![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনো এক শীতের জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে শিশির ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে তোমার হাতটি ধরে হাঁটবো। শিশিরের ফোঁটা গুলো আমার পায়ে শিশির নুপুর পড়িয়ে দিবে।আর তুমি ঘাস ফুল নিয়ে আমার খোঁপায় পড়িয়ে দিবে।তখনি জোনাকি পোকার দল এসে হাজির হবে রংবে রং এর প্রজাপতিদের নিয়ে।তারা আমাদের ঘিরে একটা বলয় সৃষ্টি করবে।সে বলয়ের মধ্যে জ্যোৎস্নার আলোতে ভিজব আমরা দুজন।আমার চোখের মায়ায় তুমি নিজেকে হারাবে অন্য একরাজ্যে।তখনই চন্দ্রসুধা এসে আমাদের আমন্ত্রণ করবে তার রাজ্যে যাওয়ার জন্য সাথে থাকবে চন্দ্রাবতীর প্রহরীরা।তার আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ফুলের ভেলা নিয়ে হাজির হবে।সে ফুলের ভেলায় বসে আমরা পৌঁছে যাবো চন্দ্রাবতীর দেশে।সেথায় আমায় পড়ানো হবে জ্যোৎস্নার তৈরি শাড়ি, মাথায় পড়ানো হবে হবে প্রজাপতির ক্রাওন আর পায়েতো আছে আমার শিশিরের তৈরি নুপুর।তুমি বরাবরের মতই আমার প্রেমে পড়বে।তুমি শুধু আমায় অপলক দেখবে আর ভাববে ইসস আমার নামটা যদি চন্দ্রাবতী হত তাহলে মন্দ হত না।
পর্ব-১
"আকাশ দেখেতো মনে হচ্ছে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে এইদিকে একটা রিক্সা ও পাচ্ছি না।কতক্ষন যে এভাবে হাঁটা লাগবে আল্লাহ জানে। হঠাৎ দূরে কোথাও বাজ পরার তীব্র শব্দ হল বাজ পরার শব্দে বুকটা কেঁপে উঠলো!
রাস্তা সম্পূর্ন ফাঁকা তার উপর আজকে আমি একা কি যে ভয় করছে। কিছুদূর পরেই বটগাছটা।এই বটগাছ নিয়ে কত্ত কাহিনী রয়েছে বাবা ওইসব মনে আনলেও ভয়ে পা কাঁপে!! ওইতো বটগাছটা দেখা যাচ্ছে রাস্তাই একটা মানুষ ও নাই একা একা এই গাছের নিচে দিয়ে যেতেও ভয় লাগছে।প্লিজ আল্লাহ এই যাত্রায় আমাকে বাঁচিয়ে দাও ভূতের হাত থেকে। ভুত যেন আমার ঘাড় না মটকাই প্লিজ আল্লাহ প্লিজ", বিড়বিড় করে কথা বলে যাচ্ছে অরণি। এইদিকে বৃষ্টি প্রায় আসি আসি করছে..
অরণি বটগাছটির কাছাকাছি যেতেই বৃষ্টি নামলো,
হায় আল্লাহ্! ছাতাটা মনে হয় স্যারের বাসাই রেখে আসছি! এখন কি করবো?! বটগাছের নিচে না দাঁড়ালেতো একদম কাকভিজা হয়ে বাসায় ফিরতে হবে।এতো পাঁচ সাত ভাবলে আজকে আর বাসাই ফিরতে পারবো না তা ছাড়া বাসায় যেতে এখনো ২০মিনিটের পথ বাকি..
যাই হোক এত কিছু ভাবলে আর হবে না দৌড়ে গিয়ে বটগাছের নিচে আশ্রয় নিলাম আর মনে মনে যত দোয়া দুরুত পারি সব পড়লাম যেন ভুত আমার ধারে কাছেও ঘেষতে না পারে।
এইদিকে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে বৃষ্টির শব্দে মনে হচ্ছে আমি পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে আলাদা হয়ে গেছি। বৃষ্টির পানি ছিটকে গায়ে পরছে। গায়ে যেন পানি না পরে তাই একপা একপা করে পিছিয়ে যাচ্ছি পিছানো ফিরে দেখি আমি একদম বটগাছটার কাছেই এসে পরেছি।গাছটার সাথে এখন আমার দূরত্ব মাত্র এক হাতের!
শুনেছি গাছটা নাকি শত বছর পুরানো! কোনো এক সন্ন্যাসী নাকি তার মনের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য এই গাছের নিচে দেবীকে উৎসর্গ করে একটা জীবন্ত বাচ্চা বলি দেই সে থেকে গাছটা খারাপ হয়ে যাই।রাতের বেলাই নাকি কেউ একা এই গাছের নিচে দিয়ে যেতে পারতো না।এর কিছু বছর পর্যান্ত ও নাকি বিভিন্ন খারাপ কাজে,কালো যাদু করার জন্য,মনের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য পুরুহিত,ত্রান্ত্রীকগন এই গাছের নিচে পশু,বাচ্চা,মৃত দেহ বলি দিত।রাতের বেলাই নাকি এই গাছ থেকে বাচ্চার কান্না আওয়াজ ভেসে বেড়াত, পশুদের হিঃস্র র্গজন শোনা যেত।কেউ যদি রাতের বেলাই একা এই গাছের নিচে দিয়ে যেত সেদিন রাতে নাকি সে আর বাড়ি ফিরতে পারতো না পরের দিন সকালে তার লাশ পাওয়া যেত এই গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায়।পরে রাজা লালবাহাদুর এই গাছটিকে নিষিদ্ধ করে দেই,এই গাছের নিচে রাতের বেলা চলাচল করতে বারণ করে দেয় এবং এই গাছের আশে পাশে এমন জঘন্য কাজ করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য বলে।
ধুর বাবা এইসব কেন যে এখন ভাবতে যাচ্ছি! এমনিতে একা আছি তার উপর এইসব ভেবে ভয়ে এমনে হাত পা ঠান্ডা হাওয়ার উপক্রম হয়েছে।এইসব চিন্তা করা বাদ দিয়ে বৃষ্টির উপর সম্পূর্ণ মননিবেশ করলাম।বৃষ্টির জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ একটু অনমনা হয়ে গেলাম।এমন মাশুলধারে বৃষ্টি দেখে মিনারের "চোখ" গানটার কথা মনে পরে গেল...গুনগুন করে "চোখ" গানটা গাইছি আর ভাবচ্ছি, "ইস এখন যদি সাজ্জাদের মত কোনো একটা হিরো ছাতা নিয়ে দৌড়ে আসতো তাহলে তারে এখানে রেখে আমি তার ছাতাটা নিয়ে বাসায় চলে যেতাম।এইসব ভেবে ভেবে মুচকি হাসছি আর গানটা গুনগুন করে গাইছি।হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস আমার সামনের চুল গুলো নাড়িয়ে দিয়ে কানের পাশ দিয়ে চলে গেলো।ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে প্রচন্ডভাবে চমকে উঠলাম।কানের ঝুমকোটা এখনো নড়ছে এইদিকে হার্টবিটটা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে!হার্টবিট এতোটা বেড়েছে যে ধিকধিক ধিকধিক শব্দটা কানে এসে লাগছে।চোখ বন্ধ করে আল্লাহ্কে ডেকে যাচ্ছি যেন এই যাত্রায় আমাকে বাঁচিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি আস্তে আস্তে থেমে গেলো একমুহূর্ত ও দেরী না করে হাঁটা শুরু করলাম।যাক বড় বাঁচা বেঁচে গেছি ভূত আমার কিছুই করে নি।
হঠাৎ মনে হল কেউ যেন আমার পিছু পিছু হেঁটে আসছে! পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি কেউ নেই!!সম্পূর্ণ রাস্তাই আমি একা!মনের ভুল ভেবে হাঁটার গতি আরও বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু একি!আমি যত জোরে হাঁটছি পিছন থেকে আমাকে ফলো করে আসা হাঁটার আওয়াজটা তত যেন বাড়ছে! প্রায় ৭/১০মিনিট হাঁটার পর পিছন থেকে বেলের ক্রিং ক্রিং আওয়াজ শুনতে পেলাম।হার্টবিটটা আবার যেন এক লাফে ৭৬ থেকে ১০০তে গিয়ে পৌঁছালো..পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি একটা রিক্সা!
-যাবেন ম্যাডাম?
লোকটার প্রশ্ন শুনে আমিতো মহা খুশি যাক বাবা অবশেষে একটা রিক্সা পেয়ে গেলাম না হলে তো আরও ১৫মিনিটের মত হাঁটা লাগতো!এদিকে কোন শয়তান জানি আমাকে ফলো করছে রিক্সাই উঠে গেলেতো আর আমাকে ফলো করতেই পারবে না।পাঁচ সাত আর না ভেবে রিক্সাই উঠে গেলাম।
রিক্সাওয়ালাকে বললাম,
-আপনি চলেন আমি বলে দিচ্ছি কোথায় যেতে হবে।
-আচ্ছা ম্যাডাম।
বাসার সামনে আসার পরে রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিতে চাইলাম,
-এই ধরুন টাকা।
-না ম্যাডাম লাগবে না।
-লাগবে না কেনো?আপনি আমাকে এতোটা পথ নিয়ে আসলেন কষ্ট করে ভাড়া নিবেন না কেনো?টাকাটা ধরুন।
-আমিতো এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই আপনাকে রিক্সায় তুলে নিলাম আর আমার কোনো কষ্ট ও হয় নি।তা আপনি বুঝি এই বাসায় থাকেন?
-জি এই বাসায় থাকি।এখন আপনি টাকা নিয়ে আমাকে মুক্তি দেন।
-আচ্ছা টাকাটা আজকে থাক অন্য একদিন না হয় শোধ করে দিবেন।আজকে আসি আবার দেখা হবে।
লোকটা একটা হাসি দিয়ে রিক্সা নিয়ে চলে গেলো আর আমি দাঁড়িয়ে লোকটার সে অদ্ভুত হাসির দিকে তাকিয়ে রাইলাম....
চলবে....
ফেসবুক আইডি লিংকঃ https://www.facebook.com/sanjidabegum.kingz
©somewhere in net ltd.