![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাইক্লোন অধ্যায়-৩
বঙ্গব সাগরে নিন্মচাপ হয়েছে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে পথে ঘাট জনমানব শুন্য। প্রতি দিনের মত চেম্বার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আজো কমলার খোঁজ নিয়ে গেল মমিন ডাক্তার । চলে যাবার সময় বললো-সাবধানে থেক । আকাশের অবস্থা ভাল না ।সাইক্লোনের পূর্বাভাস, মনে হয় বঙ্গব সাগরে নিম্মচাপ হয়েছে।
রাত ১২টা ,বাতাসের তীব্রবেগ। মনে হয় ঝাঁকে ঝাঁকে জেট বিমান ছুটে আসছে। ঘন অন্ধকারে গাছের ডাল,ঘরের চাল,টিনের টুকরো উড়ছে বাতাসে। বৃষ্টি বাতাসের প্রচন্ডতায় চারি দিকে ভয়ের ছায়া নেমে আসছে । আজান শোনা যায় ঝড়ের মধ্যেও। বাতাসের সাথে মনে হচ্ছে কান্নার শব্ধ। কে যেন কাঁদছে । মমিনের মনে হলো ব্যার্নাজীদের শ্মশানের কনক চাঁপা ফুল গাছ থেকে ভেসে আসছে এ কান্না । এরই মধ্যেে হ্যারিকেন নিয়ে বেড়িয়ে পরল কমলা । সেও শুনতে পাচ্ছে কান্না কিন্তু বুঝতে পারেনি কোন দিক থেকে আসছে কান্না ।একবার মনে হচ্ছে কান্না নয় প্রবল ঝড়ো বাতাসের জন্য শুকনা ডালে ডালে ঘর্ষণের শব্ধ । আবার মনে হচ্ছে মরা বাঁশের ঘর্ষনের শব্ধ। এ সব ভাবার সময় নেই তার ।ঝড়ের মধ্যে এ মুহূর্তে তার দরকার আশ্রয় । হঠাৎ বাতাসের ঝাপটায় হেরিকেনটা নিভে গেল। তাতে আরো ভয় পেল। কখন কেমন করে যে মমিনের বাড়ির কাছে এসে পড়েছে তা সে নিজেও জানেনা । মমিন ভাই বলে ডাক দিল দু'বার । কোন সাড়া পেলনা সে ।কন্ঠে যত জোর আছে তা দিয়ে আবারও ডাকলো ম-মি-ন-ভাই....।বাতাসের শব্ধে মিশে গেল তার ভয়ার্ত কন্ঠ । কেউ সাড়া দিলনা । বাঘে তাড়ানো হরিণের মত কোন দিকে যাবে , কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা এমন সময় পেছন থেকে তার কাঁধে হাত পড়ল । কমলা ভয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেললো । তার মনে হলো কোন অশরিরী হাত তাকে টানছে । কমলাকে কাছে টেনে মমিন বললো, ভয় নেই আমি মমিন কমলা হাটতে পারছেনা । ছোট শিশুদের যেমন করে হাটতে শেখায় তেমনি করে হাত ধরে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঘরে প্রবেশ করলো মমিন । এক রুম বিশিষ্ট ইটের দেয়াল ঘেরা ঘর । মাত্র দুটি চেীকি পাতা যায়। নেই কোন আসবাপত্র । একটি আলনা ও একটি কেরাসিনের স্টোপ । মনে হয় একজন মানুষ শুধু বাস করার মত আসবাপত্র রেখেছে ।দু'জনেই ভিজে গেছে ।উপরের টিনের চালে কড় কড় শব্ধ । এইবুঝি টিন উড়ে যাবে। দশ ফুটি চারটি টিনের ছোট ঘর।কমলার কাপড়ের আঁচল নিঙড়েে দিল মমিন ।চামরার ব্যাগ খুলে একটি লুঙ্গি পড়লো সে । পুরনো গেঞ্জিটা গায়ে দিয়ে কমলার দিকে এগিয়ে দিল তার পাজামা আর পাঞ্জাবি । মমিন অন্যদিকে মুখ ফিরে থাকলো ।অনাভ্যসের জন্য পাঞ্জাবির উপরের ঘাটের সাথে নিচের বোতাম লাগালো ।বোতামের দিকে চোখ পরতেই মমিন হেসে বললো , বোতামটা ঠিক করে নাও ।বোতামের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেল কমলা । কিশোরীর মতো নতুন পোষাকে নিজেকে কেমন যেন মনে হলো তার ।আট সাট পাঞ্জাবী দেহের সমস্ত ভাঁজ ঢেকে রাখতে পারছেনা ।এক অজানা অনুভূতি অনুভব করলো সে ।বাইরে প্রচন্ড ঝরের মতো ঘরের মধ্যে দু'টি প্রাণের মধ্যেও বইছে আবেগের ঢেউ। মমিন কমলার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রলো । তার মুখের সমস্ত আলো যেন মমিন লুফে নিতে চায় । শুকনো গামছাটা ওড়নার মত পড়িয়ে দিল কমলার বুকে । কমলা ছোট চকিতে বসে মাটির দিকে তাকিয়ে রলো ।পৃথিবীর যত লজ্জা সংকোজ যেন তাবে ঘিরে ফেলেছে। হঠাৎ গাছের ডাল এবং নারিকেল গাছের মাথা ভেঙে পড়লো দেয়ালের উপরে । ভয়ে মমিনকে জড়িয়ে ধরলো কমলা ।বাতাসের তিব্রতায় গরের হেরিকেনটা নিভে যাবার উপক্রম হলো ।মমিন অভয় দিয়ে বললো,ভয় নেই ।
ভেজা শরীরে বাহিরের বাতাস লেগে শীত করছে ওদের ।কমলা রিতিমত কাঁপছে । নদীর ঢেউয়ের মত বাতাসের বেগ কখনও বাড়ে কখনও কমে । ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কমলা বললো,মমিন ভাই সব কি শেষ হয়ে যাবে ?-জানিনা ,মনে হয় কেয়ামত । জলোচ্ছাসে অনের মানুষ মারা যাবে, বললো মমিন । কমলা বললো, তুমিও শীতে কাঁপছ,বললো কমলা। বাতাসের বেগ কমে আসছে ।
(চলবে......)
©somewhere in net ltd.