![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯ অগাস্ট ২০১৩ :কিভাবে পিতা-মাতাকে হত্যা করা হল তার বর্ণনা দিলো ঐশী। গোয়েন্দাদের কাছে ১৭ বছর বয়সী এ কিশোরী বলেছে, কিভাবে সে তার পিতা-মাতাকে হত্যা করে। সাংবাদিকদের কাছে একথা জানিয়েছেন, ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ঐশী শুরুর দিকে ঘটনায় দায় স্বীকার না করলেও পরে তা স্বীকার করেছে। সে বলেছে, ওই রাতে কফির সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলসের ১০টি নাইট্যাস ৩ মিগ্রা ট্যাবলেট মিশায় । দুই কাপ কফির এক কাপ খাওয়ান বাবাকে, এক কাপ খাওয়ান মাকে। পরে হত্যায় সে নিজেই অংশ নেয়। তার সঙ্গে ছিল তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনি। হত্যার ঘটনা দেখে ফেলে কাজের মেয়ে সুমী। সুমীকে ভয় দেখায় ঐশী। রক্ত পরিস্কার করতে এবং লাশ বাথরুমে নিতে সুমী সহায়তা করে। ওই রাতে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ছিলেন এক ঘরে। তার স্ত্রী ছিলেন অন্যরূমে। মায়ের সঙ্গেই ছিলো পুলিশ দম্পতির ছোট ছেলে ঐহী রহমান। ঐহী খুনের দৃশ্য দেখে চিৎকার করে। মাকে হত্যার দৃশ্য সে দেখেছে বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছে। তবে বাবাকে হত্যার দৃশ্য সে দেখেনি। যদিও ঐহী রহমানের কথার ওপর গোয়েন্দারা এখনও নির্ভর করতে পারছে না। সে শিশু এবং এখনও মানসিকভাবে স্থির হতে পারেনি। মনিরুল ইসলাম বলেন, আরও দুই জনকে আমরা সন্দেহ করছি। তাদের খোঁজা হচ্ছে। তাদের পাওয়া গেলে হত্যা রহস্য উন্মোচিত হবে। তিনি বলেন, ইয়াবা আসত্তির কারণেই ঐশী এতটা হিংস্র হয়ে উঠে। এদিকে গতকাল ঐশী রহমান, গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন ওরফে সুমি এবং বন্ধু মিজানুর রহমান ওরফে রনিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ঐশী এ সময় বলে, অসৎ সঙ্গই আমার জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এখন আমার আব্বু ও আম্মুর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার শরীর ভালো না। আমি অ্যাজমা রোগী। ঐশীসহ তিনজনকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত শুক্রবার বিকালে ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের রক্তাক্ত লাশ রাজধানীর চামেলীবাগে তাদের ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। ঐশী তার ছোট ভাই ঐহীর খোঁজ পুলিশ পাচ্ছিল না। গত শনিবার সে পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। তার তথ্য মতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের জেরার মুখে ঐশী বলেছে, না জানিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করা এবং ইয়াবা সেবনের কারণে তাকে বাসায় আটকে রাখা হতো। মা-বাবার এই কড়াকড়ি শাসন তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। একপর্যায়ে সে বন্ধুদের নিয়ে মা-বাবাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। খুনের আগে মা-বাবাকে কফির সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে এই ঘটনায় আটকদের মধ্য থেকে তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে ঐশীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা জড়িত। এর মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি দুজনকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের প্রতি ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঐশী নিজেই তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে। আটক বন্ধু রনি ও গৃহকর্মী সুমি তাকে সহায়তা করেছে। যুগ্ম কমিশনার বলেন, গত বুধবার আনুমানিক রাত ২টার দিকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঐশী ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে অন্যদের ভূমিকা যাচাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি পাওয়া গেছে। একটি বঁটি পাওয়া গেছে। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় ঐশী। এর মধ্যে কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। মনিরুল বলেন, ঐশী রহমানের পিতা-মাতার ওপর অনেক ক্ষোভ ছিল তার। চলাফেরায় বাধা দেওয়ার কারণে এই ক্ষোভ থেকে এই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঐশীর মা গত এক মাস থেকে বিধি নিষেধ করে আসছিলেন বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা। কেন আত্দসমর্পণ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, খুন হওয়ার পর নিরাপদ আশ্রয় না পাওয়া এবং ঐশীর কাছে তার মায়ের মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার গচ্ছিত ছিল। সে কারণে নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারেনি ঐশী। আর তাই সে আত্দসমপর্ণ করে। এদিকে গোয়েন্দারা বলছেন, সে নিজেকে নিরাপদ ভাবছিল না। সে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
©somewhere in net ltd.