নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানব সেবাই প্রকৃত ধর্ম

আসাদবেস্ট

মানুষের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সার্থকতা নিহীত

আসাদবেস্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প # খেলা

০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ১২:৩৪


ঘুম থেকে উঠে বিছানায় মিলিকে (বউ) না পেলে সচরাচর যে কাজটি করি, সেটা হলো কিচেনে গিয়ে পেছন দিকে থেকে জড়িয়ে ধরি। বউয়ের কমন সংলাপ থাকে, সারা রাতে বুঝি তৃষ্ণা মেটেনি। আমারও কমন উত্তর, এরকম একটা লক্ষ্মী রাজরানী যার আছে, তার কি এত সহজে তৃষ্ণা মেটে?

বরাবরের মতো আজও ঘুম থেকে উঠে মিলিকে বিছানায় না পেয়ে রান্না ঘরে ঢু মারলাম। কিন্তু সেখানে মিলি’র কোনো অস্তিত্ব নেই। এরকম তো সাধারণত হওয়ার কথা না। এই সময়টাতে রান্না ঘর ছাড়া তার অন্য কোথাও থাকার কথা না। আমাকে নাস্তা খাইয়ে অফিসে না পাঠানো পর্যন্ত রান্না ঘর থেকে তার অবসর নেই। আমিও অবশ্য মাঝে মাঝে তাকে পেঁয়াজ কাটা, তরকারি কুটা এবং অন্যান্য কাজে টুকটাক সহায়তা করি।

রান্না ঘরে না পেয়ে ড্রয়িং রুম এবং ওয়াশ রুমে খোঁজ করলাম। সেসব জায়গায় না পেয়ে অবশেষে বারান্দায় তার দেখা মিললো। কিন্তু বারান্দায় গিয়ে তো আমার বুকে ছ্যাৎ করে উঠলো। বারান্দায় রেলিং এ হাত দিয়ে সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি পেছন দিক থেকে সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে তাকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী ঢঙ্গে রান্না-বান্না না করে এভাবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার কারণ জানতে চাইলাম। আম্মার (শ্বাশুড়ি) অসুখ বাড়ছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম, কেননা তিনি অনেক দিন থেকে উচ্চ রক্তচাজনিত সমস্যায় ভোগছেন। মাঝে মাঝে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। কিন্তু সে আমাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে আগের মতোই ফুপিয়ে কাঁদতেই থাকলো।

আমি তো আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। জ্ঞাতসারে এমন কিছু করছি বলে মনে পড়ে না যাতে সে এভাবে কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে চোখের পানি ফেলবে, আমার সাথে এভাবে রূঢ় আচরণ করবে। পরিসিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে আমিও আর ঘাটাতে চাইলাম না তাকে। ভাবলাম মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরিয়ে আকাশ যেমন ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কান্নাকাটি করে তার হৃদয়ও হালকা হয়ে যাবে। কেননা, ‘কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়’। বুঝতে পারলাম, ভাগ্য বিধাতা আজকে নাস্তা খাওয়া কপালে রাখেননি। হৃদয়রানীর মনোরাজ্যে যেখানে দুর্যোগের ঘনঘটা, সেখানে নাস্তার আশা না করাই ভালো। তাই অফিস থেকে ফিরে ভালো পরিস্থিতির প্রত্যাশা নিয়ে অফিসে চলে যাই। সঙ্গত কারণে আজকে টিফিন না নিয়েই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলো।

প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটায় ১.৩০ বাজার সাথে সাথেই মিলি ফোন দিয়ে খাবার তাগিদ দিতো এবং অযথা দেরি না করে তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেরে নিতে বলতো। এছাড়া খাওয়া শেষে তাকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে নোটিশ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আজ এসবেরে কিছুই হয়নি।

বিকালে অফিসে শেষে বাসায় ফেরার সময় কেএফসি থেকে মিলি’র পছন্দের পিৎজ্যা নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দুরুদুরু বুকে কলিংবেলে চাপ দিলাম। যা আশঙ্কা করছিলাম, তাই ঘটলো। অন্যদিন মিলি দরজা খোলে দিলেও আজ তার পরিবর্তে বাসায় মিলি’র সহকারী মেয়েটি দরজা খোলে দিলো। ভাবছিলাম সারাদিনে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কিন্তু আশায় গুড়ে বালি। বাসায় কোথাও মিলিকে না দেখে বুঝতে আর বাকী রইলো না যে, সে বড় রকমের রাগ বা অভিমান করলে যা করে আজও নিশ্চয় তাই করেছে। নিশ্চয় তারা বাবার বাসায় চলে গেছে? এর আগেও দুইবার এরকম হয়েছে। দুইবারই নিজেকে গিয়ে অভিমান ভাঙিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। চিন্তা করে দেখলাম এখন আর ফোন দেয়ার দরকার নেই। আগামীকাল অফিস থেকে ফেরার পথে ওর বাপের বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসা যাবে।

হঠাৎ শো- কেসে চোখ পড়লো। আমার চক্ষু তো চড়কগাছ। সমাবর্তনের দিন তার সাথে তোলা সেই ফ্রেমবদ্ধ রোমান্টিক ছবিটি নাই। খোঁজতে খোঁজতে ময়লার ঝুড়িতে তার ধ্বংশাবশেষ আবিষ্কার করলাম। ছবি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সেজন্য খারাপ লাগেনি, কেননা ছবি যেহেতু ল্যাপটপে আছে সেহেতু যে কোনো সময় ফ্রেম বানানো যাবে, কিন্তু মিলি তার আমার অন্যতম প্রিয় এই জিনিসটা ভেঙ্গে ফেলায় খুব কষ্ট পেলাম। আশ্চর্য হওয়ার তখনো বাকী। হঠাৎ দেখি টেবিলে একটি চিরকুট লেখা, ’তোমার মতো একটি লম্পটের সাথে আর সংসার করা সম্ভব না, তাই বাবার বাড়ি চলে গেলাম।’ চিরকুট দেখে তো আকাশ থেকে পড়লাম! কি এমন লাম্পট্যের কাজ করলাম, মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।

পরদিন অফিস শেষে প্রকৃত কারণ জেনে এবং সেই আলোকে মিলি’র অভিমান ভাঙ্গিয়ে বাসায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ওর বাবার বাসায় গমণ করি। কিন্তু পরিস্থিতি মোটেও ভালো ঠেকছে না। আমার প্রতি তার বজ্র-কঠিন চাহনিতে মনে হচ্ছে কপালে আজ শনির দশা আছে।

শ্বাশুড়ী মায়ের হাতের নাস্তা শেষে এবার মিলিকে একান্তে ডেকে বললাম, আচ্ছা আমি কী এমন লাম্পট্য করলাম? আমি অপরাধী হলে বা তোমার প্রতি কোনো অবিচার করলে সেটা তো আমাকে বলবা। প্রকৃত কারণ তো জানবা? তা না করে এরকম তুলকালাম কাণ্ড-কারখানার মানে কী?
হঠাৎ করে সে বলে বসে, ‘তোমার মতো একটা লুচ্ছার সাথে আমার পক্ষে আর সংসার করা সম্ভব না। যাকে নিজের হৃদয় সিংহাসনে রাজা করে রেখেছি, জান-প্রাণ দিয়ে যাকে ভালোবাসি, যাকে ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না, সে নিজের কাজের মেয়ের সাথে নষ্টামী করবে, ছি আমি ভাবতেই পারছি না? ভাবতেই আমার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে! তুমি চলে যাও, আমি এরকম একটা চরিত্রহীন লম্পটের সাথে এক সাথে আর সংসার করতে পারেবো না।’

এরকম কথা শুনে মন মেজাজ ঠিক রাখা অসম্ভব। কিন্তু আমি মেজাজ গরম না করে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে থাকলাম নিশ্চয়ই বড় রকমের কোনো ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু কাজের মেয়ের সাথে আমার এরকম কিছুই ঘটেনি, তাই স্বর একটু সপ্তমে চড়িয়ে প্রত্যুত্তরে জানতে চাইলাম, তুমি যা ইচ্ছা তা বলতে পারো না, প্রমাণ ছাড়া তুমি বলে দিলা আমি কাজের মেয়ের সাথে নষ্টামী করছি! আচ্ছা ঠিক আছে তোমার অভিযোগের প্রমাণ দাও।

এবার সে আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে আমার ম্যাসেঞ্জার চালু করে স্ক্রল করে Angel Anisha নামের আইডিতে গিয়ে বললো, এই দেখো বাইরে ভদ্রলোকের মুখোশ লাগিয়ে তোমার নষ্টামী, নোংরামী!

যেভাবে স্বর সপ্তমে চড়িয়ে কৈফিয়ত তলব করেছিলাম, তাতে কিছুটা ভাটা পড়ে। কিছুটা দমে গিয়ে বললাম, আচ্ছা তোমার কৈফিয়তের জবাব পরে দিচ্ছি, আগে বলো এর সাথে আমাদের কাজের মেয়ের কি সম্পর্ক? কাজের মেয়ে এখানে কোথা থেকে আসলো?

এবার মিলি বলতে শুরু করলো, আজ থেকে মাস খানেক আগে হঠাৎ একদিন নীতু (আমাদের বাসার গৃহকর্মী) একটি মোবাইল নিয়ে এসে আমাকে বললো, আপা সারাদিন বাসায় থাকি। কাজ-কাম যখন থাকে না তখন এমনি এমনি বসে থাকলে ভালো লাগে না। ফেসবুকে নাকি সবার সাথে কথা বলা যায়, চ্যাট না কি জানি করা যায়, আরো কত কিছু নাকি করা যায়? আমাকে ফেসবুকে একটি আইডি অপেন করে দিন না। সে আরো বললো, তার বান্ধবীর Angel Anisha নামে আইডি আছে। তাই তাকে যেন Angel Tanisha নামে আইডি খোলে দেই। এখন তো দেখছি এই আইডি খুলে দিয়ে আমি খাল কেটে নিজের ঘরে কুমির আনলাম!

এবার আমার অভিযোগ খণ্ডনের পালা। আমি বলতে শুরু করলাম, প্রায় ১ মাস আগে এই আইডি থেকে আমাকে রিকুয়েস্ট পাঠানো হয়? অপরিচিত নাম দেখে কনফার্ম না করে রিকুয়েস্ট ঝুলিয়ে রাখি। দুই-তিন দিন পর দেখি ম্যাসেঞ্জারে নক করছে। কেন রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করছি না? আমি তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলে আগে রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করেন, তারপর বলবো নে। ভাবলাম হয়তো পরিচিত কোনো ছেলে ফেক আইডি খোলে আমার সাথে মজা করতে চাচ্ছে। তাই আমিও একটু মজা নেবার সুযোগ দিলাম আরকি। তার সাথে হাই-হ্যালো আর টুকটাক ২-১ টা কথা ছাড়া তেমন কোনো কথা হয় না। সেখানে তুমি তার সাথে নষ্টামীর কি দেখলা? আর আমি কি জানতাম সে আমাদের নীতু!

সে আবার আমাকে দেখাতে শুরু করলো, ’এই যে দেখো, পরশু রাত ২ টায় মেয়েটি তোমাকে তার সাথে খেলতে অনুরোধ করেছে? এর আগের রাতেও সে তোমাকে খেলতে বলছে? যদিও তুমি ঘুমাবা বলে খেলতে না করছো, কিন্তু তার আগে নিশ্চয়ই খেলছো? না খেললে সে কোন সাহসে তোমাকে তার সাথে খেলার কথা বলে?’

এবার আমার কাছে পুরো বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমি বললাম, সে পর পর দুইদিন খেলতে বলেছে, কিন্তু আরেকটা স্ক্রল করে দেখতে পারলে না কি খেলতে বলছে? এবার তার জবাব, ’না, আমার এটুকু দেখে গা ঘিনগিন করা শুরু হয়, তাই আর বাকীটা দেখার ইচ্ছা জাগেনি। তোমার এত অধঃপতন দেখে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। তাই এর আগে কি ঘটেছে, সেটা দেখার ইচ্ছা বা মানসিকতা কোনোটাই আমার ছিলো না।’

এবার আমি আরেকটু স্ক্রল করে দেখালাম, দেখো মেয়েটা আমাকে লুডু খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রথমদিকে ২-১দিন ২-৩ গেইম খেলেছি। কিন্তু পরে ভাবলাম যাকে চিনি না, যার পরিচয় জানি না তার সাথে এভাবে খেলা ঠিক না। এজন্য দুইদিন ধরে সে খেলার অনুরোধ করলেও অনুরোধ উপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়ি। আর তুমি এটা দেখে আকাশ-পাতাল কী সব ভাবছো! দুইদিন ধরে যা করছো না! একটা সামান্য লুডু খেলাকে তুমি কি খেলা মনে করে আমার সাথে আর সংসারই না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো! অনেক হয়েছে। এবার চলো বাসায় যাই।

ঘুম থেকে উঠে বিছানায় মিলিকে (বউ) না পেলে সচরাচর যে কাজটি করি, সেটা হলো কিচেনে গিয়ে পেছন দিকে থেকে জড়িয়ে ধরি। বউয়ের কমন সংলাপ থাকে, সারা রাতে বুঝি তৃষ্ণা মেটেনি। আমারও কমন উত্তর, এরকম একটা লক্ষ্মী রাজরানী যার আছে, তার কি এত সহজে তৃষ্ণা মেটে?

বরাবরের মতো আজও ঘুম থেকে উঠে মিলিকে বিছানায় না পেয়ে রান্না ঘরে ঢু মারলাম। কিন্তু সেখানে মিলি’র কোনো অস্তিত্ব নেই। এরকম তো সাধারণত হওয়ার কথা না। এই সময়টাতে রান্না ঘর ছাড়া তার অন্য কোথাও থাকার কথা না। আমাকে নাস্তা খাইয়ে অফিসে না পাঠানো পর্যন্ত রান্না ঘর থেকে তার অবসর নেই। আমিও অবশ্য মাঝে মাঝে তাকে পেঁয়াজ কাটা, তরকারি কুটা এবং অন্যান্য কাজে টুকটাক সহায়তা করি।

রান্না ঘরে না পেয়ে ড্রয়িং রুম এবং ওয়াশ রুমে খোঁজ করলাম। সেসব জায়গায় না পেয়ে অবশেষে বারান্দায় তার দেখা মিললো। কিন্তু বারান্দায় গিয়ে তো আমার বুকে ছ্যাৎ করে উঠলো। বারান্দায় রেলিং এ হাত দিয়ে সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি পেছন দিক থেকে সেই চিরচেনা ভঙ্গিতে তাকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী ঢঙ্গে রান্না-বান্না না করে এভাবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার কারণ জানতে চাইলাম। আম্মার (শ্বাশুড়ি) অসুখ বাড়ছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম, কেননা তিনি অনেক দিন থেকে উচ্চ রক্তচাজনিত সমস্যায় ভোগছেন। মাঝে মাঝে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। কিন্তু সে আমাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে আগের মতোই ফুপিয়ে কাঁদতেই থাকলো।

আমি তো আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। জ্ঞাতসারে এমন কিছু করছি বলে মনে পড়ে না যাতে সে এভাবে কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে চোখের পানি ফেলবে, আমার সাথে এভাবে রূঢ় আচরণ করবে। পরিসিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে আমিও আর ঘাটাতে চাইলাম না তাকে। ভাবলাম মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরিয়ে আকাশ যেমন ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কান্নাকাটি করে তার হৃদয়ও হালকা হয়ে যাবে। কেননা, ‘কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়’। বুঝতে পারলাম, ভাগ্য বিধাতা আজকে নাস্তা খাওয়া কপালে রাখেননি। হৃদয়রানীর মনোরাজ্যে যেখানে দুর্যোগের ঘনঘটা, সেখানে নাস্তার আশা না করাই ভালো। তাই অফিস থেকে ফিরে ভালো পরিস্থিতির প্রত্যাশা নিয়ে অফিসে চলে যাই। সঙ্গত কারণে আজকে টিফিন না নিয়েই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলো।

প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটায় ১.৩০ বাজার সাথে সাথেই মিলি ফোন দিয়ে খাবার তাগিদ দিতো এবং অযথা দেরি না করে তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেরে নিতে বলতো। এছাড়া খাওয়া শেষে তাকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে নোটিশ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আজ এসবেরে কিছুই হয়নি।

বিকালে অফিসে শেষে বাসায় ফেরার সময় কেএফসি থেকে মিলি’র পছন্দের পিৎজ্যা নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দুরুদুরু বুকে কলিংবেলে চাপ দিলাম। যা আশঙ্কা করছিলাম, তাই ঘটলো। অন্যদিন মিলি দরজা খোলে দিলেও আজ তার পরিবর্তে বাসায় মিলি’র সহকারী মেয়েটি দরজা খোলে দিলো। ভাবছিলাম সারাদিনে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কিন্তু আশায় গুড়ে বালি। বাসায় কোথাও মিলিকে না দেখে বুঝতে আর বাকী রইলো না যে, সে বড় রকমের রাগ বা অভিমান করলে যা করে আজও নিশ্চয় তাই করেছে। নিশ্চয় তারা বাবার বাসায় চলে গেছে? এর আগেও দুইবার এরকম হয়েছে। দুইবারই নিজেকে গিয়ে অভিমান ভাঙিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। চিন্তা করে দেখলাম এখন আর ফোন দেয়ার দরকার নেই। আগামীকাল অফিস থেকে ফেরার পথে ওর বাপের বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসা যাবে।

হঠাৎ শো- কেসে চোখ পড়লো। আমার চক্ষু তো চড়কগাছ। সমাবর্তনের দিন তার সাথে তোলা সেই ফ্রেমবদ্ধ রোমান্টিক ছবিটি নাই। খোঁজতে খোঁজতে ময়লার ঝুড়িতে তার ধ্বংশাবশেষ আবিষ্কার করলাম। ছবি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সেজন্য খারাপ লাগেনি, কেননা ছবি যেহেতু ল্যাপটপে আছে সেহেতু যে কোনো সময় ফ্রেম বানানো যাবে, কিন্তু মিলি তার আমার অন্যতম প্রিয় এই জিনিসটা ভেঙ্গে ফেলায় খুব কষ্ট পেলাম। আশ্চর্য হওয়ার তখনো বাকী। হঠাৎ দেখি টেবিলে একটি চিরকুট লেখা, ’তোমার মতো একটি লম্পটের সাথে আর সংসার করা সম্ভব না, তাই বাবার বাড়ি চলে গেলাম।’ চিরকুট দেখে তো আকাশ থেকে পড়লাম! কি এমন লাম্পট্যের কাজ করলাম, মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।

পরদিন অফিস শেষে প্রকৃত কারণ জেনে এবং সেই আলোকে মিলি’র অভিমান ভাঙ্গিয়ে বাসায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ওর বাবার বাসায় গমণ করি। কিন্তু পরিস্থিতি মোটেও ভালো ঠেকছে না। আমার প্রতি তার বজ্র-কঠিন চাহনিতে মনে হচ্ছে কপালে আজ শনির দশা আছে।

শ্বাশুড়ী মায়ের হাতের নাস্তা শেষে এবার মিলিকে একান্তে ডেকে বললাম, আচ্ছা আমি কী এমন লাম্পট্য করলাম? আমি অপরাধী হলে বা তোমার প্রতি কোনো অবিচার করলে সেটা তো আমাকে বলবা। প্রকৃত কারণ তো জানবা? তা না করে এরকম তুলকালাম কাণ্ড-কারখানার মানে কী?
হঠাৎ করে সে বলে বসে, ‘তোমার মতো একটা লুচ্ছার সাথে আমার পক্ষে আর সংসার করা সম্ভব না। যাকে নিজের হৃদয় সিংহাসনে রাজা করে রেখেছি, জান-প্রাণ দিয়ে যাকে ভালোবাসি, যাকে ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না, সে নিজের কাজের মেয়ের সাথে নষ্টামী করবে, ছি আমি ভাবতেই পারছি না? ভাবতেই আমার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে! তুমি চলে যাও, আমি এরকম একটা চরিত্রহীন লম্পটের সাথে এক সাথে আর সংসার করতে পারেবো না।’

এরকম কথা শুনে মন মেজাজ ঠিক রাখা অসম্ভব। কিন্তু আমি মেজাজ গরম না করে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে থাকলাম নিশ্চয়ই বড় রকমের কোনো ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু কাজের মেয়ের সাথে আমার এরকম কিছুই ঘটেনি, তাই স্বর একটু সপ্তমে চড়িয়ে প্রত্যুত্তরে জানতে চাইলাম, তুমি যা ইচ্ছা তা বলতে পারো না, প্রমাণ ছাড়া তুমি বলে দিলা আমি কাজের মেয়ের সাথে নষ্টামী করছি! আচ্ছা ঠিক আছে তোমার অভিযোগের প্রমাণ দাও।

এবার সে আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে আমার ম্যাসেঞ্জার চালু করে স্ক্রল করে Angel Anisha নামের আইডিতে গিয়ে বললো, এই দেখো বাইরে ভদ্রলোকের মুখোশ লাগিয়ে তোমার নষ্টামী, নোংরামী!

যেভাবে স্বর সপ্তমে চড়িয়ে কৈফিয়ত তলব করেছিলাম, তাতে কিছুটা ভাটা পড়ে। কিছুটা দমে গিয়ে বললাম, আচ্ছা তোমার কৈফিয়তের জবাব পরে দিচ্ছি, আগে বলো এর সাথে আমাদের কাজের মেয়ের কি সম্পর্ক? কাজের মেয়ে এখানে কোথা থেকে আসলো?

এবার মিলি বলতে শুরু করলো, আজ থেকে মাস খানেক আগে হঠাৎ একদিন নীতু (আমাদের বাসার গৃহকর্মী) একটি মোবাইল নিয়ে এসে আমাকে বললো, আপা সারাদিন বাসায় থাকি। কাজ-কাম যখন থাকে না তখন এমনি এমনি বসে থাকলে ভালো লাগে না। ফেসবুকে নাকি সবার সাথে কথা বলা যায়, চ্যাট না কি জানি করা যায়, আরো কত কিছু নাকি করা যায়? আমাকে ফেসবুকে একটি আইডি অপেন করে দিন না। সে আরো বললো, তার বান্ধবীর Angel Anisha নামে আইডি আছে। তাই তাকে যেন Angel Tanisha নামে আইডি খোলে দেই। এখন তো দেখছি এই আইডি খুলে দিয়ে আমি খাল কেটে নিজের ঘরে কুমির আনলাম!

এবার আমার অভিযোগ খণ্ডনের পালা। আমি বলতে শুরু করলাম, প্রায় ১ মাস আগে এই আইডি থেকে আমাকে রিকুয়েস্ট পাঠানো হয়? অপরিচিত নাম দেখে কনফার্ম না করে রিকুয়েস্ট ঝুলিয়ে রাখি। দুই-তিন দিন পর দেখি ম্যাসেঞ্জারে নক করছে। কেন রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করছি না? আমি তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলে আগে রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করেন, তারপর বলবো নে। ভাবলাম হয়তো পরিচিত কোনো ছেলে ফেক আইডি খোলে আমার সাথে মজা করতে চাচ্ছে। তাই আমিও একটু মজা নেবার সুযোগ দিলাম আরকি। তার সাথে হাই-হ্যালো আর টুকটাক ২-১ টা কথা ছাড়া তেমন কোনো কথা হয় না। সেখানে তুমি তার সাথে নষ্টামীর কি দেখলা? আর আমি কি জানতাম সে আমাদের নীতু!

সে আবার আমাকে দেখাতে শুরু করলো, ’এই যে দেখো, পরশু রাত ২ টায় মেয়েটি তোমাকে তার সাথে খেলতে অনুরোধ করেছে? এর আগের রাতেও সে তোমাকে খেলতে বলছে? যদিও তুমি ঘুমাবা বলে খেলতে না করছো, কিন্তু তার আগে নিশ্চয়ই খেলছো? না খেললে সে কোন সাহসে তোমাকে তার সাথে খেলার কথা বলে?’

এবার আমার কাছে পুরো বিষয়টি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমি বললাম, সে পর পর দুইদিন খেলতে বলেছে, কিন্তু আরেকটা স্ক্রল করে দেখতে পারলে না কি খেলতে বলছে? এবার তার জবাব, ’না, আমার এটুকু দেখে গা ঘিনগিন করা শুরু হয়, তাই আর বাকীটা দেখার ইচ্ছা জাগেনি। তোমার এত অধঃপতন দেখে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। তাই এর আগে কি ঘটেছে, সেটা দেখার ইচ্ছা বা মানসিকতা কোনোটাই আমার ছিলো না।’

এবার আমি আরেকটু স্ক্রল করে দেখালাম, দেখো মেয়েটা আমাকে লুডু খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রথমদিকে ২-১দিন ২-৩ গেইম খেলেছি। কিন্তু পরে ভাবলাম যাকে চিনি না, যার পরিচয় জানি না তার সাথে এভাবে খেলা ঠিক না। এজন্য দুইদিন ধরে সে খেলার অনুরোধ করলেও অনুরোধ উপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়ি। আর তুমি এটা দেখে আকাশ-পাতাল কী সব ভাবছো! দুইদিন ধরে যা করছো না! একটা সামান্য লুডু খেলাকে তুমি কি খেলা মনে করে আমার সাথে আর সংসারই না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো! অনেক হয়েছে। এবার চলো বাসায় যাই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: আধুনিক বাস্তব গল্প।

২| ০৩ রা জুন, ২০২০ ভোর ৫:৩২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক সুন্দর লেখা

৩| ০৩ রা জুন, ২০২০ দুপুর ১:৫৯

খাঁজা বাবা বলেছেন: লুডু :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.