নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনু গল্পঃ ব্যর্থ বাসনার দাহ

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮

ছবিঃনেট

খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবে না, কোনো টিউশনি করাবে না, ফোন করে সব student-কে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে।

নাবিল আসছে, নাবিল আসছে,দুইবার আনমনে বলে ওঠে ও।
আজ চার বছর দুই মাস পর দেখা হবে ওদের, একা একাই হিসেব করে তন্দ্রা।

চার বছর! কত লম্বা সময়! অথচ মনে হয় এই তো সেদিন—নাবিল UK যাওয়ার আগের দিন তন্দ্রার সাথে দেখা করেছিল, সেদিন মেয়েদের মত করে সে কী কেঁদেছিল ছেলেটা। এখনো নাবিলের কান্নার মুহূর্ত, ওর চোখের জলে ভেজা মুখ, চোখ, গাল, এলোমেলো না আঁচড়ানো চুল, পার্কের বেঞ্চ, হাতে ধরে রাখা মোবাইল, হাতা গুটানো শার্ট—তন্দ্রার চোখে ভাসছে! এই তো সেদিন!

দিনগুলো কত দ্রুত যে চলে যায়!! সেদিন নাবিল ওকে কত অনুরোধ-অনুনয় করেছিল—তুমিও চলো তন্দ্রা,কিন্তু UK গিয়ে লেখাপড়া করার মতো সামর্থ্য যে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তন্দ্রার নেই। কিংবা বাড়ি থেকেও যে অনুমতি মিলবে না, সেটা তো নাবিলের অজানা নয়। তবে কেন এমন অবুঝের মতো কথা বলেছিল?

নাবিলের UK-তে পড়াশোনার ব্যাপারটা ওর বাবার হঠাৎ সিদ্ধান্তেই, আর ভীষণ দ্রুত গতিতে সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। দেশের পড়াশোনার চেয়ে বিদেশে পড়লে নাবিলের জন্য better future—তাই ওর বাবার এই সিদ্ধান্ত। অবশ্য নাবিলের যে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, তা ওদের পরিবারের কেউ জানতো না।

এয়ারপোর্ট পৌঁছে ফ্লাইটের landing time জেনে নিয়ে একটা পত্রিকা কিনে লাগোয়া রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে তন্দ্রা।

এভাবে অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে আশেপাশে, তারপরও সবাই যেন তন্দ্রাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে!
একটা নীল-সাদা শাড়ি পরেছে ও, হ্যান্ডব্যাগের পাশেই রাখা এক গুচ্ছ গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে বানানো ফুলের তোড়া।
এখনও অনেক সময় বাকি—অনেক আগেই চলে এসেছে তন্দ্রা। সারাটা রাত নাবিলের কথা ভেবে ভেবে নির্ঘুম কেটেছে বলে বসে বসে অপেক্ষা করতে করতে ঝিমুতে লাগলো। এক সময় তন্দ্রা লক্ষ্য করলো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।

আর মাত্র মিনিট ত্রিশেক দেরি। তারপরই নাবিল ওর সামনে থাকবে।
আচ্ছা, নাবিল কি এতদিন পর তন্দ্রাকে দেখে জড়িয়ে ধরবে? ওর relatives-দের কেউ যদি সাথে থাকে?

ও অবশ্য মেইলে লিখেছিল—No problem, তুমি এয়ারপোর্ট এসো—তার মানে হয়তো তেমন কেউ থাকবেনা। হয়তো কেবল ওদের বাসার driver-কে পাঠিয়েছে ওকে receive করতে। কিংবা নাবিলই হয়তো মানা করেছে কাউকে আসতে—যে একরোখা ছেলে।

UK যাওয়ার পর নাবিল ভীষণ ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা নিয়ে। Facebook-এ তো নামমাত্র একটা profile আছে ওর। তবু মাসে অন্তত একবার তন্দ্রার সাথে সময় বের করে কথা বলতো নাবিল।
বেচারা! এত ভালোবাসে ছেলেটা আমাকে! আনমনে ভাবতে থাকে তন্দ্রা।

প্রচণ্ড রোদ উঠেছে আজ। হঠাৎ হঠাৎ গাড়ি হুসহাস করে সাইড দিয়ে চলে যাচ্ছে। একটু দূরে একটা কাঠবাদাম গাছে ভরে আছে পাখি—কিচিরমিচির করছে, মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে সেদিকে।

সকালে কিছুই খেয়ে না আসায় হঠাৎ খুব ক্লান্তি বোধ করে ও। হেঁটে হেঁটে একটা দোকানে গিয়ে এক কাপ চা নিতে নিতে খেয়াল করে—এগারোটা বেজে গেছে! এর মধ্যে নাবিল চলে এলো না তো?

চায়ের কাপ রেখেই দৌড় দেয় ও। যেখান দিয়ে যাত্রীরা বের হচ্ছে, সেখানে গিয়ে দেখে—অনেকেই ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে।
এক লোক লাল গেঞ্জি আর সানগ্লাস পরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। একটা মাইক্রো আসতেই তাতে উঠে পড়লো। এক বিদেশিনী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, এরপর সেও চলে গেল।
এরকম আরও অনেক যাত্রী বের হলো, চলেও গেল। কিন্তু নাবিলকে কোথাও দেখা গেল না।

নাবিলের কি তবে ফ্লাইট late?
কি ব্যাপার?
কি হলো?
চিন্তার সাথে সাথে মনটাও ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে তন্দ্রার।

ঠিক তক্ষুনি—off-white long skirt পড়া একটা মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে এলো নাবিল।

প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলো না তন্দ্রা। কাছে যেতে চাইলো। দুই একবার নাবিলের নাম ধরে ডাক দিলো।
নাবিল সেই ডাক শুনতে পেল না। খুব উৎফুল্ল লাগছে ওকে—হো হো করে হেসে উঠলো দু'বার!
কি যে ভালো লাগলো সেই হাসি! কতদিন পর আজ নাবিলের হাসিমুখ দেখতে পাচ্ছে তন্দ্রা! কিন্তু... মেয়েটি কে?

তাদের কথা বলার ধরন, মুখমণ্ডলের বহিঃপ্রকাশ দেখে যে কেউ বুঝবে তাদের ভেতর সম্পর্ক কী। মেয়েটি প্রায় লেপটে আছে নাবিলের শরীরের সাথে।

কি যেন মনে আসতেই—নাবিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলতে বলতে হেসেই খুন!
নাবিল আলতো করে নাক টেনে দেয় মেয়েটির!
সে কি মুগ্ধতার ঝিলিক—দুজন দুজনের প্রতি!

সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে আসতে তন্দ্রা এক সময় অনুধাবন করতে পারে—কি হচ্ছে!
দৃশ্যটি অবিশ্বাস্য! দৃশ্যটি বাস্তব কিছুতেই হতে পারে না!
যা কিছু হচ্ছে সব ভুল, সব মিথ্যা।
এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়!
ঘুম ভাঙলেই দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে।

এক মহিলার খুব আনন্দময় কথা কানে আসে—
আমাদের নাবিলটা দেখি বিদেশ থেকে পুতুল বিয়ে করে নিয়ে এসেছে গো, একদম পুতুল একটা!

পিছিয়ে আসে তন্দ্রা।

যে সত্যি একটি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেয়, যে সত্যির ভেতরে লুকিয়ে থাকে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা—
সেই সত্যির মুখোমুখি না হওয়াই ভালো!

দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে ও। দূরের ওই আকাশটার শেষ সীমানা পর্যন্ত এখনই পৌঁছানো খুব জরুরি যেন!
এখনই হেঁটে হেঁটে পুরো পৃথিবীটা ঘুরে না দেখলেই নয়!
ওকে ভালোবাসা নামের নিষ্ঠুরতা থেকে পালাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব!

বুকটা ভেঙে যাচ্ছে কেন!
দুচোখ অন্ধকার হয়ে আসছে।

থামলে চলবে না!
একবার থেমে গেলেই পরাজিত!

ওকে যে করেই হোক সমস্ত বেদনাকে, সমস্ত পরাজয়কে, সমস্ত মিথ্যাকে, সমস্ত উপেক্ষাকে, সমস্ত বৈষম্যকে, সমস্ত ঘৃণাকে, সমস্ত প্রতিশোধকে, সমস্ত ক্লান্তিকে, সমস্ত চোখের জলকে—
দু'পায়ে মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।
শুনি ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে
অতল জলের আহ্বান।
মন রয় না, রয় না, রয় না ঘরে,
চঞ্চল প্রাণ।
ভাসায়ে দিব আপনারে,
সকল ভাবনা-ডুবানো ধারায় করিব স্নান।
ব্যর্থ বাসনার দাহ—হবে নির্বাণ।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৯

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: এমন গুরুতর ভালোবাসাও কি তুলোর মত উড়ে যায়?

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩১

সামিয়া বলেছেন: হুম যায় তো

২| ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:০৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তন্দ্রার এখন কি করা উচিত?

০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

সামিয়া বলেছেন: তন্দ্রা সব কিছু ভুলে জীবন কে সুন্দর করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে যাবে।

৩| ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:২৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে চলার মানসিকতা প্রতিটি মানুষের থাকতে হবে। আপনার গল্পটি ভালো লেগেছে।

৪| ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৬

অপলক বলেছেন: নীল-সাদা শাড়ির তন্দ্রা রা যেমন আছে, এক গাল দাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কপালকুন্ডরাও আছে... এক জীবনে সব পাওয়া যায় না...

কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.