নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন হোমো স্যাপিয়েন্স। বাস্তববাদী নাস্তিক। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাস করি।

সানভী সালেহীন

চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ, গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে, তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য জীবনকে চায় ভালবাসতে।

সানভী সালেহীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প : রিচার্ডপুলে তিনটে খুন হয়েছে

২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

" আমি তিনটে মানুষ খুন করেছি। "
কোন মানুষের চেহারা বা পোশাক দেখে তার মনস্তত্ব বোঝা সম্ভব না। লালবাগের পুলিশ বিভাগে তিন বছর কাজ করায় অপরাধী এবং অপরাধ নিয়ে আমার ভালো অভিজ্ঞতা সঞ্চিত রয়েছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানে আর যাই হোক- সামনে বসা নারীকে খুনী বলে মনে হচ্ছে না। থানায় থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু ইনি চলে আসায় আটকে গেলাম।
আমি অবাক হয়ে বক্তার দিকে তাকালাম। সাধারণ একজন বাঙ্গালী নারীর মতোই লাগছে। তার নাতিদীর্ঘ বেণীগাঁথন চুল হয়তো হাঁটুর নীচ পর্যন্ত অসহাভাবে লুটছে। গায়ে কমলা রঙ এর শাড়ি আর প্রসাধন বিহীন নিষ্কলঙ্ক চেহারা, যেন অগোছালো ঝোপে অনাদরে ফুটে ওঠা একটি উজ্জ্বল বনফুল। খাড়া, সুগঠিত নাক - শান্ত, সমাহিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত চোখজোড়া, আর চেপে বসা স্বাভাবিক চিকণ ঠোঁট। চেহারা আর গায়ের রঙ শ্যামলা বা ময়লা বর্ণের নয় - বিচ্ছুরিত তামাটে রঙের।
" আপনার নাম কি? কোথায় থাকেন? "
স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করলাম। হতে পারে সামনে বসা ব্যাক্তি নিছক রসিকতার ছলেও এমন কথা বলছেন। যদিও আমি এরকম ঘটনার সম্মুখীন কখনোই হই নি।
" আমি চন্দ্রা ব্যানার্জী। ভিক্টোরিয়া কলেজে বারো শ্রেণীতে পড়ছি। থাকি রিচার্ডপুল ই ব্লক ৫২ নাম্বার রোডের ৩৪ নাম্বার বাড়িতে। "
তার কথায় সুশ্রী বাঙালী টান রয়েছে।
" বাড়িটা দেখতে কি রকম? "
" একটা দোতলা বাংলো। পুরনো। ইংরেজ আমলে একজন ব্রিটিশ আর্মি অফিসারের বাসভবন ছিলো ওটা। "
" আপনার পরিবারে কে কে থাকেন? "
" আমি ছাড়া এখন কেউ নেই। আগে মা, বোন এবং একজন মহিলা কাজের লোক ছিলেন। তাদেরকে আমি খুন করেছি। "
" বাবা নেই? "
" না, তিনি আরো ছ'বছর আগে দেহত্যাগ করেছেন। "
" কীভাবে? "
" রোড একসিডেন্ট। বাবা রাস্তা পার হচ্ছিলেন এসময় একটা মাতাল বাস ড্রাইভার.... "
চন্দ্রা ব্যানার্জী আর কথা বলতে পারেন না। তার গলা আবেগে কেঁপে উঠেছে। বাবার মৃত্যু সব কন্যার কাছেই যন্ত্রণাদায়ক। আমার বিশ্বাস হলো না, তিনি তিনজন মানুষকে খুন করতে পারেন।
" খুনগুলো কীভাবে করেছেন? "
আমার গলাটা কঠোর হয়ে আসে। তাকে ভয় পাওয়নোর চেষ্টা। তবু চন্দ্রা ব্যানার্জি তাতে দমেন না। তার কথা বলার ভঙ্গী শান্ত, সমাহিত এবং সাবলীল।
" পেছন থেকে মাথায় ছুড়ি মেরেছি। "
" তিনজনকেই? "
" জ্বী। "
" সবাইকে একসাথে? "
" না। "
" খুনের ঘটনাটা বিস্তারিত বলুন তো। "
" গতকাল বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে এসে দেখি আমার দিদি চেয়ারে বসে রিডিং টেবিলে বই পড়ছে। তার মাথায় ছুড়ি মারি পেছন থেকে। তারপর রান্নাঘরে মা রান্না করছিলেন - তার মাথাতেও পেছন থেকে ছুড়ি মারি। আর কাজের মহিলাটা বাথরুমের দরজার বসে কাপড় ধুচ্ছিলেন - তাকেও ছুড়ি মারি। তারপর সবাইকেই আরো কয়েকবার এলোপাথাড়ি ছুড়ি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করি। "
কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলাম।
" খুনগুলো করেছেন কেন? "
চন্দ্রা ব্যানার্জী এবার আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। মাথা নিচু করে নখ খুঁটতে থাকলেন।
" ছুড়িটা কোথায় রেখেছেন? "
" বাংলোতেই আছে। "
এখন আমার শিফটের শেষ সময়। একজন নারী এবং পুরুষ কনস্টেবল, আর চন্দ্রা ব্যানারর্জীকে সার্ভিস জীপে তুলে নিয়ে রিচার্ডপুলের দিকে যাত্রা আরম্ভ করলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ছুটির দিন বলে রাস্তা অনেকখানি ফাঁকা। খুব তাড়াতাড়ি জীপ চালাচ্ছিলাম।
সাড়ে সাতটার সময় রিচার্ডপুলে ই ব্লক ৫২ নাম্বার রোডের ৩৪ নাম্বার বাংলোতে পৌঁছুলাম। আকাশে সাদা থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। চাঁদের আলোয় বাংলোটি যেন তার আপন রুপ উন্মোচন করে শোভাবর্ধন করছে। বেশ দৃষ্টিনান্দনিক বাড়ি। লাল ইঁটের দেয়াল, আর ইটালিয়ান ফ্রোসকোর কমলা রঙের টালি। সামনে ফুলের বাগান রয়েছে। বিলিতি কায়দার তৈরি একটা লেটার বক্স প্রবেশপথের সামনে। বেশ দারুণ দেখতে।
মনেই হচ্ছে না এই বাংলোতে তিনজনকে খুন করা হয়েছে।
" লাশগুলো কোথায় রেখেছেন? "
আমি চন্দ্রা ব্যানার্জীকে জিজ্ঞেস করলাম। তার হাতে কোন হাতকড়া লাগানো হয় নি। তবে আমি খুব সতর্ক রয়েছি। আমার কোমরে সার্ভিস কোল্টে আপনাতেই হাত চলে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। চন্দ্রা ব্যানার্জী বাগানে এগিয়ে গিয়ে একটা জায়গা দেখিয়ে দিলো।
" এখানে। দিদি আর কাজের মহিলার লাশ মাটির নিচে পোঁতা। "
পুরুষ কনস্টেবল জীপ থেকে কোদাল নিয়ে জায়গাটা খনন করতে থাকলো। নারী কনস্টেবলকে ওখানেই থাকতে বললাম।
" মায়ের লাশ কোথায়? বাড়ির ভেতরে? "
" জ্বী। বেডরুমে। "
" পথ দেখান... "
চন্দ্রা ব্যানার্জীর পেছনে হাঁটতে হাঁটতে বেডরুমে চলে এলাম। আবছা অন্ধকারে দেখতে পেলাম স্পষ্ট, বিছানায় তিনটে লাশ শুইয়ে রাখা। একটা যদি চন্দ্রা ব্যানার্জীর মা হন তাহলে বাকি দুটো কার লাশ? তিনি আমাকে মিথ্যে বললেন কেন? কোমরের সার্ভিস কোল্টে আমার আঙ্গুল চেপে বসে।
পরক্ষণে আমি অনুভব করি আমার গলায় যেন আগুন ধরে গেছে। নিজের চোখে দেখতে পাই চন্দ্রা ব্যানার্জী আমার গলায় একটা ছুড়ি আমূল বসিয়ে দিয়েছেন।
" কিন্তু... কেন? "
ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় কথাগুলো কোনমতে বলতে পারলাম। আমি জানি আমি কিছুক্ষণ পর মারা যাবো।
" এতে আমি ভীষণ আনন্দ পাই! "
অন্ধকারে চন্দ্রা ব্যানার্জীর চোখজোড়া যেন কালীমূর্তির মতোন জ্বলে উঠলো। আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। অনুভব করলাম আমার কোমর থেকে তিনি সার্ভিস কোল্টটা খুলে নিয়ে শয়নকক্ষের বাইরে হেঁটে গেলেন। শান্তভাবে।
পরপর দুটো গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম আমি।
খুনগুলো সত্যিই নিখুঁত!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.