![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শপিংমলটা অনেক বড়, এইখানে সাধারণ মানুষের তুলনায় শহরের সবচেয়ে অভিজাত পরিবারের লোকজন আর বিদেশী কাস্টমার নিয়মিত আসেন কেনাকাটা করতে। আউটলেটগুলো একটা থেকে আরেকটা আলাদা কোনটায় পারফিউম, কোনটা ক্লথ , কোনটায় কসমেটিকস জুয়েলারি ইত্যাদি।
তাই মাঝে মাঝেই চোর ধরা পড়ে কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই চোর গুলো বেশিরভাগ দামি গাড়ি ইউজ করেন, ব্র্যান্ডেড জুতা; জামা; ব্যাগ পড়ে থাকে, মেয়ে চোরদের ঠোঁটে নিখুঁত লিপস্টিক, কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ, ওয়েস্টার্ন ড্রেস, এরা শহরের নামকরা ফ্যামিলির ছেলে-মেয়ে, কেউ হয়তো কোনো কোম্পানির মালিকের সন্তান ও।
আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই এটাই সত্যি, কেউ স্বয়ং সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
কেন যে চুরি করে তারা এই প্রশ্নের উত্তর তারা নিজেরাও জানে না।
ধরা পড়লে এদের চেহারায় লজ্জা নেই, বরং একধরনের অহংকার, ধরা পরার পর বেশিরভাগ এরা চুরি করা প্রোডাক্টের দামসহ জরিমানা দিয়ে চলে যায়। চারদিকে এত এত সিসি ক্যামেরা সেগুলো মনিটরিং করার জন্য সব সময় দুজন সিকিউরিটি অফিসার থাকে, এরপরও কিভাবে যেন চুরি হয়; সব সময় যে চোর ধরা পড়ে তাও না,
ম্যানেজার স্যারের চোখ পড়ল তিতিরের দিকে।
তিতিরের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিন্তু ম্যানেজার বললেন অপ্রত্যাশিত কথা,
- তোমার ডেস্কে একজন বিদেশি কাস্টমার এসেছিলেন, তাই না?
- জি স্যার…গলাটা শুকিয়ে যায় তিতিরের।
- সেই মেয়ে বলেছে তুমি নাকি তাকে নিজের উদ্যোগে প্লাজো ঠিক করে দিয়েছো? তোমার সম্পর্কে নাকি অনেক প্রশংসা করেছে আমাদের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হাসনাতের কাছে, গেটে নাকি দেখা হয়েছিল তার সাথে। সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে তিতিরের দিকে তাকিয়ে দু গাল বিস্তৃত করে হাসলো হাসনাত, কোন কারণ ছাড়াই সে তিতিরকে অস্বাভাবিক রকম পছন্দ করে, যদিও তার কোন খারাপ মতলব নেই, সে বিবাহিত একটা বাচ্চা আছে, বউ বাচ্চা দেশের বাড়ি থাকে।
ম্যানেজার আবার বলে উঠলেন
- তোমার কাজের জন্য আমি সত্যিই গর্বিত। এমন কেয়ারফুল স্টাফ আমাদের খুব দরকার, অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে তোমার ওই ইনিসিয়েটিভটা আমরা রিভিউ করেছি, তুমি খুব দ্রুত ফিরে এসেছো। কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তোমার খুব ভালো।
তিতির এবার একটু হাসল।
-কিন্তু তুমি তো পার্ট টাইম জব করছো ফুল টাইম না করলে তো তোমার ইনক্রিমেন্টের ব্যাপারে আমি সিও স্যারকে কিছু বলতে পারবো না তাই না? তুমি কি ফুল টাইম কাজ করতে চাও? তিতির প্রাইভেট একটি ইউনিভার্সিটিতে ইভিনিং শাখায় বিবিএ পড়ছে, এখন ফুল টাইম জব করলে পড়াশোনার প্রেসার বেড়ে যাবে ভেবে সরাসরি রাজি না হয়ে বলল
- স্যার আমি জানাবো
- আচ্ছা ঠিক আছে
- কিন্তু পরবর্তীবার কাউন্টার খালি রাখার আগে অন্তত কাউকে জানিয়ে যাবে, ঠিক আছে?
- ঠিক আছে স্যার।
তিতির ডেস্কে ফিরে এসে দেখলো কাস্টমার কেয়ারের চেয়ার দুটো খালি নুরিয়া আপা কোথাও নেই হয়তো আশেপাশেই আছে, ওদের ল্যান্ড ফোন বাজছে, দ্রুত সেটি রিসিভ করে বললো
– হ্যালো, কাস্টমার কেয়ার, গুড আফটারনুন...
অপর পাশ থেকে একটু সময় নিয়ে অদ্ভুত সুন্দর কন্ঠে একজন পুরুষ বলল
– হ্যালো... আমি তমাল চৌধুরী বলছি, কলকাতা থেকে। আমি আমাদের জুয়েলারি ব্র্যান্ড 'James Stone' এর কিছু প্রোডাক্ট দিতে চাই আপনাদের জুয়েলারি আউটলেটে আপনাদের সিওর সাথে কি কথা বলা সম্ভব?
- আপনি একটু অপেক্ষা করুন স্যার, আমি স্যারের ডেস্কে কলটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি, তিতির কলটি ট্রান্সফার করে দিল।
কিন্তু বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পরও ওপাশ থেকে কেউ কল রিসিভ করল না
- সম্ভবত সিও স্যার তার টেবিলে নেই।
ওপাশ থেকে ছেলেটা হালকা হেসে বললো
- নো প্রবলেম, আমি কি তবে পরে ফোন দিবো?
- সেটা করলেই ভাল হয়।
- ঠিক আছে ম্যাম, ও হ্যাঁ আপনার নাম জানতে পারি?
- নাম দিয়ে কাজ কি
- এই আর কি, পরিচিত মানুষ পাবো একজন, কাউকে তো চিনি না ওখানে,
- নাম জানলেই কি পরিচিত হয়ে যায় নাকি
- যায় যায়, বলুন না ম্যাডাম, প্লিজ
- আমার নাম তিতির
- তিতি
- না তিতির
- ওকে তিতি
- না না না তিতি না তিতির
- তিতি তিতি তিতি
- ধ্যাৎ
- হাহাহা মজা করলাম, ওকে পরে কথা হবে।
- তিতির ও মৃদু হেসে ফোনটা রেখে দিল।
ইউনিভার্সিটির চতুর্থ তলায় তিতিরের ক্লাসরুম, বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্লাস হয়, তবে কিছু কিছু স্যার ক্লাস এত বেশি দীর্ঘ করে যে রাত নয়টা এমনকি দশটাও বেজে যায়।
তিতির ক্লাসে ঢুকেই দেখে ওর বান্ধবী নন্দিতা জানালার পাশে বসে আছে, মুখ গম্ভীর করে, পাশে বসে আছে রাফি, সে ক্লাসে একটা বড় ভাই টাইপ ভাব নিয়ে থাকে।
তিতির ওদের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসতেই ফিসফিস করে নন্দিতা বলল, এই তিতির শুনেছিস, আজকে নাকি স্টাটিস্টিকস ম্যাম ক্লাস টেস্ট নেবে।
- কি বলিস? সে তো কেবল একটা ক্লাস নিল,
- একটা না দুইটা ক্লাস নিয়েছে, একটা তুই মিস করেছিস, হৃদয় বললো।
এই পর্যায়ে নাটকীয় ভাবে ক্লাসে ঢুকলো তিতিরের সব থেকে ভালো বন্ধু তানিম। ঢুকেই দুই হাত পা নেড়ে নেড়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললো
- শেষ! আমার মান ইজ্জত সব শেষ আজকে। বাসে একটা গে ব্যাডার পাল্লায় পড়ছিলাম। ছেড়িরাও এত লজ্জা পায়না যেই লজ্জা আমি পাইছি আজকে,
- কি! গে! ইয়া আল্লাহ এই মাল বাসে?
- আরে হ
- তুই সরে গিয়ে অন্য সীটে বসতি, রাফি বললো
- হ অন্য সীটে বসমু, দাঁড়াবার জায়গা নাই বাসে যেই ভিড়! ব্যাটা সুযোগে আমার সারা শরীর হাতাইছে, ওয়াক থু, আমার মান ইজ্জত সব শেষ আজকে।
- আমাদের দেশে গে আছে? নন্দিতা বলল
- হ আছে না, আমি নিজে সাক্ষী হইছি আজকে, মনে করলেও গা ঘিনঘিন করে।
তানিমের করুন চেহারা দেখে তিতিরের এত হাসি পেল, বেশিক্ষণ সেই হাসি চেপে রাখতে পারল না খিল খিল করে হেসে দিল, দ্রুতই সেই হাসি সংক্রমিত হয়ে সারা ক্লাসে ছড়িয়ে গেল। তানিম সবার হাসি দেখে রেগেমেগে হাতের বই খাতা ছুঁড়ে দিয়ে বললো দিতাম না আজকে পরীক্ষা।
তখনই দরজা খুলে ক্লাসে ঢুকলেন ফারিহা ম্যাম, হাতে একগাদা সাদা কাগজ। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই আর,
শুধু তিতির মিনমিন করে বলল
- ম্যাম আজকে পরীক্ষা না নিলে হয় না একদম প্রিপারেশন নেই,
তিতিরের সাথে গলা মিলিয়ে টিচার উত্তর দিল
- গত দুইটা ক্লাসের টপিকের উপর ছোট্ট একটা ক্লাস টেস্ট নেব একদম প্রিপারেশনের দরকার নেই, মনিটর দুজন এইদিকে আসো পেপারগুলো সবাইকে দিয়ে দাও।
(চলবে)
ছবিঃনেট
২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৯
সামিয়া বলেছেন: লিখে নিইই...
২| ২৪ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আগ্রহ নিয়ে পড়ে যাচ্ছি......
২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
সামিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৮
শায়মা বলেছেন: তারপর.....