তখন সন্ধ্যা সাতটা, রিকশায় বসেই ফেইক কবি নাঈমকে ব্লক করে দিয়েছে লাবণ্য।
দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢোকে লাবণ্য, নিজের ঘর নিজের সংসার এত শান্তির! এই প্রথম উপলব্ধি করলো সেটা, তনয় তখনও বাসায় ফেরেনি। শাড়ি চেঞ্জ করে একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে নিল। চুলায় রান্না বসালো। সারাদিনে কিছুই খাওয়া হয়নি তার।
কিছুক্ষণ পর কলিংবেলের শব্দ। দরজা খুলে দেখলো তনয় দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে ক্লান্তি, কিন্তু মুখে মিষ্টি একটা হাসি, হাতে একটা শাড়ির প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো লাবণ্যের দিকে।
-তোমার জন্য এনেছি। আজ অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ মনে পড়লো, কাল তো পহেলা বৈশাখ, আমাদের প্রথম দেখার দিন।
লাবন্য ভাবলো, সব দিন ভুলে গেলেও এই দিনটি কখনো ভোলেনা তনয়, সব মানুষ তো সমান হয় না, একেক জন একেক ধাঁচের হয়। হতে পারে এই দিনটাই এত বেশি স্পেশাল বলেই অন্য দিনগুলো তত গুরুত্বপূর্ণ না ওর কাছে।
লাবন্যর কাছে এখন মনে হচ্ছে ফেসবুক হচ্ছে সমস্ত নষ্টের জায়গা। যদি ফেসবুক না থাকতো তবে নাঈমের মতন প্রতারক ওকে কখনোই ঘরের বাহির করতে পারত না এত সহজে, যোগাযোগই করতে পারত না, সে সুযোগই লাবণ্য দিত না। একটা চরিত্রবান মানুষেরও চরিত্র নষ্ট করে দেওয়া এখন অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে চরিত্রহীন মানুষের পক্ষে।
লাবণ্য ধীরে ধীরে শাড়ির প্যাকেট খোলে, একটা ল্যাভেন্ডার কালারের শাড়ি।
-তুমি জানলে কী করে এই রঙ আমার পছন্দ? লাবণ্য জিজ্ঞেস করে মাথা নিচু করে।
-তোমার আলমারিতে রাখা বেশিরভাগ পোশাক এই রঙের।
লাবণ্য হেসে বলে
-তোমার এসব খেয়াল থাকে এখনো?
তনয় বলল
-সবসময় থাকে, শুধু বলা হয়ে উঠে না।
শুভ্র চাঁদের আলো জানালায় এসে পড়ছে। বারান্দায় রাখা সেই পুরোনো গন্ধরাজ গাছটা সাদা ফুলে ভরে আছে, বাতাসে দুলছে পাতাগুলো...
পরের দিন লাবন্যর বাসার কাজের মেয়ে রুম্পা এসে বলল আফা ফেসবুকে একজন আমারে বিয়ার প্রস্তাব দিছে, বলতেছে আমারে নাকি পা থেকে মাথা পর্যন্ত সোনায় মুড়িয়ে দিবে। ব্যাডায় আবার কবি আমারে নিয়া কত কবিতা যে লেখছে, গত পাঁচ বছর ধইরা, ব্যাডার ওয়াল ভর্তি আমারে নিয়ে কবিতা, সব কবিতার নাম প্রিয়তমা রুম্পা, এই দ্যাহেন আফা, লাবণ্য দেখলো...
ফেইসবুকে রুম্পার সাথে লাবণ্য অনেক ছবি শেয়ার করেছে, এত সুন্দর পরিপাটি করে সাজিয়ে ওকে নিয়ে ছবি তুলতো যে অনেকেই রুম্পাকে ওর বান্ধবী ভাবতো, এমনকি রুম্পা নিজেও ওমন ভাবে। লাবন্য দেখলো দার্শনিক কবি নাঈম চতুর বুদ্ধি সম্পন্ন লম্পটের টার্গেট এখন রুম্পা, প্রিয়তমা লাবণ্যর' শিরোনামের লাবণ্য কেটে দ্রুত এডিট করে সেটা রুম্পা করেছে।
রুম্পা বললো
-ব্যাডার প্রোফাইলের ছবিডা দেখছেন আফা? ব্যাডার চেহারা দেখলেই তো বোঝা যায়, পকেটে কয় টেকা আছে, হেয় দিব পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্বর্ণ। হিহিহি
দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাবণ্য বলল
- তোর না জামাই আছে, ও দেখছে?
- দেখছে আফা দেইখা ব্লক কইরা দিছে, বলেই ফিক করে আবারো হাসি।
রুম্পা ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়েছে, শুধু বাংলা পড়তে পারে, ইংলিশ লিখতে বা পড়তে পারে না, এই পড়া দিয়েই সে ফেইসবুক টিকটক চালায়, এইরকম একটা মেয়ে হয়েও রুম্পার মাথায় যে বুদ্ধি আছে তার এক আনা বুদ্ধি ও যদি লাবন্যর মাথায় থাকতো! তাহলে সেদিনের অপ্রীতিকর সিচুয়েশন কখনোই ওর জীবনে ঘটতো না, গালে হাত দিয়ে উদাশ হয়ে রুম্পার ফিকফিক হাসি শুনতে শুনতে ভাবে সে কথা।
২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪২
সামিয়া বলেছেন: আচ্ছা আচ্ছা
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এরকম আরো অনু গল্প চাই। ব্লগ কেমন জানি কাঠখোট্টা হয়ে গেছে।