নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

তার সাথে দেখা হবে কবে (৯ম ও ১০ম পর্ব)

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৪:২১



বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। অফিস থেকে ফেরার পথে তিতির হাত ভর্তি করে মাছ মাংস সহ নানান বাজার নিয়ে বাসার নিচে এসে যখন দাঁড়ালো মাগরিবের আযান সেসময় চারদিকে ধ্বনি প্রতিধ্বনি দিচ্ছে, ছোট্ট একটা আনন্দের নিঃশ্বাস নিয়ে কলিংবেল টিপে দাঁড়ালো, ভালো লাগছে ওর; দরজা খুলে দেয় তিতিরের মা।
তিতিরের হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে
- কিরে এত বাজার কিসের? এত বাজার তুই করেছিস?
তিতির হেসে বলে,
- হ্যাঁ মা আমি করেছি, কারন আজ একটু স্পেশাল দিন।
- কি স্পেশাল দিন?
- বলছি বলছি, একটু তো অপেক্ষা করতে হবে দেখার জন্য, বাবা কোথায়?
- আর কোথায় তার রুমেই তো
- আচ্ছা
- কি হয়েছে বল তো অফিস থেকে এসেই বাবাকে খুঁজছিস বাজার-টাজার করে এনেছিস ঘটনা কি?
- মা আজকে আমি অফিস থেকে অনেকগুলো টাকা পেয়েছি, ইনসেনটিভ, একটা প্রোগ্রাম ছিল তো ওটার জন্য অফিস থেকে দিল।
- কত টাকা
- এক লক্ষ টাকা, মা তুমি বরং টাকাটা নাও, এটা তোমাকে দিলাম,
- এত টাকা দিয়ে আমি কি করবো?
- তুমি জানো কি করবে কিছু কম আছে, বাজার করেছি তো।
তিতিরের মার চোখ ছল ছল করে উঠলো, সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটা যে টেডি বিয়ারের জন্য বায়না ধরতো, সে আজ এত বড় হয়ে গিয়েছে, পই পই করে কি বলছে এসব! ওর চাকরির ব্যাপারে কখনোই কেউ সিরিয়াসলি নেয়নি, ছোটমোটো একটা কাজ করছে, আজকালকার ছেলেমেয়েরা কত ভাবে নষ্ট হয়ে যায় তাও কাজ লেখাপড়ার মধ্যে থাকলে ভালো থাকবে, তাই সেরকমভাবে কেউ বাঁধাও দেয়নি, তিতির ওর টাকা পয়সা ওর মতন খরচ করে কেউ কিছু বলে না, তিতিরের মা তার আবেগ কন্ট্রোল করে বলল।
- টাকাগুলো তুই তোর বাবার হাতে দে মা,
- আচ্ছা, তুমিও তাহলে আসো আমার সাথে, বলে তিতির ধীরে ধীরে বাবার রুমে গিয়ে দাঁড়ালো। সে এক মনে সকালের বাসি খবরের কাগজ পড়ছে। তিতির ডাকলো
- বাবা…
বাবা মুখ তুলে তাকালেন।
তিতির কিছু না বলে তার হাতে খামটা তুলে দিয়ে বললো
- এটা তোমার বাবা। আজ অফিস থেকে পেয়েছি। এক লাখ টাকার ইনসেনটিভ, একটু কম আছে বাসার জন্য বাজার করেছি তো।
ওর বাবা থমকে গেলেন।
তারপর টাকা গুলো তিতিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
- এই টাকা তুই খরচ করিস মা, আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তুই, তুই যে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছিস পরিশ্রম করে, এটাই আমার পাওয়া।

তিতির বললো
- না বাবা না! এই টাকাটা তো তোমারই পাওনা। তুমি রাখোতো,
বাবা এবার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে তিতিরের মাথায় হাত রাখলেন। গলা ভারী হয়ে উঠল তার, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো।
- আল্লাহ তোকে হাজার গুণ দিক মা…তুই যেন সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে পারিস দোয়া করি। এটা তুই তোর মত করে খরচ করিস।
মা বাবা দুজনেই জড়িয়ে ধরলেন তিতিরকে। আজকের দিনটা ছিল সত্যিই সুন্দর মনে মনে ভাবলো তিতির।

রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে আগে ম্যাসেজ এলো তমালের থেকে; তাতে লেখা-
তোমার কন্ঠে প্রথম শুনেছিলাম হ্যালো কাস্টমার কেয়ার, গুড আফটারনুন, ঐটুকুতেই কি ছিল আমি জানি না যেন ক্লান্ত পথিকের জীবনে দীর্ঘ অসহ্য গরম শেষে শরীর মন জুড়িয়ে দেয়া এক পসলা ঠান্ডা বৃষ্টি, তারপর থেকে তুমি আর তোমার কন্ঠ আমাকে যেন হিপনোটাইজ করে রেখেছে; তুমি যেন আমার জীবনের সাথে মিশে গেছো একটা প্রতিদিনের অভ্যাস মত।
- তারপর ?
- একটা ছোট গল্প বলি?
- বলেন
- একটা মেয়ে ছিল, বাংলাদেশের কোন এক অভিজাত শপিংমলে কাস্টমার কেয়ারে কাজ করে। আর একটা ছেলে, সে ফোন করে ম্যাসেজ করে অহেতুক মেয়েটিকে বিরক্ত করতো।
- কিন্তু মেয়েটি তো বিরক্ত হতো না।
- শোনো তারপর
তিতির এবার মোবাইলটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। তমাল এখন কি লিখবে ও ঠিক ঠিক অনুমান করতে পারছে।

ম্যাসেজ টোনের শব্দে চোখ খুলে তাকালো তিতির। মুখে হালকা লাজুক হাসি। ম্যাসেজ ওপেন করলো, তাতে লেখা ওর কাঙ্খিত কথাগুলোই।

"তিতির, ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা যায় না। আর তুমি তো আমার জীবনে এমন এক মানুষ হয়ে গিয়েছো, যার কাছে না বলে থাকাটাও অসম্ভব। তোমাকে চিনি না খুব ভালো করে, এমনকি দেখিওনি এই হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জারের যুগে। তারপরও আমি জানি তুমি অনেক সুন্দর সেই বিশ্বাস আমার আছে,
তোমার প্রিয় রং কি, প্রিয় গান কি তাও জানি না।
তবে এটুকু জানি, তোমার ভেতরের সাহস, ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠা, তোমার ইনোসেন্স এই সবকিছুকে আমি ভালোবাসি। হ্যাঁ তিতির নিজের অজান্তেই আমি তোমাকে কবে ভালোবেসে ফেলেছি আমি জানি না,
আমার বাকী জীবনে তোমাকে পাশে চাই,
তুমি কি আমার হবে? চিরদিনের জন্য ? তিতির আমি জানি তুমি কি ভাববে! দুটি দেশ দুটি ভিন্ন দেশের মানুষ এক হবে কি করে! তিতির তুমি চাইলে সবই সম্ভব। তুমি শুধু হ্যাঁ বলে পাশে থাকলেই হবে বাকি সব আমি ঠিক করে নেব, তোমাকে আমি সাত দিন ভাবার সময় দিলাম। 
আমি নেগেটিভ কিছু একদম ভাবতে পারছি না, তোমার কাছ থেকে শুনতেও চাইছি না, তারপরও যদি তুমি রাজি না থাকো তবে কোন ম্যাসেজ করো না আমি বুঝে নেব তোমার সিদ্ধান্ত।
ইতি
তোমার মুখ থেকে হ্যাঁ শোনার অপেক্ষায় না শুনলে মরেই যাবো গো; এই মুহূর্তে খুব খুব অতিরিক্ত ভীতু তমাল।  

তিতির ফোনটা বুকের উপর রেখে নিঃশ্বাস ফেললো। চোখ দুটো বুজে এলেও মনটা জেগে; তমালের ম্যাসেজটা পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য চারপাশের সব শব্দ যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এমন কথা তো কেউ বলেনি আগে।

বালিশে মুখ লুকিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ পড়ে থাকলো ও একটা হালকা কাঁপন যেন বুকের ভিতর, একটা হ্যাঁ না শব্দের টেনশনে হৃদপিণ্ড ধুকপুক করে যেন বের হয়ে আসতে চাইছে।
অন্ধকার ঘরের এক কোণে চাঁদের আলো এসে পড়েছে জানালা গলে। তিতির সাতটা দিন সময় পেলেও, একটা রাতেই তার ভেতরকার সমস্ত কল্পনা, দ্বিধা আর আবেগ ঝড় চুরমার করে দিচ্ছে ওর ভেতরটা।

তিতির ফিসফিস করে বলে উঠলো,
- ভালোবাসা তো একদিনে হয় না… কিন্তু ভালোবাসা যে কখন শুরু হয়, সেটা কি আর কেউ জানে?
তারপর নিঃশব্দে মোবাইলটা হাতে তুলে নিলো, তমালের শেষ ম্যাসেজটা আবার পড়লো। যেন প্রতিটি শব্দ আলাদা করে হৃদয়ের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে প্রতিবার।

খুব ভোরে তিতির জেগে উঠেছে দেখে ওর মা বিস্মিত হয়ে বললেন,
- কি রে এত ভোরে উঠেছিস!! সে আসলে জানেনা তার মেয়ে সারারাত ঘুমায়নি ভীনদেশী এক যুবকের চিন্তায়।

***
অফিসে এসে তিতির সব কাজ ম্যানেজ করে রাখলো যেন দুপুরে একটু সময় বের করা যায়। ঠিক দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে সে মোবাইল হাতে তুলে নিল।

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।
তারপর শুধু একটা ছোট্ট ম্যাসেজ:
-তমাল, আমার প্রিয় রং নীল। তুমি জানতে চেয়েছিলে না?
ম্যাসেজটা সেন্ড করার পর মনে হলো বুকের ভেতর বরফে ঢাকা কোনো লেক আচমকা ভেঙে গেছে। কয়েক সেকেন্ড পর রিপ্লাই এল
- তিতির, তুমি জানো, এই প্রথমবারের মতো আমি কাঁদছি... খুশিতে।


১০ম পর্ব

ক্যান্টিনের এক কোণে বসে আছে তিতির, হাতে ধরা এক কাপ রং চা, অনেকক্ষণ পাশাপাশি বসে আছে রাফি আর নন্দিতা, একটু পর তানিম এসে চেয়ারে ধপ করে বসে বলে
- কি রে তিতির আজ তোর মুখে এমন খুশি খুশি ভাব ক্যানো? বলতো কি হয়েছে? কিছু একটা ঘটনা তো আছে!
রাফি বললো
-তিতির তো ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই একটু ফ্লাইট মুডে আছে! মাঝে মাঝে নিজের ফোন দেখে চুপচাপ হেসে ফেলছে।
কিরে প্রেমে পড়েছিস নাকি?

তিতির ওদের কথা শুনে কোনোভাবেই আর নিজেকে চেপে  রাখতে না পেরে হাসে তারপর লাজুক হাসি হাসি মুখে বলে ওর নাম তমাল,
- তমাল! মানে ওই তমাল চৌধুরী? ঐ হোয়াটসঅ্যাপ তমাল? তানিম আশ্চর্য হয়,
নন্দিতা বলে
- তিতির তুই কি মজা করছিস নাকি আসলেই কমিটমেন্টে গেছিস?
-কমিটমেন্ট তো বলাই যায়
- সিরিয়াসলি? যাইহোক আমরা সবাই আছি তো তোর পাশে।
- কিন্তু একটা কথা বলি? তমাল হিন্দু না মুসলিম জানিস ? তানিম জিজ্ঞেস করে তিতির কে
- ওর নাম তো তমাল চৌধুরী। ও হিন্দু হবে কেন?
আশ্চর্য হয়ে তিতির তাকায় তানিমের দিকে। এক মুহূর্তের জন্য ওর চোখে একটা অপমান, একটা অবিশ্বাস আর অব্যক্ত রাগ খেলে যায়।

তানিম মুখে একরকম চুকচুক করে আফসোসের শব্দ তোলে, তারপর বলে,
- চৌধুরী টাইটেল হিন্দুরাও ব্যবহার করে। তুই তো কিচ্ছু জানিস না, আমি ভাবছি আঙ্কেল আন্টির কথা তারা শুনলে না জানি কত কষ্ট পাবে, তাদের একমাত্র মেয়ে কিনা..
একটা শব্দও আর বের হয় না তিতিরের মুখ থেকে, তানিম কি বলতে চাইছে ও ঠিকঠাক বুঝতে পারছে।

চারপাশে যেন সব শব্দ এক মুহূর্তে নিঃশব্দ হয়ে যায়। ক্যান্টিনের হাসাহাসি, চামচের টুংটাং, মাইক্রোওয়েভের ঘড়ঘড় সব কিছু যেন দূরের কুয়াশার মত অস্পষ্ট হয়ে যায় চিন্তায়, তানিম এগুলো কি বলছে, সম্ভাবনা যে একদম নেই তাও তো না, তিতির মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকে।

তার বুকের ভেতর ঢেউয়ের মতো চাপা কান্না ফুঁপিয়ে উঠছে, ইতিমধ্যে ওরা ক্লাসে চলে এসেছে, স্যার লেকচার দিচ্ছেন রিসোর্স এলোকেশন, কস্ট বেনিফিট, স্ট্যাটিক বাজেটিং, কিন্তু তিতিরের কানে কিছুই ঢুকছে না।
ও কি ভুল করলো? আসলেই তো
বাসায় জানলে সবাই কী বলবে কী বলবে মা? কী বলবে বাবা?

সামনের সারিতে বসে থাকা সহপাঠীদের হাসির শব্দও আজ বড্ড বেখাপ্পা লাগে। ওর কলম কাগজে ছুঁয়েই যাচ্ছে, কিন্তু লেখা কিছুই হচ্ছে না। প্রতিটা সেকেন্ড যেন আরও ভারী হয়ে উঠছে।
বেল বাজে।
সবাই হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে যায়, তিতির বসে থাকে চুপচাপ।

ওর পাশে এসে বসে নন্দিতা, আস্তে করে বলে
- তুই এত চিন্তা করছিস কেন, আগে তো তমাল ভাইকে মেসেজ কর অথবা ফোন কর ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে নে।
তিতির মাথা নাড়ে, চোখে জল টলমল করছে ওর।

নন্দিতা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। বন্ধুর মুখে এমন নিঃশব্দ কান্না ও আগে কখনও দেখেনি।

নন্দিতা ধীরে ওর হাতটা ধরলো।
- তুই যদি চুপ করে থাকিস, আমরা বুঝবো কী করে তুই ঠিক আছিস কিনা?
তিতির মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বলল,
- আমার ভেতরটা আজকে খুব এলোমেলো হয়ে গেছে,
তানিমের কথাগুলোর কারণে।

নন্দিতা কিছু বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই তানিম আবার পাশে এসে দাঁড়ায়। হাত দুটো পকেটে, মুখে কিছুটা বিরক্তি, ধীরে বসে পড়ে তিতিরের পাশে এবং কন্ঠ অনেক করুন করে বলে তুই ভিনদেশের একটা ছেলেকে বিয়ে করবি ওরে বিয়ে করলে তোর ভবিষ্যৎ কি তোর তো ওই দেশে থাকতে হবে আমাদের কারো সাথে দেখাই হবে না, তার থেকে তুই আমাকে বিয়ে কর।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭

শায়মা বলেছেন: তারপর?
বিয়ে হয়ে গেলো?

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪

সামিয়া বলেছেন: বিয়ের আগে কতজনই তো বিয়ে করতে চায়! সবার সাথে কি বিয়ে হয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.