![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাল ১৯৭১ এপ্রিলের মাঝামাঝি
দিকের কথা.. হবিগঞ্জ জেলার
বানিয়াচং এর মন্দিরা গ্রাম.. ছবির
মত সুন্দর গ্রাম.. কিন্তু গত দুই দিন
ধরে প্রচুর উত্তেজনা বিরাজ করছে..
খান সাহেবের বাড়ির উঠোনে
মানুষের ভিড়.. কেন্দ্র একটি কালো
রেডিও..
রেডিওতে কিছুক্ষন পর পর শেখ
মুজিবুর রহমানের ভাষন শুনানো
হচ্ছে.. আর যুদ্ধের খবর জানানো
হচ্ছে.. বেলা এগারোটা বাজে খবর
এলো খবর এলো সিলেট সদর পাক
বাহিনী দখল করে নিয়েছে.. তারা
এখন হবিগঞ্জের দিকে এগুচ্ছে..
.
খবর শুনার পর উত্তেজনা আরো
বেড়ে গেলো.. সদর থাকানার পুলিশ
সড়কে ব্যারিকেড দিয়েছে.. গ্রামের
ছেলেরা যে যা পারছে তা নিয়ে বেরিয়ে
পরছে..
.
গ্রামের একদম দক্ষিনের দিকের
তালপাতার ছালের মুন্সীর বাড়ি..
মুন্সীর ছোট ছেলে আলি ক্লাস ৯ এ
পড়ে.. খবর শুনেও সেও বেড়িয়ে
পরছিলো.. তার মা আমেনা বেগম তার
পথ আটকালো..
: কোথায় যাস.?
: শুনোনি, কারা যেন আমাদের দেশটা
দখল করতে আসছে? তাদেরকে
আমরা না আটকালে কে আটকাবে?
: তুই এসবের কি বুঝস? বাসা থেকে
এক কদমও বেরোবি না..
না সেদিন আমেনা বেগম পারেনি তার
অবাধ্য ছেলেকে ঘড়ে বেধে রাখতে..
মাত্র দাড়ি গজানো ছেলে তার
দেশের জন্য ঘর থেকে বেড়িয়ে
গিয়েছিলো..
.
অক্টোবরের মাঝামাঝি.. কেন জানি
হঠাৎ বৃষ্টি হতে শুরু করলো সেদিন..
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাজানো
গ্রামটা যেন ধ্বংসস্তুপ.. গ্রামের
স্কুলের একটা বিল্ডিং অর্ধেক
ভেঙ্গে গেছে গোলাগোলিতে..আর
বাকিটাতে পাক বাহিনীর ক্যাম্প..
রাস্তাঘাট যেন শ্বসানের মত
নিস্তব্দ.. আসরের নামাজ শেষে
আমেনা বেগম জাইনামাজ থেকে
উঠার আগেই দরজায় দুটো টোকা
পড়লো.. আমেনা বেগম ভয়ে ভয়ে
জিজ্ঞাস করলো কে.? কোন উওর
নেই, আবার দরজায় টোকা.. ভয়ে
ভয়ে দরজা খুললেন.. দরজা খোলার
সাথে সাথে একজন ভিতরে ঢুকে
দরজা বন্ধ করে দিলো..
.
আমেনা বেগম দেখল তার খোকা তার
সামনে দাড়িয়ে সারা শরীরে কাদা..
কথা না বলে আমেনা বেগম তার
ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো.. ছেলেটা
কেমন যেন বড় হয়ে গেছে গত কয়েক
মাসে, মুখে খোচা খোচা দাড়ি..
: কেমন আছিস খোকা?
: মা, এমন কেন হলো.?
: কি হয়েছে খোকা.?
: এটাতো আমাদের খেলার বয়স
ছিলো মাঠে, কেন আমাদের নিজের
সামনে বন্ধুদের লাশ উঠাতে হচ্ছে,
যে হাতে কলম থাকার কথা কেন সে
হাতে আজ বন্দুক.? কেন আমি
পারিনা তোমার পাশে এসে জরিয়ে
ধরে শুয়ে থাকতে.. বলতে বলতে
ফুপিয়ে উঠলো আলী..
.
একটু পরেই সে বলে উঠলো মা
আমার জন্য দোয়া করো.. আজ
রাতে অপারেশন আছে.. আমেনা বেগম
তার ছেলেকে আজ ও আটকাতে
চেলো.. তার অবাধ্য ছেলেটা আজও
চলে গেলো.. বলে গেলো সে ফিরবে,
মার জন্য দেশটাকে উপহার হিসাবে
নিয়ে ফিরবে..
.
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ দেশ স্বাধীন
হলো.. সবাই ফিরতে শুরু করলো..
জানুয়ারীর মাঝামাঝি আমেনা
বেগমের খোকা এখনো ফিরে নি.. যে
রাতে খোকা এসেছিলো সে রাতে
অনেক গোলাগোলি হয়েছিলো..
লোকজন বলে সে দিন দুজন
মুক্তিযোদ্ধা ধরা পরে যাদের নদী
পারে গুলি করে মারে পাক বাহিনী..
আমেনা বেগম প্রতিদিন দোয়া করে
নামাজে বসে, আল্লাহ যেন তার
ছেলেকে বাচিয়ে রাখে.. দিন যায়
আমেনার উদ্ধিগ্নতা বাড়তে থাকে..
.
জানুয়ারীর শেষ দিকে.. আসরের
নামাজে জাইনামাজে তখনো বসা
আমেনা বেগম.. হঠাৎ দরজায় টোকা..
বুকটা ধুপ করে উঠে আমেনার.. আবার
জিজ্ঞাস করেন কে.? উত্তেজনা
বুকে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে
যাচ্ছেন.. আর দোয়া করছেন.. খোদা
এটা যেন আমার খোকা হয়.. আর
কিছু চাওয়ার থাকবেনা তোমার
কাছে..
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
প্রতিবাদী আর যুক্তিবাদি বলেছেন: হয়তোবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না.................