![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃ সেই ফুলওয়ালা মামার কাছ থেকে কেনা আমার ফুলের তোড়া।
শান্ত বিকেল। যুবকটি অনেকক্ষণ ধরে ফুলওয়ালার পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসে দরদাম করছে এক গোছা ফুলের জন্য। যেটা নিয়ে এত দরদাম তাতে রয়েছে তিনটি লাল গোলাপ, তিনটি হলুদ চন্দ্রমল্লিকা, আর গুচ্ছগুচ্ছ জিপসি আর বুনো পাতায় জড়ানো ফুলের তোড়াটা।
ফুলওয়ালার বয়স হয়েছে, কিংবা হয়তো হঠাৎ হঠাৎ বর্ষার ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শের কারণে শরীরটা স্থবির। ধীর গতিতে তিনি তোড়াটি হাতে তুলে নিয়ে জিপসিগুলো ঠিকঠাক করছেন, আর গোলাপগুলো একটু টেনে টেনে ঠিক করে দিচ্ছেন, কিন্তু যুবকের বলা দামে দেয়ার কোন আগ্রহ দেখালেন না। আমি সিরিয়ালে এসে দাঁড়িয়েছি কারন কিছু সময় আগে তার থেকে কেনা ফুলের তোড়া থেকে কাঁটা বেরিয়ে গিয়েছে, আরেকটু ভালো করে কাঁটা ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য।
ফর্সা, মিষ্টি চেহারার যুবকটি হঠাৎ আমার দিকে ফিরে বড় আশা নিয়ে বললো, দেখেন না, আপু! দাম কমাচ্ছেই না। মামাকে একটু কমিয়ে দিতে বলুন না।
এইভাবে এমন করে অপ্রত্যাশিত আমার কাঁধে দায়িত্ব এসে পড়ায় নতুন উদ্যমে দামাদামি করার জন্য প্রস্তুত হলাম সারাজীবন একদামে কেনা মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আমি।
ফুলওয়ালা মামাকে বললাম, মামা ও যে দাম বলছে, সেই দামেই দিয়ে দেন, স্টুডেন্ট মানুষ(স্টুডেন্ট শব্দটা ডিসকাউন্টের সুবিধার্থে বলেছি) তার উপর ছেলে হয়ে যে ফুল কিনতে আসছে এইতো বেশি।
ফুলওয়ালা মামাকে বলা কথাটা অত একটা কনভিন্স করতে না পারলেও বিশেষ বিবেচনায় ঝুলে রইলো, উনি কনভিন্স হবে বা' ই বা কেন! একটু আগেই এই একই ফুল আমি একশো বিশ টাকায় কিনেছি।
তারপর মামা দীর্ঘ সময় ১০০ আর ৭০ টাকার দর কষাকষি শেষে ৮০ টাকায় সম্মতি জানালেন।
উনি যেই তোড়াটি যুবকের হাতে তুলে দিলেন; জীবনে কিছুই করতে না পারা আমি কিছু একটা করতে পারার আনন্দে উদ্ভাসিত হলাম। দেখতে সদ্য কৈশোর পেরোনো লাজুক যুবক আমার দিকে ফিরে কৃতজ্ঞ চিত্তে হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানালো।
কি বলি কি বলি করতে করতে বললাম, গুড লাক!
বলেই খানিকটা সামনে এগোতে থাকি, দেখি রাস্তায় একটা ছোট কুকুর খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটছে। পাশে একটা পুরনো ফুচকার দোকান, কয়েকজন অলসভাবে সময় কাটাচ্ছে টলমলে ঠান্ডা বাতাসের সাথে লেকের পাশের চেয়ারে, মোবাইলে মুখ গুঁজে বসে আছে মধ্যবয়স্ক একজন।
আমি ভাবলাম যুবকটার কথা, পেছন ফিরে দেখি, সে বেশ দূরে চলে গেছে। হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে টান টান ভঙ্গিতে হাঁটছে, যেটায় তিনটি লাল গোলাপ, তিনটি হলুদ চন্দ্রমল্লিকা, আর গুচ্ছগুচ্ছ জিপসি আর বুনো পাতা দিয়ে সাজানো ভালোবাসা।
বিকেলের আলোটা নরম হয়ে আসছে, চারপাশে শান্তি শান্তি পরিবেশ। কল্পনায় ভেসে উঠল, একা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি, তার চোখে মুখে ক্লান্তি, হয়তো ক্লাস অথবা অফিস শেষে দেখা করতে এসেছে প্রেমিকের সাথে।
যুবকটি ফুলের গুচ্ছ এগিয়ে দিতেই হয়তো মেয়েটি খুশি হবে, কিংবা বলবে, তুমি এত দেরি করলে! অথবা চুপচাপ লাজুক হেসে তোড়াটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকবে যুবকের দিকে চোখে মুখে রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে।
মাঝেমাঝে এ শহরের সবচেয়ে সুন্দর ভালোবাসাগুলো হয়তো আমাদের পাশ দিয়েই এইভাবে হেঁটে যায়। ওগুলো টিকটকে আসে না, ফেসবুক রিলসে আসে না বলেই হয়তো সম্পর্কগুলো হয় সবচেয়ে সুন্দর পবিত্র আর চিরস্থায়ী।
(অনেকদিন পর আবারো শুরু করলাম আমার পথে ঘাটে চলতে ফিরতে ঘটা সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা সিরিজ)
০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৩৬
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:০৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি কোন মেয়েকে একদামে কিছু কিনতে দেখি নাই।
ফুল ছেলেদেরই বেশী কিনতে হয়।
এই ছেলেটা সম্ভবত কোন মেয়ের জন্য ফুল কেনে নাই। সে কিনেছে বাসার ফুলদানির জন্য। এতো লাজুক ছেলের প্রেম করতে পাড়ার কথা না।
সদ্য কৈশোর পেরুনো কোন ছেলেকে যুবক না বলে তরুণ বলা উচিত। ১৮ বছর না হলে শিশুও বলা যেতে পারে।
০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৬
সামিয়া বলেছেন: (আমি কোন মেয়েকে একদামে কিছু কিনতে দেখি নাই।) = কারন আপনি আমাকে দেখেন নাই, গত ছয় বছর পার হচ্ছে জমজম, আগোরা, স্বপ্ন, মিনা বাজার, ভগ, ইয়োলো আর সেইলর পর্যন্ত। এর আগে শুধু যমুনা আর যমুনা আর অনলি ইউনিমার্ট ঐ বিল্ডিংটার ১৪তলায় অফিস ছিল বলে, তার আগে ছিল বসুন্ধরা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আমি নিউমার্কেট চাঁদনী চক এসব জায়গায় কখনো কেনাকাটা করিনি দামাদামি করতে পারিনা বলে। এর মানে এই নয় আমি রিচ, আসলে ভাবীর সাথে দেখা হলে ভাবী প্রথম দেখাতেই বুঝবে আমি কি পরিমান বোকা।
(সদ্য কৈশোর পেরুনো কোন ছেলেকে যুবক না বলে তরুণ বলা উচিত) =বাক্যটার আগে লিখেছি 'দেখতে' সদ্য কৈশোর পেরোনো, আসলে সে তা নয় বুঝিয়েছি
এই ছেলেটা সম্ভবত কোন মেয়ের জন্য ফুল কেনে নাই। সে কিনেছে বাসার ফুলদানির জন্য। এতো লাজুক ছেলের প্রেম করতে পাড়ার কথা না। =সে যেদিকে যাচ্ছিল ঐদিকে বাড়িঘর নেই, দিয়াবাড়ির লেকের দিকে যেদিকে বাড়িঘর নেই। তবু আপনার যুক্তির ও সম্ভাবনা আছে।
৩| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৩১
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এটা শাহাবাগের কোন এক ফুলের দোকান হবে।
০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৭
সামিয়া বলেছেন: না শাহবাগের ফুলের দোকান না
৪| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ২:৩০
মনজুর মোরশেদ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।আশা করি সিরিজটা চালিয়ে যাবেন।
০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:১৯
সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ইনশাআল্লাহ
৫| ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ৩:৩০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার এই সিরিজটা পুনরায় চালিয়ে যান। অনেকের কাছেই ভালো লাগবে।
০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২০
সামিয়া বলেছেন: থ্যাঙ্ক ইউ ব্রো
৬| ০৫ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: লিখুন। সাথে আছি।
০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২০
সামিয়া বলেছেন: থ্যাংকস
৭| ০৫ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৪৪
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লিখুন। সাথে আছি।
০৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:২০
সামিয়া বলেছেন: আচ্ছা
৮| ০৬ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন। সেটা জানতে।
১২ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪
সামিয়া বলেছেন:
৯| ০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৭
জনারণ্যে একজন বলেছেন: ধন্যবাদ @ সামিয়া, এই সিরিজটি আবার শুরু করার জন্য। এই সিরিজের পূর্ববর্তী সব লেখাই বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়েছি।
পথে-ঘটে মানুষের বিচিত্র সব কার্যকলাপ খুবই উপভোগ্য। যেমন ধরুন, রাস্তার পাশের যেকোনো এক টঙের দোকানে বসেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারি। তাদের করা সব মন্তব্য, আলাপচারিতা, খাস বাংলায় দেয়া গালি (মুচকি হাসির ইমো হবে এখানে), রসিকতা - আহা, কি যে মিস করি! সেই তুলনায় এখানে জীবন বৈচিত্রহীন, বর্ণহীন।
আসে-পাশের মানুষের যাপিত জীবনের টুকরো টুকরো সব প্রতিচ্ছবি - আপনার এইসব লেখা দিয়েই দেখে নেয়া যাক।
১২ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:০৬
সামিয়া বলেছেন: অনুপ্রেরণায় কৃতজ্ঞতা ~
১০| ০৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৭
জনারণ্যে একজন বলেছেন: বারে ঘুরে আসলাম 'রোজওয়েল' নামের এক জায়গা থেকে। খুব বেশি দূরেও নয়, আবার তেমন কাছেও নয়। নাম শুনেছেন কিনা জানিনা, ইউএফও ইনসিডেন্টের জন্য বেশ বিখ্যাত এই জায়গাটি। বেশকিছু মুভিও করেছে এই জায়গাকে কেন্দ্র করে। একটা ইউএফও মিউজিয়াম এবং রিসার্চ সেন্টারও আছে। ঘুরে হতাশ হয়েছি, চাইল্ডিশ সব ব্যাপার-স্যাপার।
ছোটবেলায় 'বিলি দ্য কিডের' সাথে পরিচয় সেবা প্রকাশনীর সূত্রে। এই ব্লগেই পাবেন ওনাকে নিয়ে লেখা পোস্ট। বুনো পশ্চিমের সুবিখ্যাত গানস্লিঙ্গার এই তরুনের গ্রেভইয়ার্ড এবং ট্রেইলও দেখে আসলাম। অনেকদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল এটি। ছোটবেলার হিরো বলে কথা!
ছবি তোলা এখনো পুরোপুরি রপ্ত করে উঠতে পারিনি। তারপরেও সেখান থেকে কিছু শেয়ার করা যাক।
ভালো থাকবেন।
১২ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:১২
সামিয়া বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো! রোজওয়েল নিয়ে ছোটবেলা থেকেই কৌতূহল ছিল, বিশেষ করে ওই ইউএফও ইনসিডেন্টের গল্পগুলো, কিন্তু শুনে একটু খারাপই লাগলো যে মিউজিয়ামটা অতটা আকর্ষণীয় লাগেনি।
আর বিলি দ্য কিড! সেবা প্রকাশনীর হাত ধরেই তো আমরাও ওয়েস্টার্ন" দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছিলাম। সেই কাঠের কোল্ট রিভলভার, মরুভূমির ধুলো, চটের পোশাক, শেরিফ আর আউটল’দের দুনিয়া; এখনও চোখে ভাসে। আপনি তার কবর আর ট্রেইল দেখে এসেছেন শুনে একটা হালকা গা শিউরে ওঠা অনুভূতি হলো।
ছবিগুলো দেখে দারুণ ভালো লাগলো। আশাকরি সময় সুযোগ করে আমাদের সুন্দর সুন্দর ভ্রমন কাহিনী উপহার দিবেন। ভালো থাকুন।
১১| ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৩৪
জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ সামিয়া, হ্যাঁ - মাঝে মাঝে এরকম উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে ভালোই লাগে। হয়তো বের হলাম মাছ ধরতে, তারপর ঘুরতে ঘুরতে কোথায় যে চলে গেলাম.....
ড্রাইভটা বেশ সিনিক ছিল। এমনও হয়েছে, টানা এক ঘন্টাতেও পথে অন্য কোনো গাড়ী চোখে পড়েনি। দু' পাশে শুধু ধু ধু প্রান্তর। তবে রাস্তার উপর ট্যারান্টুলা চোখে পড়েছে বেশ।
নাম কে ওয়াস্তে ছবি তুলেছি। জাস্ট তোলার জন্যই তোলা। ভাবছি দেশে গেলে মরুভূমির জলদস্যু'র কাছে ছবি তোলার তালিম নিতে হবে।
১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৩:৩৬
সামিয়া বলেছেন: ছবিগুলো ভালো লেগেছে,আপনি অনেক ভালো ছবি তোলেন, আপনার জীবনটা খুব সুন্দর মাশাআল্লাহ 'নাজর না লাগ যায়্যে'
১২| ১৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:২৪
মেহবুবা বলেছেন: মাঝে মাঝে এ শহরের সবচেয়ে সুন্দর ভালবাসাগুলো আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যায়, যাবার অতি গতিবেগে বাতাস আমাদের ধাক্কা দিয়ে যায়!
১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৩:৩৩
সামিয়া বলেছেন: আচ্ছা আচ্ছা
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুন, ২০২৫ রাত ১১:৫৩
আধুনিক চিন্তাবিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে।