![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মা,
জানিনা চিঠিটা কখনো তোমায় পোস্ট করা হবে কিনা। তারপরো লিখছি। যেদিন আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাব সেদিন পোস্ট করব চিঠিটা এই আশায়। মা, সেই ছোটবেলা থেকেই তোমার আমার দূরত্বের শুরু। তোমার থেকে বেশি, আব্বুই ছিল আমার কাছের মানুষ। তোমার মেজাজী স্বভাবই ছিল এর কারন। এলাকায় একটি প্রভাবশালী পরিবার হওয়ার কারনে তোমাদের সবসময়ের আশা ছিল একটি ছেলের। কিন্তু আমরা ছিলাম দুই বোন। এই কারনেই কি আমায় সবসময় ছেলেদের মত চুল কেটে, ছেলেদের জামা কাপড় পড়িয়ে রাখতে? ছোটবেলা থেকেই ভাল স্টুডেন্ট হওয়ার কারনে আমায় নিয়ে তোমরা গর্ব করতে। আশা করতে আমি বড় হয়ে পরিবারের জন্য গৌরবময় কিছু করব। আমিও তো নিজেকে সেভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলাম। ছেলেদের মতই মনোভাব ছিল আমার। তাইতো আপুদের সাথে কুতকুত, হাঁড়ি-পাতিল না খেলে ভাইয়াদের সাথে ব্যাডমিন্টন আর ক্রিকেট খেলার প্রতিই আমার থাকতো বেশি আগ্রহ। এভাবেই বেশ চলছিল। কিন্তু ১৩ বছর পর তোমার কোল জুড়ে এল কাওসার। আমারই ছোট ভাই। কত খুশিই না ছিলাম আমি ওর আগমনে। আমার সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করার জন্য তৈরী ছিলাম আমি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখ তোমরাই তৈরী ছিলেনা তোমাদের ভালবাসা তিন সন্তানের মাঝে সমভাবে বন্টনের জন্য। সময়টা ছিল আমার বয়ঃসন্ধিকাল। যে সময়টাতে একটা মেয়ে সবচে বেশি প্রয়োজন অনুভব করে একজন মায়ের, সেই সময়টাতেই একটা অভিমানের দেয়াল এত পুরু হয়ে দাঁড়াল আমাদের মাঝে যা আজ পর্যন্ত ভাঙ্গেনি। ছোট বাবুকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তোমরা যেন ভুলেই গেলে তোমাদের আরো একটি সন্তান আছে বাসায়! বাবুর খাবার নিয়ে তুমি এতই চিন্তিত থাকতে যে খেয়ালই করতেনা প্রতিদিন সকালে আমি না খেয়ে স্কুলে যাচ্ছি। এবং এটাই একসময় নিয়ম হয়ে দাঁড়াল। ফলশ্রুতিতে আমার শরীরে বাসা বাঁধল বিভিন্ন রোগ বালাই। প্রায়ই স্কুলে বমি করতাম। টিচাররা বাসায় এসে তোমায় জানাত। তুমি তাদের কাছে নালিশ করতে আমি খাওয়া-দাওয়া করিনা ঠিকমত। কিন্তু কখনো কি তোমার মনে হয়নি, তুমি তো সকাল বেলা আমার জন্য নাস্তাই তৈরী করতেনা। আজ যখন দেখি ছোটভাইটির জন্য তুমি কাক ডাকা ভোরে উঠে নাস্তা বানাচ্ছ তখন খচ খচ করে কি যেন একটা বিঁধতে থাকে আমার ভিতরে। গলার কাছে কি যেন একটা এসে আটকে যায়। বাবুর সাথে স্কুলে কোন সমস্যা হলে অথবা কেউ ওকে জ্বালাতন করলে কত উদ্বিগ্ন হয়ে যাও তুমি। অথচ তুমি কি জান স্কুল লাইফে কি শক্ত সময় আমি পার করেছি? বয়সন্ধির সময়টা কি পরিমাণ ভয়ে আর লজ্জায় পার করতাম তোমার কোন সাহায্য ছাড়া। যতবার তোমায় বলতে গিয়েছি তুমি ব্যস্ত থেকেছ বাবুকে নিয়ে, নয়তো পাত্তা দাওনি আমার কথায়। নিজেকে প্রচন্ড অসহায় মনে হত আমার। অন্য ফ্রেন্ডরা যখন জানাতো তাদের মা তাদেরকে কেমন করে হেল্প করেছে, শুনতে পারতামনা আমি। কেন যেন কথাগুলো আমার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিত।
এরপর এস.এস.সি এর সময় আমি একদিন পড়ছিলাম। বাবু ছিল আমার ঘরে। ও খেলতে খেলতে নিজে নিজেই ব্যথা পেল। আর তুমি এসে পেটালে আমাকে। কেন আমি বাবুকে দেখে রাখিনি এই বলে। অভিশাপ দিলে আমাকে। তোমার অভিশাপ ফলল। এ+ মিস করলাম আমি। চুপচাপ বের হয়ে চলে গিয়েছিলাম ঘর ছেড়ে চিলেকোঠায়। যেখানে আমার কান্নার আওয়াজ কেউ শুনবেনা। যেখানে খোদার কাছে জানানো আমার ফরিয়াদ "আমায় ছেলে বানিয়ে দাও" বলার কথা কেউ জানবে না।
তুমি আমাকে কখনি সেজেগুজে থাকা, মেয়েদের মত সবসময় টিপটপ থাকতে শেখাও নি। আমার ভারী ফ্রেমের চশমা, অগোছালো থাকা, টম বয়ের মত আচরন এসব নিয়ে কলেজে সবাই খুব হাসাহাসি করত। ছেলেদের চেয়ে বেশি ইনসাল্ট করত মেয়েরা। পড়াশুনায় কখনো ওরা আমায় হারাতে পারতনা, তাই সুযোগ পেলেই আমায় কথা শুনাতে ছাড়তনা। খুব খারাপ লাগতো আমার, মা। কতদিন বাথরুমে যেয়ে কান্না করেছি কিন্তু কখনো কাউকে কিছু বলিনি। তুমি কখনই ব্যাপারগুলো বুঝতেনা। আমায় মেয়েদের মত করে চলার শিক্ষা তাই তুমি আমায় কখনই দাও নি। যার খেসারত আমায় পদে পদে দিতে হয়েছে। আমি ঠকেছি মা, মানুষ আমায় অবজ্ঞা করেছে, হেয় করেছে, আমার ট্যালেন্ট না দেখে আমার আউটলুক দেখে আমার বিচার করেছে। তাই আমি বদলেছি নিজেকে। তুমি আমায় বাধা দাওনি কিন্তু আমায় নিয়ে হাসাহাসি করতেও ছাড়নি! তোমার ব্যবহারে ভেঙ্গে পড়িছি অনেকবার কিন্তু হাল ছাড়িনি।
তোমার মনে আছে মা, একবার হরতালের সময় আমি যে বাসে ছিলাম সেই বাসে এ্যটাক হয়েছিল? ঘটনাটা এসে আমি যখন তোমায় বলছিলাম তুমি আমায় একবারো জিজ্ঞাসা করোনি আমি ঠিক আছি কি না। ঘটনাটা বলা শেষ করার আগেই তুমি ব্যস্ত হয়ে পড়লে তোমার দেখা এমন একটি খারাপ স্বপ্নের বিবরণ দিতে। স্বপ্নের কথা বলতে বলতেই তুমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লে বাসার নিচে খেলতে থাকা বাবুর জন্য। ওর উপর না আবার এ্যটাক হয়! কষ্টের একটা হাসি হেসে আমি চলে গিয়েছিলাম। নিজের আহত হাতে নিজেই এন্টিসেপটিক দিয়েছিলাম। আমার হাতের রক্তক্ষরণ তো বন্ধ হয়েছিল সেদিন কিন্তু আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আজও বন্ধ হয়নি।
সবসময় তোমার টেনশন থাকতো বাবুকে নিয়ে। আমার ভার্সিটিতে কোন গন্ডগোল হলে তুমি উদ্বিগ্ন হয়ে যাও বাবুর জন্য। যে কিনা থাকে ভার্সিটি থেকে বহুদূরে নিজের স্কুলের ক্লাশরুমে! আমি চেয়ে চেয়ে দেখি আমার বন্ধুদের বাসা থেকে ফোন আসছে তাদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। কিন্তু আমার কখনো ফোন আসেনা!
ছোটবেলায় আমায় নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতে। আর আজ যখন স্বপ্নপূরণের জন্য আমি আরো উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চাই, তখন তোমরাই কিনা বেকে বস! আমার জন্য করা খরচ তোমাদের কাছে কস্ট, আর ভাইয়ের পিছনে করা খরচ তোমাদের কাছে ইনভেস্টমেন্ট মনে হয়। আমি ওর চেয়ে অনেক বেশি ভাল স্টুডেন্ট হওয়া সত্বেও আমার সাথে এই বৈষম্য করছ তোমরা। কেন মা কি দোষ করেছি আমি? নাকি মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই আমার সবচে বড় দোষ???
এভাবেই একটু একটু করে জমতে থাকা আমার অভিমানগুলো কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির মত অগ্লুতপাত ঘটায়। তখন তোমরা ভাব বড় হয়ে আমি বেয়ারা হয়ে গেছি। আমার চুপ করে সব সহ্য করার কষ্টও তোমরা বোঝনা, বোঝনা আমার অভিমান ভরা আর্তনাদও। তাইতো শক্ত থাকার ভান করে বোঝাতে চাই আমার কাউকে দরকার নাই। এজন্যই রাতের বেলা তুমি ঘুমিয়ে পড়লে এটো প্লেটগুলো আমিই ধুয়ে রাখি, বাবুর হোমওয়ার্কও আমিই চেক করে দেই, কারেন্ট চলে গেলে যখন আইপিএস লো ব্যাটারি শো করে তখন নিজের রুমের ফ্যান বন্ধ রেখে তোমারটা ছেড়ে দেই। এগুলো কিছুই বোঝ না, তুমি কখনই না।
তুমি যখন আমার জন্য আলাদা বয়ামে চকস, এক বাটি আইসক্রিম বা চকলেটের ছোট টুকরা লুকিয়ে রাখ, যাতে বাবু খেয়ে না ফেলে; তখন আমার খুব ভাল লাগে। আজকাল সকালে যখন আমার ডাকে ঘুম থেকে উঠে গজ গজ করতে করতে নাস্তা বানাও তখন আমি মুচকি হাসি। উঠেছ তো আমার জন্যই এই ভেবে। মা ভালবাসার ঝর্ণাতো তোমার মাঝেও আছে তবে কেন সেই ঝর্ণার জলে আমাদের সবাইকে একই ভাবে ভেজাও না? তোমার ভালবাসার জলের অভাবে যে তোমারি একটি প্রশাখা শুকিয়ে যাচ্ছে তা কি তুমি টের পাও না?
আমি কখনো প্রকাশ করিনা কিন্তু আমি তোমার অনেক পরোয়া করি মা। ঠেলতে ঠেলতে আমায় এতদূরে ঠেলে দিওনা যে আর কোনদিন কাছেই না টানতে পার। একটা কথা তোমাকে অনেকদিন বলতে চেয়েছি মা, কিন্তু কোনদিন বলা হয়নি। আমি তোমাকে ভালবাসি মা। অনেক অনেক অনেক অ-নে-ক বেশি ভালবাসি মা।
ইতি
তোমার অভিমানী মেয়ে
২০ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৬
সামিনা আলী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
২| ২০ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৭
একাকি উনমন বলেছেন: আমি খুব ইমোশনাল , তাই আপনার এই লেখাটা পড়ে আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না. আপনার মা নিশ্চয় বুঝবেন একদিন. দো আ করি যেন সময়টা খুব তারাতারি আসে, আপনি বিদেশ যাওয়ার আগেই.
৩| ০২ রা জুন, ২০১২ রাত ১০:২৫
সামিনা আলী বলেছেন: ধন্যবাদ একাক উনমন। একই আশা আমারও। জানিনা কখনো সত্যি হবে কিনা
৪| ০৩ রা জুন, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
একাকি উনমন বলেছেন: নিশ্চয় সত্যি হবে. চিন্তা করবেননা।
০৬ ই জুন, ২০১২ রাত ১:১১
সামিনা আলী বলেছেন: উনমন আপনার 'তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা' কবিতাটি আমার অনেক ভাল লেগেছে। আমি নতুন ব্লগারতো তাই করো ব্লগে মন্তব্য করতে পারিনা।
৫| ০৭ ই জুন, ২০১২ রাত ১:৪২
সাইফ সাইমুম বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন সামিনা।
আবেগের অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ।
শুভেচ্ছা জানবেন
৬| ০৯ ই জুন, ২০১২ সকাল ১০:২৫
একাকি উনমন বলেছেন: সামিনা, আমার লেখা আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক খুশি হলাম. আমার ব্লগ এ আপনাকে স্বাগতম.
৭| ১৯ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
সাদাসিধা মানুষ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন, ভাল লাগলো
৮| ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ১:৩৭
সামিনা আলী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য আবার আমার ভালো লেগেছে।
৯| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪৩
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: মনের কোন একটা জায়গা কেমন জানি ফাকা হয়ে গেল...........অনেক সুন্দর লিখেছেন। তবে বিষাদময়।
১০| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:২২
রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: কেমন আছেন !
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মে, ২০১২ সকাল ৯:৫৩
এস এম ফারুক হোসেন বলেছেন: ভাল লাগলো।