![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ﺑﺴﻢ اﷲ اﻟﺮ ﺣﻤﻦ اﻟﺮ ﺣﻴﻢ
মুসলমান মাত্রই আমরা বিশ্বাস করি “আল্লাহ এবং রসুলের আনুগত্য/অনুসরন করতে হবে” । আল্লাহর অনুসরন বলতে বুঝায় তার আদেশ নিষেধ মেনে চলা , যেগুলো কোরআন শরীফে বলা আছে । আর রসুলের আনুগত্য/অনুসরন বলতে বুঝায় তার আদেশ নিষেধ মেনে চলা যেটা কোরআন এবং হাদিস উভয়টিতে আছে ।
মুসলমান মাত্রই একথা একবাক্যে স্বীকার করবে আল্লাহ এবং রসুলকে অনুসরন করতে হবে । কিন্তু কিভাবে ?
সেটাই আজকের আলোচনার বিষয় । অনেকের মধ্যেই ধারনা আছে “কোরআন” এবং “হাদিস” পড়ে নিজে নিজে যেটা বুঝলাম সেটাই হচ্ছে সর্বোত্তম পন্হা । সহীহ হাদিস শরীফ থেকে সরাসরি অনুসরন করতে গেলে কি সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন সেটা আমরা দেখিয়েছি । এবং কোরআন এর ক্ষেত্রেও এটা সত্য । সুতরাং সরাসরি “কোরআন” , “হাদিস” থেকে হুকুম আহকাম বের করা যেকারো জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে । আসুন এই বিষয়টি এখন পর্যালোচনা করে দেখি ।
প্রথমে আমরা দেখব একজন “কোরআন” , “হাদিস” থেকে সরাসরি অনুসরন করতে গেলে তার কি কি জানতে হবে ? মনে করুন আপনি নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন জানতে চান । তাহলে যেটা করতে হবে সেটা হোলো :
১) প্রথমে আপনার “আরবী ভাষার” ওপরে অসাধারন দক্ষতা অর্জন করতে হবে
২) সমগ্র কোরআন শরীফ তাহকীক করে বের করতে হবে নামাজ বিষয়ে কত জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে ।
৩) তারপর সমগ্র আয়াতের মধ্যে থেকে জানতে হবে কোনটা নাসেখ , কোনটা মনসুখ ।
৪) নামাজ সংক্রান্ত প্রতিটি আয়াতের শানে নজুল জানতে হবে ।
৫) নামাজ সংক্রান্ত পৃথিবীতে যত হাদিস শরীফ আছে , সেগুলো আপনার প্রথমে এক জায়গায় করতে হবে ।
৬) তারপর এই সংক্রান্ত সকল হাদিস থেকে দেখতে হবে “কোনটি সহীহ, কোনটি হাসান , কোনটি জঈফ, কোনটি জাল” ইত্যাদি ।
৭) সাহাবীরা হাদিস বিষয়ে কি বলে গেছেন , নামাজ বিষয়ে ওনাদের আমল কি ছিল , তাবেয়ীন , তাবে-তাবেয়ীন সবার আমল ইত্যাদি পর্যালোচনা করতে হবে ।
৮) পরস্পরবিরোধী হাদিস শরীফের মধ্যে সামন্জস্য বিধান করতে হবে । অর্থ্যাৎ দুটি সহীহ হাদিস পরস্পরবিরোধি হলে কেনো একটিকে গ্রহন করে আপনি অন্যটি বাদ দিয়েছেন সেটার সুস্পস্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে ।
৯) হাদিসের নাসেখ মানসুখ জানতে হবে ।
১০) সাহাবীরা , তাবেয়ীনগন , ছলফে সালেহীনগন কি পদ্ধতিতে মাসআলা বের করেছেন সেটা জানতে হবে ।
১১ ) উসুলে কোরআন , উসুলে হাদিস , উসুলে ফিকাহতে অসাধারন বুৎপত্তি থাকতে হবে ।
১২) কোরআন হাদিস উভয়ের ক্ষেত্রে “সাধারন” এবং “বিশেষ” হুকুম এর মধ্যে পার্থক্য নির্নয় করার দক্ষতা থাকতে হবে
১৩) নামাজে “ফরজ” , “ওয়াজিব” , “সুন্নত” “নফল” “মোবাহ” ইত্যাদি কেনো হয় , সেগুলোর মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে ।
১৪) নামাজের ক্ষেত্রে রসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমল কি ছিল , সাহাবীদের আমল কি ছিল , দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল কিনা ? থাকলে কেনো ? আমরা কোনটা অনুসরন করব? ইত্যাদি ।
১৫) নামাজ সংক্রান্ত রসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোনো আমল কি সে সময়ের জন্য প্রযোজ্য নাকি চিরন্তন সেটার পার্থক্য বোঝার মতো দক্ষতা থাকতে হবে
১৬) রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে আমল করেছেন সেটা কি শধুমাত্র ওনার জন্য নির্দিষ্ট কিনা ? ( যেমন ঘুমালে ওনার অজু ভাংতো না )
উপরে অনেকগুলো দক্ষতার মধ্যে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হোলো , যেটা একজনের “কোরআন” “হাদিস” থেকে শুধু নামাজের মাসআলা বের করতে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই থাকতে হবে । সেটা কি আমাদের আছে ? না নেই । তাহলে আমরা বুঝতে পারছি , আমাদের যেহেতু এই দক্ষতা নেই, তাই যারা এই কাজে দক্ষ তাদের অনুসরন করতে হবে । দলীল ? দেখুন :
فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; (সুরাহ নাহল : ৪৩ )
আরো একটি আয়াত শরীফের মাধ্যমে ফকীহ , মুজতাহিদের অনুসরন করতে বলা হয়েছে :
আয়াতটি হচ্ছে সূরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াত:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“হে মু’মিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর, তবে আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে উলিল আমর । কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে, তা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে উপস্থিত কর । এটাই শ্রেয় এবং পরিণাম এটাই প্রকৃষ্টতর ।” (সূরা নিসা ৪:৫৯)
কোনো কোনো তফসীরকারক “উলিল আমর” বলতে “শাসক বর্গকে” আবার কেউ কেউ “মুজতাহিদ”দেরকে বুঝিয়েছেন । হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) , হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) , হযরত মুজাহিদ (রহমতুল্লাহি আলাইহি) , আতা বিন রবীহ (রহমতুল্লাহি আলাইহি) , হাসান বসরী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখ জগৎবিখ্যাত তফসীরকারকগন উলিল আমর বলতে “ফকীহ এবং মুজতাহিদগনকে” বুঝিয়েছেন । ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহমতুল্লাহি আলাইহি) এর মতে “রাজনীতি ও প্রসাশনের” ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ন শাসককে এবং মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে “ফকীহ ও মুজতাহিদগনকে” অনুসরন করার কথা বলা হয়েছে । এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে দুই ব্যাখ্যার মধ্যে সামন্জস্য বিধান হয় ।
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম , আমাদের জানা না থাকলে , যারা জানে বা আলেম তাদের জিজ্ঞেস করে জানতে হবে বা তাদের অনুসরন করতে হবে । এটাই তকলীদ ।
সাহাবা এবং তকলীদ :
হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন “জাবিয়া নামক স্হানে হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) খুৎবা দিতে গিয়ে বললেন লোক সকল ! কোরআন (ইলমুল কিরাত) সম্পর্কে তোমাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে উবাই ইবনে কাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কাছে এবং ফারায়েজ সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে যায়েদ ইবনে সাবেত (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর কাছে আর ফিকাহ সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে মুআজ ইবনে জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর কাছে যাবে । তবে অর্থ সম্পদ সংক্রান্ত কিছু জানার থাকলে আমার কাছে আসবে । কেননা আল্লাহ আমাকে এর বন্টন এবং তত্বাবধানের কাজে নিযুক্ত করেছেন ।
দেখুন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) নির্দেশ দিচ্ছেন সাহাবাদের অন্য সাহাবাদের তকলীদ করার জন্য । কেননা যে সাহাবারা মুজতাহিদ ছিলেন না তারাও মুজতাহিদ সাহাবাগনকে অনুসরন বা তকলীদ করতেন ।
সুতরাং আমরা এই দলীলের মাধ্যমে জানতে পারলাম “আল্লাহ এবং রসুলকে” কেউ যদি অনুসরন করতে চায় , তবে “কোরআন” “হাদিস” পড়ে নিজের মনমতো বুঝলে বা ব্যাখ্যা দাড় করালে হবে না । এটা সুন্নত পদ্ধতি নয় । সুন্নত হোলো তাই যেটা উপরে আলোচনা করা হোলো । ফকীহ বা মুজতাহিদ আলেমেকে অনুসরন করতে হবে ।
এখন আমরা এ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করব :
১ম অভিযোগ খন্ডন: [ আলেমদের মধ্যে মতভেদ হলে কোরআন হাদিস অনুসরন করাই ভালো ]
কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে, তা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে উপস্থিত কর । এটাই শ্রেয় এবং পরিণাম এটাই প্রকৃষ্টতর ।” (সূরা নিসা ৪:৫৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেকে বলেন , যেহেতু মতভেদ হলে আল্লাহ এবং রসুলের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে বলা হয়েছে , তাই মতভেদ দেখা দিলে কোনো আলেমের বক্তব্য না মেনে সরাসরি “কোরআন” এবং “হাদিস” থেকে আমরা যেটা বুঝি সেটাই অনুসরন করার চেষ্টা করবো । আপনি যদি এভাবে চিন্তা করেন তাহলে সম্পূর্ন ভুল করলেন ।
কেননা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আবু বকর জাসসাস তার বিখ্যাত তফসীর “আহকামুল কোরআনে” বলেছেন “তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর” এই আদেশ সাধারন মুসলমানদের দেয়া হয়নি, এই আয়াত আদেশ করা হয়েছে “ফকীহ মুজতাহিদ”দের । অর্থ্যাৎ কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে “ফকীহ মুজতাহিদ”দের দায়িত্ব আল্লাহর কিতাব এবং রসুলের সুন্নাহর মাধ্যমে ফয়সালা দেয়া । সাধারন মুসলমানের দায়িত্ব নয় নিজ কাধে দায়িত্ব নিয়ে যোগ্যতা না থাকা সত্বেও “কোরআন হাদিসের” নিজস্ব ব্যাখ্যা দেয়া ।
অনেকে এই আয়াতের মাধ্যমে প্রমান করতে চায় “৪ মাজহাবে” যেহেতু অনেক বিরোধ দেখা যায় , তাই সেইক্ষেত্রে কোনোটি অনুসরন না করে , “কোরআন” “হাদিস” থেকে সরাসরি অনুসরন করাই ভালো হয় । তাদের এই কথা যে সম্পূর্ন ভুল সেটা আমরা উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝলাম ।
এছাড়া এইসব ক্ষেত্রে সাহাবীরা কি করতেন আসুন আমরা দেখি :
হাদিস শরীফ: সহীহ বুখারীসহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্হে হযরত হুযাইল ইবনে শুরাহবীল ( রহমতুল্লাহি আলাইহি) এর সূত্রে একটি ঘটনা বর্নিত আছে । ঘটনাটি হোলো “একবার কিছু লোক হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কে একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করল । তিনি সংগে সংগেই তার মাসআলা বলে দেন । সাথে এও বলে দেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) জিজ্ঞেস করে নিও । কথামতো তারা ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর দরবারে গেলো । মাসআলাটি তাকেও জিজ্ঞেস করা হোলো । সেই সাথে আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর ফয়সালাও জানানো হোলো । তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) যে ফতোয়া দেন তা ছিল হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর ফতোয়া থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন । তখন তারা গিয়ে হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) যে ফতোয়া দেন তা শোনান । এই ফতোয়া শোনার পর হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন :
“যতদিন পর্যন্ত তোমাদের মাঝে এই বিজ্ঞ আলেম বেচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাকে কোনো মাসআলা জিজ্ঞেস করো না ” ।
উপরের ঘটনা দ্বারা আমরা জানতে পারলাম , মতভেদ হলেও হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) সাহাবীদের বলেননি “যেহেতু আমাদের মধ্যে মতভেদ হয়েছে তাই তোমরা কোরআন হাদিস থেকে যা বোঝো তাই অনুসরন কর । বরং উনি বলেছিলেন সবসময় তোমরা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কে জিজ্ঞেস কর । কেননা সেই ছিল অধিক বিজ্ঞ এবং অনুসরন করার যোগ্য ।
এই ঘটনার দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম , মতভেদ হলে নিজে নিজে কোরআন হাদিস থেকে মাসআলা বের না করে , যে বেশী যোগ্য তার মাসআলা অনুসরন করতে হবে । এটাই সাহাবীদের সুন্নত ।
২য় অভিযোগ খন্ডন : [ অনুসরন করতে হবে তাই বলে অন্ধ অনুসরন নয় ]
অনেকে বলে থাকে অনুসরন করতে হবে তাই বলে অন্ধ অনুসরন ? ইদানিং এই টার্মটা প্রচুর শোনা যায় কিন্তু কেউ সাধারনত ব্যাখ্যা করে না । এবার আমরা দেখব অন্ধ অনুকরন কি ? অনেকে মনে করে দলীল ছাড়া কারো কথা মেনে চলাই হোলো অন্ধ অনুকরন । নীচের ঘটনা দ্বারা আমরা দেখব কথাটা সম্পূর্ন ভুল :
হযরত সহল বিন মোআজ তার বাবার কাছ থেকে রেওয়ায়েত করেছেন : জনৈক মহিলা সাহাবী রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন “ইয়া রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার স্বামী জিহাদে গিয়েছেন । তিনি থাকতে আমি তার সালাত ও অন্যান্য কাজ অনুসরন করতাম । এখন তার ফিরে আসা পর্যন্ত এমন কোনো আমল আমাকে বাতলে দিন যা তার আমলের সমমর্যাদায় আমাকে পৌছিয়ে দিবে । (মুসনাদে আহমদ )
দেখুন মহিলা সাহাবী সালাতসহ অন্যান্য সমস্ত আমলে তার স্বামীর তাকলীদ করতেন দলীল খোজা ব্যতীত অথচ রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ বা অসম্মতি প্রকাশ করেননি । সুতরাং দলীল ছাড়াও অনসুরন করা যায় কিন্তু শর্ত হোলো যাকে অনসুরন করা হচ্ছে সে “মুজতাহিদ” বা যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে ।
সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ফকীহ মুজতাহিদ খুজে বের করা , এবং একবার খুজে বের করার পর সব কাজে দলীল খোজার দরকার নেই । যেমন ধরুন আপনি জানেন আপনার পিতা মাতা কে ? এখন তারা কোনো আদেশ দিলে আপনি যদি প্রতিবারই প্রমান করেতে চান দলীল সহ আপনার পিতা মাতা আসলেই সঠিক আপনার পিতা মাতা কিনা , তাহলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে । এভাবে আপনি কোনো কাজেই আগ্রহ পাবেন না , এবং ক্রমশ সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতীর পরিবরর্তে আরো পিছিয়ে পড়বেন ।
সব মাসআলার ক্ষেত্রে দলীল বের করতে চাইলে “মুজতাহিদ” আর তার মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায় ? এবং এ কাজ করতে যেয়ে একজনের চাকরী , ব্যবসা সবকিছু বন্ধ করে শুধু এই কাজই করতে হবে । যেটা মুলত পৃথিবীকে অচল করে দেবার মতো অবস্হা । অনেকে হয়ত এই কথায় হতাশ হবেন কিন্তু একটু বাস্তব পরিস্হিতি বিচার বিশ্লেষন করলে আপনারা বুঝতে পারবেন আমরা কেউ আমাদের প্রাত্যহিক সব আমলের দলীল জানি না । কিন্তু নিজের অজান্তে হোক বা অনিচ্ছায় হোক এটা স্বীকার করি না ।
নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন তাহলেই উত্তর পেয়ে যাবেন ।
আপনি মাজহাব অনুসরন করুন বা আলবানী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) কে অনুসরন করুন যেটাই হোক আপনি কি এই এই প্রশ্নগুলোর দলীল ভিত্তিক সমাধান দিতে পারবেন ?
ক) জোহর নামাজে কয় রাকাত ? সুন্নত , ফরজ কয় রাকাত ? কেউ যদি ভুলে জোহের ফরজ ৩ রাকাআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে বাকী নামাজ কিভাবে আদায় করবে ?
খ) নামাজে রুকু না করে কেউ যদি সরাসরি সেজদায় চলে যায় , তাহলে তার ক্ষেত্রে হুকুম কি ?
গ) বিতের কখন পড়তে হয় ? বিতর পড়ার সম্পূর্ন নিয়ম কি ?
ঘ) মুসাফির অবস্হায় কিভাবে নামাজ পড়তে হবে ?
ঙ) সুরাহ ফাতিহা বাংলায় পড়লে হবে কিনা ?
উপরে আমি মাত্র ৫ টি প্রশ্ন করলাম , এগুলোর কোরআন হাদিস ভিত্তিক দলীল কি আমাদের কারো জানা আছে ? নেই । আর মনে রাখতে হবে “দলীল জানা শর্ত নয় , শর্ত হোলো ইসলামের সহীহ আহকাম, আকীদা জানা” । এইজন্য কবরে আমাদের জিজ্ঞেস করা হবে “তোমার রব কে ? ধর্ম কি ? রসুল কে ? ” আমাদের কিন্তু জিজ্ঞেস করা হবে না “কোরআন হাদিসের কোথায় কত নম্বর সুরায় আছে “রব কে” ? “কোন হাদিসে আছে রসুল কে? ” বরং সঠিক বিষয়টি জানলেই হোলো । বরং দলীল খুজতে যেয়ে সে যদি সঠিক আমল না করতে পারে তার জন্য তার জবাবদিহি করতে হবে । তাই যেসব সাহাবী মুজতাহিদ ছিলেন না তারাও দলীল খুজতেন না , মাসআলা জানার জন্য মুজতাহিদ সাহাবীদের কাছে যেতেন এবং জেনে আমল করতেন ।
এই ব্যাখ্যায় কেউ যেন মনে না করে “দলীল খোজা যাবে না” । দলীল অবশ্যই খোজা যাবে , তবে এটা শর্ত নয় । দলীল খোজার দায়িত্ব মুজতাহিদের , আর সাধারনের দায়িত্ব যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদ খুজে বের করা ।
৩য় অভিযোগ খন্ডন : [ পূর্ব পূরুষদের অনুসরন করা ]
অনেকে তকলীদ করাকে নীচের আয়াতের সাথে মিলিয়ে ফেলে :
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللّهُ قَالُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئاً وَلاَ يَهْتَدُونَ
আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও। ( সুরাহ বাকারা : ১৭০ )
এই উদাহরন যারা দেয় তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এই হাদিস শরীফ :
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন “যে ব্যক্তি পবিত্র কোরানের ব্যাপারে মনগড়া কিছু বলে সেটা ঠিক হলেও সে ভুল করেছে” ।
মুশরিকরা যেটা করতো তাহোলো , তাদের পূর্ব পুরুষ শরীয়তবিরোধী মূর্তপূজা করত আর তারা সেটাই অনুসরন করত । শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ যদি কেউ করে তাহলে তাকে কস্মিনকালেও অনুসরন করা যাবে না । হক তার সামনে উদ্ভাসিত হবার পর না-হক অনুসরন করা জায়েজ নেই । কিন্তু এখানে তা বলা হচ্ছে না । আয়াতে বলা হয়েছে তাদের বাপ দাদারা কিছু জানত না । আর আমরা বলছি অবশ্যই যাকে অনুসরন করবে সে ফকীহ মুজতাহিদ হতে হবে , শরীয়তের উপর তার থাকতে হবে
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হোলো “তওহীদ” তথা আকীদা সংক্রান্ত বিষয়ে মক্কার মুশরিকরা পূর্ব পুরুষদের অনুসরন করত । কিন্তু কোনো মুসলমান “আল্লাহ এক, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ নবী , পরকাল , কবর , দোজখ ” ইত্যাদি বুনিয়াদি আকীদাসমূহের জন্য কারো তকলীদ করে না । এগুলোতে কারো অনুসরন করার প্রয়োজন নেই । মুজতাহিদ আলেমদের অনুসরন করতে হয় “ইসলামিক জুরিসপ্রডেন্স” বা ফিকাহ সংক্রান্ত বিষয় । তদুপুরি ইসলামের হুকুম আহকাম প্রাকটিস করার বিষয়ে ।
৪র্থ অভিযোগ খন্ডন : [ আলেমদের না মুজতাহিদের অনুসরন করব ? ]
কোরআন হাদিস থেকে মাসআলা বের করবেন “মুজতাহিদগন” আর এগুলো আমাদের বুঝিয়ে দিবেন আলেম বা মুফতীগন । অর্থ্যাৎ মুজতাহিদগন কিভাবে মাসআলা বের করেছেন সেটা বোঝার যোগ্যতাও আমাদের নেই বললেই চলবে । সেটাই বুঝাবেন ১০/২০/৩০ বছর ধরে যারা প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম/মুফতী/মাওলানা গন তারা ।
তকলীদ করেছেন এমন কিছু বিখ্যাত আলেমদের উদাহরন
বিশ্ববিখ্যাত কয়েকজন আলেমের উদাহরন দেয়া হোলো যারা অসামান্য পন্ডিত হওয়া সত্বেও তকলীদ করতেন :
১। মোল্লা আলী কারী – > হানাফী
২। ইমাম তাহাবী -> হানাফী
৩। ইবনে কাসির -> আশ শাফেয়ী
৪। ইমাম যাহাবী -> আশ শাফেয়ী
৫। ইবনে হাজার আসকালানী -> আশ শাফেয়ী
৬। জালালুদ্দিন সুয়ুতী -> আশ শাফেয়ী
৭। ইবনে রজব -> হাম্বলী
৮। ইবনে আব্দুল বার -> মালেকী
৯। শাহ ওয়ালীউল্লাহ -> শাফেয়ী /হানাফী
১০। ইমাম নাসাঈ -> হাম্বলী
আরো অনেকের নাম পরবর্তিতে আলাদা পোস্টে দেয়া হবে ইনশাল্লাহ ।
এই আলোচনায় যেটা শিখতে পারলাম :
এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা শিখতে পারলাম “আল্লাহ এবং রসুলকে” অনুসরন করা অর্থ এই নয় “কোরআন” , “হাদিস” পড়ে সরাসরি নিজে যেটা বুঝলাম , নিজের মনমতো সেটাই মানতে হবে । “কোরআন হাদিসের নিজস্ব ব্যাখ্যা দেয়াই হোলো স্পষ্ট গোমরাহীর লক্ষন যাদের জিন্দিক বলা হয়” । কোরআন হাদিসের অনুসরন করার পদ্ধতি হোলো , যেসকল ফকীহ মুজতাহিদ কোরআন হাদিস বুঝে গেছেন , নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন তাদের ব্যাখ্যা গ্রহন করা । অর্থ্যাৎ “ফকীহ, মুজতাহিদ”কে শুধুমাত্র কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যাকার মনে করা , অন্য কিছু নয় । তাদেরকে অনুসরন করা বলতে তারা কোরআন হাদিসের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা মেনে চলা । এটাই সুন্নত পদ্ধতি যা আমরা সাহাবীদের জীবন পর্যালোচনা করে দেখতে পেলাম।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৯
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৩
টু-ইমদাদ বলেছেন: ধন্যবাদ . . .
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫০
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
জাফর০০৭বেসট বলেছেন: +++++++++++++++
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫০
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
নাম বলা যাবে না বলেছেন: পড়ে খুব ভাল লাগল। সরাসরি প্রিয়তে
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫০
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫২
মুহম্মদ রাসেল বলেছেন: ধন্যবাদ
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৮
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৩
দুর্ধর্ষ বলেছেন: ভাল লাগল। মাজহাব মানা ফরজ Click This Link
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৮
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ
৭| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৫
জুয়েল বলেছেন: আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট একজন মাজহাবকে মানেন তাহলে আমার কিছু বলার নাই তবে যেকোন একজন মাজহাবকে যে অন্ধভাবে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। চার ইমামই অত্যন্ত জ্ঞানী আলেম ছিলেন কোন সন্দেহ নেই। তবে তাঁদের সময়ে সব হাদীস সংকলিত না থাকায় এক এক ইমামের ফতোয়ার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আপনি যদি একজন ইমামকে অন্ধভাবে মানেন, তার মানে অন্য তিন ইমামের ফতোয়াকে আপনি যাচাই না করেই ছুঁড়ে ফেলছেন যেটা কখনই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বরং একজন প্রকৃত মুসলিমের উচিত সব ইমামের ফতোয়াকেই গ্রহন করে যাঁর ফতোয়া কুরআন, হাদীস এবং রসূল(সা) ও সাহাবীদের জীবনীর সাথে সবচেয়ে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটা গ্রহণ করা। কিছু কিছু উজবুক আছে যারা বলে মাজহাব না মানলে মুসলিম হওয়া যায় না, তাদের কাছে প্রশ্ন, রাসূল(সা), সাহাবীগণ এবং এই চার ইমাম কোন মাজহাব মানতেন? তাহলে কি তাঁরা মুসলিম ছিলেননা?(নাউজুবিল্লাহ)
আর এই চার ইমামই বলে গেছেন যে তাঁদের ফতোয়ার বিপক্ষে যদি কুরআন হাদীস থেকে দলিল পাওয়া যায় তাহলে যেন সেই ফতোয়া ছুড়ে ফেলা হয়। তাছাড়া একটা বিষয় লক্ষনীয় যে অনেক মুসলমানই নিজেকে মুসলিম পরিচয় না দিয়ে হানাফী, শাফেই ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে থাকে যেটা ইসলামকে বিভক্ত করার শামিল। এথেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৪
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ভাইসাব! ঠিকই কইছেন। ৪ মাযহাবের যে কোনো এক মাযহাব মানতে হবে। এবং সেই মাযহাবের ইমাম যা ফতওয়া দিয়েছেন তাই মানতে হবে। আপনি হানাফি মাযহাবের অনুসরন করেন আর ফতওয়া মানবেন শাফেয়ী মাযহাবের তা কিন্তু হবে না।
ধন্যবাদ।
৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৭
বাঙাল শিক্ষক বলেছেন: তথ্যবহুল ও জরুরী পোস্ট।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৪
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ধন্যবাদ।
৯| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২৬
মুহাই বলেছেন: মাযহাবীদের লেখা বই থেকে ফতোয়া শিহ্মা করে আবার মাযহাব অস্বীকার করাই হচ্ছে লা মাযহাবীদের কাজ ।good post.
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৪
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: ঠিক কিইছেন। ধন্যবাদ
১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৪৩
জাফর০০৭বেসট বলেছেন: ইমাম আবু হানিফার মাযহাব (হানাফি) মহানবি (সা ওফাতের কতদিন পরে শুরু হয়েছে ?
তার আগে শত বছরে লাখ লাখ মুসলমান যারা ধর্ম পালন করেছে তারা কিভাবে করেছে? তারা কোন মাযহাব? সাহাবি , তাবঈন, তাবে-তাবঈনরা কোন মাযহাব?
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৭
পাগল হয়ে যাবো বলেছেন: আপনি মূর্খ নাকি। নবীজিকে মাযহাব মানতে হবে, সাহাবাদেরকে মাযহাব মানতে হবে।
উনারা যা করেছেন সেটাই তো দলীল হিসেবে মাযহাবের ইমামগণ উল্লেখ করেছেন। উনাদেরকে মানতে বলছেন।
আসলে আপনার জ্ঞানের পরিধি কি বুঝতেছিনা।
১১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৪৩
নীলপথিক বলেছেন: কাজের পোস্ট, শ্রদ্ধা জানবেন।
১২| ১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯
বড় কঠিন বলেছেন: কুরআন হাদীস ও চার ইমামদের দৃষ্টিতে মাযহাব
বর্তমানে সারাবিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আড়াইশো কোটিরও বেশী। পৃথিবীর প্রত্যেক তিনজন ব্যাক্তির মধ্যে একজন মুসলমান। অমুসলিমদের কাছে আমরা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মুসলমান বলে পরিচিত হলেও মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে অনেক নামে পরিচিত। যেমন, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী প্রভৃতি। এই নাম গুলি আল্লাহ বা মুহাম্মাদ (সা এর দেওয়া নয় এমনকি যাঁদের নামে এই মাযহাব তৈরি করা হয়েছে তারাও এই নাম গুলো দেয়নি। মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত চারটি মাযহাব, দল বা ফিকাহ ইসলামের কোনো নিয়ম বা বিধান মেনে তৈরি করা হয়নি। কারন ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই। মুসলমানদের বিভক্ত হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে। এই মাযহাবগুলো রসুল (সা
এবং সাহাবাদের (রা
সময় সৃষ্টি হয়নি। এমনকি ঈমামগনের সময়ও হয়নি। চার ইমামের মৃত্যুর অনেক বছর পরে তাঁদের নামে মাযহাব তৈরি হয়েছে। কোরআন হাদীস ও চার ইমামের দৃষ্টিতে মাযহাব কি, কেন, মাযহাব কি মানতেই হবে, মাযহাব মানলে কি গোনাহ হবে, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্!
মাযহাব তৈরিতে আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞা
মুসলমানরা যাতে বিভিন্ন দলে আলাদা বা বিভক্ত না হয়ে যায় সে জন্য আল্লাহ পাক আমাদের কঠোরভাবে সাবধান করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা কুরআনের সূরা আন-আমর এর ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “যারা দ্বীন সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে আপনার কোনও সম্পর্ক নেই; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন। একটু থামুন। উপরের আয়াতটা দয়া করে বারবার পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন, চিন্তা করুন। আল্লাহ তাআলা সরাসরি বলেছেন যারা দ্বীন বা ধর্মে অর্থাৎ ইসলামে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আমাদের নবী মহাম্মাদ (সা) এর কোনো সম্পর্ক নেই। যার সাথে নবীজীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই সে কি মুসলমান? সে কি কখনো জান্নাতের গন্ধও পাবে? আমরা মুসলমান কোরআন হাদীস মাননে ওয়ালা এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। আল্লাহ বলেন এবং তোমাদের এই যে জাতি, এতো একই জাতি; এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমাকে ভয় করো। (সূরা মুউমিনুন ২৩/৫২)। তাহলেই বুঝতেই পারছেন ফরয, ওয়াজীব ভেবে আপনারা যা মেনে চলছেন আল্লাহ তা মানতে কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন তবে শুধু এইটুকুই নয় আল্লাহ আরও অনেক আয়াতে এ ব্যাপারে মানুষকে সাবধানবানী শুনিয়েছেন। যেমন সূরা রূমের একটি আয়াত দেখুন যেখানে আল্লাহ পাক বলছেন, তোমরা ঐ সকল মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা নিজেদের দ্বীনকে শতধা বিচ্ছিন্ন করে বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়ে খুশি (সূরা রুম ৩০/৩১-৩২)। বর্তমানে আমাদের সমাজের অবস্থাও ঐ মুশরিকদের মতো। ইসলামকে তারা (মাযহাবীরা) বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছে এবং তাদের নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়েই তারা খুশি। তাদের সামনে কোনো কথা উপস্থাপন করলে তারা বলেনা যে কুরআন হাদীসে আছে কি না। তারা বলে আমাদের ইমাম কি বলেছে। এরা কুরয়ান হাদীসের থেকেও ইমামের ফিকাহকে অধিক গুরুত্ব দেয়। অথচ ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে কুরআন হাদীস। তা ছাড়া অন্য কিছু নয়। উপরের আযাতে আল্লাহ তাআলা আমাদের উপদেশ দিয়েছেন তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তোমরা ইসলামে মাযহাবের সৃষ্টি করো না। অথচ আমরা কুরআনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে দ্বীনে দলের সৃষ্টি করেছি এবং নিজেকে হানাফী, মালেকী বা শাফেরী বলতে গর্ব অনুভব করছি। আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগন তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রগামী হয়ো না, এবং আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী (সূরা হুরুরতে/০১) আমার প্রিয় মাযহাবী ভাইয়েরা! এরকম কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ জানার পরও কি আপনারা মাযহাবে বিশ্বাসী হবেন এবং নিজেকে মাযহাবী বলে পরিচয় দেবেন। যারা জানে না তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ বলেন,বলো, যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? (সূরা যুমার ৩৯/০৯)। তাই আজই তওবা করে সঠিক আব্বীদায় ফিরে আসুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার তোফিক দিন। আমীন!
ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি
ভারতবর্ষের বিখ্যাত হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হানাফীদের শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষের ইমাম বুখারী বলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিসদেহেলভী (রহ) বলেছেন ই’লাম আন্না না-সা-কা-নু ক্কারলাল মিআতির রা-বিআতি গাইরা মুজমিয়ীনা আলাত্-তাকলীদিল খা-লিস লিমায় হাবিন্ ওয়া-হিদিন্ বি-আইনিহী’ অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখো যে, ৪০০ হিজরীর আগে লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ; ১৫২ পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেয়ী বা মালেকী বলে পরিচয় দিতো না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন। ইমামদের জন্ম ও মৃত্যুর সময়কালটা একবার জানা যাক তাহলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইমামের নাম জন্ম মৃত্যু
আবু হানীফা (রহ) ৮০ হিজরী ১৫০ হিজরী
ইমাম মালেক (রহ) ৯৩ হিজরী ১৭৯ হিজরী
ইমাম শাফেয়ী (রহ) ১৫০ হিজরী ২০৪ হিজরী
আহমদ বিন হাম্বাল (রহ) ১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী
বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী (রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের ২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ইমামদের জীবিত অবস্থায় মাযহাব সৃষ্টি হয়নি। তাঁদের মৃত্যুর অনেকদিন পরে মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। আর একবার চিন্তা করে দেখুন মাযহাব বা দল সৃষ্টি করাতে কোরআন ও হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহামান্য ইমামরা ছিলেন কোরআন হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী এবং ধর্মপ্রান মুসলিম। তাঁরা কি কোরআন হাদীসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাযহাব তৈরি করবেন যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এটা কখনো হতে পারে? যারা বলে ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা হয় মুর্খ নয় বেইমান। তারা ইমামদের প্রতি অপবাদ দেয়।
মাযহাব সৃষ্টি হল কিভাবে
ফারসীতে একটি প্রবাদ আছে তোরা হাজী গো ইয়াম তু মোরা হাজী বোগো অর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে, ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো। এভাবে একে অপরকেহাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। আজ যা বিরাট আকার ধারন করেছে। আবু হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা তারা নিজেদের পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার অনুসারীরা নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা। ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা কিংবা তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার কেন দিল?
হাদীস বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে ইমামদের রায়
মাযহাবীদের মধ্যে কিছু লোক দেখা যায় যারা ইমামদের তাক্কলীদ করে অর্থাৎ অন্ধ অনুসরন করে। তারা ইমামদের বক্তব্যকে আসমানী ওহীর মতো মানে। কোরআন-হাদিস বিরোধী কোনো রায় হলেও তাতে আমল করে। তাই সেই সব লোকদের জন্য হাদীস অনুসরনের ব্যাপারে ইমামদের মতামত এবং তাদের হাদীস বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে তাদের কয়েকটি উক্তি দেওয়া হল। ইনশাল্লাহ্! মাযহাবী ভাইয়েরা এ থেকে অনেক উপকারিত হবেন।
আবু হানীফা (রহ)
১) যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন ১/৬৩; রাসমুল মুফতী ১/৪; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)
২) কারো জন্য আমাদের কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি। (হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ২/২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শা’ রানীর মীথান ১/৫৫; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩০৯)
৩) যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানে না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর ১৩৫ পৃষ্ঠা)
৪) আমরা তো মানুষ। আজ এক কথা বলি, আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। (ঐ)
৫) যদি আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো। (দেওয়ালে ছুড়ে মারো)। (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)
ইমাম মালেক (রহ)
১) আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো। (জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯)
২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) ই সমালোচনার উর্ধে। (ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
৩) ইবনু ওহাব বলেছেন, আমি ইমাম মালেককের ওযূর মধ্যে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার প্রয়োজন নীই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলি তাতো আমাদের জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ, আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন, আমি রাসুল (সা) কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করতে দেখেছি। ইমাম মালেক বলেন, এটা তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি শুনেছি। (মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)
ইমাম শাফেয়ী (রহ)
১) হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (মাজমু ১/৬৩; শা’রানী ১/৫৭)
২) আমি যে কথাই বলি না কেন অথবা যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে বর্ণিত (হাদীসের) খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই আমার কথা। (তারীখু দিমাশ্ক; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬৬,৩৬৪)
৩) নিজ ছাত্র ইমাম আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন) হাদীস ও রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো। অতএব হাদীস সহীহ হলে আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা সহীহ হলে সেটাই আমি আমার মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা; হিলয়াহ ৯/১০৬)
৪) আমার পুস্তকে যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মা’জমু ১/৬৩; ইলামূল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬১)
৫) যে কথাই আমি বলি না কেন, তা যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য। সুতরাং তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস ও সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)
৬) নবী (সা) থেকে যে হাদীসই বর্ণিত হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৩-৯৪)
ইমাম আহমাদ (রহ)
১) তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)
২) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২ পৃষ্ঠা)
৩) আওযাঈ; ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফার রায় তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল হল আসার অর্থাৎ সাহাবী ও তাবেঈগনের কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, ২ খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা) ইমামদের এই সকল বক্তব্য জানার পর আমরা বলতে পারি প্রকৃতই যারা ইমামদের ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, মান্য করেন তারা ইমামদের কথা অনুযায়ী চলবেন এবং সহীহ হাদীসকেই নিজের মাযহাব বানাবেন। তাক্কলীদ করবেন না। সরাসরী সেখান থেকে গ্রহন করবেন যেখান থেকে ইমামরা করেছেন অর্থাৎ সরাসরী হাদীস কোরয়ান থেকে। ইমামরা কোনো বিষয়ে ভুল ফতোয়া (সহীহ হাদীস তাঁদের কাছে না পৌছানোর কারনে) দিয়ে থাকলে তা প্রত্যাখ্যান করা এবং সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার তৌফিক দিন। আমীন!
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫২
মতামত চাই বলেছেন: যুক্তি আছে কথায় ........................