![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনো এক শীতের জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে শিশির ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে তোমার হাতটি ধরে হাঁটবো। শিশিরের ফোঁটা গুলো আমার পায়ে শিশির নুপুর পড়িয়ে দিবে।আর তুমি ঘাস ফুল নিয়ে আমার খোঁপায় পড়িয়ে দিবে।তখনি জোনাকি পোকার দল এসে হাজির হবে রংবে রং এর প্রজাপতিদের নিয়ে।তারা আমাদের ঘিরে একটা বলয় সৃষ্টি করবে।সে বলয়ের মধ্যে জ্যোৎস্নার আলোতে ভিজব আমরা দুজন।আমার চোখের মায়ায় তুমি নিজেকে হারাবে অন্য একরাজ্যে।তখনই চন্দ্রসুধা এসে আমাদের আমন্ত্রণ করবে তার রাজ্যে যাওয়ার জন্য সাথে থাকবে চন্দ্রাবতীর প্রহরীরা।তার আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ফুলের ভেলা নিয়ে হাজির হবে।সে ফুলের ভেলায় বসে আমরা পৌঁছে যাবো চন্দ্রাবতীর দেশে।সেথায় আমায় পড়ানো হবে জ্যোৎস্নার তৈরি শাড়ি, মাথায় পড়ানো হবে হবে প্রজাপতির ক্রাওন আর পায়েতো আছে আমার শিশিরের তৈরি নুপুর।তুমি বরাবরের মতই আমার প্রেমে পড়বে।তুমি শুধু আমায় অপলক দেখবে আর ভাববে ইসস আমার নামটা যদি চন্দ্রাবতী হত তাহলে মন্দ হত না।
ফজরের আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় অবন্তীর। রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে জায়নামাজে ঘুমিয়ে পড়ে সে। জায়নামাজ থেকে উঠে গিয়ে অজু করে ফজরের নামাজটা আদায় করে নেয় অবন্তী। ২৪ বছরের অবন্তী এখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তার রূপ যেন আগের থেকেও অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। যদিও অবন্তী আগে থেকেও রূপবতী কিন্তু এখন যেন তার রূপ আরও বেড়ে গেছে। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। চার বোনের মধ্যে সে বড়। অবন্তীর বাবা, নাম করা এক ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে অবন্তীর বিয়ে দেন। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস অবন্তী এসে যেন পড়ল এক দোযখের মধ্যে। বিয়ের ৭ দিনের মাথায় ছেলের পরিবার উপহার হিসেবে ফার্নিচার চেয়ে বসে। সবেমাত্র মেয়ের বিয়ে দেয়াতে রফিক সাহেবের অর্থাৎ অবন্তীরর বাবার হাতেও টাকা ছিল না তেমন। যার ফলে ছেলেপক্ষের চাওয়াটা পূরণ করতে পারেনি তিনি সময় মত। রফিক সাহেব তাদের চাওয়া মত ফার্নিচার দিতে না পারায় শুরু হয় অবন্তীর উপর মানুসিক অত্যাচার। উঠতে বসতে খোঁটা শুনতে হত তাকে। অবন্তীর হ্যাজবেন্ডের নাম রাফি। মানুষ হিসেবে তার কোনো বিবেক, ভালো- মন্দ বোধ,বিচার করার ক্ষমতা ছিল না। মা যা বলতো তাতেই হ্যাঁ বলত। পরিবারের কথায় উঠ বস করত। কিসে ভালো হচ্ছে কিসে মন্দ হচ্ছে তা ভেবে দেখত না। তার মা যা বলত, যা করত সেটাকেই সে সঠিক ভেবে নিত। অবন্তীর শাশুড়ি যখন রাফিকে বলল,
- এভাবে এইসব ছোটলোক থেকে উপহার আদায় করা সম্ভব না। এইদিকে যে তোর মান সম্মান যাচ্ছে তার দিকে কি তোর খেয়াল আছে? যেভাবে করলে উপহার পাওয়া যায় তা কর।
নতুন পোকা ঢুকিয়ে দিয়ে যায় রাফির মাথায়। রাফি শুরু করে অবন্তীর গায়ে হাত তোলা।
অবন্তী রাফির এমন শারীরিক নির্যাতনের কথা তার বাবার বাড়িতে জানায়।
বিয়ের ১মাসের মাথায় অবন্তীর বাবা ধার-দেনা করে ছেলেপক্ষের আবদার মিটায়।
কিন্তু অবন্তীর ভাগ্যে যে অন্য কিছুই লিখা ছিল। উপহার পাওয়ার পরও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন থেকে অত্যাচার করাটা বন্ধ হয়নি। রাফি যখন অবন্তীর গায়ে একবার হাত তুলে তারপর আর সে হাত তোলাটা তার থামেনি। উঠতে বসতে, পান থেকে চুন খসলেই রাফি অবন্তীর গায়ে হাত তুলত।
বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায়তো অবন্তী এমন অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে লুকিয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। তার বাবা-মায়ের কাছে অনুরোধ করে বলে সে এই দোযখখানা থেকে মুক্তি চাই। সে আর রাফির সাথে সংসার করতে চাই না। তার বাবা যেন ডিভোর্সের সব ব্যবস্থা করে। কিন্তু রফিক সাহেব তখন ছোট তিন মেয়ের দোহায় দিয়ে বলেন,
-দেখ মা এখন যদি তোর ডিভোর্সটা হয়ে যায় তাহলে তোর ছোট বোনগুলোর কি হবে? তাদের তো ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের বিয়ে দিব কি করে আমি? তাদের তো কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।
সেদিন বাবার কথা শুনে অবন্তী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার বাবা- মা তার কষ্টটা বুঝল না। আবার সে নিজের সুখে থাকার জন্য বোনদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারবে না। সব দিক চিন্তা করে অবন্তী আবারও সে দোযখখানায় ফিরে আসে।
দিন যাচ্ছে মাস যাচ্ছে কিন্তু অবন্তীর উপর নির্যাতন করা কিছুতেই কমছে না।
অবন্তীর মা তাকে বলে,
-দেখ মা ভাগ্যে যা নিয়ে এসেছিস তাই হবে। ভাগ্যটাকে তো আমরা আর পরিবর্তন করতে পারব না। এইবার একটা বাচ্চা নে। হয়ত বাচ্চার কথা শুনলে জামাইয়ের মন একটু নরম হবে। কোলে একটা আসলে দেখবি জামাই কেন তোর শ্বশুরবাড়ির সবাই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
সেদিন মায়ের কথায় বিয়ের একবছর তিন মাসের মাথায় অবন্তী গর্ভ ধারণ করে। একটু সুখের আশায়, একটা নতুন দিনের আশায় অবন্তী বুক বাঁধে।
অবন্তী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে রাফির মধ্যে যদিও একটু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তার মধ্যে থাকা মানুষরূপী জানোয়ারটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সপ্তাহে হয়তো দু' কি একদিন অবন্তীর সাথে ভালো ব্যবহার করেছে তো বাকি দিন গুলো আগের মত খারাপ ব্যবহার দিয়েই শেষ করেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও অবন্তীর খুব একটা যত্ন নেয় না।
এই তিন মাস অবন্তী শুধু চোখের পানিতে জায়নামাজা ভিজিয়েছে। যদিও বিয়ের পর থেকে অবন্তী চোখের পানি ফেলে আল্লাহ্র কাছে অনেক বার চেয়েছে যেন রাফি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু এখন আরও বেশি করে কেঁদে নামাজ পড়ে আল্লাহ্ কাছে তা চাচ্ছে । কারণ এখন আর সে একা নয়। যে আসছে তার কি হবে তা চিন্তা করেই অবন্তী কষ্টে ভেঙ্গে পড়ছে।
আস্তে আস্তে দিন যাচ্ছে অবন্তীর গর্ভে থাকা বাচ্চাটিও বেড়ে উঠছে। সময়ের সাথে হুট করে রাফির অত্যাচার করাটা আবার বেড়ে গেল। রাফি এখন একজন নেশাখোর। মদ,অফিম,গাঁজা কিছুই বাদ দেয় না সে। নেশা করার জন্য যখন তার হাতে টাকা ফুরাই তখনই সে টাকার জন্য বাসার মধ্যে ভাংচুর শুরু করে দেয়। অবন্তী ও তখন বাদ যায় না তার হাত থেকে।
.
অবন্তীর এখন সাত মাস চলে। রাফির নেশা করাটাও আগের থেকে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। রাফির বাবা তার নেশা করার জন্য টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। টাকা দেয়া বন্ধ করাই এতদিন সে অবন্তীর গয়নাগাটি বিক্রি করেই তার নেশার টাকা যোগিয়েছে।
অবন্তীর শেষ সম্বল এখন শুধু তার মায়ের দেয়া ইয়ারিংগুলো। এইদিকে দুদিন ধরে রাফির হাতেও টাকা নেই। নেশার আগুনে তার মাথা এখন গরম। যে করেই হোক তার এখন টাকা চায়। রাফির চোখজোড়া শুধু খুঁজছে কীভাবে টাকা পাওয়া যাবে। অবন্তীর কানের দিকে রাফির চোখ যেতেই তার মুখে হাসি ফুটল। তার টাকার যোগার হয়ে গেছে। অবন্তীর এই ইয়ারিং জোড়া বিক্রি করে সে তার নেশার টাকা যোগার করবে।
অবন্তী খাটের কাছে দাঁড়িয়ে জামা কাপাড় ঠিক করছিল। রাফি খাটে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে গিয়ে অবন্তীর সামনে দাঁড়াল। তারপর বলল,
-তোর কানের এই জোড়াগুলো আমারে দিয়ে দে।
অবন্তী দিতে অস্বীকার জানায়। আর বলে,
-এটাই আমার শেষ সম্বল। যত কিছুই হয়ে যাক না কেন আমি এগুলো তোমাকে কিছুতেই দিব না।
অবন্তীর কথায় রাফির মাথায় যেন আগুন ধরে উঠে। সে তার হাত চালানো শুরু করে। অবন্তীকে মারার এক পর্যায়ে রাফি অবন্তীর পেটে লাথি মেরে বসে। অবন্তী নিজেকে সামলাতে না পেরে চেয়ারের উপর গিয়ে পড়ে। প্রচণ্ড আগাত পায় অবন্তী। ব্যথায় সে চিৎকার করা শুরু করে। এইসময় রাফি তার কান থেকে ইয়ারিংগুলো খুলে বাইরে চলে যায়।
অবন্তীর ব্যথা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ব্যথায় অবন্তী জ্ঞান হারায় একপর্যায়ে। অবন্তীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন অবন্তীর খারাপ অবস্থা দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তিন ঘন্টা অপারেশন থিয়েটারে থাকার পর ডাক্তার এসে অবন্তীর পরিবার ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানায়, অবন্তী দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও অবন্তীকে বাঁচাতে পারেনি তারা।
এদিকে অবন্তীর মৃত্যুর সংবাদ রাফিকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দিয়েছে। রাফি এখন অনুশোচনায় ভুগছে। যদি সে এমন না করতো তাহলে অবন্তী আজকে দুনিয়ায় বেঁচে থাকত। অবন্তীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য রাফি একটা সুযোগ খুঁজছে। যেন তার অনাগত কে অবন্তী ফিরিয়ে দিয়ে যায়। হুম অবন্তী তার সাথে তার সন্তানটিকেও পরপারে নিয়ে গেছে। এই দুনিয়ার বিষাক্ত আলো,বাতাস তাকে দেখতে দেয়নি।
ওদিকে রাফির ফ্যামিলি খুব খুশি। গলার কাটা নেমেছে তাদের। এইবার ছেলেকে তারা বড় ঘরের কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে বলে ভাবছে।
ফেসবুক আইডি লিংকঃ https://www.facebook.com/sanjidabegum.kingz
©somewhere in net ltd.