নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে ঘাটে

০৪ ঠা জুন, ২০২৫ রাত ১১:১৭


ছবিঃ সেই ফুলওয়ালা মামার কাছ থেকে কেনা আমার ফুলের তোড়া।

শান্ত বিকেল। যুবকটি অনেকক্ষণ ধরে ফুলওয়ালার পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসে দরদাম করছে এক গোছা ফুলের জন্য। যেটা নিয়ে এত দরদাম তাতে রয়েছে তিনটি লাল গোলাপ, তিনটি হলুদ চন্দ্রমল্লিকা, আর গুচ্ছগুচ্ছ জিপসি আর বুনো পাতায় জড়ানো ফুলের তোড়াটা।

ফুলওয়ালার বয়স হয়েছে, কিংবা হয়তো হঠাৎ হঠাৎ বর্ষার ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শের কারণে শরীরটা স্থবির। ধীর গতিতে তিনি তোড়াটি হাতে তুলে নিয়ে জিপসিগুলো ঠিকঠাক করছেন, আর গোলাপগুলো একটু টেনে টেনে ঠিক করে দিচ্ছেন, কিন্তু যুবকের বলা দামে দেয়ার কোন আগ্রহ দেখালেন না। আমি সিরিয়ালে এসে দাঁড়িয়েছি কারন কিছু সময় আগে তার থেকে কেনা ফুলের তোড়া থেকে কাঁটা বেরিয়ে গিয়েছে, আরেকটু ভালো করে কাঁটা ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য।

ফর্সা, মিষ্টি চেহারার যুবকটি হঠাৎ আমার দিকে ফিরে বড় আশা নিয়ে বললো, দেখেন না, আপু! দাম কমাচ্ছেই না। মামাকে একটু কমিয়ে দিতে বলুন না।

এইভাবে এমন করে অপ্রত্যাশিত আমার কাঁধে দায়িত্ব এসে পড়ায় নতুন উদ্যমে দামাদামি করার জন্য প্রস্তুত হলাম সারাজীবন একদামে কেনা মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আমি।

ফুলওয়ালা মামাকে বললাম, মামা ও যে দাম বলছে, সেই দামেই দিয়ে দেন, স্টুডেন্ট মানুষ(স্টুডেন্ট শব্দটা ডিসকাউন্টের সুবিধার্থে বলেছি) তার উপর ছেলে হয়ে যে ফুল কিনতে আসছে এইতো বেশি।

ফুলওয়ালা মামাকে বলা কথাটা অত একটা কনভিন্স করতে না পারলেও বিশেষ বিবেচনায় ঝুলে রইলো, উনি কনভিন্স হবে বা' ই বা কেন! একটু আগেই এই একই ফুল আমি একশো বিশ টাকায় কিনেছি।
তারপর মামা দীর্ঘ সময় ১০০ আর ৭০ টাকার দর কষাকষি শেষে ৮০ টাকায় সম্মতি জানালেন।

উনি যেই তোড়াটি যুবকের হাতে তুলে দিলেন; জীবনে কিছুই করতে না পারা আমি কিছু একটা করতে পারার আনন্দে উদ্ভাসিত হলাম। দেখতে সদ্য কৈশোর পেরোনো লাজুক যুবক আমার দিকে ফিরে কৃতজ্ঞ চিত্তে হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানালো।
কি বলি কি বলি করতে করতে বললাম, গুড লাক!
বলেই খানিকটা সামনে এগোতে থাকি, দেখি রাস্তায় একটা ছোট কুকুর খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটছে। পাশে একটা পুরনো ফুচকার দোকান, কয়েকজন অলসভাবে সময় কাটাচ্ছে টলমলে ঠান্ডা বাতাসের সাথে লেকের পাশের চেয়ারে, মোবাইলে মুখ গুঁজে বসে আছে মধ্যবয়স্ক একজন।

আমি ভাবলাম যুবকটার কথা, পেছন ফিরে দেখি, সে বেশ দূরে চলে গেছে। হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে টান টান ভঙ্গিতে হাঁটছে, যেটায় তিনটি লাল গোলাপ, তিনটি হলুদ চন্দ্রমল্লিকা, আর গুচ্ছগুচ্ছ জিপসি আর বুনো পাতা দিয়ে সাজানো ভালোবাসা।

বিকেলের আলোটা নরম হয়ে আসছে, চারপাশে শান্তি শান্তি পরিবেশ। কল্পনায় ভেসে উঠল, একা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি, তার চোখে মুখে ক্লান্তি, হয়তো ক্লাস অথবা অফিস শেষে দেখা করতে এসেছে প্রেমিকের সাথে।

যুবকটি ফুলের গুচ্ছ এগিয়ে দিতেই হয়তো মেয়েটি খুশি হবে, কিংবা বলবে, তুমি এত দেরি করলে! অথবা চুপচাপ লাজুক হেসে তোড়াটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকবে যুবকের দিকে চোখে মুখে রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে।

মাঝেমাঝে এ শহরের সবচেয়ে সুন্দর ভালোবাসাগুলো হয়তো আমাদের পাশ দিয়েই এইভাবে হেঁটে যায়। ওগুলো টিকটকে আসে না, ফেসবুক রিলসে আসে না বলেই হয়তো সম্পর্কগুলো হয় সবচেয়ে সুন্দর পবিত্র আর চিরস্থায়ী।


(অনেকদিন পর আবারো শুরু করলাম আমার পথে ঘাটে চলতে ফিরতে ঘটা সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা সিরিজ)

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০২৫ রাত ১১:৫৩

আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে।

০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৩৬

সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:০৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি কোন মেয়েকে একদামে কিছু কিনতে দেখি নাই।

ফুল ছেলেদেরই বেশী কিনতে হয়।

এই ছেলেটা সম্ভবত কোন মেয়ের জন্য ফুল কেনে নাই। সে কিনেছে বাসার ফুলদানির জন্য। এতো লাজুক ছেলের প্রেম করতে পাড়ার কথা না।

সদ্য কৈশোর পেরুনো কোন ছেলেকে যুবক না বলে তরুণ বলা উচিত। ১৮ বছর না হলে শিশুও বলা যেতে পারে।

০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৬

সামিয়া বলেছেন: (আমি কোন মেয়েকে একদামে কিছু কিনতে দেখি নাই।) = কারন আপনি আমাকে দেখেন নাই, গত ছয় বছর পার হচ্ছে জমজম, আগোরা, স্বপ্ন, মিনা বাজার, ভগ, ইয়োলো আর সেইলর পর্যন্ত। এর আগে শুধু যমুনা আর যমুনা আর অনলি ইউনিমার্ট ঐ বিল্ডিংটার ১৪তলায় অফিস ছিল বলে, তার আগে ছিল বসুন্ধরা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আমি নিউমার্কেট চাঁদনী চক এসব জায়গায় কখনো কেনাকাটা করিনি দামাদামি করতে পারিনা বলে। এর মানে এই নয় আমি রিচ, আসলে ভাবীর সাথে দেখা হলে ভাবী প্রথম দেখাতেই বুঝবে আমি কি পরিমান বোকা।
(সদ্য কৈশোর পেরুনো কোন ছেলেকে যুবক না বলে তরুণ বলা উচিত) =বাক্যটার আগে লিখেছি 'দেখতে' সদ্য কৈশোর পেরোনো, আসলে সে তা নয় বুঝিয়েছি

এই ছেলেটা সম্ভবত কোন মেয়ের জন্য ফুল কেনে নাই। সে কিনেছে বাসার ফুলদানির জন্য। এতো লাজুক ছেলের প্রেম করতে পাড়ার কথা না। =সে যেদিকে যাচ্ছিল ঐদিকে বাড়িঘর নেই, দিয়াবাড়ির লেকের দিকে যেদিকে বাড়িঘর নেই। তবু আপনার যুক্তির ও সম্ভাবনা আছে।

৩| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৩১

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এটা শাহাবাগের কোন এক ফুলের দোকান হবে।

০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৭

সামিয়া বলেছেন: না শাহবাগের ফুলের দোকান না

৪| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ২:৩০

মনজুর মোরশেদ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।আশা করি সিরিজটা চালিয়ে যাবেন।

০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:১৯

সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ইনশাআল্লাহ

৫| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ৩:৩০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার এই সিরিজটা পুনরায় চালিয়ে যান। অনেকের কাছেই ভালো লাগবে।

০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২০

সামিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ ব্রো

৬| ০৫ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: লিখুন। সাথে আছি।

০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২০

সামিয়া বলেছেন: থ্যাংকস

৭| ০৫ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৪৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লিখুন। সাথে আছি।

০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২০

সামিয়া বলেছেন: আচ্ছা

৮| ০৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন। সেটা জানতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.